আজকের শিরোনাম :

টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্পের উন্নয়নে সরকারি হস্তক্ষেপ চায় তাঁত মালিকরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ মে ২০১৮, ১৫:১৭

দেলদুয়ার (টাঙ্গাইল), ২৩ মে, এবিনিউজ : আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে সরগমর হয়ে উঠেছে টাঙ্গাইলের এতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প। জেলার তাঁত পল্লীগুলোতে সর্বত্রই চলছে বাহারি ডিজাইনের কাপড় বুনানোর ধুম।

উচ্চমুল্য দিয়ে সুতা ক্রয় ও প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেশি হলেও ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত শাড়ী উৎপাদন কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। সংসারে বাড়তি আয় যোগ করতে কাজ করছেন পরিবারের মহিলারাও।

বেঁচাকেনা ভালো হলেও তবুও দুশ্চিন্তা আর হতাশা পিছু ছারছেনা তাঁতিদের। একদিকে দেশীয় মার্কেট গুলোতে ভারতীয় শাড়ীর অবাধ প্রবেশ, সুতার দাম বৃদ্ধি, পাওয়ারলোম তাঁত মেশিনের দাপট, শাড়ী ব্যবহারের প্রতি নারীদের অনিহা, সরকারি কোর পদক্ষেপ না থাকা। ইত্যাদি কারণেই তাঁত শিল্প তার জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে বলে তাঁতিদের অভিমত। এছাড়া তাঁত শিল্পের দেখভাল করার জন্য সরকারের কোনো দপ্তর আছে কিনা তাও জানেনা অধিকাংশ তাঁতি।

তাঁত মালিক মমিনুর রহমান জানান, নি¤œমানের ও সস্তা দামের ভারতীয় চাকচিক্যপূর্ণ শাড়ীগুলো দেশীয় বাজারে প্রবেশ করায় আমাদের অনেক ভালো মানের শাড়ী মার খাচ্ছে। গত দুই যুগ ধরে বেড়েই চলেছে সুতার দাম। পাওয়ারলোম মেশিনে চাহিদার চেয়েও বেশি শাড়ী উৎপাদন হচ্ছে।

আর অন্যদিকে নারীরা এখন তাদের দেশীয় বাঙালিয়ানা হারিয়ে থ্রীপিসসহ নানা আধুনিক পোশাক পরছে। নারীদের শাড়ী ব্যবহারের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে সরকারের উৎসাহ মুলক কোন পদক্ষেপ নেই। যার ফলে নানা কারনেই আমাদের শাড়ী ব্যবসা মুলত ঈদ নির্ভর হয়ে পড়েছে। দেশীয় বাজারে ভারতীয় শাড়ী প্রবেশ বন্ধ করতে না পারলে এবং তৃণমুল তাঁতিদের সমস্যা নিয়ে সরকার আলোচনায় না বসলে এক সময় তাঁত শিল্প বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেই সাথে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে।

মায়ের স্মৃতী শাড়ী ভূবনের স্বত্তাধীকারি ফরিদ বিন মুসলিম জানান, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকার তাঁত শিল্পের উন্নয়নে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তাঁতিদের সাথে তাঁত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন কর্মকর্তা  বা সরকারের কোন তরফের আলোচনা হয়েছে বলে আমার জানা নেইা। সম্প্রতি টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্পকে “টাঙ্গাইল জেলার ব্যান্ডিং” ঘোষণা করা হয়েছে।

কিন্তু তাঁত শিল্প ক্রমে চলে যাচ্ছে বিত্তবানদের হাতে। স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋন পাচ্ছেনা ব্যবসায়ীরা। আর ব্যাংক ঋন পেতে গেলেও রয়েছে কাগজ পত্রাদির নানান জটিলতা। গত এক যুগে নি¤œ ও মধ্যবিত্তদের কয়েক হাজার তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারকে তাঁতিদের সমস্যা সমাধানের জন্য আহ্বান জানান এই ব্যবসায়ী।

শাড়ী উৎপাদক আমিনুর রহমান বলেন, শাড়ী বিক্রি ভালোই হচ্ছে। শ্রমিকরাও অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তবে উৎপাদনে লোডশেডিং একটি বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। কাপড়ের দাম খুব একটা বাড়েনি। ক্রেতারা সস্তায় শাড়ী ক্রয় করতে পারছে। শুধু একমাস শাড়ী বিক্রি করে পুরো বছর তাঁত চালানো দুষ্কর। সরকার কোন পদক্ষেপ না নিলে তাঁত শিল্প হয়তো কোন এক সময় তাঁতিদের কাছ থেকে বিলিন হয়ে যেতে পারে।

এ ব্যাপারে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ের বেসিক সেন্টার টাঙ্গাইল জেলা লিয়াজু অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, আগের চেয়ে তাঁতের সংখ্যা কমে গেছে। তাঁতিদের সমস্যা গুলো মুলত দীর্ঘদিনের। তাদের সমস্যা সমাধানে সরকার চেষ্টা করছে।

টাঙ্গাইল সেন্টারেন অধিনে ৬ টি উপজেলা রয়েছে। গত ১১ নভেম্বরে তাঁতিদের সমস্যা নিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব সমিতির লোকজনের সাথে আলোচনা করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় সমিতি ওয়্যারি সুতার উপর ৫% যে ইমপোর্ট ট্যাক্স আছে সরকার তা মওকুফ করে দিয়েছে। যদিও এটা যথেষ্ট নয়।  ১৯৯৬ সালের আইনে প্রান্তিক তাঁতিদের ১০ হাজার টাকা ঋন দেয়ার যে আইন রয়েছে তারও পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

এরপরও সব কিছু ছাপিয়ে আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ধুলটিয়া,বাজিতপুর, সুরুজ, বার্থা, বামনকুশিয়া, গোসাইজোয়াইর, তারটিয়া, এনায়েতপুর, বেলতা, গড়াসিন, সন্তোষ, কাগমারী প্রভৃতি ও দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল, চন্ডি, নলুয়া, দেওজান, নলশোঁধা, বিষ্ণুপুর, মঙ্গলহোড়, কালিহাতী উপজেলার বল্ল¬া-রামপুর, ছাত্তিহাটি, আইসরা, রতনগঞ্জ কোবডোরা প্রভৃতি গ্রামে তৈরি হচ্ছে মনোমুগ্ধকর রুচি সম্মত টাঙ্গাইল শাড়ী।

এবারের ঈদ ও পুজার আকর্ষন হচ্ছে, হাইব্রিট, সুতি ও সিল্ক জামদানি, বালুচুরি, ধানসিঁড়ি, আনারকলি, গ্যাস, ডেঙ্গু, শপসিল্ক, রেশম, তশর, ফোরফ্লাই, কাতান, শাপাইরা, একতারি দোতারি, মনপুরা, সুতি কুচি ইত্যাদি। এই ঈদে এসব শাড়ী ক্রেতাদের নজর কারবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এবিএন/মোজাম্মেল হক মামুন/জসিম/এমসি

এই বিভাগের আরো সংবাদ