আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

পেশাদার নারী খেলোয়াড় তৈরির সুযোগ কবে আসবে দেশে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২:২২

দক্ষিণ এশিয়া পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলকে নিয়ে যে উচ্ছ্বাস আর আবেগ দেখা গেছে এমন দৃশ্য বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে অনেকটাই বিরল। বুধবার দুপুরে দলটি ঢাকায় ফেরার পর বিমানবন্দরে সম্বর্ধনার পর ছাদ খোলা বাসে করে মতিঝিলে ফুটবল ফেডারেশনে নেয়ার পথে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অনেকে।

তবে এর আগেও কয়েকজন নারী ক্রীড়াবিদ শুটিং, ভারোত্তোলন, সাঁতারসহ কয়েকটি ইভেন্টে আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক পর্যায়ে এমন সাফল্য এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু এসব সাফল্যের পথ ধরে পেশাদার নারী খেলোয়াড় খুব একটা উঠে আসছে না বাংলাদেশে।

এর কারণ হিসেবে সাবেক ক্রিকেটার সাথিরা জাকির জেসি বলছেন, নারীদের পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে উঠে আসার মতো অবকাঠামোই বাংলাদেশে গড়ে ওঠেনি।

‘শুধু বিকেএসপিতে খেলোয়াড় তৈরির ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এর বাইরেও বাংলাদেশে প্রচুর খেলোয়াড় আছে। তাদের গড়ে তোলার জন্য জেলা উপজেলায় যে ব্যবস্থা থাকা দরকার সেটা তৈরি হয়নি। আর্থিকভাবেও যে একজন নারী খেলোয়াড়ের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। তারা তাদের পিক টাইমে খেলার পরও তাদের আর্থিক নিশ্চয়তা থাকে না বলে তারা খেলা ছেড়ে দেন।’

যে দলটি এবারের সাফ গেমসে চ্যাম্পিয়ন হলো সে দলটিকে নিয়ে ফুটবল ফেডারেশন গত কয়েক বছর কাজ করলেও দেশটিতে মেয়েদের কোনো নিয়মিত লিগ হয় না খোদ রাজধানীতেই। আর ঢাকার বাইরে বহু জেলায় মেয়েদের খেলার কোনো সুযোগই নেই।

ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের মেয়েরা ফুটবলে কিংবা কুষ্টিয়ার মেয়েরা সাঁতারে ভালো করতে দেখা গেলেও এগুলো আসলে স্থানীয় কিছু সংগঠকের প্রচেষ্টার ফসল।

দেশের অনেক জেলায় মেয়েদের কোন ধরণের খেলাই নিয়মিত হয় না। আবার ফুটবল ও ক্রিকেটে মেয়েরা জাতীয় পর্যায়ে কিছু সুযোগ পেলেও তাদের তৃণমূল থেকে তুলে আনার পেশাদার কোনো উদ্যোগ নেই।

ফলে মেয়েদের খেলার জন্য স্পন্সর পাওয়াও যায় না ঠিকমতো। দরকারি অর্থ পাওয়া যায় না সরকার থেকেও। ফলে, খেলা শুরু করে আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে অনেকে ভালো করেও খেলা ছেড়ে দিয়েছেন।

একসময় কমনওয়েলথ গেমসে শুটিংয়ে সোনা জয় করা সাবরিনা সুলতানা বলছেন, মেয়েদের পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে তৈরির জন্য যথাযথ বিনিয়োগ, পরিকল্পনা ও নীতি- কোনোটাই তার কখনো চোখে পড়েনি।

‘একটা মেয়েকে কোনো ইভেন্টে আনতে হলে তাকে রুট লেভেল থেকেই আনতে হবে। তাকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যে ভালো করছে তার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। তার যা কিছু প্রয়োজন সেটা দিতে হবে। যারা ফুটবল বা ক্রিকেট বা অন্য কোন খেলা খেলছে এমন অনেকে গরিব বলে হয়তো আমরা মূল্যায়ন করতে চাই না।’

২০০৭ সালে মালয়েশিয়ায় প্রথম একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেট যাত্রা। ২০১১ সালে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায় বাংলাদেশের মেয়েরা। কিন্তু স্কুল পর্যায় থেকে নারী ক্রিকেটার তুলে আনার জন্য কোনো নিয়মিত আয়োজন সে অর্থে নেই।

আবার ফুটবলের ক্ষেত্রে ইউনিসেফ ও বাফুফে ১২-১৬ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যে ফুটবল প্রতিভা অন্বেষণের যে কার্যক্রম শুরু করেছিলো সেটি কতটা কার্যকর হয়েছে সেই প্রশ্নও আছে।

এ ছাড়া ১০বছর ধরে চলছে বঙ্গমাতা ফুটবল কাপ, যার মাধ্যমেই এবারের সাফ জয়ী ফুটবলারদের অনেককে পাওয়া গেছে বলে দাবি করছে কর্তৃপক্ষ।

আবার একসময় কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নারী খেলোয়াড়দের চাকরিসহ নানাভাবে সহযোগিতা করলেও এখন এসব প্রতিষ্ঠান ক্রীড়া থেকেই দুরে। এখন অবশ্য সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীগুলো কিছু নারী খেলোয়াড়কে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে, তবে সেই সংখ্যাও হাতে গোনা।

জাতীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য ও ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সাইয়েদা মরিয়ম তারেক বলছেন, সব ইভেন্টেই ফেডারেশনগুলোর নেতৃত্বে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা যেমন দরকার, তেমনি দরকার খেলোয়াড়দের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

‘দরকার প্র্যাকটিস, মাঠ, স্পন্সর ও কোচের। ফেডারেশনগুলো একটু তাকালে ওরা নিশ্চয়ই আরও ভালো করবে,’ বলছিলেন তিনি।

বাংলাদেশে দাবায় রানী হামিদ, শুটিংয়ে সাবরিনা সুলতানা কিংবা টেনিসে জোবেরা রহমান লিনু দেড়- দুই দশক ধরে নিজ নিজ ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে ছিলেন। তাদের চ্যালেঞ্জ করার মতো নতুন খেলোয়াড় দীর্ঘকাল পাওয়াই যায়নি। অনেকে মনে করেন, পেশাদার অবকাঠামো না থাকার কারণেই নতুন খেলোয়াড় খুব একটা উঠে আসেনি।

ফেডারেশনগুলো নানা পরিকল্পনার কথা মাঝেমধ্যে বললেও সেগুলোর খুব একটা বাস্তবায়ন দেখা যায় না। এখন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বলছে, ফুটবল ছাড়াও ১০-১২টি ইভেন্টের জন্য পেশাদার খেলোয়াড়দের উঠে আসার জন্য একটি পরিকল্পনা তারা করছেন, যা খুব শিগগির বাস্তবায়িত হবে।

ক্রীড়া পরিষদের সচিব পরিমল সিংহ বলছেন, ফুটবলের জন্য কয়েকটি একাডেমি করা হচ্ছে। আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য আলাদা কয়েকটি প্রকল্প হচ্ছে যাতে করে মাঠ পর্যায় থেকে মেয়েদের জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে আসা যায়।

তবে এসব পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত কতদিনে বাস্তবায়ন হবে এবং বাস্তবায়িত হলেও তাতে করে সত্যিকার অর্থেই মেয়েদের জন্য ক্রীড়া অবকাঠামো ও সুযোগ সুবিধা কতটা পাওয়া যাবে সেই প্রশ্নটি থেকেই যায়।

এবিএন/এসএ/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ