আজকের শিরোনাম :

নেত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

  রুহুল মুরসালিন রিপন

১৮ মে ২০২০, ২২:০৪ | অনলাইন সংস্করণ

আজি এ প্রভাতে সূর্য্যি উঠা সফল হলো কার?

১৭ই মে, ১৯৮১
৪ঠা জৌষ্ঠ, ১৩৮৮ বঙ্গাব্দ
দিনটি ছিল ঠিক আজকের মতোই রোজ রবিবার।

এইদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রায় দীর্ঘ ছয় বছর পর ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমানে শেখ হাসিনা ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। দেশের মাটিতে পা রাখেন।

এক বেদনা বিধূৃঁর প্রকৃতি। সেদিনের গগনবিদারী মেঘ গর্জন, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ প্রকৃতি আর অবিরাম মুষল ধারে ভারী বর্ষণে যেন ধুয়ে-মুছে যাচ্ছিল বাংলার মাটিতে পিতৃ হত্যার জমাট বাঁধা পাপ আর কলঙ্কের চিহ্ন। ঝড়-বৃষ্টির আকাশ কাঁপিয়ে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রাকের চার পাশে স্লোগান ওঠে- 
পিতৃ হত্যার বদলা নিতে/লক্ষ ভাই বেঁচে আছে
শেখ হাসিনার ভয় নাই/রাজপথ ছাড়ি নাই।

বাবা মা-ভাইসহ পরিবারের সব সদস্যের রক্তে ভেজা বাংলার মাটি স্পর্শ করে, লাখ লাখ লোকের সংবর্ধনায় তিনি জনতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।”

মায়ের কাছেও মাঝে মাঝে মামা বাড়ির গল্প পাড়তে হয়। তাতে মায়ের পুরোনো স্মৃতি শানিত হয়। সল্প সময়ের জন্য হলেও মা নষ্টালজিক হন এবং মায়ের মস্তিষ্কের নিউরন নতুন করে দোলা দেয়, মা হয়ে উঠেন প্রানবন্ত। মা এবং সন্তানের ভালবাসা হয়ে উঠে আরো প্রগাঢ়। 

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট কালোরাতে জাতির জনককে পরিবার সহ ঘৃন্যতম হত্যাকান্ড এবং ৩রা নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে জেলে মধ্য নৃসংশভাবে হত্যার পর আওয়ামীলীগের অস্তিত্ব বলতে গেলে বিলীন হয়ে যায়। ঐসময়কালীন দলের সভাপতি এ এইচ এম কামরুজ্জাম জেলে নৃসংশভাবে খুন এবং সাধারন সম্পাদক জেলে অন্তরীন থাকায় ১৯৭৬ সালে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ ও সাধারন সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালের ৩-৪ এপ্রিল দলের ১১তম সম্মেলনে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিনকে আহবায়ক মনোনিত করা হয়। ১৯৭৮ সালের ৩-৫ মার্চ দলের ১২তম সম্মেলনে আবদুল মালেক উকিল সভাপতি এবং আবদুর রাজ্জাক সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। বহুদাবিভক্ত আওয়ামীলীগে চলে প্রতিনিয়ত ভাঙ্গাগড়া। তার উপর স্বৈরশাসকের লেলিহান রক্তচক্ষু। দল যেন কোনভাবেই আগের ছন্দে ফিরতে পারছিল না।

১৯৮১ সালের ১৬-ই জানুয়ারী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী গেলেন দিল্লীতে। সিরিজ বৈঠক হয় শেখ হাসিনার সাথে। দেশ এবং দলের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব সর্বপরি বঙ্গবন্ধু হত্যার ন্যায়বিচারের জন্য শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই হতে পারে। ঐ বছরের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারী দলের ১৩তম সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে সভাপতি এবং আবদুর রাজ্জাককে সাধারন সম্পাদক করা হয়। সম্মেলন অনুষ্ঠানের পর ২৪-শে ফেব্রুয়ারী আবদুল মালেক উকিল, জোহরা তাজউদ্দিন, সাজেদা চৌধুরী, ডাঃ এস এ মালেকসহ শীর্ষস্থানীয় নেতারা দিল্লীতে দলিয় সভানেত্রীর সাথে দেশে ফেরার বিষয়ে প্রথম বৈঠক করেন। ১৩-ই মে আবদুস সামাদ আজাদ এবং এম কোরবান আলী দিল্লীতে যান সভানেত্রীর স্বদেশ ফেরতের চুড়ান্ত দিনক্ষন ঠিক করতে।

অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষন। ১৯৮১ সালের ১৭-ই মে পিতামাতা, ভাই এবং স্বজন হারা স্বদেশে। এক বালিকা বধু, অবলা নারীর মনের আকাশ আর প্রকৃতির আকাশ যেন চোখের পানিতে একাকার হয়ে যায়। সামরিক সরকারের নিষেধাজ্ঞায় ৩২ নম্বরের বাড়ির দরোজা বন্ধই থেকে যায়। বাড়িরগেটে বসে পবিত্র কোরআন তেলোয়াত করেই বিদেহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। অবশেষে ১২-ই জুন ৩২ নম্বরের বাড়ির গেট খুলে দেওয়া হয়।

১৯৮৪ সালের ১৫-ই আগষ্ট শোকদিবসের জনসভায় শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বোমাবাজি করা হয়। ১৯৮৭ সালের ১০-ই নভেম্বর শেখ হাসিনার মিছিলে গুলি করা হয়। গুলিতে শেখ হাসিনা প্রানে বেঁচে গেলেও মানব ব্যানার যুবলীগ কর্মী নুর হোসেন মারা যায়। ১৯৮৮ সালের ২৪-শে জানুয়ারী চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দান ইতিহাসের আরো এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। মুসলিম হাইস্কুল মোড়ে শেখ হাসিনার গাড়ী বহরে অতর্কিতে হামলা। শেখ হাসিনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে গুলির আঘাতে প্রান হারান যুবলীগ কর্মী আবুল হাশেম। আইনজীবীরা শেখ হাসিনাকে উদ্ধার করে আদালত ভবনের ভিতরে নিয়ে গেলে সেই যাত্রায় প্রানে বেচে যান। ১৯৮৮ সালের ১০-ই আগষ্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ফ্রিডম পার্টি হামলা চালায়। শেখ হাসিনা তখন ঔ বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। আল্লার অশেষ মেহেরবানীতে আবারো বেঁচে যান তিনি। 

১৯৯০ সালের ২৭-শে নভেম্বর বিএমএ নেতা ডাঃ শামসুল আলম মিলন হত্যার মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ নয় বছরের এরশাদের স্বৈরশাষন শেষ হয়। ১৯৯৪ সালের ২০-শে মার্চ মাগুড়া উপনির্বাচন। আওয়ামীলীগের টার্নিং পয়েন্ট। দলিয় সরকারের অধীনে নজিরবিহীন কারচুপি আওয়ামীলীগকে রাজপথে নিয়ে আসে। ঐবছরের ৫-ই এপ্রিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ট্রেন মার্চ শুরু। ঈশ্বরদিতে তার ট্রেনে সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা গুলি চালায় শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্য। ২৭-শে জুনের মহাসমাবেশ থেকে শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষনা করেন। ২৮-শে ডিসেম্বর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংসদ থেকে সকল বিরোধী দল একযোগে পদত্যাগ করেন। প্রবল আন্দোলনের মুখে ১৯৯৫ সালের ২৪-শে নভেম্বর ৫ম জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেয়া হয়। ১৯৯৬ সালের ১৫-ই ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হয় প্রহসনের নির্বাচন। ২০-শে মার্চ তত্ত্বাবধায়ক বিলটি সংসদে পাশ করে ৩০-শে মার্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিএনপি বিদায় হয়। 

১৯৯৬ সালের ১২-ই জুনের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ১৪৬ টি আসনে জয়লাভ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ২৩-শে জুন দীঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে। 
আবার ২০০১ সালের ১-লা অক্টোবরের নীল নক্সার নির্বাচনে আওয়ামীগীগ সরকারের বাইরে চলে যায়। ২০০৪ সালের ২১-শে আগষ্ট আবার ১৯৭৫ সালের ১৫-ই আগষ্টের পুনরাবৃত্তির জন্য চারদলীয় জোট আওয়ামীলীগের ২৩ নম্বর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এক ভয়াবহ হামলা চালায়। দলের মহিলা সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৩ জন প্রান হারান। শেখ হাসিনা এ যাত্রায়ও প্রানে বেঁচে গেলেন। 

২০০৭ সালের ১১-ই জানুয়ারী সেনা সমর্থিত অবৈধ সরকার ক্ষমতা দখল করে ১৬-ই জুলাই শেখ হাসিনাকে কারাগারে আটক করে। ২০০৮ সালের ১১-ই জুন প্যারোলে মুক্তি দিয়ে বিদেশ পাঠান। ঐবছরের ২৯-শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ২৩০টি আসনে জয়লাভ করে ৬-ই জানুয়ারী সরকার গঠন করে। ২০১০ সালের ২৪-জানুয়ারী জাতীর পিতার খুনীদের ফাসির আদেশ কার্যকর হয়। ২০১১ সালের ৩০-শে জুন ২৯১-১ ভোটে পঞ্চদশ সংশোধনী পাশের মধ্যে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতার স্বীকৃতি দেয়া হয়। ২০১৪ সালের ৫-ই জানুয়ারী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ পুনরায় সরকার গঠন করে। ঔবছরের ৫-ই ফেব্রুয়ারী থেকে যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় আসতে শুরু করে। যা প্রমান করে কোন অন্যায়ই বিচারের উর্দ্ধে নয়। ২০১৫ সালের ১২-ই ডিসেম্বর দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্ত সত্ত্বেও পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় যা এখন সমাপ্তির পথে। 

জি আপা, আপনার চার দশকের পথ চলা আজকের মতো এতোটা মসৃন ছিল না। এই চলার পরতে পরতে ছিল কাটা বিছানো, কখোনো কখোনো প্রান সংহার হওয়ার ও সম্ভাবনা ছিল। দীর্ঘ ১৯ বার আপনাকে হত্যার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। 

জানি অবসরের ফুরসত আপনার হয় না। চব্বিশ ঘন্টা দেশ ও দেশের মানুষের কল্যানে আপনার ছুটে চলা। তারউপর আছে প্রাকৃতিক দূর্যোগ। একটা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন আরো একটা সমস্যা এসে হাজির। তারপরও যদি একটু অলস সময় পান দক্ষিনো বাতায়নে বসে স্মৃতির ঝাপি খুলে একবার অতীত ভ্রমন করে আসুন। 

১৯৭৫ সালের ১৫-ই আগষ্ট পরবর্তী আপনার জার্মান, ব্রাসেলস হয়ে দিল্লী পর্যন্ত দেশী বিদেশী শুভাকাংক্ষি কারা ছিলেন। কারা আপনার ঔ পাহাড়সম বিপদে উপকারের অকৃপন হাতটি বাড়ায়ে দিয়েছিলেন। আপনি দিল্লী আসার পর কারা ঘনঘন দিল্লী যেয়ে আপনাকে সুপরামর্শ দিয়েছিলেন। কারা আপনাকে দলের দায়িত্ত্ব দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত সহকার দেশে ফেরত এনেছিলেন। হ্যাঁ, আপনি দেশে ফেরত এসেছিলেন বলেই আজ বাংলাদেশ হাসছে। আপনি দেশে ফেরত আসার পর কারা আপনার নেতৃত্বকে কায়োমনোবাক্যে আনুগত্য দেখিয়েছিলেন। কারা আপনার সাথে জীবন বাজি রেখে আপনার ছায়াসঙ্গি ছিলেন। 

আপনার এসিবিহীন পুরোনো জীপ গাড়ীটার সার্বক্ষনিক যাত্রী কারা ছিলেন। টেকনাফ থেকে তেতু্ঁলিয়া-রূপসা থেকে পাথুরিয়া আপনার অবিরাম পথচলায় কারা ছিল আপনার সফরসঙ্গি। আপনার জীপগাড়ীর পেছনে কখনো কখনো একটা দুইটা পুরনো মাইক্রো থাকতো। ঠেসাঠেসি করে মাইক্রো গাড়ীতে গরমে ঘামে রোদে বৃষ্টিতে আপনার সফরসঙ্গী হিসেবে সারাদেশ চষে বেড়াতো কারা। ফেসবুকের বদৌলতে কতো পুরোনো ছবিতো ভার্চুয়াল জগতে ভেসে বেড়াচ্ছে। কোথাও আপনি গ্রামের মেঠো পথে হেটে যাচ্ছেন, কোথাও আপনি কৃষি ক্ষেতের আল ধরে হাটছেন, কোথাও আপনি ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে পথ পাড়ি দিচ্ছেন। পেছনে আপনার নিবেদিত প্রান সফরসঙ্গীরা। আপনি যেদিন দেশে এসেছিলেন সেই সময়ে ছাত্রলীগ যুবলীগ করাটা এতো সহজ ছিল না। আপনার এবং আপনার ছায়া সঙ্গীদের এক মূহুর্তের ও জীবনের নিরাপত্তা ছিল না। এই বন্ধুর পথে আপনি অনেককে অকালে হারিয়ে যেতে দেখেছেন। চোখের সামনে দেখেছেন অনকের রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত অসাড় দেহ। ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার, সুধাসদন, মিন্টোরোড হয়ে মহাখালীর সরকারী কোয়ার্টার কোথায় ছিল না সেই মরমী কর্মীরা? একদল টগবগে ছাত্রলীগ আর যুবলীব কর্মী যারা ছিলের উচ্চ আবেগসমপন্ন সীপাহশালার, যাদের নিউরনে ছিল বঙ্গবন্ধু, যাদের রক্তের অনুরননে ছিলেন আপনি। আমি ছোট মানুষ। এগুলোর কিছুই আমি দেখিনি। বই পত্তর পড়ে যতটুকু জেনেছি বুঝেছি। আপনার ঐসময়ের কোন কোন কর্মীর মুখে আমি শুনেছি শেখ হাসিনার জন্য জীবন দিতে পারি। কতোটা মোটিভেশন থাকলে এমনটি বলা যায়! হ্যাঁ, এটাও ঠিক সবাই সমান ভাবে আনুগত্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ন ছিল না। কারো কারো বিশ্বাসঘাতকাতও আপনি জানেন। তাইতো আপনি প্রায়ই কাছের লোকদের বলে থাকেন আপনি নীলকন্ঠি। বিষ খেয়ে বিষ হজম করতে পারেন। সত্যিই তাই। লিডারশিফের একটা বড়গুন হলো কম্প্রোমাইজ এবং স্যাক্রিফাইস। শুনেছে এমনলোক ও আপনি আপনার মন্ত্রীসভায় রেখেছিলেন যিনি কিনা প্রত্যক্ষভাবে আপনার ক্ষতি করেছেন।

আমাদের আশা আকাংখার বাতিঘর মাননীয় আপা আপনার দেশে ফেরার দিন হতে যেইসব পুরোনো লোকগুলো আপনার চারপাশে ছিল, সারাদেশে আপনার সাথে ঘুরে বেড়িয়েছেন, দিনের পর দিন আলুভর্তা, ডাল এবং ডিম মামলেট খেয়েছেন তারাইতো মনে হয় সারা দেশের মুজিব অন্তপ্রান কর্মীদের ভালে চিনে। যদিও আজ তারা আর ফ্রন্ট লাইনে নেই। ক্ষমতার হালুয়া রুটিতে তাদের কানেকশন আছে বলে মনে হয় না। অনেকে মারা গেছেন, অনেকে আত্মসম্মান নিয়ে দেশান্তরি হয়েছেন আবার অনেকে হীনমন্যতায় ভুগতে ভুগতে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন। বাহাউদ্দিন নাসিম ভাই এবং মৃনাল দাদা এখনও টিকে আছেন। যদিও তাদের কর্মীরা অনেকেই মন্ত্রী বা কর্পরেশনের চেয়ারম্যান বা রাষ্ট্রদূত বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন বা আছেন। আর উনারা শুধু কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে ধানমন্ডি ৩/এ, ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আলোর মশাল জেলে যাচ্ছেন।

আপা শুক্রে শুক্রে চারদিন যার রাজনীতির বয়স সে যদি রাজনৈতিক প্রোগ্রামে চল্লিশ বছর রাজনীতি করা নেতার সামনের চেয়ারে যেয়ে বসে তাহলে কোন আত্মসম্মানআলা লোক আর এই রাজনীতিতে টিকে কিভাবে! গনভবনে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রনালয় এবং বঙ্গবভনে যাতায়াত যারা ডালভাত বিবেচনা করে তাদের রাজনৈতিক পোর্টফোলিও কি? আমরা যারা এই সংগঠনের কর্মী তাদের কাছে মুজিব কোর্ট একটা অলঙ্কার। এটা শুধু একটা পরিধেয় বস্ত্র নয় এটা একটা ব্রান্ড। এটা সততা, গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম, সেবা এবং দেশপ্রেমের প্রতীক। ধবধবে সাদা পাজামা পাঞ্জাবীর উপর মুজিব কোর্ট পরে ধুপধুরস্ত সেজে সরকারের বিভিন্ন দফতরে যেয়ে সরকারী কর্মকর্তাদের ধাধায় ফেলে বড় নেতা সাজে সেটা প্রকৃত আদর্শিক রাজনীতি বিদদের জন্য নিতান্তই বিড়ম্বনা।

রাজনীতি একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। বিভিন্ন চড়াই উৎড়াই, লড়াই সংগ্রাম, জেল জুলুম,  অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে দীর্ঘ পথ পরিক্রমার মধ্যে দিয়েই বের হয়ে আসে আদর্শিক নেতৃত্ব। আদর্শিক নেতৃত্বের নৈতিক স্খলন হওয়ার সুযোগ থাকে খুবই কম। কারন তাদের থাকে জনগনের কাছে জবাবদিহিতা এবং দায়বদ্ধতা। কারন তারা দীর্ঘ পথ জনগনের হাত ধরেই পাড় হয়ে আসে। তাই নিজের তিলতিল করে গড়ে উঠা ব্যাক্তিত্য তারা কোন ঠুনকো লোভের জন্য বিসর্জন দিতে পারে না। সাম্প্রতিক সময়ে ত্রান নিয়ে যতো কেলেঙ্কারি হয়েছে সেখানে কোন কমিটেড নেতৃত্ব পাওয়া যায়নি। সবই হাইব্রিড অথবা দলছুট। 

আপা ওল্ড ইজ গোল্ড। আপনার চারপাশে পুরোনো লোকজন হয়তো কমে গেছে। আর আপনার চারপাশে যারা আছে তারা হয়তো প্রকৃত আওয়ামীলাগ কম চিনে অথবা যথেষ্ঠ ভাবে চিনতে চায় না বা তাদের সময় নাই।  ফেসবুকের বদৌলতে গনভবনে এবং প্রধামমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাদের ছবি দেখা যায় এমনকি আপনার সাথে তার কোন প্রোটকলে পড়ে সেটা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। কোথা থেকে তারা পাস ম্যানেজ করে আর আপনার পর্যন্তই বা কারা তাদের পৌছে দেয় সেটা একটা ডাইলেমা।

পরিশেষে বলতে চাই আপনার চার দশকের পথচলায় অনেক ঘাত প্রতিঘাত পাড় হয়েই আজ আওয়ামীলীগের পথচলাকে করেছেন মসৃন। এই যাত্রাপথে আপনার সাথে যারা ছিল এবং আনুগত্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ন তাদেরকে অধিকমাত্রায় কাজে লাগানো জরুরী। কারন রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য জাতিসঙ্গের এম্ব্যাসেডর বা অবসর প্রাপ্ত সামরিক বেসামরিক আমলা হওয়ার দরকার হয় না। রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য দরকার দীর্ঘসময় রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা, নেতৃত্বের প্রতি অানুগত্য প্রদর্শন, নির্জলা দেশপ্রেম এবং জনগনের প্রতি ভালবাসা। আর এইসমস্ত গুনের সমষ্টি দিয়েই আজ আপনি শুধু বাংলাদেশ বহির্বিশ্বেও জলজল করে দ্বীপ্তমান। কাজেই আপনার ফিরে আসা হয়েছে বাংলা ও বাঙ্গালি জাতীর জন্য অর্থবহ।

সুতরাং আজি এ প্রভাতে সূর্য্যি উঠা সফল হলো এই দেশের জনগনের।

লেখকঃ  ১। সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটি।
২। সদস্য, ফরিদপুর জেলা কমিটি।

এই বিভাগের আরো সংবাদ