আজকের শিরোনাম :

মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৩৮

‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’ এই স্লোগানে ১৪২৬ সনের বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়েছে।

রোববার সকাল ৯টায় শোভাযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে শুরু হয়। এরপর শোভাযাত্রাটি হোটেলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল (আগের রূপসী বাংলা), শাহবাগ ও টিএসটি মোড় ঘুরে ফের চারুকলার সামনে গিয়ে শেষ হবে।

শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রতীকী উপস্থাপনের নানা বিষয় স্থান পেয়েছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রাণের উৎসব বর্ষবরণ। বাংলা বর্ষবরণে বাঙালির নানা আয়োজনের মধ্যে মঙ্গল শোভাযাত্রা অন্যতম।

বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ৩০ বছর পূর্তি হল এ বছর। এবার শোভাযাত্রার স্লোগানটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৈবেদ্য কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া।

শোভাযাত্রার উদ্বেধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন। কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো রয়েছে পুরো এলাকা।

শোভাযাত্রায় নিয়ে নিরাপত্তার কড়াকড়ি থাকলেও তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের কাছে হার মানে সবকিছুই। ঢাক-ঢোলের বাদ্যি আর তালে তালে তরুণ-তরুণীদের নৃত্য, হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দ উল্লাস মাতিয়ে রেখেছেন পুরো শোভাযাত্রা।

২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে হওয়া এ শোভাযাত্রা।

সকাল থেকেই টিএসসি, দোয়েল চত্বর, শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় মানুষ জড়ো হতে থাকে। নয়টার মধ্যেই পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। লাল-সাদা পোশাকে উচ্ছল নারীদের মাথায় শোভিত নানান রঙ্গের ফুলের টায়রা। তরুণদের পরনে ছিল লাল-সাদা পাঞ্জাবী।

শোভাযাত্রা ঘিরে ছিল কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। পুলিশ, র‌্যাবের সঙ্গে ছিল সোয়াত সদস্যরা। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও তৎপর ছিলেন।

এবারের শোভাযাত্রার শিল্প-কাঠামোগুলোর একটিতে বাঘের মুখ থেকে কাঁটা তোলার চিরায়ত গল্পটি উপস্থাপিত হবে বাঘ ও বকের অনুষঙ্গে। মঙ্গলের বারতা পেঁচা। সমৃদ্ধির কথা বলছে ছাগলের কাঠামো। এছাড়া রয়েছে দুই মাথা ঘোড়া, দুই পাখি, কাঠঠোকরা, রাজা-রানির মুখোশ।

শোভাযাত্রার পুরো পথে সিসিটিভি ক্যামেরা ও পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েরছ। পথিমধ্যে কেউ মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারছে না। কারণ চতুর্দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে মানবশিল্ড গঠন করা হয়েরছ। গতবারের মতো এবারও মুখোশ ব্যবহার নিষিদ্ধ। প্রতিবারের মতো ভুভুজেলা নিষিদ্ধ। নিরাপত্তার জন্য রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় কেন্দ্রীয় রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে শোভাযাত্রার জন্য।

বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। মিলেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু হয়েছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা। শুরু থেকেই চারুকলার শোভাযাত্রাটির নাম মঙ্গল শোভাযাত্রা ছিল না। তখন এর নাম ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। ১৯৯৬ সালে এর নাম হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা।

বর্ষবরণ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা চারুকলায় ১৯৮৯ সালে শুরু হলেও এর ইতিহাস আরও কয়েক বছরের পুরনো। ১৯৮৫ বা ১৯৮৬ সালে চারুপীঠ নামের একটি প্রতিষ্ঠান যশোরে প্রথমবারের মতো নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভযাত্রার আয়োজন করে। যশোরের সেই শোভাযাত্রায় ছিল পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যসহ আরও অনেক শিল্পকর্ম। শুরুর বছরেই যশোরে সেই শোভাযাত্রা আলোড়ন তৈরি করে।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ