আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

মহিউদ্দিন রনির দাবি নিয়ে কী ভাবছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২২, ১৪:৩৫

বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি দূর করা, সহজে টিকেট পাওয়া আর সেবা বৃদ্ধির দাবিতে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করে আসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। এ জন্য তিনি ছয় দফা দাবিও তুলে ধরেছেন।

কমলাপুরে রেল স্টেশনে অবস্থান নিয়ে তার এই প্রতিবাদ কর্মসূচি এর মধ্যেই সারা দেশের মানুষের নজর কেড়েছে। তার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে জামালপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঈশ্বরদী, সিলেট ও চট্টগ্রামেও আন্দোলন সমাবেশ হয়েছে।

তার এই আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চেয়েছে বাংলাদেশের হাইকোর্টও। এর পরে রেলওয়ের কর্তৃপক্ষ মহিউদ্দিন রনির দাবিগুলো যাচাই করে দেখতে একটি কমিটি গঠন করেছে এবং এসব বিষয়ে তাদের কিছু ব্যাখ্যা তুলে ধরেছে।

ছয় দফা দাবি
রেলওয়ে দপ্তরের কাছে জমা দেয়া স্মারকলিপিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি তার দেওয়া ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।

তিনি জানিয়েছেন অনলাইনে রেলের টিকেট কাটার চেষ্টা করলে তার টাকা কেটে রাখা হয়, কিন্তু তিনি টিকেট পাননি। এ নিয়ে রেলওয়ের সাথে যোগাযোগ করেও তিনি কোন প্রতিকার পাননি। পরে অবশ্য ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের অভিযানে এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় যে অনলাইন প্ল্যার্টফর্মের মাধ্যমে তিনি টিকেট কিনেছিলেন, সেই ‘সহজ লিমিটেড জেভিকে’ দুই লাখ টাকা জরিমানা কারা হয়েছে।

এর পর মহিউদ্দিন রনি রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও হয়রানির প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন।

তিনি বলছিলেন, ‘আমি নিজে যে হয়রানির শিকার হয়েছি, তাতেই আমি বুঝতে পেরেছি, রেলে যাত্রীরা কতটা সেবা বঞ্চিত। সেই পরিস্থিতির যাতে বদল হয়, সে জন্যই আমি আন্দোলন করতে শুরু করেছি।’

মহিউদ্দিন রনি যেসব দাবি করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে:
>> টিকেট ব্যবস্থাপনায় হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে, হয়রানির ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। 

>> যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে টিকেটের কালোবাজারি বন্ধ করতে হব। 

>> অনলাইন কোটায় টিকেট ব্লক করা বা বুক করা বন্ধ করতে হবে। অনলাইন বা অফলাইনে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। 

>> যাত্রী চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রেলের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা নিতে হবে। 

>> রেলের টিকেট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ দায়িত্বশীলদের সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে আনতে হবে এবং রেলের সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে। 

>> রেলে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটারি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। 

এসব দাবি প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন রনি বলছেন, ‘রেল আমাদের জাতীয় সম্পদ। প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা সেখানে ভর্তুকি দেয়া হয়। কিন্তু মানুষ রেলে ভ্রমণ করতে গিয়ে সেবা তো দূরের কথা, নানারকম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এমনকি বিশুদ্ধ পানি, পরিষ্কার বাথরুমও পান না। টিকেট নিয়ে হয়রানি, কালোবাজারি তো আছেই।’

তিনি বলছেন, ‘আমরা চাই, রেলে মানুষ নির্বিঘ্নে, হয়রানি ছাড়া নিরাপদে ভ্রমণ করবেন। সেজন্য সহজে টিকেট পাওয়া, কালোবাজারি বন্ধ করা, যাত্রী সেবার মান উন্নত করতে হবে।’

চলতি বছরেও রেলওয়ের জন্য ১৮ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এই বরাদ্দের বেশিরভাগ অবকাঠামো খাতে ব্যয় হওয়ার কথা রয়েছে। তার পরেও রেলে সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে নিয়মিত যাত্রীদের।

এসব দাবি নিয়ে কী ভাবছে রেলওয়ে?
মহিউদ্দিন রনি আন্দোলন শুরু করেছেন ৭ই জুলাই থেকে কিন্তু তিনি জানান যে এখনও পর্যন্ত রেলওয়ের তরফ থেকে খুব একটা সাড়া পাওয়া যায়নি।

‘আমি যেসব দাবি করেছি, সেসব বিষয়ে তারা কি করছে তা কেউ জানায় নি। তাদের কোন চিন্তা আছে বলেও আমার মনে হচ্ছে না,’ তিনি বলেছেন। তবে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তিনি আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

গত ১৯ জুলাই মহিউদ্দিন রনি যখন বাংলাদেশ রেলওয়ের সদর দপ্তর রেলভবনে যান, সেখানে রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার স্মারকলিপি গ্রহণের সময় বলেন, ‘আমাদের যে দুর্বল দিকগুলো আছে, সেগুলো আমরা পর্যায়ক্রমে সমাধানের চেষ্টা করছি, যাতে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে ও সুন্দরভাবে যাতায়াত করতে পারে।’

মহিউদ্দিন রনির আন্দোলনের বিষয়ে গত ২১ জুলাই হাইকোর্টে রেলওয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে জানিয়েছেন, ওই ছয় দফা বাস্তবায়নের বিষয় যাচাই করে দেখতে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পূর্ব ও পশ্চিমের দুজন মহাব্যবস্থাপককে নিয়ে ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম বলেছেন, ‘তাঁর (মহিউদ্দিন রনি) স্মারকলিপির ব্যাপারে রেলওয়ের পক্ষ থেকে জবাব দেয়া হয়েছে। আদালত যে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন, সেগুলোও আমলে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। রেলের অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলছে, সেগুলো শেষ হলে রেলে আমূল পরিবর্তন চলে আসবে। আর রেলে অনিয়ম-দুর্নীতিকে কোনরকম প্রশ্রয় দেয়া হয় না। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়।’

মহিউদ্দিন রনির দাবির বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে একটি বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়।

টিকেট নিয়ে অনিয়মের প্রসঙ্গে রেলওয়ে বলছে, তারা ১৯৯৪ সাল থেকেই কম্পিউটারাইজড টিকেটিং ব্যবস্থা চালু করেছে। বর্তমানে ৮৩টি স্টেশনে এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সহজ লিমিটেড জেভি বর্তমানে রেলওয়ের টিকেটিং ব্যবস্থা পরিচালনা করছে, যা কাউন্টার, অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। টিকেট ইস্যুর ক্ষেত্রে নিয়মিত মনিটরিং করা হয় এবং যাত্রী হয়রানির অভিযোগ উঠলে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়।

টিকেটের কালোবাজারি প্রসঙ্গে রেলওয়ে জানিয়েছে, কালোবাজারির বিরুদ্ধে নানাবিধ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। টিকেটে যাত্রীর নাম, এনআইডি বয়স ইত্যাদি সংযুক্ত করা হয়েছে যাতে একজনের নামে অন্যজন টিকেটে ভ্রমণ করতে না পারে। তাছাড়া এক ব্যক্তি সাতদিনে দুবারের বেশি টিকেট কিনতে পারে না। জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করে টিকেট দেয়ার প্রক্রিয়া চালু করা হচ্ছে।

রেলের টিকেটে কোটা ভিত্তিতে ব্লক বা বুকিং করার প্রসঙ্গে রেলওয়ে বলেছে, অনলাইনে কোটার টিকিট ব্লক করার কোনো সুযোগ নেই।

যাত্রী চাহিদার প্রেক্ষিতে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে। এ ছাড়া রেলওয়ের নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করতে বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ চলছে।

যাত্রীসেবা প্রসঙ্গে ঘাটতির কথা স্বীকার করে নিয়ে রেলওয়ে জানিয়েছে, দীর্ঘদিন নিয়োগ বন্ধ থাকায় লোকবল স্বল্পতায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে যাত্রী সেবা প্রদানে বিঘ্ন ঘটেছে। টিকিট পরীক্ষকদের অনেক পদ শূন্য রয়েছে। ফলে টিকিট চেকিং কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এসব পদে নিয়োগ সম্পন্ন হলে ট্রেনে মনিটরিং কার্যক্রম আরও ভালো হবে।

রেলের খাবার প্রসঙ্গে সংস্থাটি বলছে, বর্তমানে ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাজার থেকে কম মূল্যে রেলে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া বিনামূল্যে পানি সরবরাহ করার জন্য বড় বড় স্টেশনে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থাও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।

এবিএন/এসএ/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ