সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদমের জালে আপনি বন্দী !

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৪, ১৬:৩৭

এখন বিশ্বে খুব কম মানুষই আছেন যারা  সোশ্যাল মিডিয়া ও গুগলের মতো বহু সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করছেন না। ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। ইউটিউবে কোনো কনটেন্ট আপ করছেন।  ইন্সট্রাগ্রামে ছবি দিচ্ছেন। সবই করছেন। কিন্তু কারো কনটেন্টে অনেক বেশি লাইক বা রিয়েকশন দেখা যাচ্ছে কারো কনটেন্টে তেমন সাড়া নেই। কেন ?
ভার্চুয়াল এই জগত পরিচালনা করার মূলে যা রয়েছে তা হচ্ছে গাণিতিক কিছু নির্দেশনা, কম্পিউটারের পরিভাষায় যাকে বলা হয় অ্যালগরিদম।

এই অ্যালগরিদমই ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশাল মিডিয়া এবং গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনকে নিয়ন্ত্রণ করে।
তাই এসব ব্যবহারের আগে অবশ্যই অ্যালগরিদম বুঝে নিতে হবে।  

অ্যালগরিদম

অ্যালগরিদম হচ্ছে যে কোনো কাজের প্রণালী বা ধাপে ধাপে কোন কিছু করার প্রক্রিয়া। রন্ধনপ্রণালীর সঙ্গে এর তুলনা দিয়ে এটি সহজে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
ভাত রান্না করার সময় প্রথমে একটি পাত্রে চাল নেওয়া হয়, তার পর তাতে পানি ঢালা হয়, চাল কয়েকবার ধোওয়ার পর সেটি রাখা হয় চুলার ওপরে, তার পর চুলা
জ্বালাতে হয়- এই প্রক্রিয়াটিই অ্যালগরিদম।

আয়ারল্যান্ডে তথ্য প্রযুক্তিবিদ নাসিম মাহ্‌মুদ, যিনি ডাবলিনে চিকিৎসা ও উদ্ভাবন সংক্রান্ত আমেরিকান একটি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড হেলথ গ্রুপে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছেন, তিনি বিবিসিকে বলেন "কম্পিউটারকেও একটি কাজ করার জন্য ওই কাজটিকে বিভিন্ন ধাপে ভাগ করে দেওয়া হয়, যাতে কম্পিউটার সেটা সহজে বুঝতে পারে এবং সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে পারে। "

"কম্পিউটার নিজে কোন কাজ করতে পারে না। তবে তার রয়েছে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা। তাকে কিছু পদ্ধতি বলে দেওয়া হয় যাতে সে তার খুব কম বুদ্ধি দিয়ে (কিম্বা তার কোন বুদ্ধি নেই) কাজটা সম্পাদন করতে পারে। প্রক্রিয়াগুলো সূক্ষ্ম ও সরলভাবে দেওয়া থাকে যেন কাজটা সে কিছু গাণিতিক ধাপের মাধ্যমে শেষ করতে পারে। এসব নির্দেশনাই  হচ্ছে অ্যালগরিদম" ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যালগরিদম

বিবিসির একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী , ফেসবুকে অনেক সময় একজনের প্রোফাইল দেখিয়ে জানতে চাওয়া হয় - তিনি কি আপনার বন্ধু? এটা কীভাবে করা হয়? ফেসবুক
কেমন করে বুঝলো যে এই ব্যক্তি আমার বন্ধু হতে পারেন? অনেক জটিল কিছু অ্যালগরিদম দিয়ে এই কাজটা করা হচ্ছে।

কিন্তু এটা কি শুধু অ্যালগরিদমের নেওয়া সিদ্ধান্ত নাকি এর পেছনে মানুষেরও কোন ভূমিকা আছে? একেবারে সঠিক উত্তর এর এখনও অমীমাংসিত।
কারণ যে ব্যক্তি অ্যালগরিদম ডিজাইন করছেন, তৎকালীন সময়ে তার জানা তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই অ্যালগরিদম সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

নাসিম মাহ্‌মুদ বলেন, "ধরা যাক ফেসবুকে আপনার যিনি বন্ধু, তার বন্ধুরাও আপনার বন্ধু হতে পারে। অ্যালগরিদমকে বলা হলো একজন ব্যক্তির যে বন্ধু রয়েছে, তার যারা বন্ধু, তাদেরকে তুমি বলো যে তারাও তার বন্ধু হতে পারে। কিন্তু ধরা যাক যিনি অ্যালগরিদম ডিজাইন করেছেন তার হয়তো জানা ছিল না যে চাকরির সূত্রে, কিম্বা একই পাড়ায় থাকার কারণে, অথবা একই স্কুলে পড়ার কারণেও বন্ধু হতে পারে।

এই প্রক্রিয়াটি ক্রমাগতই আপডেট করা হচ্ছে যার ফলে সময়ের সাথে অ্যালগরিদমও আরো সমৃদ্ধ হচ্ছে। ফলে অ্যালগরিদম নাকি মানুষ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে - সেটি স্পষ্ট করে বলা কঠিন। অ্যালগরিদম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মানুষের করা ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করেই অ্যালগরিদম তার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

মানুষ যে বিষয়গুলো সহজে হিসাব করতে পারছে না অ্যালগরিদম সেই কাজটা দ্রুত করে দিতে পারছে। যেমন এক ব্যক্তি এক লক্ষ মানুষ থেকে তার বন্ধুকে খুঁজে বের করতে পারে না। কিন্তু অ্যালগরিদম মুহূর্তের মধ্যেই সেটা করতে পারছে।

অ্যালগরিদমের নেটওয়ার্ক

অ্যালগরিদমের নেটওয়ার্ক এখন এতো বেশি বিস্তৃত, আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে গাণিতিক এসব নির্দেশনাই যেন মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ করছে।
একজন ব্যক্তি কী করেন, কখন কোথায় থাকেন, কী খেতে পছন্দ করেন, তার সামাজিক মর্যাদা কী, তিনি কোন ফুটবল ক্লাবকে সমর্থন করেন- তার সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার থেকে অ্যালগরিদম এসব কিছু জেনে যায়।

ধরা যাক কেউ একজন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় হয়তো বললো যে তার বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে। পরদিন দেখা গেল ফেসবুকে তাকে বিরিয়ানির বিজ্ঞাপন পাঠানো হচ্ছে এবং তিনি বিস্মিত হলেন যে তার কথা আড়ি পেতে শোনা হয়েছে কীনা!

এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। একটি কারণ হতে পারে যে আড্ডায় উপস্থিত কোনো একজন বন্ধু হয়তো অনলাইনে বিরিয়ানি কিনেছেন। তখন অ্যালগরিদম হিসেব করে দেখেছে যে ওই বন্ধুর সঙ্গে তিনি গতকাল বিকেলে আড্ডা দিয়েছেন, হয়তো তারও বিরিয়ানি খাওয়ার ইচ্ছে হতে পারে, এবং একারণেই তাকে বিরিয়ানির বিজ্ঞাপন পাঠানো হয়েছে।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ