আজকের শিরোনাম :

ফেসবুক ব্যবহারে থাকুক সীমারেখা

  সাহাদাৎ রানা

১৮ নভেম্বর ২০১৯, ১৪:০০ | অনলাইন সংস্করণ

বর্তমান নাগরিকজীবনে সচেতন মানুষমাত্রই ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল। ব্যস্ত জীবনে তাই ইন্টারনেট ছাড়া চলা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ছে আমাদের জন্য। এমন প্রয়োজনীয়তা অবশ্য বাস্তবতার নিরিখে। কারণ ইন্টারনেট আমাদের সামনে আজ অসীম তথ্যভাণ্ডারের দ্বার উন্মোচন করেছে। বিশেষ করে মুঠোফোনে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিধি আরও বিস্তৃত হয়েছে। এর বড় একটা অংশজুড়ে রয়েছে ফেসবুকে। এখন শুধু একটি নিদিষ্ট বয়সের মানুষই ফেসবুক ব্যবহার করেন না। বরং এখন অপ্রাপ্ত বয়সের মানুষ থেকে শুরু করে সবাই যার যার প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন ফেসবুককে মাধ্যম করে। যুক্ত থাকেন দিনের অনেকটা সময়। সহজ কথায় বর্তমানে ফেসবুক হচ্ছে সময়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগমাধ্যম। এই মাধ্যমের সঙ্গে জড়িত দেশের প্রায় কয়েক কোটি মানুষ। প্রতিদিন একজন সচেতন মানুষ ঘুম থেকে উঠে ঘুমুতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ফেসবুকের মাধ্যমে দেশের খবর থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজন সবার সবশেষ খবর রাখেন। শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে ফেসবুকের কারণে সমাজে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তনের ঘটনাও ঘটছে। বিশেষ করে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মকা-ও পরিচালিত হয় ফেসবুকের মাধ্যমে। বিভিন্ন গ্রুপ খুলে গঠনমূলক উদ্যোগ বাস্তবায়ন ও বিস্তার সম্ভব হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মানুষে মানুষে বন্ধন সৃষ্টিতে ফেসবুক রাখছে অগ্রণী ভূমিকা।

আলোর নিচে যেমন অন্ধকার থাকে, তেমনি ফেসবুকের কিছু অপব্যবহারও রয়েছে। সম্প্রতি ফেসবুকে কটূক্তিমূলক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনা অবশ্য এটাই প্রথম নয়, এর আগেও ফেসবুকে কটূক্তিমূলক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। তবে ইদানীং আরও একটি বিষয় আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। তা হলো আমাদের অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের ফেসবুক ব্যবহারের বিষয়টি। ফেসবুক ব্যবহারে দোষের কিছু নেই। তবে সম্প্রতি আমাদের অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের ইন্টারনেট ও ফেসবুকের প্রতি অতি আসক্তি রীতিমতো ঝুঁকি তৈরি করছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, ইন্টারনেট আমাদের সবার কাছে অসীম তথ্যভা-ার; যা আমাদের সন্তানদের জন্য যেমন শিক্ষা ও বিনোদনের দ্বার উন্মোচিত করেছে, তেমনি ফেলেছে অস্বস্তিতেও। এখন আমরা আমাদের কর্মব্যস্ততার কারণে আমাদের অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের হাতে তুলে দিচ্ছি মোবাইল ফোন। এর পেছনে রয়েছে অনেকগুলো ইতিবাচক দিক। বিশেষ করে কর্মজীবী পিতা-মাতা যেন তাদের সন্তানদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতে পারেন। এ ছাড়া সন্তানদের দেওয়া হচ্ছে কম্পিউটার। যাতে তারা দ্রুত পৃথিবী সম্পর্কে জানতে পারে। এতে একদিকে সন্তানের মানসিক বিকাশ যেমন হচ্ছে, তেমনি নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করতে সক্ষম হচ্ছে। কারণ শিশুরা এই দুনিয়ার বাইরের কেউ নয়। প্রতিযোগিতার বাজারে এগিয়ে যেতে হলে এটা প্রয়োজন; সময়ের দাবিও। কিন্তু নেতিবাচক কিছু কর্মকা-ে এসব অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে জড়িয়ে পড়ায় উঠেছে প্রশ্ন।

সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেটের অপব্যবহারের কারণে শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতীসহ নানা বয়সী মানুষ আজ অনেকটা হুমকির মুখে। বিশেষ করে প্রযুক্তির নেতিবাচক ব্যবহারে সমাজে বাড়ছে ধর্ষণ, নির্যাতন ও যৌন হয়রানির মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। এর জন্য ইন্টারনেট বা প্রযুক্তি কোনোভাবেই দায়ী নয়। দায়ী আমরা। বিশেষ করে যখন অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানরা ব্যবহার করছে ইন্টারনেট বা ফেসবুক। তারা ফেসবুকে যা ইচ্ছা লিখছে, শেয়ার করছে। ফেসবুক ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য সামাজিক মাধ্যম। এসব সাইটে সম্পৃক্ততা তাদের নানাবিধ ঝুঁকিতে ফেলছে। অকারণে অপরিচিত মানুষ আপন হয়ে নানা ক্ষতিসাধন করছে। অপরাধের পথে পা রাখতে উৎসাহিত করছে। তাদের ব্যবহার করছে টোপ হিসেবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে সারা দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর একটি বড় অংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে। আর সাইবার অপরাধের দিকে এখন বেশি ঝুঁকছে ১৮ বছরের কম বয়সীরা। এর কারণ আর কিছুই নয়, এই বয়সটা আসলে ভীষণভাবে রোমাঞ্চমুখী। ফলে তারা অগ্রপশ্চাৎ না ভেবেই ভুল পথে পা রাখে। এটা সত্যিই আমাদের জন্য শঙ্কার কথা। তবে শুধু যে অপ্রাপ্তবয়স্করা ফেসবুকের অপব্যবহার করছে তা কিন্তু নয়। অনেক সচেতন মানুষও যা খুশি লিখছে ফেসবুকে। এর মধ্যে রয়েছে অনেক উস্কানিমূলক লেখাও। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে সমাজ ও রাষ্ট্রে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

তবে এই অবস্থার অবসানের জন্য এখনই কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রয়োজন ফেসবুক ব্যবহারের সীমারেখা টানার। ফেসবুকে কটূক্তিমূলক স্ট্যাটাস দেওয়া বন্ধ করতে হলে ফেসবুককে একটি নীতিমালার মধ্যে আনতে হবে। কোন বয়সী মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করতে পারবে, কারা পারবে না তা থাকতে হবে নীতিমালার মধ্যে। থাকতে হবে রেজিস্ট্রেশন। বিশেষ করে অপ্রাপ্ত বয়স্করা যেন ফেসবুক ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়টির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আর কী ধরনের স্ট্যাটাস দেওয়া যাবে, যাবে না তাও উল্লেখ থাকবে সেখানে। তবে ফেসবুকের অপব্যবহার অনেকটা কমে আসবে। (দৈনিক আমাদের সময় থেকে সংগৃহীত)

লেখক : সাংবাদিক

এই বিভাগের আরো সংবাদ