আজকের শিরোনাম :

রাজবাড়ীতে শ্মশান নির্মাণকে কেন্দ্র করে সংঘর্ঘের আশঙ্কা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:২০

রাজবাড়ীর চন্দনী ইউনিয়নের জৌকুড়া এলাকায় শ্বশ্মান নির্মানকে কেন্দ্র হিন্দু-মুসলিম দুটি সম্পদায়ের মানুষ দুইভাবে বিভক্ত হয়ে পরেছে। দু পক্ষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে টান টান উত্তেজনা। এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। যে কোন মূহুর্তে বাদতে পারে সংঘর্ষ।

এমন জনবসতী এলাকায় শ্বশ্মান নির্মানে প্রতিবেশী মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিক আংশ বাসিন্দাদের রয়েছে ঘোর আপত্তি। শ্বশ্মান নির্মাণকারী ও জমির দাতা সুমনের দাবী এ অঞ্চলে বসবাসরত প্রায় ৩ শত হিন্দুর নেই কোন দাহ করার সু ব্যাবস্থা। উভয় সংকটে স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা। কয়েক বার গ্রাম্য শালিয়ে বসেও হয়নি কোন সুরাহা জানিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

 সোমবার সকালে সরোজমিন জৌকুড়া এলাকায় গিয়ে দেখাযায়, মাত্র আড়াই শতাংশ জমির উপর নির্মিত হচ্ছে জৌকুরা সার্বজনিন শ্মাশান। যার নির্মান কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এ শ্মশান নির্মানকে কেন্দ্র করে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। স্থানীয়রা জানান, এখনই এর সমাধান হওয়া দরকার, না হলে যে কোন সময় বাদতে পারে বড় ধরনের সংঘর্ষ।

    এ শ্বশ্মান ঘর নির্মিত জায়গার চারপাশের জমির মালিক অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ জালাল উদ্দিন মন্ডল বলেন, আমি এখানে ১৯৭১ সালের পর থেকে পর্যায়ক্রমে প্রায় ১ শত ২৩ শতাংশ জমি ক্রয় করেছি। এ জমির মাঝখানে একটি মঠ অবস্থিত ছিল। যার জন্য জমির অংশিদাররা ৩ শতাংশ জমি বিক্রয় করে নাই। আমিও বিএস রেকর্ডের সময় দাগকেটে (আমার জমির মাঝখানে হলেও) রেকর্ড করতে সহযোগিতা করি। এখন সুমন কুডু সেটাকে সার্বজনিন শ্বশ্মান বানাতে চাচ্ছে।

স্থানীয় মোঃ আব্দুল হাকিম বলেন, এ শ্মাশানের ৫০ গজের মধ্যেই রয়েছে ১০/১৫ টি মুসলিম পরিবার, এখানে একটি মানুষ দাহ করার সময় যে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় এটা পরিবেশ বান্ধব নয়। যে কারনে আমাদের আপত্তি। এ ছাড়াও এই শ্মশানের মাত্র তিন শতাংশ জমি যার পুরোটাই ঘর নির্মান হচ্ছে একটি মানুষ দাহ করতে যে মানুষ আসবে তাদের দাড়ানো বা বসার কোন যায়গা নাই। এ শ্বশ্মানে ঢোকার কোন পথ নেই। শ্মশানে আসতে হবে পাশের জমির মালিক জালাল মাস্টারের জমির উপর দিয়ে। যে কারনে আমাদের মনে হচ্ছে এটা উদ্দেশ্য প্রনোদিত।

এদিকে শ্বশ্মান নির্মাতা সুজিৎ কুমার কুন্ডু সুমন বলেন, এই জায়গাটার পুরোটাই এক সময় আমাদের ছিল, আমাদের পুর্ব পুরুষরা সব জমি বিক্রয় করলেও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিহারীদের গুলিতে এখানেই আত্মহুতি দেয় রমনী মহন কুন্ডু ও বিমল চন্দ্র কুন্ডু। যাদের এখানেই দাহ করে মঠ তৈরি করে রাখা হয়। আমি এ পরিবারের উত্তসূরি হিসাবে তাদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে ও এ অঞ্চলের প্রায় ৩ শত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের শেষকৃত্য সম্পাদন করতে ২০০১ সালে এ জমিটি জৌকুরা সার্বজনিন শ্বশ্মানের নামে ওয়াকফ করে দেই।

অতি সম্প্রতি জেলা পরিষদ থেকে কিছু অনুদান পেয়ে স্থ্যানীয়দের সহযোগিতায় এ শ্মাশান ঘরটি নির্মান করছি। জালাল মন্ডল নির্মানের প্রথমে বাধা না দিলেও এখন নির্মানের শেষ পর্যায়ে এসে বাধার সৃষ্টি করেছে। যা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এবিষয়ে একাধীক বার বসার পরেও সমাধান না হয়ায় চেয়ারম্যান বলেছেন আইনের আশ্রয় নিতে বলেছেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য ও ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ফয়সাল আহম্মেদ চান্দু বলেন, এ স্থানে দীর্ঘ কাল থেকেই হিন্দুদের মৃতদেহ দাহ হয়ে আসছে। কেহ বাধা দেয়নাই। এখন এখানে একটি শ্মশান ঘর নির্মান করতে গেলে জনৈক জালাল মন্ডল শ্বশ্মানের মধ্যে তার জমি আছে বলে বাধার সৃষ্টি করে। তবে আশা করছি অচিরেই উভয় পক্ষের সন্তষ্টির মধ্যেই একটি সমাধানে আসতে পারবো।

চন্দনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে এম সিরাজুল আলম চৌধুরী বলেন, আমি এ বিষয়টি অবগত হয়েছি। বিষয়টি অত্যান্ত স্পর্সকাতর হওয়ায় প্রথম পর্যায়ে স্থ্যানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিদের উপর বিষয়টি সুরাহার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলাম। কিন্তু এটি এখনো বেস কিছু দিন অতিবাহিত হলেও কোন সমাধান হয়নি। তাই আমি সুমনকে বলেছি আইনের আশ্রয় নিতে।

এবিএন/খন্দকার রবিউল ইসলাম/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ