আজকের শিরোনাম :

সৌদিতে নিহত নরসিংদীর ৩ জনের পরিবারে শোকের মাতম

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ মে ২০১৯, ১৮:২৯

সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় (বৃহস্পতিবার ২মে) সকালে নিহত ১০ বাংলাদেশির মধ্যে ৩ জনের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায়। তারা হলেন, উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের তাঁরাকান্দি গ্রামের মান্নান মাঝির ছেলে জামাল উদ্দিন মাঝি, তাঁতারদি এলাকার রশিদুল হকের ছেলে এমদাদুল হক ও খিদিরপুর ইউনিয়নের ডোমনমারা গ্রামের আব্দুল মান্নান শেখের ছেলে মো: আল আমিন।

স্থানীয়রা জানান, নিহতরা সবাই পৃথকভাবে প্রায় এক মাস আগে জীবিকার তাগিদে ঋণের টাকায় সৌদী আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন। ২ মে তারা প্রথম কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি। সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজনের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পরিবারের সদস্যদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। শান্তনা জানাতে এগিয়ে এসেছেন আত্মীয় স্বজনসহ এলাকাবাসী। একমাত্র উপার্জনক্ষম প্রবাসী স্বজনের এমন মৃত্যুতে শোকে নির্বাক হয়ে আছেন স্বজনদের কেউ কেউ।

একদিকে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারানো অপরদিকে ঋণের বোঝা যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থায় ফেলেছে তাদের। শেষবারের মতো দেখার ইচ্ছায় সরকারের মাধ্যমে দ্রুত মৃতদেহ ফিরে পাবার দাবি পরিবার ও স্বজনদের। পাশাপাশি সরকারের প্রতি পরিবারগুলোর পাশে দাড়ানোর দাবী তাদের।  

নিহত এমদাদুল ইসলামের বাবা আব্দুর রশিদ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ২তারিখে আমার পোলার লগে কতা হইছিল। হেয় তহন প্রথম কাজে যাইতাছিল মদিনাতে। আমি আমার পোলারে কইছিলাম মদিনা ভাল জায়গা যাও মন দিয়া কাজ কইর। পরে আর আমার পোলার লগে কতা হয় নাই। সন্ধার দিকে আমগো গ্রামের একজন আমাকে জানাইছে যে মদিনায় যাওয়ার সময় একটা গাড়ি এক্সিডেন্ট হইছে অনেকজন মারা গেছে। পরে জানছি আমার পোলাও মইরা গেছে। এহন আমার সরকারের কাছে একটাই অনুরোধ আমার পোলার লাশটা যেন আমার কাছে আইন্যা দেয়। যেন শেষবারের মতো আমার পোলার মুখটা দেখতাম পারি।

শোকে কাতর নিহত জামাল উদ্দিনের স্ত্রী দিলরুবা বেগম বলেন, আমার ৪ পোলা আর ১ মাইয়ার ভবিষ্যতের জন্য আমার জামাই বিদেশ গেছিল। এহন আমার এই সংসারের কি হইব। সংসার কেমনে চলব, ঋণের টেহা কেমনে দিমু। আমার জামাইর লাশটা আমগো কাছে যনে ফিরাইয়া দেয় সরকারের কাছে আমগো দাবী। শেষ বারের মতো যেন আমার পোলা মাইয়ারা বাপের মুখটা শেষ বারের মতো যেন দেখতারে।

নিহত আল-আমিনের বড় বোন বলেন, আমার ভাইয়ে কাম যাওনের সময় একবার কথা কইছিল। কইছিল কাম গিয়া ২ ঘন্টা পরে আবার কথা কইব। ৩ঘন্টা পরে আমরা ফোন দিয়া মোবাইল বন্ধ পাইছি। পরে জানছি কাম যাওনের সময় এক্সিডেন্ট হইয়া আমার ভাইডা মইরা গেছেগা। আমার বাইডারে শেষবারের মতো দেখতাম চাই।

তার বোন আরো বলেন, আমার ভাই সম্পূর্ণ ঋণ কইরা বিদেশ গেছে। বিদেশ যাওয়ার সময় যেই গাড়ি ভাড়াডা দিছে হেইডাও ঋণের টেহা। এহন এই ঋণ কেমনে শোধ হইব।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২ মে) সকালে রিয়াদ থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে শাকরায় ১৭ জন বাংলাদেশিকে বহনকারী একটি মিনিবাস চাকা ফেটে উল্টে যায়। এতে ১০ বাংলাদেশি নিহত হন। তারা সবাই আল হাবিব কোম্পানি ফর ট্রেডিং কর্মাশিয়াল কন্ট্রাক্টস নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।
 

এবিএন/সুমন রায়/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ