আজকের শিরোনাম :

সংসদ নির্বাচন: ভোটের সময় ভুয়া খবর কতটা প্রভাব ফেলবে?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০১৮, ১৭:৫৫

বাংলাদেশে অনলাইনে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়িয়ে হামলা কিংবা উত্তেজনা সৃষ্টির বেশকিছু আলোচিত ঘটনা ঘটেছে এর আগে।এমন অবস্থায় আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের আগে ভুয়া খবর ছড়িয়ে সুবিধা নেয়ার বা সহিংসতা সৃষ্টির প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন অনেকে। কিন্তু নির্বাচনের আগে ভুয়া খবরের এই ঝুঁকি কতটা ব্যাপক? আর এ ঝুঁকি এড়াতে করণীয়ই বা কী?

ভুয়া খবর ও রাজনীতি

গত ১৪ই নভেম্বর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। সেদিন দলের নির্বাচনী মনোনয়নপত্র সংগ্রহের জন্য নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়েছিলেন দলীয় কার্যালয়ের সামনে।

সংঘর্ষের পরদিন থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের গাড়িতে এক যুবক অগ্নিসংযোগ করছেন এরকম একটি ছবি দুইভাবে ভাইরাল হয়।

একটি ছবিতে যুবকের পরিচয় দেয়া হয় ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে। অন্যটিতে ছাত্রদল নেতা হিসেবে। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দেয়।

এর মাস তিনেক আগে ঢাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করেও নানারকম গুজব, ভুয়া খবর বা ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো।

এসব ভুয়া প্রচারণার পেছনে উদ্দেশ্যটা খুবই পরিস্কার। পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সহিংসতা উস্কে দেয়া কিংবা ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরণের প্রবণতা দিনদিন কেন বাড়ছে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, "প্রযুক্তি এখন মানুষের কাছে অনেক সহজলভ্য। যাদের দক্ষতা আছে তারা চাইলেই একজনের দেহে আরেকজনের ছবি বসিয়ে দিতে পারেন।"

তবে এসব কাজ করে ফায়দা নেয়ার সুযোগ স্বাভাবিক সময়ে কম থাকে বলে যখন দেশে কোন বড় ঘটনা ঘটে তখন ভুয়া প্রচারণার প্রবণতা বেড়ে যায় বলে মনে করেন মিজ নাসরিন।

মার্কিন নির্বাচনে ভুয়া খবর তৈরি করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার অভিযোগ নিয়ে এখনো বিতর্ক হয়।

জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভুয়া খবরের ঝুঁকি কতটা?

বাংলাদেশে এখন চলছে নির্বাচনী মৌসুম। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে জোর প্রস্তুতি, প্রতিযোগিতা। কখনো কখনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতিও সৃষ্টি হচ্ছে। এমন অবস্থায় ভুয়া খবরের প্রবণতা আরো বাড়ার আশংকা করছেন গীতি আরা নাসরিন।

"নির্বাচন এমন একটা অবস্থা যেখানে এমনিতেই টেনশন অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ে থাকে। এমন সময় প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীকে ঘায়েল করতে বা সুনামহানি করতে কিংবা নির্দিষ্ট কোন প্রার্থীকে মহান বানাতে ভুয়া খবর ফেসবুকে ছড়ানো হতে পারে। অতীতে এমন অনেক উদাহারণ আছে।''

নির্বাচনের সময় ভোট কেন্দ্র সম্পর্কে ভুল খবর দিয়ে, কোন বিশেষ জনগোষ্ঠী বা ভোটারদের সম্পর্কে গুজব ছড়িয়ে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন মিজ নাসরিন।

তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান অনলাইন ব্যবহারকারীদের অধিকাংশেরই তথ্য যাচাইয়ের দক্ষতা নেই।

ভুয়া খবর এড়াতে কী সতর্কতা নেয়া যায়?

বাংলাদেশে খবরের সত্যতা যাচাইয়ের কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান বিডি ফ্যাক্ট চেক।

প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা কদরুদ্দিন শিশির সাধারণ কিছু সতর্কতা অবলম্বনের উপদেশ দিয়েছেন।

এবিষয়ে বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন:

ভুয়া খবর ঘিরে বাংলাদেশে পাঁচটি বড় ঘটনা

বিবিসি জরিপ: কেন মানুষ ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে

ভুয়া খবর: ফেসবুকে রাজনীতি নিয়ে ছড়িয়ে দেয়া গুজব

ভুয়া খবরের হেডলাইন সাধারণত: চটকদার হয়। 'না দেখলে মিস' 'একি বললেন' বা 'ব্রেকিং নিউজ' এ ধরণের ভাষা বা শব্দের ব্যবহার কিংবা অস্বাভাবিক কোন তথ্য দেখলেই সতর্ক হতে হবে। খবরের লিংকে ক্লিক করে দেখা যেতে পারে খবরটি কোন ওয়েবসাইটের।

খেয়াল করতে হবে সেটি মূলধারার কোন গণমাধ্যম কি-না। যদি সেটা অপরিচিত বা অখ্যাত কোন ওয়েবসাইট হয় তাহলে সেটি বিশ্বাস বা শেয়ারের আগে আরো যাচাই করতে হবে।

এক্ষেত্রে হেডলাইনটি কপি করে গুগল সার্চে দিলে খবরটি যদি সত্য হয় তাহলে এ সংক্রান্ত একাধিক খবরের লিংক চলে আসবে। সেগুলো পড়ে দিন-তারিখ যাচাই করে খবরটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব।

একইভাবে কোন ছবি সম্পর্কে সন্দেহ হলে ছবিটির উপর মাউস রেখে রাইট বাটন ক্লিক করে গুগল সার্চ অপশনে ছবিটির তথ্য ঘেঁটে দেখা যেতে পারে।

এখন যেহেতু খোদ ওয়েবসাইটও ক্লোন করা হচ্ছে, সেহেতু ওয়েবসাইটের ঠিকানা ভালোভাবে খেয়াল করে রাখা যেতে পারে। সূত্র: বিবিসি বাংলা। 

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ