আজকের শিরোনাম :

রুমা উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:০৬

বান্দরবান জেলার দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল রুমা। নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য্য মন্ডিত বগালেকের মত দেশের অন্যতম পর্যটক আর্কষণের অবস্থান এ উপজেলায়। এছাড়াও প্রাকৃতিক, বনজ ও প্রাণী সম্পদের  আধার উপজেলার অর্থনীতিকে রেখেছে বেগবান। নিরবচ্ছিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রমের অন্যতম পূর্বশর্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা। বর্তমানে জেলার সাথে রুমা বাজার পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ বিদ্যমান এবং কেওক্রাডং পর্যন্ত রুমা জোনের অধীনে থেকে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার  কনস্ট্রাকশন দল এ রাস্তার বর্ধিত করণ অব্যাহত রেখেছে।

 প্রধান এ রাস্তা ব্যতীত রুমা উপজেলার অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও আদি পর্যায়ে রয়েছে, যা সাধারণ যানবাহন চলাচলের অযোগ্য। দুর্গম এ অঞ্চলের জনগণ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই জীবন যাপনের মৌলিক চাহিদা হতে বঞ্চিত। দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা এবং সুবিধা বঞ্চিত জনগণ হতে অনেক ক্ষেত্রেই জন্ম নেয় বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন, যারা চাঁদাবাজি, অপহরণ, লুটতরাজ ইত্যাদি কাযক্রমে লিপ্ত থাকে।
বাংলাদেশ সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রুমার মত দুর্গম এলাকায় আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সর্বোপরি শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অত্র এলাকায় নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্বনামধন্য ইউনিট ২৭ ইস্ট বেঙ্গল (শাশ্বত সাতাশ) রুমায় পদার্পণ করার পর জোন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন লে: কর্ণেল মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, ইউএসপি, পিএসসি; যার নেতৃত্বে বিগত আট মাসে রুমা উপজেলায় বিভিন্ন জনসচেতনতা, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন মূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে যার ব্যাপক প্রতিফলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রুমা জোন কর্তৃক স্থাপিত রয়েল পাড়া ও ময়ূর পাড়া স্কুলের ৬০ জন শিক্ষার্থীর থাকা খাওয়া এবং বিনামূল্যে লেখাপড়ার যাবতীয় খরচ বহন করা হচ্ছে। সুনসং পাড়া, বাকলাই পাড়া, বড়থলি পাড়ায় শিক্ষকদের মাসিক বেতন ও ভাতা নিয়মিত ভাবে পরিরোধ করে আসছে রুমা জোন।

 এছাড়াও গরীব ও দুস্থ ছেলে-মেয়েদের প্রয়োজনীয় বই পুস্তক সহ আর্থিক সুবিধাদি প্রদান করে আসছে। রুমার আইন শৃক্সক্ষলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, বাজার কেন্দ্রসহ বিভিন্ন কমিটি যেমন রুমা বাজার কমিটি, মন্দির কমিটি সহ বিভিন্ন পরিচালনা পর্ষদকে ঢেলে সাজানোতে বর্তমান রুমা বাজারে জনগণের সেবামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের পরিচালনা কমিটিদের জবাব দিহিতার আওতায় আনায় তারা সুষ্ঠু ভাবে বাজার এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

 উল্লেখ্য যে, এ সময়ে রুমা বাজারে রাস্তা সংস্কার, রুমা বাজার ক্যাম্প হতে পানির হাউজে বাজারে পানি সরবরাহ করণ, বাজারের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, বাজারের রাস্তা সংস্কার, যানবাহনের সঠিক স্থানে পার্কিং, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং ড্রেইনেজ প্রকল্প সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন ও চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রুমা বাজারের দীর্ঘ দিনের সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজি নির্মূলে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে বর্তমানে বিভিন্ন অভিযান অব্যাহত রাখায় এলাকার জনগণ নির্বিঘেœ ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছে।

চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করার ফলে এলাকার জনগণের মধ্যে শান্তি ফিরে এসেছে। দুর্গম এলাকার আফিম ও মারিজুয়ানা চাষকৃত জমি পুড়িয়ে এবং মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে মাদক মুক্ত রুমা উপজেলা নিশ্চিত করেছে সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনী শুধু দেশ রক্ষা নয়, আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, আর্ত মানবতার সেবা, আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এর পাশাপাশি বান্দরবান জেলার গহীণ অরণ্যে বসবাসকারী জনগণের চিকিৎসা সেবা সহ সকল ধরণের সহযোগীতায় হাত প্রসারিত করেছে রুমা জোন।

রুমা বাজার এলাকা এবং রনি পাড়াতে সম্প্রতি বিশাল চিকিৎসা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়। এতে ১৮০ জন পুরুষ, ২৬৮ জন নারী এবং ১০২ জন শিশুকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান ও ওষুধ বিতরণ করা হয়। রুমা উপজেলায় এ ধরণের সেবামূলক পদক্ষেপের ফলে উপজেলাবাসী জোন অধিনায়ককে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন এবং এ ধরণের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য জোন অধিনায়ককে সবিনয় অনুরোধ করেছেন।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মন্ডিত রুমা উপজেলায় রয়েছে বিভিন্ন আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা, যেমন বগালেক, কেওক্রাডং, জাদিপাই ও তিনাপ সাইতার ঝর্ণা এবং রাম জু তাং পাহাড় ইত্যাদি। বর্তমানে কেওক্রাডং পর্যন্ত চলমান কাজ বগালেক পর্যন্ত সম্পন্ন হওয়ায় পর্যটকরা নিরবচ্ছিন্ন ভাবে বগালেক ভ্রমণ করতে পারছেন।

 শীতকালীন মৌসুমে পর্যটকগণ স্থানীয় চান্দের গাড়িতে কেওক্রাডং পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। পর্যটন শিল্পের প্রসারে এ সকল এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত কল্পে সার্বক্ষনিক ভাবে অভিযান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনী। এছাড়াও পর্যটকদের বিভিন্ন তথ্য ও সেবা প্রদানের লক্ষ্যে রুমা জোনে একটি নতুন পর্যটক সাহায্য কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।
রুমা জোনের জোন অধিনায়ক লে: কর্ণেল মোহম্মদ শাহনেওয়াজ, এসইউপি, পিএসসি এর সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে রুমা বাজারের উন্নয়ন এবং শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করছে। দীর্ঘ দিনের সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি বন্ধ করণ, পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকরী অভিযানের মাধ্যমে সন্ত্রাস দমনে শতভাগ সফল হয়েছে রুমা জোন।

বিগত আট মাসে বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কর্মকান্ডে রুমা উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ জোন কমান্ডার এর নিকট কৃতজ্ঞ  ও সন্তুষ্ট। আগামীতেও অনুরূপ কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতা বজায় থাকা সকলের কাম্য। রুমা জোনের জোন কমান্ডারের এ ধরণের পদক্ষেপের ফলে এলাকায় আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি এবং সকল সম্প্রদায়ের জনগণের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান রুমা উপজেলাকে পরিণত করেছে এক অন্যন্য ভ’মিতে।
 

এবিএন/চনুমং মারমা/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ