আজকের শিরোনাম :

নুসরাত হত্যা মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্য ও আংশিক জেরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০১৯, ১৯:০৬

সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় সোমবার সাক্ষ্য দিয়েছেন প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনাগাজী মডেল থানার তৎকালীন পরিদর্শক(তদন্ত) কামাল হোসেন পিপিএম। তার সাক্ষ্য প্রদানের পর আদালতের বিচারক তাকে জেরা করার জন্য আসামী পক্ষের আইনজীবীদের আহবান জানান।

 এসময় আসামী পক্ষের আইনজীবীরা আদলতকে জানান, মঙ্গলবার ঢাকা থেকে একজন আইনজীবী আসবে, তিনি আসার পর জেরা শুরু করা হবে।এছাড়াও আইনজীবীরা তাদের আবেদনকৃত কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট পাওয়ার পর জেরা শুরু করার আবেদন জানান।

আদালত এসময় অন্তত একজন আসামীর পক্ষে জেরা করার আহবান জানালে আসামী কামরুন নাহার মনি ও উম্মে সুলতানা পপির পক্ষের আইনজীবী আহসান কবির বেঙ্গল জেরা শুরু করেন। তার জেরা আংশিক সমাপ্ত হওয়ার পর মামলার কার্যক্রম মুলতবি করে মঙ্গলবার পুনরায় তাকে জেরা করার দিন ধার্য করেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দম ট্রাউব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ।

তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহন ও জেরা শুরু হওয়ার পর হত্যা মামলাটি নিষ্পত্তির প্রায় শেষ পর্য়ায়ে পৌঁছেছে। এরপর মামলার মৃত্যু সনদপত্র প্রদানকারী ডাক্তার ও দ্বীতিয় তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক সাহ আলমের সাক্ষ্য জেরা, যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর রায়ের জন্য অপেক্ষায় থাকবে।

দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে মামলার ১৬ আসামিকে হাজির করে পুলিশ। আদালতের কার্যক্রম শুরুর প্রথমেই আসামী পক্ষের আইনজীবীদের কয়েকটি আবেদনের শুনানীর পর সাক্ষ্য প্রদানের জন্য পিপি হাফেজ আহাম্মদ পুলিশ পরিদর্শক কামিাল হোসেন কে আদালতের সাক্ষীর কাঠগড়ায় হাজির করেন।

সাক্ষী আদালতকে জানান, গত ৮ এপ্রিল  নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের টাইপকৃত এজহারের ভিত্তিতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন রেকর্ড করে তাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহনের পর তিনি তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনাস্থলের সুচিপত্র ও মানচিত্র অংকন করেন।

মামলার আলামত জব্দের চেষ্টা করেন ও ঘটনাস্থলের স্থির ছবি উঠান,দুই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন করেন,মামলা রুজুর পূর্বে  এসআই জহির রায়হান কতৃৃক জব্দকৃত আলামত পর্যালোচনা করে ডকেটে সংয়ুক্ত করেন, ইতিপূর্বে গ্রেফতারকৃত আসামী আরিফুল ইসলাম ও আফসার উদ্দিন কে মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করেন,এ মামলায় মোট নয় আসামীকে গ্রেফতার করেন।গত ৯ এপ্রিল তিনি ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফির পড়ার রুম থেকে নিজ হাতে লিখা দুইটি চিঠি তার চাচা আজহারুল ইসলামের দেখানো মতে জব্দ করেন।

মামলায় গ্রেফতারকৃত ্আসামীদের তিনি আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আনেন, মামলা তদন্তকালে গুপ্তচরের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন গত ৬ এপ্রিল  মাদ্রাসার আট নং হলে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য গেলে আরেক পরীক্ষার্থী আসামী উম্মে সুলতানা পপি হলে গিয়ে নুসরাতকে  বলেন সাইক্লোন সেন্টারের ছাদে তোমার বান্ধবি নিশাতকে মারধর করতেছে,নুসরাত ছাদে গেলে বোরকা ও হাত মোজা পরিহিত  চার জন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে চাপ দিলে সে অস্বীকৃতি জানানোর  পর তার শলীরে কেরোসিন ঢেলে আগুণ লাগিয়ে পালিয়ে যায়।

তদন্তকালে তিনি আরো জানতে পারেন ঘটনার সাথে শাহাদাত হোসেন শামিম, যোবায়ের,নুর উদ্দিন,কামরুন মনি জড়িত। ঘটনার সময় তিনি ডিউটিতে থাকা পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নুসরাতকে উদ্ধার করে সোনাগাজী হাসপাতালে নেন,প্রাথমিক চিকিৎসার পর তিনি নুসরাতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।হাসাপাতালের আরএমও আবু তাহেরের মাধ্যমে নুসরাতের মৃত্যুকালীন জবানবন্দি গ্রহনের আবেদন করেন,তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতারের বার্ন ইউনিটে নেওয়ার জন্য একান্ত মানবিক দিক বিবেচনায় চিকিৎসা খরচ নিজেই বহন করেন।গত ১০ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে তিনি মামলার যাবতয়ি ডকেট পিবিআইর কাছে হস্তান্তর করেন।

সাক্ষ্য প্রদান শেষে মধ্যাহৃ বিরতির পর তাকে আংশিক জেরা করেন আসামী কামরূন নাহার মনি ও উম্মে সুলতানা পপির আইনজীবী আহসান কবির বেঙ্গল। জেরার বিষয়ে আইনজীবী বেঙ্গল জানান, সাক্ষী আদালতকে বলেন ফেনী হাসপাতালে ভিকটিক নুসরাত জাহান রাফি তাকে চার জন আসামীর নাম বলেনি,একাধীক গুপ্তচর তাকে চার আসামীর নাম বলেছে, মামলার কোন সাক্ষী চার আসামীর নাম বলেনি।

ঘটনার পর মাদ্রাসার সাইক্লোন সেন্টারের ছাদে তিনি  উঠেন, তার সাথে মাদ্রাসার শিক্ষক সহ অন্যান্যরা ছিলেন, তখন তিনি ছাদে কোন গ্লাস দেখতে দেখেননি, কোন শিক্ষক তাকে গ্লাসের বিষয়ে কিছু জানায়নি। গত ৮ এপ্রিল মামলার তদন্তভার গ্রহনের পর পুনরায় তিনি মাদ্রাসার সাইক্লোন সেন্টারের ছাদ পরিদর্শন করেন এবং সাইক্লোন সেন্টারের অন্য কক্ষ পরিদর্শন করেন তখন তিনি কোন গ্লাসের সন্ধান পাননি।
 

এবিএন/আবুল হোসেন রিপন/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ