আজকের শিরোনাম :

মহাকাশে নভোচারীরা কী খায়, কীভাবে খায়

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৩, ১৩:৪০

নাসা ২০২৫ সালে চাঁদে নভোচারী পাঠানোর জন্য নতুন স্পেসস্যুটের ডিজাইন সম্প্রতি প্রকাশ করার পর মহাকাশ অভিযান আবার আলোচনায় এসেছে।

মহাকাশে নভোচারীরা কী খান, মাধ্যাকর্ষণের অভাবে ভেসে বেড়ানো খাবার কীভাবে মুখে তোলেন, মহাকাশে নভোচারীরা কেমন জীবন কাটান, এসব নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলছেন বহু সাধারণ মানুষ।

আমেরিকার নভোচারীরা বর্তমানে মহাকাশ অভিযানের জন্য যে পোশাক পরেন, ১৯৮১ সালের পর নতুন করে পুরোপুরি তার ডিজাইন আর বদল করা হয়নি।

এখন নতুন স্পেসস্যুটের যে ডিজাইন দেওয়া হয়েছে, তা নারী নভোচারীদেরও পরতে সুবিধা হবে বলে বলা হচ্ছে। এই পোশাক যদি ছাড়পত্র পেয়ে যায়, তাহলে আর্টেমিস থ্রি মহাকাশ মিশনে নভোচারীরা যাবেন এই পোশাক পরেই।

পাঁচ দশক পর আর্টেমিস থ্রি আবার মানুষ নিয়ে যাবে চাঁদে।

কিন্তু ওই খাওয়াদাওয়ার বিষয়গুলো? সেগুলো কীভাবে হবে? বিবিসির ফুড চেইন রেডিও অনুষ্ঠান এ নিয়ে কথা বলেছিল নাসার অবসরপ্রাপ্ত নভোচারী নিকোল স্টটের সঙ্গে। কী বলছেন তিনি?

‘খুব পিৎজা খেতে ইচ্ছা হতো’

‘সারাক্ষণ পিৎজার কথা ভাবতাম,’ স্বীকার করলেন নিকোল স্টট। তার দীর্ঘ মহাকাশ কেরিয়ারে তিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে দুটি আলাদা মিশনে ১০০ দিনের বেশি সময় কাটিয়েছেন। সে সময় তাকে বিশেষভাবে তৈরি খাবার খেতে হয়েছে।

‘দেখুন, পিৎজা মানেই ময়দার তৈরি রুটির বেসের ওপরে বেশ ঝুরঝুরে রুটির কিছু অংশ, যা চিবাতে মজা, সেই সঙ্গে ওপরে গলা পনির আর গরম সস!’ বললেন তিনি।

কিন্তু মহাকাশে খাবার তৈরি করতে হয় শূন্য মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কথা মাথায় রেখে। অর্থাৎ সেখানে রুটি থাকবে না, রুটির গুঁড়ো থাকবে না, থাকলে রুটির গুঁড়ো তো বাতাসে ভেসে বেড়াবে। কাজেই পিৎজা হবে নরম ময়দার বেস দিয়ে।

‘প্রাতঃরাশে অবশ্য বিশেষ ভাবে তৈরি ডিম খাওয়া যায়, ছোট সাইজের ডিম ভাজা বা ওমলেটও দেওয়া হয়।’

মহাকাশে নভোচারীরা প্রায়ই স্কুলের বাচ্চাদের মত এ ওর খাবারে ভাগ বসান।

‘লাঞ্চে আমাদের দেয়া হত স্যুপ। আর অন্য কিছু খাবার। তবে সব কিছু মোড়া থাকত ময়দার পাতলা রুটি দিয়ে। আর রাতে জাপানি কারি, যা খুবই সুস্বাদু আর আমার খুব পছন্দের।’

ভাসমান খাবার
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কোন থালা বাটি ব্যবহার করা যায় না, কারণ সেখানে সবই শূন্যে ভেসে বেড়ায়।

নভোচারীরা যেসব খাবার খায়, তা খুবই প্রক্রিয়াজাত এবং খাবারের ওজন কমানোর জন্য খাবার থেকে সব পানি শুষে বের করে নেওয়া হয়। এরপর নভোচারীরা খাবার আগে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী তাতে গরম বা ঠাণ্ডা পানি মিশিয়ে নরম করে নেয়।

সব খাবার প্যাকেট করা থাকে, নভোচারীদের সেই প্যাকেট থালা হিসেবে ব্যবহার করতে হয় আর খাওয়ার জন্য তাদের দেয়া হয় বিশেষ চামচ।

সেই চামচে হাতল থাকে খুব লম্বা। লম্বা হাতল দিয়ে প্যাকেটের ভেতর থেকে ভাত টেনে বের করে কারির ওপর রাখতে হয়। তবে তার জন্য বেশ কসরৎ করতে হয়। ভাতের সাথে কারি মেশাতে গেলে কারির ফোঁটাগুলো ভেসে বেড়ায়,’ মিজ স্টট বললেন।

কিন্তু ভেসে বেড়ানো খাবার খাওয়া তো কঠিন। নিকোলা স্টট কীভাবে খাওয়াটা রপ্ত করেছিলেন?

‘ভাসমান খাবার খাওয়া কিন্তু বেশ মজার ব্যাপার। আমরা চামচে খাবার নিয়ে একে অপরের দিকে ছুঁড়ে দিতাম কিংবা চামচে করে খাবার শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে তা মুখের ভেতর লুফে নিতাম। বেশ মজাই লাগত।’

মহাকাশে পানি
মহাকাশে নিজের শরীরকে আর্দ্র রাখা খুবই জরুরি। কিন্তু মহাকাশে পানি আসবে কোথা থেকে? নভোচারীরা পৃথিবী থেকে অবশ্যই কিছু পানি সঙ্গে নিয়ে যান। আর বাকিটা আসে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা পানি থেকে।

মহাকাশযানের জ্বালানি কক্ষ থেকে, বাতাসের আর্দ্রতা থেকে এমনকি প্রস্রাব থেকেও পুনরায় ব্যবহারযোগ্য পানি তৈরি করা হয়।

শুনলে হয়ত নাক সিঁটকাতে ইচ্ছা হবে, কিন্তু নাসা দাবি করছে এই রিসাইকেল করা পানি আমরা পৃথিবীতে যে পানি খাই তার থেকেও অনেক পরিষ্কার।

স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ
নভোচারীদের খাদ্য গ্রহণ এবং তাদের পুষ্টির বিষয়টা অবশ্যই কঠিন একটা চ্যালেঞ্জ। মহাকাশ ভ্রমণ নভোচারীর শরীরে যে বড়ধরনের প্রভাব ফেলে তা মোকাবেলা করতে তাদের পুষ্টিযুক্ত খাবারের ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত।

‘আমাদের শরীর দ্রুত বুড়িয়ে যায় মহাকাশ যাত্রায়,’ বলছেন নাসার প্রধান পুষ্টিবিদ স্কট স্মিথ। তিনি বলছেন মহাকাশ ভ্রমণে ওজন হ্রাস এবং হাড়ের ক্ষয় স্বাস্থ্যের জন্য বড় সমস্যা।

‘আমরা জানি ফ্লাইটে মানুষের ওজন কমে যায়। আমরা জানি পৃথিবীতে খাবার খেলে সেটা পেটে যেভাবে স্থায়ী হয়, অর্থাৎ পেট ভরার যে অনুভূতিটা হয়, মহাকাশে সেটা হয় না। তারা বুঝতে পারে না কতটা খেয়েছে বা পেট কতটা ভরেছে। তাই নভোচারীদের আইপ্যাড অ্যাপ দেয়া হয় যাতে তারা কী খাচ্ছে, কী পরিমাণ খাচ্ছে তার হিসাব রাখতে পারে।’

মহাকাশে অন্য বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে হাড়ের ক্ষয়জনিত।

‘নারীদের মেনোপজ বা রজোনিবৃত্তির পর হাড়ের যে ক্ষয় হয়, মহাকাশ ভ্রমণে নভোচারীদের হাড়ের ক্ষয় হয় তার দশ গুণ বেশি হারে,’ বলেন স্মিথ।

ফলে শরীর সুস্থ রাখার জন্য নভোচারীদের সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান, শর্করা, প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ খাওয়া খুবই জরুরি। এতে শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যও ভাল থাকে।

‘যখনই কোনো মহাকাশযান স্পেস স্টেশনে যায়, আমরা ছোট প্যাকেট করে তাজা ফল, সব্জি, কমলা, আপেল, বেরি জাতীয় ফল এসব পাঠাই। সেগুলো বেশিদিন তাজা থাকে না। কিন্তু সেগুলো হাতে পেলে নভোচারীরা মানসিকভাবে ভাল বোধ করেন।’

চকলেট, তরমুজ আর মদ্যপানীয়
স্মিথ বলছেন, আমাদের ধারণা যাই থাকুক না কেন, মহাকাশে কিন্তু নভোচারীরা ভালই খাবারদাবার পান।

‘আমার মনে পড়ে না মহাকাশে খাবার নিয়ে আমি কখনও মন খারাপ করেছি।’

স্পেস স্টেশনে যখন খাবারের সরবরাহ নিয়ে মহাকাশযান যায়, তখন নভোচারীদের পরিবাররাও খাবার দাবার পাঠান।

নিকোলা স্টটের স্বামী তাকে চকেলট পাঠিয়েছিলেন। অন্য নভোচারীরাও তাদের পরিবারের কাছ থেকে ওয়াইন, বিশেষ মাছ পেয়েছিলেন। এসব তারা ভাগাভাগি করে খেয়েছেন।

আর নভোচারীরা যদি কোন একটা খাবার বিশেষভাবে খেতে চান, সেটা মিস করেন, তারা ফেরত আসার সাথে সাথেই তাদের সেই খাবার দেবার ব্যবস্থা করা হয়।

রুশ নভোচারী আলেক্সি অভচিনিন ২০১৬ সালে মহাকাশ অভিযান শেষ করে পৃথিবীতে পা রাখার সাথে সাথেই তাকে তরমুজ খেতে দেওয়া হয়েছিল।

নাসা ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানে নতুন খাবারের প্যাকেজ উদ্ভাবনের জন্য যৌথভাবে কাজ শুরু করে দিয়েছে কানাডার মহাকাশ সংস্থার সাথে।

স্কট বলছেন এই যৌথ প্রকল্প মহাকাশে খাওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে তারা আশা করছেন।
খবর বিবিসি

এবিএন/এসএ/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ