আজকের শিরোনাম :

বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের নতুন বই পেতে ব্যত্যয় হবে না

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:১১

বছর শেষে নির্বাচন তৎপরতায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার শঙ্কা থাকলেও নতুন শিক্ষা বর্ষের বিনামূল্যের বই নিয়ে কোন শঙ্কা নেই। শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই দেশের সকল শিক্ষার্থী হাতে পাবে ৩৫ কোটিরও বেশি পাঠ্যবই। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা সাংবাদিকদের বলেছেন, যেভাবে ছাপার কাজ এগোচ্ছে তাতে চলতি মাসের মধ্যেই ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ বই উপজেলা পর্যায়ে চলে যাবে। ৮ থেকে ১০টি প্রতিষ্ঠান কিছুটা দেরিতে কার্যাদেশ পেয়েছে, তাদের বইও ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুল পর্যায়ে চলে যাবে। জানা গেছে, এ পর্যন্ত মোট ৩৫ কোটি পাঠ্যবইয়ের মধ্যে ২৫ কোটির বেশি বই ছেপে সরবরাহ করেছেন মুদ্রাকররা। এনসিটিবি বলছে, প্রায় ৮০ শতাংশ বই পৌঁছে গেছে জেলা ও উপজেলায়। নতুন শিক্ষাবর্ষে সারাদেশের চার কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার ৮৬৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত মোট বইয়ের সংখ্যা ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২ কপি। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের বই ছাপাতে বিদেশী দুটিসহ মোট ৫৪টি প্রতিষ্ঠান এবং মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপাতে ১৪৫টি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিয়েছে এনসিটিবি। মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজী ভার্সন) এবং এসএসসি ভোকেশনাল স্তরের ছয় কোটি ৫১ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬২ কপি বইয়ের শতভাগ ইতোমধ্যেই সরবরাহ সম্পন্ন হয়েছে। ৩৪০টি লটে এসব বই ছাপার কাজ দেয়া হয়েছিল। মাধ্যমিক বাংলা ও ইংরেজী ভার্সন, ইবতেদায়ী, দাখিল, এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল এবং কারিগরি (ট্রেড বই) স্তরের ১৩ কোটি ৭৪ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫৫ কপি বইয়ের মধ্যে ইতোমধ্যে আট কোটি ৯৮ লাখ ৬৬ হাজার ৮২৬ কপি বই সরবরাহ সম্পন্ন হয়েছে। এসব বই ১৮৮টি লটে ছাপা হচ্ছে। এনসিটিবি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বই সরবরাহের কাজ নিয়ে দেরিতে ছাপার কাজ শুরু করায় তাদের কারণ দর্শানো নোটিস দেয়া হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর আর্থিক জরিমানা ও অন্যান্য শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়া হবে। এর মধ্যে হক প্রিন্টিং প্রেস, নিবেদিকা প্রিন্টিং প্রেস, এআরটি প্রিন্টিং প্রেস অন্যতম। একই অভিযোগে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। নিম্নমানের কাগজে বই মুদ্রণ ও বাঁধাইয়ের কারণে ‘রায়ান’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সাড়ে চার হাজার কপি বই বাতিল করে পুনরায় ছাপাতে প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করেছে এনসিটিবি। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১১ হাজার কপি বই কেটে ফেলা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সম্প্রতি উপানুষ্ঠানিক (নন-ফরমাল এ্যাডুকেশন) শিক্ষার জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রায় ৩২ লাখ কপি বই ছাপার চাহিদাপত্র দিয়েছে। আটটি বিভাগে এসব বই সরবরাহ করা হবে। আগামী বছর জুন-জুলাই থেকে উপানুষ্ঠানিক বইয়ের প্রয়োজন হবে জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, এই বইয়ের সংখ্যা ৩২ লাখের কিছু বেশি। পিপিআর অনুযায়ী, যারা কাজ পাওয়ার যোগ্য তাদেরই এসব বই ছাপার কার্যাদেশ দেয়া হবে। এতে বিদেশী প্রতিষ্ঠান কাজ পেতে পারে আবার দেশী প্রতিষ্ঠানও পেতে পারে। কর্মকর্তারা বলছেন, উপানুষ্ঠানিক বেশিরভাগ বইয়ের কাজ পাচ্ছে বিদেশী প্রতিষ্ঠান। কারণ তারা কমমূল্যে কার্যাদেশ নিয়ে ইতোমধ্যেই ভালমানের বই সরবরাহ করেছে। কিন্তু দেশীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চড়া মূল্যে বই ছেপে এখন উপানুষ্ঠানিক বইয়ের কাজও পেতে চাচ্ছেন। এদিকে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের আগেই সারাদেশের প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেওয়া হবে। ২০১৯ শিক্ষা বর্ষের এসব বই যেন কোনো ধরনের ঝুঁকিতে না পড়ে, সেজন্য বেশ দ্রুততার সঙ্গে মুদ্রণ কাজ এগিয়ে চলেছে। অন্যান্য বছরে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বই জেলায় জেলায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এসব সমস্যা মাথায় রেখেই এ বছর ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বিনামূল্যের বই পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। এবার আন্তর্জাতিক বাজারে কাগজের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় মুদ্রণ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দরে মিলছে না। প্রতিটি লটেই অতিরিক্ত টাকা চাচ্ছেন প্রেস মালিকরা। তবে সরকারি কোষাগার থেকে বরাদ্দের বাইরে এবার বাজেট বাড়ানোর প্রয়োজন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিতরণ শাখার নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. জিয়াউল হক। তিনি জানান, ২০১৯ সালের বইয়ের জন্য মোট ১ হাজার ২২২ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর বাইরে সুখপাঠ্য প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ সাশ্রয় হওয়ায় সেগুলো এ খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। ফলে মোট বাজেটের যায়গায় কোনো হেরফের হচ্ছে না। আমরা মনে করি, নতুন বছরের শুরুতে নতুন বইয়ের গন্ধ পাওয়ার বিষয়টি গত কয়েক বছর ধরে চলে আসছে। এটি এখন উৎসবের দিন। তাই এ বছরও যাতে এই উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় থাকে সে জন্য বই মুদ্রণের কাজ সন্তোষজনক। অভয় আভাস দেওয়া হয়েছে যে, এ বছর নির্বাচনী ডামাডোল থাকলেও ঠিক সময়মতো বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীরা বই পাবে। আমরা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ দিতে চাই। সংগৃহীত

এই বিভাগের আরো সংবাদ