আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা ভোটের মাঠে নিরুদ্যম কেন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৫৯

বিএনপির নেতাকর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কের কারণে ভোটের মাঠে এখনো সেভাবে সক্রিয় হতে পারছে না বলে দলটির নেতারা অভিযোগ করেছেন।

তারা দাবি করেছেন, নির্বাচন কমিশনে বার বার অভিযোগ তুলে ধরার পরও তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রায় এক মাসে তাদের ২ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রফতার করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন বিনা কারণে কাউকে গেফতার বা পুলিশি হয়রানি না করার ব্যাপারে তাদের নির্দেশের কথা তুলে ধরছে।

অন্যদিকে সারাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে দলটির নেতারা বলছেন।

দক্ষিণে পশ্চিমে সীমান্তবর্তী যশোরের শার্শা উপজেলায় বিএনপির ভালো সাংগঠনিক অবস্থান রয়েছে। কিন্তু সেই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান জহির অভিযোগ করেছেন, সেখানে তাদের সাংগঠনিক শক্তি ভাল হলেও নেতা কর্মীরা নির্ভয়ে বা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাঠে নামতে পারছে না। পুলিশি হয়রানি এবং গ্রেফতারের ভয়ে তারা এখনো একটা গুমোট পরিবেশের মধ্যে রয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। 

আবুল হাসান জহির বলেন, ‘গত এক সপ্তাহের মধ্যেই নাশকতার নতুন একটি মামলা দিয়ে বিএনপির ৯ স্থানীয় নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শার্শা ছোট একটা উপজেলা। এখানে আমাদের নেতা কর্মীরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু পুলিশ আতঙ্কে আমরা আতঙ্কিত। নাশকতার মামলা হচ্ছে। ফলে আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে যে ভোট করবে, সেই সাহস পাচ্ছে না।’

অন্যদিকে শার্শা উপজেলাতেই গ্রামপর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়েছেন।

নির্বাচনের প্রচারণাযুদ্ধের প্রস্তুতিতেই তাদের মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীরা সকলেই এখন একটা উৎসবমুখর পরিবেশে। প্রতিটি ইউনিয়নে-গ্রামে এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মাঝে যে উৎসাহ, এটা লক্ষ্যণীয়।’
ঢাকায় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সারাদেশেই সবদলের নেতাকর্মীদের মাঝেই ভোট উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে।

কিন্তু শার্শা উপজেলার মতোই দেশের অন্যান্য নির্বাচনী এলাকাতেও গ্রেফতার আতঙ্ক থেকে বিএনপির নেতা কর্মীরা ভোটের মাঠে স্বতস্ফূর্তভাবে সক্রিয় হতে পারছে না বলে ঢাকায় বিএনপির নেতারা বলছেন।

তারা মনে করছেন, এ ধরনের পরিবেশ অব্যাহত থাকলে নির্বাচনী প্রচারণায় এবং এমনকি ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রেও তাদের সমস্যা হতে পারে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলছিলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এপর্যন্ত সারাদেশে তাদের ২ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইন শৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো বেপরোয়াভাবে বিএনপির নেতা কর্মিদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে।এবং গ্রেফতার করছে। নির্বাচন মানেই তো উৎসবের একটা আমেজ। কিন্তু সবসময় সংশয় শঙ্কার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। গ্রেফতারের ভয় পেতে হচ্ছে।

রিজভী আরও জানিয়েছেন, নাশকতার পুরোনো মামলাগুলো সচল করে বিএনপি নেতা কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং অনেক এলাকায় নতুন মামলাও দেয়া হচ্ছে।

তিন দিন আগে ঢাকার কাছে টঙ্গী থেকে সেখানকার বিএনপির যুব সংগঠনের একজন নেতা জসীম ভাটকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তার মেয়ে জেসিন ভাট অভিযোগ করেছেন, নাশকতার পুরোনো মামলায় তার পিতা জামিনে থাকলেও দলের নির্বাচনী বৈঠকের সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিএনপি এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সাথে কয়েকদফা বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে দলটি নির্বাচনে তাদের অন্যতম উদ্বেগের বিষয় হিসেবে গ্রেফতারের ইস্যুকে তুলে ধরেছে।

তারা সপ্তাহ দুয়েকআগে তাদের ৫ শতাধিক বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের একটি তালিকাও কমিশনকে দিয়েছে। এরপরও পরিবেশ বদলাচ্ছে না বলে তারা অভিযোগ করছেন।

নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম এই ইস্যুতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর প্রতি তাদের নির্দেশের কথা তুলে ধরেন। বলেন, ‘আমরা কিন্তু ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি যে, বিনা কারণে বা কোন হয়রানিমূলক গ্রেফতার যেন করা না হয়। এরপরও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিনাকারণে গ্রেফতার হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবশ্যই কমিশন জবাবদিহিতার মধ্যে আনবে।’

এদিকে, পুলিশে ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে, তারা দাবি করেছেন, ফৌজদারি অপরাধের মামলার সুনির্দিষ্ট অভিযুক্ত ছাড়া কাউকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে না।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ