আজকের শিরোনাম :

দেশত্যাগী হাজারো আফগান কোথায় যাচ্ছেন, কোন কোন দেশ আশ্রয় দিচ্ছে?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২১, ১৫:৪৯

আফগানিস্তানে দুই দশক পর তালেবানের নিয়ন্ত্রণ ফিরে আসার সময় থেকেই সেখানে অবস্থান করা বিদেশিদের সাথে হাজার হাজার আফগানও দেশ ছাড়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। প্রায় ২২ লাখ আফগান ইতোমধ্যেই প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে এবং আরও প্রায় ৩৫ লাখ আফগান দেশের সীমানার মধ্যেই বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ঠিক কত আফগান দেশ ছেড়েছে, তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা এ মুহূর্তে বলা কঠিন, কিন্তু বিমানে করে কতজন দেশ ছেড়েছে তার কিছু হিসেব পাওয়া যাচ্ছে।

গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে যে তারা এ পর্যন্ত ৮০ হাজারের মতো ব্যক্তিকে কাবুল বিমানবন্দর ব্যবহার করে সরিয়ে এনেছে।

গত ১৪ আগস্টের পর থেকে আফগানিস্তানে কেবল এই বিমানবন্দরটিই সক্রিয় আছে। তবে এই ৮০ হাজারের মধ্যে কতজন আফগান নাগরিক, তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনো নেই।

অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে যে তারা ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে সরিয়ে নিয়েছে এবং এর মধ্যে আফগান নাগরিকের সংখ্যা ছয় হাজারের বেশি।

এ ছাড়া, জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা সাড়ে চার হাজার ব্যক্তিকে কাবুল বিমানবন্দর দিয়ে সরিয়ে নিয়েছে, যার মধ্যে ৩ হাজার ৭০০ জনই আফগান।

তবে সরিয়ে নেয়া এসব ব্যক্তির মধ্যে কিছু স্থানীয় সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীও রয়েছেন। আর সরিয়ে নেয়া আফগানদের মধ্যে অর্ধেকই নারী ও শিশু।

বিমানে করে কাবুল থেকে সরিয়ে আনার কার্যক্রম গত কয়েকদিনে বেশ গতি পেয়েছে।

কত মানুষ আফগানিস্তান ত্যাগ করেছে?
কিন্তু বিদেশে যাওয়ার জন্য অনুমতি পেয়েছে এমন আফগানদের জন্যও এটা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে, কারণ তালেবান বলছে যে তারা চায় না আফগানরা দেশ ত্যাগ করুক। তবে এটাও ঠিক পরিষ্কার নয় যে ঠিক কত সংখ্যক আফগান দেশ ছাড়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে পেরেছে।

ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির হিসাবে, ২০০১ সালের পর থেকে প্রায় তিন লাখ আফগান নাগরিক মার্কিন অভিযানে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে এবং এর মধ্যে অনেকেই মার্কিন ভিসা পাওয়ার যোগ্য।

অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের ভিসা পাওয়ার যোগ্য এমন দুই হাজার আফগানকে এখনো সরিয়ে নেয়া হয়নি বলে বিবিসিকে জানানো হয়েছে।

বিবিসির একজন সংবাদদাতা মঙ্গলবারও কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে আফগানদের ভিড় দেখেছেন, যারা ভিসা পাবেন বলে আশা করছেন। কিন্তু ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত তালেবান যে সময়সীমা বেধে দিয়েছে, সেই সময়ের মধ্যে তাদের সবাই দেশ ছাড়তে পারবেন এমন সম্ভাবনা কম।

আফগানিস্তান ছাড়ার অন্য যেসব বিকল্প পথ, তাও খুব সীমিত। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে স্থলসীমান্ত পথ পুরোটাই এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে এবং তারা আফগানদের দেশের বাইরে যেতে দিতেও রাজি নয়।

বিভিন্ন খবরে দেখা যাচ্ছে, শুধু ব্যবসায়ী এবং যাদের ভ্রমণ সংক্রান্ত কাগজপত্র আছে, তাদেরই সীমান্ত পার হওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে।

“বেশিরভাগ আফগান নিয়মিত চ্যানেলে দেশ ছাড়তে পারবেন না। এখন পর্যন্ত যারা বিপদে আছেন, তাদের সবার সামনে পরিষ্কার কোন উপায়ও নেই,” জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার একজন মুখপাত্র এ কথা বলেছেন গত সপ্তাহে।

তবে কিছু শরণার্থী অবশ্য নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমান্ত অতিক্রমের উপায় বের করে নিয়েছেন।

এরই মধ্যে কয়েক হাজার আফগান নাগরিক পাকিস্তান সীমান্ত অতিক্রম করেছেন, আর প্রায় দেড় হাজার আফগান উজবেকিস্তানে প্রবেশ করে এখন সীমান্তের কাছে তাবুতে দিন কাটাচ্ছেন।

ঘরবাড়ি থেকে পালিয়েছে কত মানুষ?
অস্থিতিশীলতার শিকার আর যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের মানুষদের দেশ ছাড়ার লম্বা ইতিহাসে এবারে যুক্ত হলো বড় সংখ্যায় আফগানদের দেশত্যাগের চেষ্টা।

সাথে যোগ হয়েছে বাস্তুচ্যুত হওয়ার নতুন ঘটনা। জাতিসংঘের হিসেব বলছে, তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার আগে লড়াই আর সংঘাতের কারণে ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছে অন্তত সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ। এর অর্থ হলো, এখন অন্তত সাড়ে পঁয়ত্রিশ লাখ আফগান দেশের মধ্যেই বাস্তুচ্যুত।

এ ছাড়া আরও ২২ লাখ শরণার্থী গত বছরের শেষ পর্যন্ত প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয়ের আবেদন করে অপেক্ষা করছিল।

আফগান শরণার্থীরা কোথায় যাবে?
গত বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক আফগান শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী গেছে ইরান আর পাকিস্তানে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালে পাকিস্তান গেছে প্রায় ১৫ লাখ আর ইরানে গেছে সাত লাখ ৮০ হাজার আফগান।

এর পরে সর্বোচ্চ এক লাখ ৮০ হাজার আফগান আশ্রয় নিয়েছে জার্মানিতে, আর এক লাখ ৩০ হাজার তুরস্কে।

অন্য দেশে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন কিন্তু আবেদন এখনও গৃহীত হয়নি, এমন আশ্রয় প্রার্থীদের সংখ্যা বিবেচনা করলে দেখা যায় যে তুরস্ক, জার্মানি আর গ্রিস রয়েছে এমন তালিকার শীর্ষে - এসব দেশে যাওয়ার জন্য যথাক্রমে এক লাখ ২৫ হাজার, ৩৩ হাজার ও ২০ হাজার আফগান আবেদন করে বসে আছেন।

অন্যদিকে, ইরানে যারা শরণার্থী কার্ড পেয়েছেন তাদেরকে দেশটির শিক্ষা ও স্বাস্থ্য অবকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

অন্য দেশগুলো কতটা সহায়তা করছে?
কিছু দেশ আফগানদের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে, আবার কিছু দেশ ইঙ্গিত দিয়েছে যে পালিয়ে যাওয়া আফগানদের জন্য তারা ততটা উদার হবে না।

ইরান : আফগানিস্তান সীমান্তের কাছে শরণার্থীদের জন্য তাঁবু খুলেছে ইরান। ইরানের একজন কর্মকর্তা অবশ্য বলেছেন যে পরিস্থিতি ভালো হলে আফগানদের প্রত্যাবাসন করা হবে। দেশটিতে ইতোমধ্যেই প্রায় ৩৫ লাখ আফগান আশ্রয় নিয়েছে।

পাকিস্তান : গত জুনে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন যে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিলে তার দেশ সীমান্ত বন্ধ করে দেবে। যদিও জানা গেছে যে অন্তত একটি জায়গায় সীমান্ত খোলা আছে এবং কয়েক হাজার আফগান ইতোমধ্যেই পাকিস্তানে প্রবেশ করেছে।

তাজিকিস্তান : আফগান ন্যাশনাল আর্মির সদস্যসহ কয়েকশ আফগান সম্প্রতি সীমান্তপথে তাজিকিস্তানে প্রবেশ করেছেন। জুলাইতে দেশটি জানিয়েছে, তারা এক লাখ আফগান শরণার্থী গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

উজবেকিস্তান : প্রায় দেড় হাজার আফগান শরণার্থী উজবেকিস্তান সীমান্তের মধ্যে তাঁবু গেড়েছেন। এখানে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করছে তালেবান।

যুক্তরাজ্য : ২০ হাজার আফগানকে গ্রহণ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। এর মধ্যে প্রথম বছরে পাঁচ হাজার আফগানকে পুনর্বাসন করা হবে, যার মধ্যে নারী, শিশু ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা গুরুত্ব পাবে।

যুক্তরাষ্ট্র : প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি তহবিলের অনুমোদন দিয়েছেন আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে অপ্রত্যাশিত ঝুঁকিতে পড়া শরণার্থীদের জন্য। তবে ঠিক কত সংখ্যক শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্র নেবে, তা জানানো হয়নি।

কানাডা : কানাডায় ২০ হাজার আফগান শরণার্থীকে গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে এর মধ্যে তালেবানের কারণে বিপদে থাকা সাবেক আফগান সরকারের কর্মী এবং নারীনেত্রীরা অগ্রাধিকার পাবে।

তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে যে তারা ২০১৫ সালের শরণার্থী সংকটের পুনরাবৃত্তি চায় না। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যেই বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে শরণার্থীর ঢেউ থেকে ইউরোপকে সুরক্ষা দিতে হবে। তবে খুব বিপদে থাকা লোকদের তার দেশ সুরক্ষা দেবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

অস্ট্রিয়া কোনো শরণার্থী না নেয়ার কথা জানিয়েছে, আর সুইজারল্যান্ড বলেছে যে সরাসরি আফগানিস্তান থেকে আসা বড় সংখ্যক শরণার্থীকে তারা গ্রহণ করবে না।

এর বাইরে অস্ট্রেলিয়া তিন হাজার এবং আফ্রিকার দেশ উগান্ডাও দুই হাজার আফগান শরণার্থীকে গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে।

আর যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে উত্তর মেসিডোনিয়া, আলবেনিয়া এবং কসোভো কিছু শরণার্থীকে সাময়িক সময়ের জন্য আশ্রয় দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার আগে পর্যন্ত এসব শরণার্থী সেখানে থাকবে।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ