আজকের শিরোনাম :

ভারতে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনে নেই রাষ্ট্রপতি, বয়কট ১৯টি বিরোধী দলের

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৩, ১২:২৮

আসছে ২৮ মে ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবনের উদ্বোধন করবেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ঘটনাচক্রে ওই দিনই হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রবর্তক এবং আরএসএস যাকে মতাদর্শগত গুরু বলে মান্য করে, সেই বিনায়ক দামোদর সাভারকরের জন্মদিন।

নতুন পার্লামেন্ট ভবন উদ্বোধনের অনুষ্ঠানটি ভারতের ১৯টি বিরোধী দল একযোগে বয়কট করতে চলেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি,নিউজ এইটিনসহ একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। দেশটির বৃহত্তম বিরোধী দল কংগ্রেস ছাড়াও বয়কটের ঘোষণা দেওয়া দলগুলোর মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারে আসীন তৃণমূল কংগ্রেস, তামিলনাডু রাজ্য সরকারে ক্ষমতাসীন ডিএমকে, বিহারের রাজ্যসরকারে ক্ষমতাসীন জোটের দুই সদস্য দল – জনতা দল ও রাষ্ট্রীয় জনতা দল, কেরালা রাজ্য সরকারে ক্ষমতাসীন সিপিএম এবং উত্তরপ্রদেশের প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

ভারতের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ শারদ পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপিও নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন বয়কট করবে বলে দলের এক মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই।

প্রথম বয়কটের ঘোষণা তৃণমূল কংগ্রেসের
মঙ্গলবার রাতে ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি ডেরেক ও’ব্রায়েন একটি টুইটে প্রথম এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কটের ঘোষণা দেন। টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘পার্লামেন্ট কেবল একটি নতুন ভবন নয়। এটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে প্রতিষ্ঠিত প্রথা, মূল্যবোধ এবং নিয়ম আছে। ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি এই পার্লামেন্ট। প্রধানমন্ত্রী মোদি সেটা মানেন না। তার কাছে  নতুন ভবনের উদ্বোধন শুধুই আমি। তাই (উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে) আমাদের হিসাবে ধরবেন না।’

ডেরেকের এই টুইটের পরেই আম আদমি পার্টির (এএপি) নেতা সঞ্জয় সিং টুইট করেন যে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে সংসদ ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানো তার প্রতি চরম অপমান। সেই সঙ্গে ভারতের দলিত, আদিবাসী সমাজের অপমান। এই অপমানের প্রতিবাদে এএপিও দলগতভাবে এই অনুষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

‘মোদিজী মহামহিম রাষ্ট্রপতিকে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানোর প্রতিবাদে আম আদমি পার্টি উদ্বোধন অনুষ্ঠান বয়কট করছে,’ টুইটে লিখেছেন সঞ্জয় সিং।

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর বদলে প্রধানমন্ত্রী কেন নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করবেন, তা নিয়ে কয়েক দিন ধরেই সরব কংগ্রেস সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এক টুইটবার্তায় করে লিখেছেন, ‘ভারতের রাষ্ট্রপতি যখন অধিবেশন ডাকেন, একমাত্র তখনই সংসদ বসতে পারে। রাষ্ট্রপতিই যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে বার্ষিক সংসদীয় কার্যক্রম শুরু করেন। তার ভাষণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েই প্রতিবছর সংসদের কাজ শুরু হয়।’

‘নরেন্দ্র মোদি নতুন সংসদ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানেও রাষ্ট্রপতিকে এড়িয়ে গিয়েছিলেন এখন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও তাই। এটা অগ্রহণযোগ্য,’ টুইটবার্তায় বলেন ভারতের অন্যতম শীর্ষ এই নেতা।

তার কথায়, সংবিধানের ৭৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী সংসদের দুটি কক্ষ – উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা এবং নিম্নকক্ষ লোকসভা এবং রাষ্ট্রপতি এই তিনের সমষ্টিই হলো ভারতের পার্লামেন্ট। তাই নতুন ভবন উদ্বোধন করা উচিত ছিল রাষ্ট্রপতিরই

কী বলছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা?
সংবিধান বিশেষজ্ঞ বিজয় হানসারিয়া অবশ্য বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ‘এ নিয়ে বিতর্কের কিছু দেখছি না আমি। আমার এটাও মনে হয় না যে সংসদ ভবন উদ্বোধন রাষ্ট্রপতি না করে প্রধানমন্ত্রী করছেন বলে রাষ্ট্রপতিকে অসম্মান করা হচ্ছে।’

‘সংবিধানের ৭৯ নম্বর ধারায় লেখা আছে ঠিকই যে রাষ্ট্রপতি এবং দুটি কক্ষ – এই তিনে মিলেই সংসদ, কিন্তু এটাও সত্য যে প্রধানমন্ত্রী হলেন লোকসভার নেতা। সংসদীয় কাজে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা হচ্ছে যে তার মাধ্যমেই যাবতীয় বিল পাশ হয়ে আইন তৈরি হবে। আর তার ভাষণ দিয়ে যে বছরের যাবতীয় সংসদীয় কাজ শুরু হয়, সেটা তো একটা প্রথা,’ বলছিলেন মি. হান্সারিয়া।

‘ইন্দিরা গান্ধীও তো সংসদের অ্যানেক্স উদ্বোধন করেছেন’
এ প্রসঙ্গে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেস সভানেত্রী ইন্দিরা গান্ধীর উদাহারণ টেনেছেন বিজেপি নেতারা। তারা বলছেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সংসদের ‘অ্যানেক্স’ভবন এবং রাজীব গান্ধী সংসদের গ্রন্থাগার ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন। তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যদি নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন, সেক্ষেত্রে কেন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে?

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালের অগাস্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সংসদের অ্যানেক্স ভবনের, তারপরে ১৯৮৭ সালে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী সংসদের গ্রন্থাগারের উদ্বোধন করেছিলেন। কংগ্রেসের সরকার প্রধানেরা যদি সেগুলো উদ্বোধন করে থাকতে পারেন, তাহলে আমাদের সরকার প্রধান কেন একই কাজ করতে পারবেন না?’

কংগ্রেস এর জবাবও দিয়েছে এই বলে যে ‘অ্যানেক্স’ ভবনে পার্লামেন্টের কর্মকর্তা -কর্মচারীরা কাজ করেন আর গ্রন্থাগার – এই দুটিকে সংসদের অধিবেশন কক্ষের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে। অ্যানেক্স এবং গ্রন্থাগারের থেকে সংসদীয় মর্যাদায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যসভা এবং লোকসভার অধিবেশন কক্ষ দুটি।

বিরোধী ঐক্যের প্রকাশ?
আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য করে বিজেপি বিরোধী দলগুলি ইতোমধ্যেই নিজেদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের জন্য আলোচনা করছে। বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে জোট বাঁধার প্রচেষ্টায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার বিভিন্ন দলের সঙ্গে কথা চালাচ্ছেন। তিনি কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গ,ে রাহুল গান্ধীদের সঙ্গে যেমন নিয়মিত বৈঠক করছেন, তেমনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিলেশ যাদবের সঙ্গেও কথা বলেছেন।

প্রাথমিক ভাবে ওই প্রস্তাবিত বিরোধী জোটের নেতৃত্বে কংগ্রেসকে রাখা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির শীর্ষনেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরোধিতা থাকলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন কর্নাটকে কংগ্রেসের বিপুল জয়ের পরে ওই দুজনই কংগ্রেস সম্বন্ধে সুর নরম করেছেন।

অ-বিজেপি দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্ব সম্প্রতি কর্নাটকে কংগ্রেসের নবনির্বাচিত সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও এক জায়গায় হয়েছিলেন।

আবার দিল্লি সরকারের কাছ থেকে সরকারি কর্মচারীদের বদলি বা শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে যে অধ্যাদেশ জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার, সেটি রাজ্যসভায় যেন বিজেপি পাশ না করাতে পারে—সে জন্য বিরোধী দলগুলির কাছে আবেদন জানিয়ে বৈঠক করছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

মঙ্গলবার তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, বুধবার তিনি মুম্বাই গিয়ে প্রাক্তন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরের সঙ্গে আর বৃহস্পতিবার এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

অ-বিজেপি দলগুলি যেভাবে একজোট হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন একযোগে বয়কট করা কি সেই প্রচেষ্টারই একটা প্রকাশ?

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক অরুন্ধতী মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘বিরোধীরা এটাকে একটা ইস্যু করছে ঠিকই, খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরতে চাইছে তারা বিষয়টিকে। কিন্তু এটা তো কোনও আন্দোলন নয়, যে তার মধ্যে দিয়ে সব বিরোধীরা একজোট হয়ে যাবেন, যেমনটা হয়েছিল জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে ১৯৭৭ সালে।’

‘দিল্লি অধ্যাদেশ নিয়ে অরভিন্দ কেজরিওয়াল সব বিরোধীদের নিয়ে যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, সেটাও কতটা সফল হবে, তা তো সংসদে ভোটাভুটি হলেই স্পষ্ট হবে। তাই নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন বয়কট করাটাকে বিরোধী ঐক্যের পথে একটা মাইলফলক, এরকমটা এখনও মনে হচ্ছে না,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন অরুন্ধতী মুখোপাধ্যায়।

রাজদণ্ড রাখা হবে নতুন ভবনে
সংসদের নতুন ভবনের উদ্বোধনের পরে সেখানে স্থাপিত হবে ভারতের রাজদণ্ড, যার নাম ‘সেঙ্গোল’। সোনার তৈরি এই রাজদণ্ডটি বর্তমানে এলাহাবাদের একটি সংগ্রহশালায় রাখা আছে।

‘সেঙ্গোল’টি নতুন সংসদ ভবনে স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রে মোদি ।

বুধবার দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘১৪ই অগাস্ট ১৯৪৭ এক ঐতিহাসিক ঘটনা হয়েছিল। তার ৭৫ বছর পরে আজ দেশের অনেকই জানেন না ঘটনাটি। সেদিন ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক ছিল এই ‘সেঙ্গোল’। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিষয়টা জানার পরে খোঁজ খবর করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তাই দেশের মানুষের সামনে সেটিকে রাখা হবে।’

‘সেঙ্গোল’ নিয়ে একটি ওয়েবসাইটও বুধবার প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

ওই ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ‘বর্তমান তামিলনাডু অঞ্চলের প্রাচীন চোলা রাজত্বের সময়ে মন্দিরের প্রধান পুরোহিতরা রাজার অভিষেকের সময়ে এরকমই একটি রাজদণ্ড তুলে দিতেন, যা সুশাসন, নিরপেক্ষ শাসনের প্রতীক ছিল।’

ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে শেষ ব্রিটিশ বড়লাট লর্ড মাউন্টব্যাটেন জওহরলাল নেহরুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে প্রতীকী ক্ষমতা হস্তান্তরটা কীভাবে করা যায়।

‘নেহরু ভারতের শেষ গভর্নর জেনারেল চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারীর কাছে পরামর্শ চান। তিনিই পরামর্শ দেন যে তামিলনাডুতে এরকম একটি প্রাচীন রীতি আছে যে মঠের প্রধান পুরোহিত নতুন রাজার হাতে এই রাজদণ্ড তুলে দেন।

ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক সেই ‘সেঙ্গোল’ চেন্নাইয়ের এক স্বর্ণ শিল্পী ভাম্মুরি বঙ্গারু চেট্টিকে দিয়ে তৈরি করে আনা হয়।

পাঁচ ফুট লম্বা এই সোনার রাজদণ্ডের মাথায় রয়েছে ‘নন্দী’ ষাঁড়।

১৪ অগাস্ট রাত বারোটার সামান্য আগে তামিলনাডুর থিরুভাদুথুরাই আথিনাম মঠের প্রধান পুরোহিত প্রথমে ‘সেঙ্গোল’টি লর্ড মাউন্টব্যাটেনের হাতে তুলে দেন, তার পরে আবার তা ফিরিয়ে নেন।

এনডিটিভি লিখছে, তারপরে সেটিকে গঙ্গাজল দিয়ে শোধন করে ১৪ই অগাস্ট ১১টা ৪৫ মিনিটে জওহরলাল নেহরুর হাতে তুলে দেন সেই পুরোহিত।

এভাবেই ব্রিটিশদের হাত থেকে প্রতীকীভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল স্বাধীন ভারতের কাছে।

কারা আমন্ত্রিত হলেন?
সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্র উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং রাজ্যসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

দুটি কক্ষের সব সদস্য, প্রতিটি রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে পৌঁছিয়েছে আমন্ত্রণ পত্র।

উপরাষ্ট্রপতিরাই পদাধিকারবলে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হন।

কিন্তু বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ের বদলে ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিওয়ানশ হাজির থাকবেন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে।

এ ছাড়া নতুন সংসদ ভবনের স্থপতি বিমল প্যাটেল এবং শিল্পপতি রতন টাটা এবং বিভিন্ন জগতের খ্যাতনামা ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ করা হয়েছে।

টাটার অধীনস্থ সংস্থা টাটা প্রজেক্টসই নতুন ভবনটি নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছিল।

কী আছে নতুন ভবনে?
বর্তমান সংসদ ভবনটি ব্রিটিশ আমলে, ১৯২৭ সালে তৈরি হয়েছিল। স্থান স্বল্পতার কারণেই নতুন ভবন তৈরি করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল বলে সংসদ সদস্যরা অভিযোগ করতেন।

তাই লোকসভা এবং রাজ্যসভা সরকারকে অনুরোধ করে যে সংসদের একটি নতুন ভবন তৈরি করে দিতে।

সংসদের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা এনএনআই জানিয়েছেন, সংসদের অনুরোধেই নতুন ভবন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সেটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

বর্তমানে লোকসভায় ৫৪৩ জন এবং রাজ্যসভায় ২৫০ সদস্যর জায়গা আছে। কিন্তু নতুন ভবনটিতে লোকসভা কক্ষে ৮৮৮ জন এবং রাজ্যসভা কক্ষে ৩৮৪ জন সংসদ সদস্যর বসার জায়গা করা হচ্ছে বলে এএনআই জানিয়েছে।

প্রাথমিক ভাবে ৮৬২ কোটি টাকা খরচ ধরা হলেও শেষ পর্যন্ত নির্মাণ খরচ হয়েছে ১২০০ কোটি টাকারও বেশি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যে সাত হাজার শ্রমিক নতুন সংসদ ভবন নির্মানে জড়িত ছিলেন, তাদের সম্মান জানাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।’

নতুন সংসদ ভবনটি দিল্লির কেন্দ্রস্থলে ‘সেন্ট্রাল ভিস্তা’ প্রকল্পের অধীনের তৈরি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘স্বপ্নের প্রকল্প’ বলে পরিচিত সেন্ট্রাল ভিস্তাটি রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে শুরু হচ্ছে।

আগে যে রাস্তার নাম ছিল রাজপথ, তারই নাম বদল করে রাখা হয়েছে কর্তব্য পথ।

সেন্ট্রাল ভিস্তায় সংসদ ভবন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ও উপরাষ্ট্রপতির বাসভবন থাকবে।

বর্তমানে প্রধান সরকারি দপ্তর দুটি - নর্থ ব্লক ও সাউথ ব্লকের বদলে মন্ত্রীদের দপ্তরগুলোও নিয়ে আসা হবে সেন্ট্রাল ভিস্তায়।

এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ হয়েছে।

এই প্রকল্প এমন একটা সময় শুরু করা হয়, যখন ভারত জুড়ে করোনা মহামারি চলছিল। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিল অক্সিজেন, হাসপাতালের শয্যা, ওষুধ ইত্যাদিতে খরচ না করে মহামারির সময়ে এই বিপুল অর্থ কেন সেন্ট্রাল ভিস্তা নির্মাণে খরচ করা হচ্ছে!

দেশজুড়ে লকডাউন চললেও সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়নি। চারদিক দিয়ে ঘিরে লাগাতার কাজ চালিয়ে গেছেন নির্মাণশ্রমিকরা।
খবর বিবিসি বাংলা

এবিএন/এসএ/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ