আজকের শিরোনাম :

চকবাজার ট্রাজেডিতে বিধবা হলেন সোনাগাজীর মা-মেয়ে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:৫০

ঢাকার চকবাজার ট্রাজেডিতে বিধবা হলেন সোনাগাজীর মা মেয়ে। গত বুধবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহত হয়েছে সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউপির গোয়ালিয়া গ্রামের ছেরাজুল হকের বাড়ীর আবু মিয়ার ছেলে সুজাউল হক।তিনি গত ৩ বছর ধরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ওয়াহিদ ম্যানশনের দারোয়ান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

একই সময় সুজাউল হকের বড় মেয়ে বিবি হাজেরার স্বামী ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের নেয়ামতপুর গ্রামের ভুঞা বাড়ীর আজিজুল হকের ছেলে ইব্রাহিম নিহত হয়েছে।সে ওয়াহিদ ম্যানশনের রাস্তার অপর পাশে অবস্থিত রাজমহল হোটেলের সামনে পান সিগারেটের দোকান করতো।অগ্নিকান্ডে ইব্রাহিম আত্মীয় একই গ্রামের আনোয়ার হোসেনও নিহত হয়েছে।

মেয়ে জামাই ইব্রাহিমের হাত ধরে ঢাকাতে দারোয়ানের চাকুরী পায় শ্বশুর সুজাউল হক।অগ্নিকান্ডে শ্বশুর জামাই লাশ হয়ে গ্রামে ফিরেন আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা শুরু করেছে সদ্য বিধবা মা  আলেয়া বেগম ও মেয়ে বিবি হাজেরা বেগম।দুই পরিবারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যাক্তিদের হারিয়ে শোকে হতবিহবল মা মেয়ে কে কাকে শান্তনা দিবে?বৃহস্পতিবার রাতে ২ জনের লাশ যখন সোনাগাজীর গ্রামের বাড়ীতে পৌঁছে মা মেয়ের গগন বিদারী আর্তনাতে আত্মীয় স্বজন,পাড়া প্রতিবেশী ও এলাকাবাসীর চোখে জল।শত চেষ্টা করেও মা মেয়েকে শান্তনা দিয়ে তাদের কান্না থামানো যাইনি।

শুক্রবার সকালে সুজাউল হককে তাদের পারিবারীক কবরস্তানে ও ইব্রাহিমকে নিজ গ্রামে দাফন করা হয়েছে।সুজাউল হকের মুখমন্ডল চেনা গেলেও আগুনের লেলিহান শিখায় ইব্রাহিমের লাশ বিকৃত হয়ে গেছে।
স্ত্রী আলেয়া বেগম,ছেলে নুরনবী,মেয়ে বিবি হাজেরা বেগম,বিবি কুলসুমা বেগম, বিবি আয়েশা বেগম,আফরিন সুলতানাকে নিয়ে দরিদ্র কৃষক সুজাউল হকের পরিবার।গত ৭ বছর পূর্বে পাশ্ববর্তী ইব্রাহিমের নিকট বড় মেয়ে হাজেরা কে বিবাহ দেয় সুজাইল হক।

ইব্রাহিমের মাইমুনা(৬) ও মাহি(৩) নামে দুইজন মেয়ে সন্তান রয়েছে।পরিবারের অভাব দুর করতে গত ৩ বছর পূর্বে সুজাউল হক মেয়ে জামাই ইব্রাহিমের হাত ধরে ঢাকা গিয়ে মৃত্যুপুরি ওয়াহিদ ম্যানশনে দারোয়ানের চাকুরী নেয়। ইব্রাহিম গত ১০ বছর ধরে পুরাতন ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা মসজিদের সামনে রাজমহল হোটেলের পাশে পান সিগারেটের দোকান করেছে।একসাথে খাওয়াদাওয়া ও একই রুমে থাকতো শ্বশুর জামাই।

গত কোরবান ঈদে শ্বশুর জামাই একসাথে বাড়ী থেকে ঢাকা গিয়ে ৬ মাস পর একসাথে বাড়ী ফিরেছে লাশ হয়ে।
সুজাউল হকের ছেলে নুরনবী বলেন, বুধবার রাতে টিভিতে চকবাজারে আগুন লেগেছে খবর দেখতে পেয়ে বাবা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতোনা বলে দুলাভাই ইব্রাহিমের মোবাইলে ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।এরপর দুলা ভাইয়ের সাথে ব্যবসা করা করা আনোয়ারের নাম্বারে ফোন দিলেও সেটি বন্ধ পাই।

তারপর ওয়াহিদ ম্যানশনের পাশে অপর দোকানিকে ফোন দিলে তার কাছে জানতে পারি আগুন লাগার কিছুক্ষন আগে বাবকে ওয়াহিদ ম্যনশনের গেটের ভিতর ঝাড়– দিতে দেখেছে,আগুন লাগার পর থেকে বাবার সন্ধান পাচ্ছেনা।আগুন লাগার সাথে সাথে দুলাভাই ইব্রাহিম ও আনোয়ার বাঁচার জন্য দোকানের ভিতরে ঢুকেছে।তারপর বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের লাশের সন্ধান পাই।

ইব্রাহিমের স্ত্রী বিবি হাজেরা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন,রাতে ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফোন দিলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।এরপর আর ফোনটি খোলা পাওয়া যায়নি।আগুন লাগার খবর পাওয়ার আধা ঘন্টা আগে মোবাইলে কথা বলেছি,বলেছে দোকান বন্ধ করে ফোন দিবে কিন্তু তার আগে সব শেষ।গত কোরবান ঈদের পর বাড়ী থেকে গেছে, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বাড়ীতে আসার কথা ছিলো।পান দোকান করে যে টাকা পাঠাতো তাহা দিয়ে কোন রকমে সন্তানদের নিয়ে চলতাম,বাড়ীতে দোচালা ঘর তুলেছি,কথা ছিলো বাড়ীতে এসে ঘরের টিন লাগাবে।আগুন আমার সব স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে।স্বামী আগুনে পুড়ে মারা গেছে, বাবা যদি বেঁচে থাকতো অন্তত সহযোগিতা পেতাম,আশ্রয় পেতাম,স্বামীর সাথে বাবাও আগুনে পুড়ে মারা গেছে,এখন যাওয়ার আর জায়গা নেই।

সুজাউল হকের স্ত্রী আলেয়া বেগম স¦ামীর শোকে কিছুক্ষন পর পর অজ্ঞান হচ্ছে,জ্ঞান ফিরতেই শুধু বিলাপ করছে।ক্ষীনকন্ঠে প্রতিবেদককে বলেন, সব শেষ হয়ে গেছে,বাড়ীতে আসার কথা ছিলো,জীবিত ফিরতে পারলোনা,কয়লা হয়ে ফিরেছে। কে দেখবে আমাকে, আমার সন্তানদের, কার কাছে যাবো আমি ? আমার মেয়ে বিধবা হলো, আল্লাহ কেন আমাদের এত বড় শাস্তি দিলো?

সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সোহেল পারভেজ বলেন, নিহত সুজাউল হকের পরিবার কে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সহায়তা প্রদান করা হবে।

প্রসঙ্গত বুধবার(২০) ফেব্রুয়ারী রাতে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকার চুড়িহাট্টি শাহী মসজিদের সামনে একটি পিকআপের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আশেপাশের ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট ও বিমান বাহিনীর দুইটি হেলিকপ্টার দীর্ঘ চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম।এই অগ্নিকান্ডের পর বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা ৮০টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন।


এবিএন/আবুল হোসেন রিপন/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ