আজকের শিরোনাম :

উত্তরগণতন্ত্র ও লিংকনের পিপল

  মিল্টন বিশ্বাস

২০ অক্টোবর ২০১৯, ১৩:২৪ | অনলাইন সংস্করণ

‘উত্তরগণতন্ত্র ও লিংকনের পিপল’ (২০১৯) বইটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের তথ্যবহুল ও বহুল আলোচিত বই। 

ড. মীজানুর রহমান কুমিল্লা জেলার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন মেধাবী। স্কুলজীবনেই লেখালেখি শুরু করেন। লেখাপড়া শুরু কুমিল্লাতে  হলেও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে বি.কম ও এম.কম ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবন সরকারি চাকরি দিয়ে শুরু করলেও অধ্যাপনাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। তিনি এ বই ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বই লিখেছেন। ‘কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণ’, ‘বাজারজাতকরণ’, ‘বাজারজাতকরণ নীতিমালা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও উন্নয় ভাবনা’,  ‘বঙ্গবন্ধু বাঙালি ও বাংলাদেশ’ ইত্যাদি। ব্যক্তিগত জীবনে অনেক দেশ ভ্রমণ ও অনেক গুণী মানুষের সাথে কাজ করেছেন তিনি।  

গুণী এ লেখক তাঁর এ বইতে রাজনীতি ও শিক্ষা নিয়ে বিভিন্নভাবে আলোচনা করেছেন,  যা অন্য কোনো লেখকের লেখায় দেখা যায় না।  এদিক দিয়ে তিনিই প্রথম এ ধরনের  বই লিখেছেন যা সময়ের সাথে, মানুষের জীবনের সাথে গভীরভাবে জড়িত। পেশায় অধ্যাপনা হলেও তিনি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। সেহেতু টেলিভিশনে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে টকশোতে আলোচনা করেন সেই কারণে রাজনৈতিক ভাবনার প্রভাব তাঁর এ বইতে দেখা যায়। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়ন করার তার যে প্রয়াস তাও স্থান পেয়েছে এতে। এ বই পাঠ করার পরে জ্ঞান যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি দেশ-বিদেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসাও জাগ্রত হয়। যারা দেশের জন্য ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম।

এ বইতে যে প্রবন্ধগুলো আছে তা তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়।  যেমন রাজনীতি, সমসাময়িক নির্বাচনি এবং শিক্ষা। সর্বোপরি বাংলাদেশের উন্নয়ন। এখানে আছে মানুষের কল্যাণের কথা, দেশের কথা।  দেশকে সুখী সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তাঁর যে ভাবনা সেগুলোই তিনি সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। বইটিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট এলেও সার্বিকভাবে বৈশ্বিক চিত্র প্রকাশ পেয়েছে।

রাজনৈতিক ক্যাটাগরিতে পড়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ। যেমন,  উত্তরগণতন্ত্র ও আসন্ন নির্বাচন, জোট ও ক্ষমতার রাজনীতি, লিংকনের পিপল ও জনগণের নির্বাচন,  উন্নয়নশীল বাংলাদেশ ও আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, বিএনপির আদর্শ ধর্মাশ্রয়ী ধর্মান্ধতা ও ভারত বিরোধী রাজনীতি এবং রাজনীতির রিকনসিলিয়েশন : প্রস্তাবনা ও বাস্তবতা ইত্যাদি।  

‘উত্তরগণতন্ত্র ও আসন্ন নির্বাচন’ প্রবন্ধে গণতন্ত্র কি এবং গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা এবং আব্রাহাম লিংকনের গণতন্ত্রের সংজ্ঞার আলোকে বাংলাদেশে কোন ধরনের গণতন্ত্র বিরাজ করছে তা আলোচনা করেছেন। লেখক আলোচনা করে বলেন যে, প্লেটো ও লিংকনের গণতন্ত্র আমাদের দেশে নেই।  আমাদের দেশে আছে সনাতন গণতন্ত্র। সেখানে সভা, সমাবেশ, মিছিল, বিক্ষোভ ও অবরোধকেই গণতান্ত্রিক কর্মসূচি মনে করা হয়। কিন্তু এগুলো কখনো গণতান্ত্রিক দেশের কাম্য নয়। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশে যে গণতন্ত্র আছে তা হলো দুটি আদর্শের ধারা।  যার একটি বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার পক্ষের অপরটি হলো জামায়াত ও বিএনপির ধর্মাশ্রয়ী আদর্শ। এটা ভ্রান্ত গণতন্ত্র।  

‘জোট ও ক্ষমতার রাজনীতি’ প্রবন্ধে লেখক বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি মূলত ক্ষমতা দখলের রাজনীতি।  সেখানে ক্ষমতা থাকলে সবই হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিকে তিনি ‘ওয়ে অব গেইনিং পাওয়ার’ বলেছেন।  আর সে পাওয়ার পেতে জোট বেধে এক হয়ে নির্বাচন করছে।  একেই তারা মনে করে ক্ষমতায় আসার একমাত্র উপায় বা পন্থা।  এখানে কিছু রাজনৈতিক দল এক হয়ে প্রয়োজনে বিপক্ষকে নিঃশেষ করতেও দ্বিধা করে না। যার ফলে বিএনপি জামায়াত আওয়ামীলীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে বার বার হামলা চালায়। জোটের রাজনীতি এ অঞ্চলে পূর্ব থেকেই চলে আসছে এ কথাও জানান তিনি।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ