ধান ‘বুড়ো’ হয়ে যাচ্ছে, সামাল দিতে এসেছে ‘জেনেটিক গেইন’
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৩, ১৪:১০
বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, সেইসঙ্গে বৈচিত্র্যময় পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এমন উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন বিজ্ঞানীরা। তার সর্বশেষ সংস্করণ হলো, ‘জেনেটিক গেইন’।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের মতে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো ফসলের বৈশিষ্ট্যের উন্নয়ন ঘটানো, সেইসাথে নির্দিষ্ট শতাংশ বেশি উৎপাদন হওয়াকে ‘জেনেটিক গেইন'’ বলা হয়।
এই প্রক্রিয়ায় ধানের এমন সব জাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে, যেগুলো অল্প সময়ে বেশি বেশি উৎপাদন করতে সক্ষম। একই সঙ্গে ধানের মানেরও উন্নয়ন ঘটবে।
এখানে মান বলতে মূলত ‘ধানের সুগন্ধ, চকচকে, দেখতে চিকন ও আকর্ষণীয়’ হবে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
এরই মধ্যে এই আধুনিক জাতের ধান দিয়ে ফলন শুরু হয়েছে, সেই সঙ্গে গবেষণাও অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এখন পর্যন্ত ১১৩টি উচ্চ-ফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে ৮টি হাইব্রিড জাতের। প্রতিটি জাতই কোনো না কোনো বৈশিষ্ট্যে অনন্য।
তবে বর্তমানে প্রচলিত বেশির ভাগ জনপ্রিয় ধানের জাতের বয়স ২৮-৩০ বছর ছাড়িয়ে গিয়েছে। এগুলোকে অনেক সময় ‘বুড়ো’ ধানও বলা হয়।
এসব ধানের ফলন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে আসতে শুরু করেছে। এই সময়ের মধ্যে আরও অনেক নতুন জাত উদ্ভাবন হলেও, সেগুলো আগের জনপ্রিয় জাতগুলোকে প্রতিস্থাপন করতে পারেনি। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করার ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল বাংলাদেশ।
তবে ‘জেনেটিক গেইন’ সেই লক্ষ্য অর্জনের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে বলে আশা করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো।
ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর সমাধান
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান জানান, প্রচলিত ধানের জাত যদি প্রতি হেক্টরে দেড় টন উৎপাদন হয়, সেখানে জেনেটিক গেইন প্রযুক্তির কারণে হেক্টর প্রতি দুই মন ধান উৎপাদন সক্ষম। ফলে জেনেটিক গেইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানো এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে প্রায় চার কোটি টন ধান উৎপাদন করা হয়েছে। সরকার ২০৩০ সাল নাগাদ এই ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ছয় কোটি টনে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। সেই সঙ্গে ২০৫০ সালের মধ্যে ধানের উৎপাদন ২৫ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল গবেষক ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কীভাবে ধানের উৎপাদন বাড়ানো যায় তার একটি কৌশলগত গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। গবেষণায় ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের আনুমানিক জনসংখ্যা হিসাব করে, চাষযোগ্য জমির পরিমাণ, বার্ষিক ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জলবায়ুর অবস্থা মূল্যায়ন করা হয়। সেখানে গবেষকরা বলেছেন, জেনেটিক গেইন বৃদ্ধি, অনাবাদী জমি চাষ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে প্রধান এই খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে। সব ধরনের পরিবেশগত প্রতিকূলতা বিবেচনা করে গবেষকরা ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি হেক্টর জমিতে নয় দশমিক ছয় টন বোরো, খরা-প্রবণ এলাকায় প্রতি হেক্টরে ৬ দশমিক দুই, বন্যা-প্রবণ এলাকায় সাত দশমিক তিন ও লবণাক্ততার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আট দশমিক এক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। লক্ষ্য থাকবে মান উন্নয়নেও
সরকারের মূল লক্ষ্য ধানের উৎপাদন বাড়ানো হলেও আরেকটি লক্ষ্য কৃষির বাণিজ্যিকরণা। এক্ষেত্রে উচ্চ ফলনশীল ধানের পাশাপাশি প্রিমিয়াম কোয়ালিটি বা উচ্চমানের ধান উৎপাদনেও জোর দেয়া হচ্ছে। যে ধানের বাজারদর বেশি সেটিই উচ্চমানের ধান। এটি সুগন্ধযুক্ত, চিকন ও চকচকে হতে পারে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের খন্দকার মো. ইফতেখারুদ্দৌলা বলেছেন, ‘মানুষ যখন থেকে ধান চাষ শুরু করেছে তখন থেকেই তারা ধানের ফলন বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন প্রযুক্তির সমন্বয় হয়েছে। এভাবে উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি, মানের দিকেও নজর দেয়া হচ্ছে। ধানের পপুলেশন ইমপ্রুভমেন্ট এবং সাইক্লিং ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে ধানকে মানসম্মত করা হচ্ছে।’ ধান ‘বুড়ো’ হচ্ছে কেন?
প্রচলিত ধানগুলোর ফলন কমে যাওয়ার পেছনে ধানের চারা কখন রোপণ করা হচ্ছে, ভূ-প্রকৃতি আবহাওয়া কেমন, ধানের জেনেটিক বৈশিষ্ট্যে কোন পরিবর্তন আসছে কি না, এমন আরও নানা বিষয় নির্ভর করে। মো. ইফতেখারুদ্দৌলা জানান, ধান একটি স্বপরাগায়িত ফসল। এর ফলে উৎপাদনে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। তবে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধানের রোগবালাইয়ের ধরন, পোকামাকড়ের বায়োটাইপ প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। এমন আরও নানা কারণে বর্তমানে প্রচলিত জাতগুলোর উৎপাদন আগের চাইতে কমে গিয়েছে বলে তিনি জানান। এ কারণে ধানের প্রচলিত এই জাতগুলোকে অনেকেই ‘ধানের বুড়ো হয়ে যাওয়া’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। এ ছাড়া সময় মতো ধান রোপণ না করার একটা প্রভাবও এর উৎপাদনে গিয়ে পড়ে। বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের মোট চাহিদার একটি বড় অংশ আমদানি করতে হয়। সেই আমদানিতে লাগাম দিতে এখন দেশের ভেতরেই তেলবীজের উৎপাদন বাড়ানোর হয়েছে। এসব তেলবীজের চাষের মৌসুম হল, আমন ধানের ফলন শেষে ও বোরোর চারা রোপণের মাঝামাঝি সময়ে। এতে বোরো ধান রোপণের সময় পিছিয়ে যাচ্ছে- বলছেন উদ্ভিদ প্রজননবিজ্ঞানী মো. ইফতেখারুদ্দৌলা। ফসলের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ধানের সর্বোচ্চ ফলন পেতে বছরের ৩১ জানুয়ারির আগে সব বোরো ধান রোপণ করে ফেলতে হয়। কিন্তু কোথাও কোথাও এখনও বোরো ধান রোপণ করা হচ্ছে বলে তিনি দেখেছেন। অথচ নির্ধারিত সময়ের একদিন দেরিতে ধান রোপণ করলে প্রতি হেক্টরে ৮০ কেজি ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ফলনের সঙ্গে জাতের যেমন সম্পর্ক আছে, সেই সাথে এর ব্যবস্থাপনারও বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে বলে তিনি জানান। আবার মাটি ও আবহাওয়ায় ওপরেও নির্ভর করে কোন জাতের ধান থেকে কি পরিমাণ ফলন হবে। এখানে কৃষকের চাহিদা ও বাজারের চাহিদার কথাও মাথায় রাখতে হয়। জাত উদ্ভাবনে সময় লাগবে কম
আগামী দিনের ধানের জাতে জেনেটিক গেইন বা জিনগত ফলন অনেক বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ কারণে ধানের উৎপাদনশীলতা যেমন বাড়বে, তেমনি ধানের নতুন জাত উদ্ভাবনের সময়কাল চার থেকে পাঁচ বছর কমিয়ে আনা সম্ভব হবে, বলছেন বলছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। ফলে আগে যেখানে ধানের একটি জাত উদ্ভাবনে ১০-১৫ বছর লেগে যেত এখন তা ৮-১০ বছরে সম্পন্ন করা যাবে। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইরি) কারিগরি সহায়তায় এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের (বিএমজিএফ) অর্থায়নে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) জেনেটিক গেইনের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তারা মূলত স্বল্প সময়ে ধানের জাত উদ্ভাবন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ পরিস্থিতিতে উন্নত জাতের ধান নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো, ধান উৎপাদন বা জেনেটিক গেইন বাড়ানোর জন্য ধানের প্রজনন চক্রের সময়কাল সংক্ষিপ্ত করা, প্রজনন লাইন নির্বাচন নির্ভুল করা, প্রজনন তথ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক কৌশল ব্যবহার এবং ব্যাপকভাবে সরেজমিন মাঠ গবেষণা করে নানা ধরনের জাত উদ্ভাবন করছে। এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। বর্তমানে বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এবিএন/এসএ/জসিম
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান জানান, প্রচলিত ধানের জাত যদি প্রতি হেক্টরে দেড় টন উৎপাদন হয়, সেখানে জেনেটিক গেইন প্রযুক্তির কারণে হেক্টর প্রতি দুই মন ধান উৎপাদন সক্ষম। ফলে জেনেটিক গেইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানো এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে প্রায় চার কোটি টন ধান উৎপাদন করা হয়েছে। সরকার ২০৩০ সাল নাগাদ এই ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ছয় কোটি টনে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। সেই সঙ্গে ২০৫০ সালের মধ্যে ধানের উৎপাদন ২৫ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল গবেষক ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কীভাবে ধানের উৎপাদন বাড়ানো যায় তার একটি কৌশলগত গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। গবেষণায় ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের আনুমানিক জনসংখ্যা হিসাব করে, চাষযোগ্য জমির পরিমাণ, বার্ষিক ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জলবায়ুর অবস্থা মূল্যায়ন করা হয়। সেখানে গবেষকরা বলেছেন, জেনেটিক গেইন বৃদ্ধি, অনাবাদী জমি চাষ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে প্রধান এই খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে। সব ধরনের পরিবেশগত প্রতিকূলতা বিবেচনা করে গবেষকরা ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি হেক্টর জমিতে নয় দশমিক ছয় টন বোরো, খরা-প্রবণ এলাকায় প্রতি হেক্টরে ৬ দশমিক দুই, বন্যা-প্রবণ এলাকায় সাত দশমিক তিন ও লবণাক্ততার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আট দশমিক এক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। লক্ষ্য থাকবে মান উন্নয়নেও
সরকারের মূল লক্ষ্য ধানের উৎপাদন বাড়ানো হলেও আরেকটি লক্ষ্য কৃষির বাণিজ্যিকরণা। এক্ষেত্রে উচ্চ ফলনশীল ধানের পাশাপাশি প্রিমিয়াম কোয়ালিটি বা উচ্চমানের ধান উৎপাদনেও জোর দেয়া হচ্ছে। যে ধানের বাজারদর বেশি সেটিই উচ্চমানের ধান। এটি সুগন্ধযুক্ত, চিকন ও চকচকে হতে পারে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের খন্দকার মো. ইফতেখারুদ্দৌলা বলেছেন, ‘মানুষ যখন থেকে ধান চাষ শুরু করেছে তখন থেকেই তারা ধানের ফলন বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন প্রযুক্তির সমন্বয় হয়েছে। এভাবে উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি, মানের দিকেও নজর দেয়া হচ্ছে। ধানের পপুলেশন ইমপ্রুভমেন্ট এবং সাইক্লিং ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে ধানকে মানসম্মত করা হচ্ছে।’ ধান ‘বুড়ো’ হচ্ছে কেন?
প্রচলিত ধানগুলোর ফলন কমে যাওয়ার পেছনে ধানের চারা কখন রোপণ করা হচ্ছে, ভূ-প্রকৃতি আবহাওয়া কেমন, ধানের জেনেটিক বৈশিষ্ট্যে কোন পরিবর্তন আসছে কি না, এমন আরও নানা বিষয় নির্ভর করে। মো. ইফতেখারুদ্দৌলা জানান, ধান একটি স্বপরাগায়িত ফসল। এর ফলে উৎপাদনে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। তবে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধানের রোগবালাইয়ের ধরন, পোকামাকড়ের বায়োটাইপ প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। এমন আরও নানা কারণে বর্তমানে প্রচলিত জাতগুলোর উৎপাদন আগের চাইতে কমে গিয়েছে বলে তিনি জানান। এ কারণে ধানের প্রচলিত এই জাতগুলোকে অনেকেই ‘ধানের বুড়ো হয়ে যাওয়া’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। এ ছাড়া সময় মতো ধান রোপণ না করার একটা প্রভাবও এর উৎপাদনে গিয়ে পড়ে। বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের মোট চাহিদার একটি বড় অংশ আমদানি করতে হয়। সেই আমদানিতে লাগাম দিতে এখন দেশের ভেতরেই তেলবীজের উৎপাদন বাড়ানোর হয়েছে। এসব তেলবীজের চাষের মৌসুম হল, আমন ধানের ফলন শেষে ও বোরোর চারা রোপণের মাঝামাঝি সময়ে। এতে বোরো ধান রোপণের সময় পিছিয়ে যাচ্ছে- বলছেন উদ্ভিদ প্রজননবিজ্ঞানী মো. ইফতেখারুদ্দৌলা। ফসলের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ধানের সর্বোচ্চ ফলন পেতে বছরের ৩১ জানুয়ারির আগে সব বোরো ধান রোপণ করে ফেলতে হয়। কিন্তু কোথাও কোথাও এখনও বোরো ধান রোপণ করা হচ্ছে বলে তিনি দেখেছেন। অথচ নির্ধারিত সময়ের একদিন দেরিতে ধান রোপণ করলে প্রতি হেক্টরে ৮০ কেজি ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ফলনের সঙ্গে জাতের যেমন সম্পর্ক আছে, সেই সাথে এর ব্যবস্থাপনারও বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে বলে তিনি জানান। আবার মাটি ও আবহাওয়ায় ওপরেও নির্ভর করে কোন জাতের ধান থেকে কি পরিমাণ ফলন হবে। এখানে কৃষকের চাহিদা ও বাজারের চাহিদার কথাও মাথায় রাখতে হয়। জাত উদ্ভাবনে সময় লাগবে কম
আগামী দিনের ধানের জাতে জেনেটিক গেইন বা জিনগত ফলন অনেক বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ কারণে ধানের উৎপাদনশীলতা যেমন বাড়বে, তেমনি ধানের নতুন জাত উদ্ভাবনের সময়কাল চার থেকে পাঁচ বছর কমিয়ে আনা সম্ভব হবে, বলছেন বলছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। ফলে আগে যেখানে ধানের একটি জাত উদ্ভাবনে ১০-১৫ বছর লেগে যেত এখন তা ৮-১০ বছরে সম্পন্ন করা যাবে। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইরি) কারিগরি সহায়তায় এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের (বিএমজিএফ) অর্থায়নে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) জেনেটিক গেইনের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তারা মূলত স্বল্প সময়ে ধানের জাত উদ্ভাবন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ পরিস্থিতিতে উন্নত জাতের ধান নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো, ধান উৎপাদন বা জেনেটিক গেইন বাড়ানোর জন্য ধানের প্রজনন চক্রের সময়কাল সংক্ষিপ্ত করা, প্রজনন লাইন নির্বাচন নির্ভুল করা, প্রজনন তথ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক কৌশল ব্যবহার এবং ব্যাপকভাবে সরেজমিন মাঠ গবেষণা করে নানা ধরনের জাত উদ্ভাবন করছে। এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। বর্তমানে বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এবিএন/এসএ/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ