আজকের শিরোনাম :

সরকারি কমিটির সুপারিশ মানবে মালিক শ্রমিকরা?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ২০:১৬

বাংলাদেশে সড়কপথে নৈরাজ্য বা বিশৃঙ্খলা বন্ধের জন্য সরকারের গঠিত কমিটি ১১১দফা সুপারিশ তৈরির পর বৃহস্পতিবার তা অনলাইনে প্রকাশ করে জনগণের মতামত চেয়েছে।

বৃহস্পতিবার থেকে ১০দিন অনলাইনে সুপারিশের ওপর মতামত দেয়া যাবে।

কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এবার সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠন করে নিয়মিত তদারকির প্রস্তাব করা হয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এসব সুপারিশ কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব? সড়ক পরিবহণ খাতের শ্রমিক মালিকরা কতটা প্রস্তুত?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কে বিশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে চালকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকে একটা বড় সমস্যা হিসেবে তারা দেখেন।

সরকারি কমিটিও এই সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে তাদের সুপারিশে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেছে।কিন্তু এটিসহ সুপারিশের অনেকগুলোর বাস্তবায়ন নির্ভর করবে শ্রমিক মালিকদের ওপর।

যদিও শাজাহান খানের নেতৃত্বে এই কমিটিতে বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি মালিক শ্রমিক প্রতিনিধি রয়েছেন এবং সেকারণে এবার বাস্তবায়নে বাধা হবে না বলে অনেকে বলছেন।

কিন্তু একজন বাস চালক রবিউল ইসলাম বলছিলেন, মাঠের শ্রমিকের সমস্যা বা বাস্তবতা কতটা বিবেচনায় নিয়ে সুপারিশ করা হয়েছে, সেটা তারা জানেন না।

"রাস্তাঘাটে দৌঁড়াতে গেলে, হোঁচট খাওয়া লাগে।যখনই হোঁচট খাব রাস্তায় এবং গাড়ির কোনো ক্ষতি হবে, তখন মালিকরা বেতন থেকে তা কেটে নেবে।যার কারণে এই মাসিক বেতন পরিবহণ সেক্টরে চলবে না। চাক্তি বা মজুরিভিত্তিতেই চালাতে হবে। এটাই বাস্তবতা।"

তবে রবিউল ইসলাম নিজে একজন চালক হিসেবে মনে করেন, চালকের লাইসেন্স পাওয়াটা কড়াকড়ি করা উচিত। নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যাপারেও চালকদের সম্মতি থাকবে বলে তার ধারণা।

কিন্তু সরকারি কমিটির সুপারিশেও বলা হয়েছে যে, চুক্তি বা দিন মজুরি ভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগের কারণে ঢাকার রাস্তা এবং মহাসড়কগুলোতেও বাসসহ বড় যানবাহনের চালকরা অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামে। বেশি যাত্রী নেয়ার জন্য গাড়িগুলো একে অপরকে ওভারটেক করে বা দ্রুত গতিতে চালায়।এই বিষয়টিই সড়ক দুর্ঘটনার একটা বড় কারণ হিসেব কমিটি মনে করে।

সেজন্য এই কমিটি মাসিক বেতনের ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে।

একজন পরিবহণ মালিক খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলছিলেন, মালিকদের জন্য করনীয় ঠিক করা হলে, সেটা তারা মানবেন। কিন্তু সড়কে অবকাঠামো সহ সামগ্রিকভাবে পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

"আসলে একজন মালিক হিসেবে আমিও চাই মাসিক বেতনের ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগ করতে। কারণ চুক্তিভিত্তিতে আজ একজন চালক পাওয়া গেরে কাল তাকে পাওয়া যায় না। কিন্তু মাসিক বেতন ব্যবস্থা করতে গেলে তার জন্য একটা পরিবেশ দরকার।"

তিনি আরও বলেছেন, "এই পরিবহণ খাতে যা সমস্যা আছে তার শতকরা ২০ভাগ শ্রমিক এবং মালিকদের জন্য হচ্ছে। কিন্তু ৮০ভাগ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে প্রশাসনিক, ব্যবস্থাপনা এবং নানান কারণে।সেগুলোও সরকারের দেখা উচিত।"

ঢাকায় দু'জন কলেজ শিক্ষার্থী বাস চাপায় নিহত হওয়ার ঘটনায় গত বছরের জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন বিক্ষোভের মুখে অনেক প্রতিশ্রুতি এসেছিল।

তার আগেও বিভিন্ন কমিটি অনেক সুপারিশ করেছে। কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।

এখন সর্বশেষ সাবেক নৌপরিবহণ মন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি ১১১টি সুপারিশ চূড়ান্ত করে সেগুলো বিএরটিএ'র ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে নাগরিকদের মতামত আহবান করেছে।

মি: খান বলেছেন, সড়কপথে শৃঙ্খলা রক্ষায় কয়েকটি মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন সংস্থা কাজ করে। তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে এতদিন বিভিন্ন কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

তিনি উল্লেখ করেছেন, বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এবার তারা টাস্কফোর্স গঠন করে নিয়মিত তদারকির প্রস্তাব করেছেন।

"যে সুপারিশগুলো হয়, সেগুলো একেক মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করে।এই মন্ত্রণারয়গুরো সমন্বয় কে করবে-এই জায়গায় ঘাটতি ছিল। সেজন্য আমরা এবার সমন্বয় করতে একটা অথরিটি গঠনের কথা বলেছি।"

শাজাহান খান জানিয়েছেন, তারা সড়ক পথে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সাত ভাগে ভাগ করে তা সমাধানের জন্য সুপারিশ করেছেন।

তাতে তারা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট করে চালকদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন।এক বা দুই মাস সময় নির্ধারণ করে এই প্রশিক্ষণের সময়টাতে চালকদের ভাতা দিতে সরকারকে ভর্তুকি দেয়ার সুপারিশও তারা করেছেন। পুলিশ এবং বিআরটিএ'র দুর্নীতি বন্ধেরও সুপারিশ এসেছে।

একইসাথে জনগণের জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেয়ার কথাও বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের অধ্যাপক রোকসানা হাফিজ বলছিলেন, সুপারিশ বাস্তবায়নে সড়ক পথের সাথে জড়িত সব পক্ষের সদিচ্ছা দেখাতে হবে।

"সুপারিশ সবই ঠিক আছে। কিন্তু এগুলো কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না।" বিবিসি

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ