আজকের শিরোনাম :

গ্রেনেড হামলা: রাজনৈতিক বৈরিতা যখন তিক্ততায় পরিণত হলো

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০১৯, ২১:৪১

ঢাকায় শেখ হাসিনার জনসভায় ১৫ বছর আগে যে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হন, সেই ঘটনা কীভাবে পাল্টে দিয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতি?

বলা হয়, ঐ হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু নেতা-কর্মীরা সেদিন তাঁকে ঘিরে যেভাবে মানববর্ম তৈরি করেন, তাতে তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

ঘটনার পর থেকেই এই হামলার জন্য আওয়ামী লীগ তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বিএনপি এবং তাদের মিত্রদেরকেই দায়ী করেছে। যেভাবে তৎকালীন সরকার এই ঘটনার তদন্তকে মিথ্যে সাক্ষী সাজিয়ে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে, তাতে আওয়ামী লীগের এই সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এ বিষয়ে নিঃসন্দেহ যে, ২০০৪ সালের ২১শে আগস্টে ঐ হামলার ঘটনা যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে মৌলিক এক পরিবর্তনের সূচনা করে।

আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাস আগে থেকেই ছিল। কিন্তু ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এটিকে নিয়ে যায় একটি ভিন্ন মাত্রায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে যে গভীর তিক্ততা, অবিশ্বাস, অনাস্থা - তার অন্যতম প্রধান কারণ ঐ গ্রেনেড হামলা।

নেতৃত্বশূন্য করার চেষ্টা

আওয়ামী লীগের সমর্থকরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব পুরোপুরি নিশ্চিহ্ণ করে দেয়া।

দশ মাস আগে বিচারিক আদালত এই মামলার যে রায় দেয়, সেখানেও একথা বলা হয়। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে যে, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার লক্ষ্যে ২০০৪ সালে দলটির সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল।

বাংলাদেশর রাজনীতিতে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

"এটা রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। কারণ আজকে বাংলার মানুষ সেই ঘটনাকে ধিক্কার দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে নিশ্চিহ্ন করা এবং আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা- এটাই ছিল তাদের পরিকল্পনা। এবং আজকে যে রাজনৈতিক সংকট, এই সংকটের অন্যতম কারণ এই ঘটনা।"

যারা রাজনীতি নিয়ে বিশ্লেষণ করেন, তাদের অধিকাংশই মনে করেন, ২১শে আগস্টে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা দেশের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে এবং সৃষ্টি করেছে গভীর ক্ষতের। এর ফলে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির সম্পর্কে তিক্ততা চরমপর্যায়ে গেছে।

বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, বিএনপি সরকারের সময়ে গ্রেনেড হামলার ঐ ঘটনার পর তদন্তের ক্ষেত্রে জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছিল। আর সে কারণে বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মিদের মাঝে বিদ্বেষ আরও বেড়েছে। এছাড়া সাধারণ মানুষের মাঝেও অনেক প্রশ্ন দেখা দেয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সায়মা হক বিদিশা মনে করেন, রাজনীতিতে অসহিষ্ণু এবং বিদ্বেষমূলক পরিবেশের জন্য একটি প্রধান কারণ গ্রেনেড হামলার সেই ঘটনা।

"রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে বিশ্বাস এবং পরমত সহিষ্ণুতা-এই পুরো বিষয়ের ওপর একটা বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একটা ইতিবাচক যে সংস্কৃতি-সেটা কিন্তু ভীষণভাবে ব্যাহত হয়েছে।"

গ্রেনেড হামলার এই মামলায় বিচারিক আদালতে বিগত বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু সহ ১৯ জনের ফাঁসির আদেশ হয়।

আর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে এবং দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯জনের যাবজ্জীবন সাজা হয়ে রয়েছে।

এখন হাইকোর্টে আপিল শুনানি শুরু করার উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে।

বিএনপি তাদের একজন শীর্ষ নেতার সাজা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে।

তবে হামলার সেই ঘটনা বিএনপি এবং পুরো রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

"শুধু বিএনপির উপরই নয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট পড়েছে নি:সন্দেহে। কারণ একটি রাজনৈতিক দলের জনসভার মধ্যে গ্রেনেড হামলা হবে, সেখানে অসংখ্য মানুষ আহত বা নিহত হবেন- এটা কোনমতেই মেনে নেয়া যায় না। এটা একটা সন্ত্রাসী ঘটনা। তবে তার সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত।"

এদিকে, বিশ্লেষকদের অনেকে এটাও বলেছেন যে, অসহিষ্ণু এবং বিদ্বেষমূলক রাজনীতির একটা চরম পর্যায় ছিল ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা। এরপর প্রধান দুই দলের মধ্যে অবিশ্বাস আরও বেড়েছে।

সায়মা হক বিদিশা মনে করেন,অসহিষ্ণু এবং বিদ্বেষের রাজনীতি থেকে আর বেরিয়ে আসা সম্ভব কিনা, সেই প্রশ্ন থেকে যায়। "বিশ্বাসের জায়গায় একটা ফাটল ধরেছে।"

আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নেতাদেরও অনেকে বলেছেন, আস্থা ফেরানো আর সম্ভব কিনা এনিয়ে তাদের মধ্যেও সন্দেহ রয়েছে। বিবিসি

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ