আজকের শিরোনাম :

রোগীর নিরাপত্তার জন্য কী ব্যবস্থা নেয়া যায়

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:৪৮

যশোরের ঝিকরগাছার জান্নাতুল ফেরদৌসের বাবা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন মাস দুয়েক আগে।

স্থানীয় চিকিৎসক তাকে যে ওষুধ দেন তাতে তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয়। এই অবস্থায় জান্নাতুল ফেরদৌস তার বাবাকে ঢাকার নামকরা একটা বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

কিন্তু সেখানে চরম অবহেলার শিকার হন বলে তিনি দাবি করেন। জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, তার বাবার চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে তার পরিবারকে একরকম অন্ধকারে রাখা হয়।

" যে ডাক্তারগুলো আমার বাবাকে দেখেছেন তারা আমাদের সঙ্গে কোঅপারেট করেননি। প্রধান যে ডাক্তার- তিনি ৩০ সেকেন্ডের জন্য এসেছেন, দরজায় দাঁড়িয়ে দেখে চলে গেছেন,'' তিনি বলেন।

''আমরা যখন জিজ্ঞেস করেছি তখন আমাদের সঙ্গে রুঢ় ব্যবহার করেছে। একদিন রাতে ডিউটি ডাক্তারের একটা ভুল সিদ্ধান্ত এবং ভুল ওষুধ প্রয়োগ করার জন্য আবার বাবা অজ্ঞান হয়ে যান এবং তিনি মুমূর্ষ অবস্থায় চলে যান" বলছেন তিনি।

জান্নাতুল ফেরদৌসের মত এমন অনেক রোগীর স্বজন আছেন যারা চিকিৎসকদের অবহেলা এবং ভুল চিকিৎসার অভিযোগ করেন।

এই ধরনের ঘটনার জের ধরে অনেক সময় হাসপাতাল ভাঙচুর বা চিকিৎসক এবং রোগীর স্বজনদের উভয়কেই হেনস্থার শিকার হতে হয়।

রোগীর স্বজনরা অন্ধকারে

বাংলাদেশে রোগী এবং রোগীর স্বজনরা চিকিৎসার অবহেলার অভিযোগ তোলেন প্রায়ই। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর রোগীর চিকিৎসা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রোগীর স্বজনরা।

অনেক সময় রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং তাকে কী চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সে সম্পর্কে রোগীর স্বজনরা থাকেন অন্ধকারে।

এমন প্রেক্ষাপটে শুক্রবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব রোগী সুরক্ষা দিবস।

রোগীর সামনে উপায় কী?

কিন্তু একজন রোগী চিকিৎসা নেয়ার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে পরলে তিনি বা তার স্বজনরা কী করতে পারেন?

বাংলাদেশে চিকিৎসকের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এই কাউন্সিলে আইন রয়েছে।

বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, কোন রোগী বা তার পরিবার যদি তাদের চিকিৎসা নিয়ে বিক্ষুব্ধ হন তাহলে বিএমডিসি'র কাছে বিচার চাইতে পারেন।

অভিযোগ নিবন্ধন করার পর শৃঙ্খলা কমিটি সেটা যাচাই-বাছাই করে, জানান অধ্যাপক শহীদুল্লাহ।

''যে রোগ নিয়ে অভিযোগ সেই রোগের এক্সপার্টদের দিয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটি তাদের রিপোর্ট এক্সিকিউটিভ কমিটিকে দেয়।

''এই কমিটি যদি দেখে ডাক্তার দোষ করেছে তাহলে তার দোষের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে ঐ ডাক্তারের লাইসেন্স বাতিল করা হয় যেটা একটা ডাক্তারের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি" বলেন অধ্যাপক শহীদুল্লাহ।

প্রতিকারের পথ অনেকে জানেন না

ডাক্তারদের নিয়ন্ত্রক এই সংস্থাটি বলছে বিএমডিসিতে রোগী বা তার স্বজনরা যে প্রতিকার পেতে পারেন সেটা সম্পর্কে অনেকে জানেন না।

সেকারণে অভিযোগ কম আসে। গত ৪৫ বছরে নয় জন ডাক্তারকে সাময়িক লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

আর একজনের সারা জীবনের জন্য বাতিল করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কী সংখ্যায় অভিযোগ সেখানে জমা হয়েছে সেই হিসেব দিতে পারেনি সংস্থাটি।

এদিকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ব্যাখ্যা করার মত ব্যবস্থা নেই।

ড.লেনিন চৌধুরি বলছেন, ডাক্তারের পরামর্শ ব্যাখ্যা করার ব্যাপারটা বাংলাদেশের কোন কারিকুলামে নেই। যার ফলে ডাক্তার তার পরামর্শ বোঝাতে পারেন না ফলে রোগীরা অনেক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারেন না।

"স্ট্যান্ডার্ড প্রাকটিস হল, একজন ক্লিনিক্যাল ফার্মাকলজিস্ট থাকেন যিনি ডাক্তারের প্রেসক্রিপসনের ওষুধ সম্পর্কে, কোন ওষুধ কত ডোজে কেন দেয়া হচ্ছে, রোগীর অবস্থা সব কিছু ব্রিফ করেন।

''কিন্তু বাংলাদেশের কোন কারিকুলামে এটা ডিফাইন করা হয় নি যে এটা রোগীর বা তার স্বজনের কাছে ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব কার" মিঃ চৌধুরী ।

সংস্থাটি বলছে, রোগীর নিরাপত্তার জন্য যদি চিকিৎসায় সন্তুষ্ট না হন বা অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছেন বলে মনে করেন সেই ক্ষেত্রে হাসপাতাল ভাঙচুর করে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে সরাসরি বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে অভিযোগ করাটাই রোগীদের সুরক্ষা দিতে পারে।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ