আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধই কি কাশ্মীর দ্বন্দ্বের সমাধান?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০১৯, ১৫:১৮

প্রয়োজনে তোমার সীমানার ভেতরে আক্রমণ চালাতে আমরা দ্বিধা করব না, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ রেখো না। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক অস্থিরতা চলাকালীন দুই দেশ একে অপরকে বেশ পরিষ্কারভাবেই এমন একটি বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছে।

আবার হুঁশিয়ারির পাশাপাশি সৌজন্য আর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশেও দুই দেশ সমান উদারতার পরিচয় দিয়েছে।

আক্রমণ করার ক্ষেত্রে দুই দেশই বেছে নিয়েছে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুকে, যেন কোনো পক্ষের সেনারাই আঘাত না পায়।

আর তার পর ক্রমাগত সাফাই গেয়ে গেছেন যে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব সেনা সদস্যদের ওপরই বর্তায়।

যেহেতু আমাদের ওপর সরাসরি আঘাত করা হয়নি, তাহলে কি এই সংঘাতে আমাদের যোগ দেয়া উচিত? দুপক্ষই ভেবেছিল যে তাদের সেনা কর্মকর্তারা এমন একটা দোটানার মধ্যে থাকবে।

কিন্তু টেলিভিশনের সামনে বসে থাকা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ডুবে থাকা মানুষ এত জটিলতা বোঝে না।

তারা শুরু থেকেই এই কাদা ছোড়াছুড়ির একটাই অর্থ খুঁজে পেয়েছে; আর তা হলো যুদ্ধ।

তাদের মতে, সমস্যার শুরু যাই হোক আর এর সমাধানের পথ যেদিকেই থাকুক, যুদ্ধের মাধ্যমে এর রফা করার মধ্যে দোষের কিছু নেই।

সাধারণ মানুষ হয়তো মনে করেছিল যে, অস্ত্রগুলোর একটা নির্দিষ্ট স্থায়িত্বকাল রয়েছে যা বেশিদিন অব্যবহার্য অবস্থায় ফেলে রাখলে নষ্ট হয়ে যাবে। কাজেই মূল্যবান অস্ত্রের অপচয় না করে শত্রুর ওপর তার কিছুটা পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করলে লাভ ছাড়া ক্ষতি তো নেই!

কিন্তু ভারতীয় পাইলট আভিনন্দন ভার্তামানকে পাকিস্তান ফেরত পাঠানোর পর সবারই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। বিশেষ করে সামনেই ভারতের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকায় রাজনীতিবিদরা হয়তো এ সমস্যার সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করবেন।

আমরা ৭০ বছর ধরে এই এক ইস্যুতে যুদ্ধ করে আসছি, আর এখন আরেকবার যুদ্ধ শুরু হলে তা কতদিনে শেষ হবে, সে বিষয়েও আমরা নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারি না। কেবল ঈশ্বরই জানেন এর শেষ কোথায়।

পরিস্থিতি এই পর্যায় পর্যন্ত কীভাবে আসলো তা একটু খতিয়ে দেখার চেষ্টা করি আমরা।

পুলওয়ামায় ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষীদের ওপর হামলায় ৪০ জন নিহত হওয়ার পর ভারত সরকারের ওপর বেশ চাপ তৈরি হয় ওই ঘটনার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য।

নরেন্দ্র মোদি এখনো যেই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু হওয়ার পর আরও বেশি যে প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন- তা হলো, জনসমর্থন অর্জন করে আসন্ন নির্বাচনে জেতার উদ্দেশ্যেই তিনি এ অভিযানে সম্মতি দিয়েছেন কি না।

তবে ভারতের সরকার বলছে, আক্রমণ করা ছাড়া পাকিস্তানকে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনের আর সব রাস্তা অনেকটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

এ রকম একটা ধারণা আছে যে, এ অভিযানের সম্মতি না দেয়া হলে নরেন্দ্র মোদির বুকের পাটা কতটুকু তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়ে যেত।

তবে কয়েকজন সামরিক বিশেষজ্ঞ এমনও প্রশ্ন তুলেছেন- এই অভিযানের ধারাবাহিকতায় দুদেশের মধ্যে আরো বড় কোনো সংঘাতের সূত্রপাত হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি নিয়ে সরকার কতটুকু চিন্তা করেছিল।

এমুহূর্তে অবশ্য ধীরে ধীরে উত্তেজনা প্রশমিত হচ্ছে।

কাজেই আক্রমণের চূড়ান্ত অনুমতি দেয়ার আগে ওই সিদ্ধান্তের ফলে একটি পরমানু যুদ্ধ শুরু হতে পারত কি না সে বিষয়ে নেতারা কতটা ওয়াকিবহাল ছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো আমরা কিছুদিনের মধ্যেই পেতে শুরু করব।

আরও একটি প্রশ্ন উঠছে। সেটি হলো, এখন পর্যন্ত বিজয়ী আসলে কারা? নাকি এখনো ‘ম্যাচ ড্র’ হয়েছে বলা চলে?

ভারত সরকার যেদিন বালাকোটে আক্রমণের বিস্তারিত জানায়, সে দিন সবাই মনে করেছিল যে এবারের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির জয় একরকম নিশ্চিতই হয়ে গেলো।

ভারতের কাছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিশ্বাসযোগ্যতাও এখন অনেকটাই প্রশ্নের মুখে।

ভারত এখন ইমরান খানের একটি বিষয়ই আমলে নেবে- তা হলো ভারতে হামলা করা জঙ্গিদের দমনে তিনি কী ভূমিকা নেন। কিন্তু কাশ্মীরে আরেকটি রক্তক্ষয়ী হামলা হলে পরিস্থিতি কী হতে পারে, সে বিষয়ে কেউই কথা বলছে না।

একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল বলছিলেন, যুদ্ধে উত্থান-পতন থাকবেই। যুদ্ধের সময় কোনো পক্ষেরই উচিত না অতি দ্রুত হতাশ হওয়া অথবা বিজয় উদযাপন করা উচিত নয়।

ভারতের একজন পাইলটকে আটক করার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ার পর উত্তেজনা প্রশমিত হতে শুরু করে।

দুদেশের মধ্যে এবারের সংঘাতের বিস্তারিত বিশ্লেষণ প্রকাশিত হলে হয়তো সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবে যে একজন পাইলটের জন্য শতশত বা হাজার হাজার মানুষের জীবন বেঁচে গেছে।

পাইলট যদি বেঁচে না থাকতেন তা হলে ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিশোধের দাবি থাকত প্রবল, তখন নরেন্দ্র মোদির হাতে অন্য কোনো রাস্তাও হয়তো খোলা থাকত না।

তাই আটককৃত পাইলটকে ছেড়ে দেয়ার কারণ ইমরান খানের ভাষায় ‘শুভাকাক্সক্ষীতার ইঙ্গিত’ নাকি পাকিস্তানের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের চাপ- সে বিষয় এখনই নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ না থাকলেও, ফলে যে দুদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা দ্রুত প্রশমিত হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

তবে কাশ্মীরের সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা আপাতত স্তিমিত হলেও দুদেশের রাজনীতিবিদ, সাধারণ মানুষ আর গণমাধ্যম এ বিষয়ে উত্তপ্ত আলোচনা যে এখানেই ছেড়ে দেবে না, তা বলাই বাহুল্য।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ