আজকের শিরোনাম :

চীনা মুদ্রার দরপতন বিশ্ব অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলবে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০১৯, ১১:২৬ | আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০১৯, ১১:৩৮

গত এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে চীনের মুদ্রা ইউয়ানের মান এবার তার সর্বনিম্ন পয়েন্টে নেমে এসেছে। যার প্রধান কারণ চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ। এ পদক্ষেপটি বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে উত্তেজনা তীব্র করে তুলছে।

বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ইউয়ানের দরপতন বাজারের ওপর সুদূরপ্রসারি প্রভাব ফেলতে পারে এবং মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ, বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে উত্তেজনা তীব্র করতে পারে।

২০০৮ সালের পর এ প্রথমবারের মতো চীনা মুদ্রার মান মার্কিন ডলারের চাইতে ৭ ইউয়ান পড়ে যায়। তার পরই সোমবার নতুন করে শুল্ক আরোপের মার্কিন সিদ্ধান্তটি আসে। যা দুই দেশের বাণিজ্য যুদ্ধকে আরও বেগবান করে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন  তিনি ৩০ হাজার কোটি ডলার মূল্যের চীনা পণ্যের ওপর ১০% শুল্ক আরোপ করবেন। যুক্তরাষ্ট্রে আসা চীনের সব আমদানিকৃত পণ্যে শুল্ক আরোপই এর লক্ষ্য।

ইউয়ান দিয়ে অবাধে বাণিজ্য করার কোন সুযোগ নেই। চীনা সরকার মার্কিন ডলারের বিপরীতে তার লেনদেনও সীমাবদ্ধ রাখে।

বিশ্বের অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো, পিবিওসি (পিপলস ব্যাংক অব চায়না।) স্বাধীন নয়। এ কারণে ইউয়ানের দরে বড় ধরণের তারতম্য হলে এই ব্যাংককে জবাবদিহি করতে হয়।

ক্যাপিটাল ইকোনমিক্সের চীন বিষয়ক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জুলিয়ান ইভান্স-প্রিটার্ড বলছেন, ‘সর্বশেষ মার্কিন শুল্ক আরোপের সাথে সমন্বয় করতেইউয়ানের অবমূল্যায়নের বিষয়টিকে মুদ্রা বিনিময়ে একপ্রকার কার্যকরী অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যদিও মুদ্রাটি আসলে হয়তো দুর্বল হয়ে যায়নি।’

দুর্বল ইউয়ানের প্রভাব কী?
দুর্বল ইউয়ান চীনা রফতানিকে আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক করে তোলে। এ কারণে ওই পণ্যগুলো বিদেশি মুদ্রায় কিনতে গেলে দাম কম পড়ে।

মার্কিন দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি আমেরিকাতে আসা চীনা আমদানির ওপর উচ্চ শুল্কের প্রভাবকে ভারসাম্য করার প্রয়াস হিসেবে দেখা হয়। যদিও এটিকে বিশ্বজুড়ে গ্রাহকদের কাছে জয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে- যারা এখন চীনা পণ্যগুলো আরও সস্তায় কিনতে পারছেন- তবে এটি অন্যান্য ঝুঁকি বহন করে।

দুর্বল ইউয়ান চীনে পণ্য আমদানি আরও ব্যয়বহুল করে তুলবে। এ কারণে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাবে এবং চীনা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং মুদ্রাধারীদের অন্যান্য সম্পদে বিনিয়োগের জন্য চাপ দেবে।

মিশেল ফ্ল্যুরির বিশ্লেষণ
মিশেল ফ্ল্যুরি নিউ ইয়র্ক বিজনেস প্রতিবেদক। তার মতে, মার্কিন ট্রেজারি যখন একটি দেশের ওপর মুদ্রা অবমূল্যায়নের তকমা জুড়ে দেয়- যেমনটি এখানে চীনের সঙ্গে করেছে - পরবর্তী পদক্ষেপটি সাধারণত দুই দেশের মধ্যে আলোচনার জন্যই হয়। এক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে ইতোমধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাণিজ্য আলোচনা চলছে।

এ প্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক প্রবর্তনের পথও উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আবার, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মিস্টার ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ প্রচারণার একটি অংশ জুড়েই এমনটা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে, আইএমএফ এর উদ্বেগ নিরসনে কাজ করবে মার্কিন সেক্রেটারি অব দ্য ট্রেজারি মুনচিনও। তবে এটি কেমন ফল দেবে তা এখনও পরিষ্কার নয়।

তারা কি আগে এ কাজ করেছে?
হ্যাঁ, ২০১৫ সালে, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রবৃদ্ধি স্বাভাবিক রাখতে তিন বছরে মার্কিন ডলারের তুলনায় তার মুদ্রাকে সর্বনিম্ন হারে ঠেলে দেয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে যে এ পদক্ষেপটি বাজার সংস্কারকে সমর্থন করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।

সর্বশেষ প্রতি ডলারে ৭ ইউয়ান স্তরে লেনদেন হয়েছিল বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার সময়।

কেন এটি যুক্তরাষ্ট্রকে খেপিয়ে তুলেছে?
বেইজিংয়ের সঙ্গে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে চীনা পণ্যগুলোকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট দীর্ঘদিন ধরে তার রফতানির জন্য চীনকে তার মুদ্রার অবমূল্যায়ন করার অভিযোগ করেছে-যদিও তা অস্বীকার করে আসছে বেইজিং।

ইউয়ানের সর্বশেষ দরপতনকে বাণিজ্য যুদ্ধের সাথে সংযুক্ত করার পরেও চীন বলছে যে তারা ‘প্রতিযোগিতামূলক অবমূল্যায়নে’ জড়িত হবে না।

মুদ্রা কারসাজি এত বিতর্কিত কেন?
মুদ্রার কারসাজিতে বৈশ্বিক ব্যবসায়ের নিয়মগুলিকে লঙ্ঘন করতে দেখা যায়। তার মধ্যে একটি হলো কৃত্রিমভাবে মুদ্রার বিনিময় হারকে স্ফীত করে বা সংকোচন করা। মুদ্রাস্ফীতি এড়াতে বা মূলধন প্রবাহকে হ্রাস করতে রফতানিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য এটি নকশা করা যেতে পারে।

এমরি ল রিভিউতে লরেন্স হাওয়ার্ডের একটি গবেষণাপত্র জানিয়েছে যে ‘বিশ্ববাজারে মুদ্রা কারসাজির মারাত্মক প্রভাব রয়েছে’।

হাওয়ার্ড লিখেছেন, ‘বিশ্বজুড়ে, মুদ্রার হেরফেরটি সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হারিয়ে যাওয়া লাখ লাখ চাকরির জন্য এবং এমনকি ইউরোপে ক্ষুদ্র, তবে তাৎপর্যপূর্ণ, চাকরির সংখ্যা হ্রাস হওয়ার জন্য দায়ী।

ইউয়ান এর পরবর্তী চিত্র কি?
বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস করেছেন যে ইউয়ানের মান আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। ওয়ান্ডা বাজার কৌশলবিদ এডওয়ার্ড মোয়া বলেছেন যে ‘চলতি বছরের শেষের দিকে আরও ৫% ইউয়ানের দরপতন হতে পারে।’

ধারণা করা হচ্ছে, বছর শেষে ইউয়ান প্রতি মার্কিন ডলারের ৭.৩০তে ঠেকতে পারে। যেটা কিনা ৬.৯০ হতে পারে বলে আগে ধারণা করা হয়েছিল।
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ