আজকের শিরোনাম :

‘শুদ্ধি অভিযান’কে কীভাবে দেখছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:৫৯

আওয়ামী লীগের যে বৈঠকে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেখানেই তিনি যুবলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন।

এর পর থেকেই অঙ্গ সংগঠনগুলোয় চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকা বড় নেতাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়াটি শুরু হয়।

এর কয়েকদিন পরেই র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) বিশেষ একটি অভিযান শুরু করে। যুবলীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের নিয়ন্ত্রিত অবৈধ ক্যাসিনোসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও অভিযান চালানো হয়েছে।

কিন্তু চাঁদাবাজি, দুর্নীতি বা বহুদিন ধরে ক্যাসিনো চালিয়ে আসার অভিযোগ থাকার পরেও, এতদিন পরে কেন নড়েচড়ে বসেছে দলটি?

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলছেন, গত ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগ যে টানা ক্ষমতায় রয়েছে, এ সময় কিন্তু অনৈতিকতার কারণে অনেক সাবেক মন্ত্রী, এমপির বিরুদ্ধে মামলা নেয়া হয়েছে, তাদের অনেকে কারাগারেও গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখনি তথ্য পেয়েছেন, উনি তাক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘আমরা যে এখন শুরু করলাম, আগে শুরু করি নাই, এ রকম কোনো কথার যৌক্তিকতা নেই। যখনি তথ্য এসেছে, সেই তথ্য সঠিক বলে জানা গেছে, তখনি সমূলে ধ্বংস করার জন্য অভিযান চালানো হয়েছে।’

এসব অভিযানের ফলে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের জন্য আশঙ্কার কোনো কারণ নেই বলে তিনি মনে করেন।

মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘এ গুটিকয়েক অনৈতিক বা দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি, তাদের কার মন খারাপ হলো বা কার সমর্থন থাকলো কি থাকলো না, তাতে আওয়ামী লীগের কিছু আসে যায় না।।’

এর মধ্যেই ঢাকায় অভিযানের পাশাপাশি চাঁদাবাজির অভিযোগে কুষ্টিয়া যুবলীগের দুজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনগুলোর অনেক শীর্ষ নেতা গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন বলে খবর প্রকাশ করা হয়েছে বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোতেও।

এই অভিযানকে কীভাবে দেখছেন আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা?

শরীয়তপুর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামিনা ইয়াসমিন বলছেন, দলের মধ্যে যদি দুর্নীতি থাকে, তা হলে তো সেটা ভ্যানিস করাই উচিত। দল পরিষ্কার থাকবে, এটাই দলের জন্য ভালো। দলে দুষ্ট লোক থাকলে, তারা যদি এভাবে ধরাও পড়ে, সেটার জন্য দলের অন্যদের উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রশ্ন আসে না। বরং এরা ধরা পড়লে দল খাটি হবে। মানুষের মধ্যেও একটা সচেতনতা আসবে, যে এ রকম করা যাবে না।

এর আগে বিভিন্ন দুর্নীতি, চাঁদাবাজির ঘটনায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতা জড়িত বলে অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে।

এবার এ অভিযানকে সরকারের দুর্নীতির প্রমাণ বলে দাবি করছে বিরোধী দল।

ফলে এভাবে গ্রেফতারের মাধ্যমে বিরোধীদের হাতে দল ও সরকারকে সমালোচনার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে বলে কোন কোন নেতা মনে করেন।

তবে শেষপর্যন্ত এই অভিযান দলের জন্য ভালো হবে বলে মনে করছেন ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি মাসুদ।

তিনি বলছেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যদি এই ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে তো অবশ্যই ভাবমূর্তির ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি এটাও ঠিক, যদি এই শুদ্ধি অভিযান না চলে, যদি কোন কিছু না করা হয়, তাহলে তো পরিবর্তন আসবে না। এই অভিযানের প্রয়োজন আছে।’

তিনি বলেন, ‘এটা এই নয় যে, আমি আওয়ামী লীগ করি, আমার সরকার ক্ষমতায়, তাই আমাকে অন্যভাবে দেখতে হবে। এটা ঠিক না।’

এই নেতারা আশা করছেন, এ ধরনের অভিযানের ফলে দুর্নীতিগ্রস্ত বা চাঁদাবাজরা একটা বার্তা পাবে যে, আওয়ামী লীগ তাদের প্রশ্রয় দেবে না। কিন্তু শুধু এ রকম অভিযান চালিয়ে দলকে দুর্নীতিমুক্ত করা যাবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সামিনা লুৎফা বলছেন, এ ধরনের অভিযানে সাময়িক সাফল্য পাওয়া গেলেও, দলকে সত্যিকারের দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে দশ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা দলটিকে আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি বলছেন, ‘এ অভিযান হচ্ছে একটা বার্তা দেয়া, যাতে মানুষ এসব ব্যাপারে সতর্ক হয়, যেন এ রকম কাজ না করে। কিন্তু একজন যখন একটি দলের সবকিছুর সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন তার পক্ষে এত বড় একটা দলের সব কিছু নজরদারিতে রাখা সম্ভব না। সুতরাং একজন দুজনকে গ্রেপ্তার করে মানুষ বা নেতাকর্মীকে দুর্নীতি থেকে দূরে রাখার একটা চেষ্টা হিসাবে আমরা দেখতে পারি, বা শুরু হিসাবে দেখতে পারি। কিন্তু তারা অনেকদিন ধরে যেহেতু ক্ষমতায় রয়েছে, তাই দীর্ঘমেয়াদী যদি দুর্নীতি আসলেই বন্ধ করতে চান, তাহলে দলের ভেতরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ক্ষমতার সুষম বণ্টন করতে হবে।’

এটা ছাড়া বিশ্বাস অর্জন করা বা দুর্নীতি সম্পূর্ণভাবে দূর করা সম্ভব হবে না বলে তিনি মনে করেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, এই অভিযান আরো কিছুদিন চলবে এবং তালিকায় রয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন বড় নেতা।

আওয়ামী লীগের নেতারা আশা করছেন, এসব অভিযান নিয়ে এখন সাময়িক সমালোচনা হলেও, শেষপর্যন্ত সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য সেটি ইতিবাচক হবে।
খবর বিবিসি বাংলা

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ