আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

চাকরির জন্য যেসব দক্ষতায় পিছিয়ে তরুণরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০১৯, ১২:৪১

দেশের স্কুল-কলেজগুলো থেকে তরুণ-তরুণীরা যে শিক্ষা পাচ্ছে, তাতে তারা কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে আসে।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক, বিআইজিডি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এ জরিপটি চালায়।

সারাদেশে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৪ হাজারেরও বেশি তরুণ-তরুণীর ওপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়।

সেখানে দেখা যায়, এ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কম্পিউটার ও ইংরেজি ভাষায় আত্মবিশ্বাসী মাত্র ১৬ শতাংশ। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারীদের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ মনে করেন যে, তাদের শিক্ষা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

জরিপের গবেষকদের একজন নিম্মি নুসরাত হামিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশই তরুণ-তরুণী, যারা আগামীতে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে। তাই এই তরুণদের চাওয়ার পাওয়া বা সমস্যার বিষয়গুলো জানতে এবং কোন ধরনের ক্ষেত্রগুলোয় কাজ করলে তাদের সুবিধা হবে- সেই বিষয়গুলো তুলে ধরতে গবেষণাটি বেশ সময়োপযোগী।’

তিনি বলেন, ‘আজকালকার তরুণরা কোনো দিকটায় ভালো, তারা কোনো বিষয়গুলো নিয়ে বেশিভাবে সেই ব্যাপারে তাদের মতামত জানাটা জরুরি।’

গবেষণা পরিচালনা করতে গিয়ে দেখা গেছে, শুধু চাকরি নয়, কেউ যদি উদ্যোক্তা হতে চান, তা হলে তারা ব্যবসা করার পুঁজি কোথা থেকে পাবে, এমনকি নিজেদের চাহিদাগুলোর ব্যাপারে বেশিরভাগ তরুণ সচেতন না বলে জানান তিনি।

এ ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নিম্মি নুসরাত হামিদ।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের যুব সমাজ স্কুল-কলেজে যে শিক্ষা পাচ্ছে, সেটা তাদের কর্মজীবনের জন্য পরিপূর্ণ রূপে তৈরি করতে পারছে না। কেননা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের দক্ষতার শিক্ষার অভাব রয়েছে। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তারা যেই দক্ষতা অর্জন করছে সেই দক্ষতা অনুযায়ী পর্যাপ্ত চাকরি নেই।’

নিম্মি নুসরাত হামিদ বলেন, ‘আবার যেই চাকরিগুলো রয়েছে, সেগুলোয় ভালো করার জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন। সেই দক্ষতা আমাদের যুব সমাজের নেই।’

যেমন কম্পিউটার পরিচালনায় দক্ষতা, ইংরেজি ভাষার দক্ষতা অথবা কারিগরি যে কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ।

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাত্র ১৪% তরুণ-তরুণী কারিগরি প্রশিক্ষণ পেয়েছে। আবার এ দক্ষতার মাপকাঠিতে দক্ষ তরুণের হার ২৪%- অর্থাৎ তারা তাদের কম্পিউটারে দক্ষতার ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসী। অথচ নারীদের কম্পিউটারে দক্ষতার হার মাত্র ১০%।

অন্যদিকে ইংরেজিতে দক্ষতায় এগিয়ে ২১% তরুণ। যেখানে নারীদের এই ভাষাগত দক্ষতার হার মাত্র ১৪%। অর্থাৎ দক্ষতার দিক থেকে নারীরা এখনো অনেকটাই পিছিয়ে আছে।

এ ব্যবধান শহরের চাইতে গ্রামে আরও বেশি চোখে পড়ে। এর প্রধান কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, স্কুলে শিক্ষার মান তেমন উন্নত হয়। আবার যেসব স্কুলে মানসম্মত পড়ালেখা হয়, সেখানে ভর্তি হওয়ার মতো সুযোগ বা সামর্থ্য নেই অনেকের।

গবেষণায় উঠে এসেছে, যেসব তরুণ-তরুণীরা এখনও লেখাপড়া করছেন, তাদের মূল লক্ষ্য থাকে পড়াশোনা শেষে দেশের বাইরে যাওয়া। কারণ দেশে থেকে কিছু করার ব্যাপারে তারা একদমই আশাবাদী না।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত তারা সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতে চান সবচেয়ে বেশি।

আবার যারা ইংরেজি ভাষা এবং কম্পিউটারে বেশ দক্ষ, তারা যেতে চায় অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশে।

এই দেশ ছাড়ার মূলে রয়েছে এই দেশের তরুণ সমাজের জন্য এখনও বড় ধরনের কোনো রোল মডেল নেই। অন্তত ৫৪% শিক্ষার্থী তাই মনে করে।

এ ক্ষেত্রে সরকারের নেটওয়ার্কিং বাড়িয়ে এই শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্রের যুক্ত করতে আরও দক্ষ করে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন নিম্মি নুসরাত হামিদ।

নুসরাত হামিদ বলেন, ‘সরকারি চাকরি তো সবাই করে। কিন্তু সরকারি চাকরির বাইরেও এই তরুণদের আরও অনেক সম্ভাবনাময় সুযোগ রয়েছে সেগুলো তাদের খুঁজে দিতে হবে। তরুণ-তরুণীদের হতাশার অন্যতম কারণ, তারা মনে করে যে তাদের কথাগুলো শোনার মত কেউ নেই। অথচ এই তরুণরাই আমাদের পথ দেখাবে।’

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ