মাসুদা ভাট্টি-মইনুল হোসেন বিতর্ক ঢুকে পড়লেন তসলিমা নাসরিন
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ১২:০৪
সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি ও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে নিয়ে যখন বিতর্ক তুঙ্গে, ঠিক তখনই নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিনের এক ফেসবুক পোস্ট আলোচনার মোড় অনেকটাই ঘুরিয়ে দিয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচিত নাম ‘মাসুদা ভাট্টি’।
গত ১৬ অক্টোবর একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলে মন্তব্য করেন নিউ নেশন পত্রিকার সম্পাদক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন।
এর পর দেশের ৫৫ জন বিশিষ্ট সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির পাশে দাঁড়িয়ে মইনুল হোসেনকে ক্ষমা চাইতে বলেন।
এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই রবিবার তাকে ভীষণ রকম চরিত্রহীন বলে মন্তব্য করেছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
সেখানে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যারা কুৎসা রটাতে শুরু করল, সেই মিছিলে শামিল হলো মাসুদা ভাট্টি।’
রবিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া এক স্ট্যাটাসে এমন মন্তব্যের কারণে আলোচনায় আসেন তিনিও।
পরে মাসুদা ভাট্টিও তার নিজস্ব ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তসলিমা নাসরিনের দেয়া স্ট্যাটাসের জবাবে পাল্টা একটি স্ট্যাটাস দেন।
সেখানে তিনি বলেন, “যখন পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কবলে থেকে একদল মানুষ ন্যয়ের জন্য লড়ছে, তখন মইনুল হোসেনের দেওয়া তকমা ‘চরিত্রহীন’-কে একটি ‘ভীষণ’ শব্দ জুড়ে দিয়ে আমার চরিত্রের সার্টিফিকেটকে আরও শক্ত করেছেন তসলিমা নাসরিন।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের দুজনের এ পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাসের কারণে এ ইস্যুতে সাংবাদিকদের আন্দোলনের ধারাটি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। যেখানে আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছেন তসলিমা নাসরিন বনাম মাসুদা ভাট্টি।
বিষয়টিকে ‘দুঃখজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।
তিনি বলেন, ‘মাসুদা ভাট্টির সঙ্গে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের যে রাজনৈতিক তর্ক চলছিল, সেটা একপর্যায়ে অন্যদিকে মোড় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যে গড়িয়েছিল। পরে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মন্তব্য নিয়ে যখন বিতর্ক শুরু হল, তখন সেই ইস্যুটা আবার ঘুরে গেল তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক স্ট্যাটাস পোস্টের পর।’
বিষয়টি কোনো অবস্থাতেই তসলিমা নাসরিন বা মাসুদা ভাট্টির ব্যক্তিগত রেষারেষির জায়গা নয় বলে তিনি মনে করেন।
রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে সেই শব্দ চয়ন করেছেন। কোন নারীকে তিনি এমন বলতে পারেননা। পাবলিক মিডিয়াতে তো বলতেই পারেননা। কেননা এতে একজন মানুষের সম্মানহানি হয়।’
তিনি বলেন, ‘ব্যারিস্টার মইনুল এখানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজেরই একজন প্রতিভূ। যেখানে একজন নারীকে সহজেই চরিত্রহীন বলা যায়। যেকোন সমস্যায়, তর্কে বা দ্বন্দ্বে নারীকে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা যে প্রতিবাদ করছেন, সেটা যথার্থ, ন্যায্য।’
তসলিম নাসরিনও তার লেখায় আক্ষেপ করে বলেছেন যে তাকে যখন দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল, তখন তিনি কাউকে পাশে পাননি।
তবে এ ক্ষেত্রে সময়টাকে বড় শক্তি হিসেবে দেখছেন অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।
তিনি বলেন, ‘হলিউড বলিউড থেকে শুরু করে সারা বিশ্বে এখন নারীর ওপর যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে হ্যাশটাগ মি-টু আন্দোলনের জোয়ার চলছে। তারই এক কাছাকাছি সময়ে মাসুদা ভাট্টির উদ্দেশ্যে মইনুল হোসেনের এমন মন্তব্য করলেন। বাচিক যৌন নির্যাতন বলা যেতে পারে, যেখানে তাকে অসম্মান করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন এই মিটু আন্দোলনের মধ্যে এমন মন্তব্য আসলে প্রতিবাদের আগুনটা জ্বালিয়ে দিয়েছে। টাইমিংটা এখানে খুব ইম্পরট্যান্ট। বলা যায়, সময়টার কারণেই এত তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে।’
খবর বিবিসি বাংলা এবিএন/সাদিক/জসিম
খবর বিবিসি বাংলা এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ