আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

সড়ক দুর্ঘটনা : হাসপাতালে নেয়ার পথে এত মৃত্যু কেন?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০১৯, ১১:৪৯

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে গেলেই চিরচেনা শব্দ কানে ভেসে আসে। ব্যথায় কাতর রোগীদের গোঙানি আর স্বজনের কান্নায় ভারি হয়ে থাকে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত এই জরুরি বিভাগটি।

সেখানে করিডোরের মেঝেতে গামছা পেতে ঘুমিয়ে ছিলেন মিরসরাই উপজেলার বারৈয়ারহাট থেকে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন। সড়ক দুর্ঘটনায় গত বছরের রমজান মাসে গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তার মাথার কাছে দুটো ক্র্যাচ দাঁড় করিয়ে রাখা। মেঝেতে কয়েকটি কাপড়ের বোচকা ভর্তি দরকারি জিনিসপত্র। তার ওপর বসে স্ত্রী আসমা বেগম বলছিলেন, ‘দোকানের জন্য মাল কিনতে গেছিল। মাল নিয়ে আসার সময় দুই দিক থেকে দুইটা গাড়ি একত্রে ওর সিএনজিটাকে মেরে দিছে। মাথায় আঘাত পাইছে, পা আর হাত এই দুইটাই ভাঙ্গি গেছে।’

ঘটনার দিন আশপাশের পথচারী ও দোকানিরা কয়েকজন মিলে তাকে একটি সিএনজিতে করে নিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

আসমা বেগম সেই দিনটির ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলছিলেন, ‘প্রথমে আমাদের গ্রামে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স একটা আছে সেইখানে নিয়ে গেছিলো। কিন্তু সেইখানে রাখে নাই। বলছে চিটাগাং নিয়ে যান। ওর অবস্থা মারাত্মক ছিলো। পা এইটা এইখানে ছুটে গেছিলো। সেখান থেকে ভীষণ রক্ত বাইর হইতেছিল। চিটাগাং নেয়ার সময় গাড়িতে খ্যাতা কাপড় যা ছিল সব রক্তে ভাসি গেছিলো।’

তিনি বলছিলেন, ‘আসরের পরে অ্যাকসিডেন্ট হইছে। রাত্রি দুইটা বাজে চিকিৎসা পাইছে।’

অর্থাৎ এ রকম ভয়াবহ আহত একজন ব্যক্তির প্রথমে দুর্ঘটনা স্থল, তার পর স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সর্বশেষ সড়কপথে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত যাত্রা। এতে সবমিলিয়ে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টার মতো লেগে গিয়েছিল সঠিক চিকিৎসা সেবা শুরুই করতে।

এখন হাসপাতালে যাওয়া আসার মধ্যেই জীবন পার করছেন আসমা বেগম, দেলোয়ার হোসেন ও তাদের পরিবার। পায়ে বেশ সমস্যা রয়ে গেছে। বেশ কবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আবার করতে হবে। প্রতিবন্ধীতার মুখোমুখি দেলোয়ার হোসেন অন্তত প্রাণে বেঁচে গেছেন। স্বামীর পাশে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন আসমা বেগম।

কিন্তু তেমন সৌভাগ্যের অধিকারী নন বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার বিশাল সংখ্যক আহত ব্যক্তি।

ঢাকা মেডিকেলের মর্গের পাশে স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলেন কুমিল্লার চৌহারার রাজিয়া বেগম। সপ্তাহখানেক আগে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন তার রিকশাওয়ালা বাবা। বুধবার ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসার পথে মারা গেছেন তিনি।

সেভাবেই তাকে হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়েছিল। এখন তার মরদেহ গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জোগাড় চলছে।

দুটো একই ধরনের গল্প শুধু তফাৎটা হলো রাজিয়া বেগমের বাবা প্রাণে বাঁচেননি।

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে গড়ে চারভাগের তিনভাগই হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। অথবা সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ৬৩ শতাংশই ঘটছে হাসপাতালে নেয়ার পথে।

সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ অথবা সিআইপিআরবি নামের একটি সংস্থা ২০১৬ সালে ৯০ হাজারের মতো গৃহস্থালিতে একটি জরিপের পর এমন তথ্য দিচ্ছে।

কী কারণে বাংলাদেশে এমন মৃত্যুর সংখ্যা এত বেশি?
সিআইপিআরবির নির্বাহী পরিচালক ডা. একেএম ফজলুর রহমান বলছেন দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই প্রাথমিক জরুরি সেবার অনুপস্থিতি এর প্রধান কারণ।

তিনি বলছিলেন, ‘ইমার্জেন্সি মেডিকেল সার্ভিস বলতে আমরা যা বলি, উন্নত বিশ্ব যেটা ঘটে, যদি একটা দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে প্রথমেই একটা কল সেন্টারে ইনফর্ম করা হয়। এর পর প্রশিক্ষিত ম্যানপাওয়ার পাঠানো হয়। সেই টিম উদ্ধার করার পরে যেখানে দুর্ঘটনা ঘটে সেইখানেই একটা ব্যবস্থা হবে। হাসপাতালে যাওয়ার পথে যেটুকু চিকিৎসা দেয়া সম্ভব সেটা দিয়ে হাসপাতালে সঠিকভাবে ট্রান্সফার করা হয়। হাসপাতালে জরুরি বিভাগে লোক রেডি থাকে। তারা সেখানেই ইমারজেন্সি রুমে চিকিৎসা দেয়ার পরই যদি দরকার হয় তা হলে ইনডোরে ভর্তি করা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে সমন্বিতভাবে এই তিনটা বিষয় গড়ে ওঠেনি।’

তিনি বলছেন, উন্নত বিশ্বে প্যারামেডিক বলে আলাদা ইউনিট থাকে।

কোনো দুর্ঘটনায় প্রাথমিক জরুরি চিকিৎসা দেয়ার জন্য প্রশিক্ষিত এই বিশেষ কর্মীরা। তেমন একটি ইউনিট তৈরি খুবই জরুরি বলে মনে করছেন একেএম ফজলুর রহমান।

বাংলাদেশের জরুরি প্রাথমিক সেবার চিত্র কী?
বাংলাদেশে কিছু দিন হল পুলিশের পক্ষ থেকে চালু করা ৯৯৯ নম্বরের একটি জরুরী কল সেন্টার রয়েছে কিন্তু তাতে পুলিশি সেবা পাওয়া গেলেও জরুরি চিকিৎসা সেবার কোনো ব্যবস্থা নেই।

ডা. ফজলুর রহমান বলছেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করে অথবা আইনি সাহায্য দিলেও পুলিশ চিকিৎসা দিতে পারে না। এতে নষ্ট হয় খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়। অনেক সময় দুর্ঘটনার ক্ষেত্র কয়েক মিনিটের উপরও আহত ব্যক্তির বেঁচে থাকা নির্ভর করে।

দেখা যাচ্ছে প্রয়োজনে পাওয়া যায় না অ্যাম্বুলেন্স। আবার সেটি পাওয়া গেলেও তার সাথে থাকছে শুধু গাড়ির চালক ও সহকারী। অ্যাম্বুলেন্সে জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার যোগ্য কেউ যেমন থাকে না তেমনি কোনো যন্ত্রপাতিও থাকে না।

বাংলাদেশে সাধারণত সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে প্রথম সাহায্যকারী আশপাশের মানুষজন। তারাও মারাত্মক আহতদের সঠিকভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রশিক্ষিত নন। টানা হেঁচড়ায় রোগীর আরও বেশি ক্ষতি হয়ে যায়।

তার একটি বর্ণনা দিচ্ছিলেন, বাংলাদেশ সোসাইটি অব ইমার্জেন্সি মেডিসিন নামে একটি সংস্থার মহাসচিব ডা. রাগিব মনজুর। তিনি বলছেন, ‘ধরুন একটা গাড়ি অ্যক্সিডেন্ট হয়েছে। একজন মেরুদণ্ডে খুব আঘাত পেয়েছে। তাকে কিভাবে স্থানান্তর করতে হয় তা স্থানীয় মানুষজন জানে না। তারা টানাটানি করে যেভাবে গাড়ি থেকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে যাবে তাতে দেখা যাবে আহত ব্যক্তির মেরুদণ্ড আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো।’

অনেক সময় পুলিশের কাছে ঘটনার বর্ণনা সহ আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পরার ভয়ে পথচারীরাও গুরুতর আহত ব্যক্তির সহায়তায় কাছে আসতে চান না, বলছিলেন ডা. ফজলুর রহমান।

তিনি বলছেন, ‘এর জন্য দরকার একটা গুড সামারিটান ল। যে আইনের মাধ্যমে এই ব্যক্তিদের একটা সুবিধা দেয়া হবে যাতে তারা কাউকে সহায়তা করে কোনো আইনের মারপ্যাঁচে যেন না পরে।’

হাসপাতালেও জরুরি বিভাগ নেই
দেখা যাচ্ছে তার পরও অনেক ক্ষেত্রে পথচারীরাই ভরসা। তাদের সহায়তায় রিকশা, সিএনজিতে কোনোরকমে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলেও সরকারি হাসপাতাল ছাড়া জরুরি সেবার ব্যবস্থা থাকে না।

সরকারি তথ্যমতে, বাংলাদেশে রেজিস্টার্ড বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা ৫ হাজারেরও বেশি। বেশিরভাগেরই ইমার্জেন্সি বিভাগ নেই। কিছু ক্লিনিক বা হাসপাতালে ইমার্জেন্সি বলে সাইনবোর্ড টাঙানো থাকলেও সেখানে গুরুতর ঘটনার জরুরি চিকিৎসা মেলে না। বড়জোর কাঁটাছেড়ার ব্যান্ডেজ মেলে।

রোগীদের জরুরি সেবা দিতে অস্বীকৃতির কারণে রোগীর মৃত্যুর উদাহরণ বাংলাদেশে প্রচুর রয়েছে, বিশেষ করে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে।

বিষয়টি নিয়ে ক্যাম্পেইন করছেন ডা. রাগিব মনজুর।
তিনি বলছেন, জরুরি বিভাগ চালু করার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হাসপাতাল মালিকেরা। তার মতে, ‘প্রথম শব্দই আমি যেটা ব্যবহার করব সেটা হল জরুরী বিভাগ নন রিউওয়ার্ডিং। অর্থাৎ এটা দিয়ে পয়সা কামানো যায়না।’

তিনি বলছেন, ‘অনেক সময় ইমারজেন্সিতে রোগী ভর্তি করতে চায়না কারণ পুলিশি ঝামেলায় জড়াতে হতে পারে। একটা কেস হয়ে যেতে পারে।’

জরুরী বিভাগ চালানোর প্রশিক্ষিত কর্মী নেই
কিন্তু তিনি সবচেয়ে জরুরি মনে করছেন জরুরী বিভাগের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ডাক্তার ও নার্স।

তিনি বলছেন, ‘ট্রেইন্ড পার্সোনেলেরও অভাব আছে। এখন জুনিয়ররা ইমারজেন্সিতে কাজ করে। তারা কাজ জানে না। তাদের কোন সুপারভাইজার থাকে না। ফলে হয়কি, স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতাই তাদের নেই। তারা জানে না এর পরে কি করবে। সুতরাং ওরা ভয় পায় যে যদি কিছু হয় আমাকে যদি পেশেন্টের পার্টি ধরে মার দেয়।’

ডা. রাগিব মনজুর বলছেন জরুরি বিভাগে চিকিৎসা না পাওয়া যেমন সমস্যা তেমনি রোগীর আত্মীয়দের হাতে চিকিৎসকের মার খাওয়ার ঘটনাও হরহামেশাই ঘটছে।

বাংলাদেশে ২০১৬ সালে হাইকোর্টের দেয়া একটি নির্দেশনা অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিতে বাধ্য যেকোনো হাসপাতাল।

আইনি জটিলতার আশঙ্কায় চিকিৎসা সেবা দিতে অস্বীকার করা যাবে না।

এমনকি আহত ব্যক্তির আর্থিক সক্ষমতা না থাকলে দরকারে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কর্পোরেট সোশাল রেসপন্সসেবিলিটির আওতায় চিকিৎসা দেবে। আদালতের নির্দেশনায় এমন বিষয় উল্লেখ ছিলো।

সিআইপিআরবি বলছে, বাংলাদেশে নানা ধরনের আঘাতের ফলে মৃত্যুর দিক দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। কিন্তু কোনোভাবেই যেন সড়কে মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না।

এ রকম একটি জাতিয় সমস্যাকে অবহেলা করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কিত গবেষণা কেন্দ্র অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

সড়ক দুর্ঘটনার অর্থনৈতিক ক্ষতি
অধ্যাপক রহমান বলছেন এর একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির দিকও রয়েছে। তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলছেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় আমাদের যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে সেটা জিডিপির তিন শতাংশের মতো। আমি একটা কথা প্রায়ই বলি যে এই আর্থিক ক্ষতি যদি ঠেকাতে পারতাম, টাকাটা যদি বাঁচাতে পারতাম তাহলে সেই টাকা দিয়ে প্রতি বছর একটা করে পদ্মা সেতু বানাতে পারতাম।’

সিআইপিআরবির হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনার ফলে বছরে দেশে ২৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

অধ্যাপক রহমানের মতে, ‘সরকারের জন্য কোনো খাত থেকে হুমকি বা বিপদ যদি আসার সম্ভাবনা থাকে, এই সড়ক সেক্টর থেকে আসতে পারে। তার সিম্পটমও কিন্তু আমরা দেখেছি। মানুষের মধ্যে কিন্তু ক্ষোভ আছে।’

বাংলাদেশে কাছাকাছি সময়ে সবচাইতে বড় আন্দোলনই ছিলো নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন।

অধ্যাপক রহমান বলছেন, ‘বর্তমান সরকারের একটা ভিশনও রয়েছে যে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনা। আমরা যেহেতু উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখছি তাহলে আমাদের এই দিকে নজর দিতে হবে।’

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যায় হেরফের
এদিকে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়েও সরকারি ও বেসরকারি হিসেবে ব্যাপক হেরফের রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার ২০১৮ সালের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলেছে বাংলাদেশে বছরে ২৪ হাজারের বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।

কিন্তু পুলিশের রেকর্ড করা তথ্যে এর সংখ্যা ছিল আড়াই হাজারের কম।

অন্যদিকে খবরের কাগজে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে তৈরি এক জরীপে বেসরকারি সংস্থা যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিল ৭ হাজার ২২১ জন।

জরুরি প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা করতে কী করছে সরকার?
হেরফের হলেও এটি যে একটি মারাত্মক সমস্যা সেটি মানছেন সবাই। এমন মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত একটি জরুরী ব্যবস্থা তৈরিতে কি করা হচ্ছে?

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলছেন, ‘আমাদের সীমিত আকারের হলেও কিছু ব্যবস্থা আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটা কল সেন্টার আছে। নাম্বারটা হলো ১৬২৬২। পুলিশেরও আছে ৯৯৯। সেখানেও কল করে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাবে।’
কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সে গাড়ির চালক ছাড়া চিকিৎসা সেবা দেয়ার কোন প্রশিক্ষিত ব্যক্তি ও যন্ত্রপাতি নেই সে ব্যাপারে কি হবে?

এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই সুবিধাটা এখোনো যে খুব সুবিন্যস্ত সেটা দাবি করা যাবে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি বাংলাদেশে একটা ইমারজেন্সি মেডিকেল সার্ভিস তৈরির। অ্যাম্বুলেন্স যেন স্ট্যান্ডার্ড হয়। রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা যেন অ্যাম্বুলেন্সেই দেয়া যায়।’

কিন্তু দুর্ঘটনাস্থলের নিকটস্থ হাসপাতাল যদি বেসরকারি হয় আর তারা যদি আহত ব্যক্তিকে সাহায্য না দিয়ে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেন তাহলে কি হবে?

অনেক ক্ষেত্রে একজন আহত ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর হওয়ার কারণে তাকে একের অধিক হাসপাতাল ফিরিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

এ রকম একটি ঘটনা হচ্ছে বাংলাদেশের সরকারি সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জগলুল আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যু।

ঢাকার কাওরান বাজার এলাকায় একটি বাস থেকে নামার সময় দুর্ঘটনার শিকার জগলুল আহমেদকে কাছের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে চিকিৎসা দিতে রাজি হয়নি হাসপাতালটি।

ড. আজাদ বলছেন, ‘আমরা যে ইমারজেন্সি ব্যবস্থা চালু করতে চাই সেই প্রোটকল চালু হলে সব হাসপাতালে ইমারজেন্সি ব্যবস্থা থাকতে হবে। এরকম একটা বিষয় চালু করতে আমরা কাজ করছি।’

ড. আজাদ আরও বলছেন যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা থাকবে সেটি বিনামূল্যে দিতে চায় সরকার। তবে তিনি নিজেই বলছেন রাতারাতি এতসব করে ফেলা সম্ভব নয়।

যতদিন তা সম্ভব না হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার পর জরুরী চিকিৎসা সেবার অভাবে দেলোয়ার হোসেনের মতো পঙ্গুত্বের মুখামুখি হতে হচ্ছে অনেককে।

রাজিয়া বেগমের মতো স্বজন হারাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ