আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

টেকনাফে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে অবিশ্বাস্য পরিমাণ মাছ, এর কারণ কী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২২, ১৪:২০

কক্সবাজার জেলার টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সৈকতে এক জেলের জালেই এ সপ্তাহে এক দিনে আটকা পড়েছে প্রায় তিনশ মণ মাছ, যা নিয়ে তোলপাড় চলছে এলাকাজুড়ে।

ওই জালের মাছ ধরার দৃশ্য ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেখানে দেখা যাচ্ছে জেলেরা ঘিরে ধরে জাল তুলছেন আর তার ভেতরে লাফালাফি করছে অসংখ্য মাছ।

ওই এলাকার উপকূলে নিয়মিত মাছ ধরেন এমন কয়েকজন জেলে বলছেন গত কিছুদিন ধরেই মাছ থেকে ৪০-৫০ হাজার থেকে এক বা দেড় লাখ মাছ আটকা পড়ার ঘটনা ঘটছে।

স্থানীয়রা বলছেন, এক জালেই কখনো কখনো ৫-৬ লাখ টাকার মাছ ধরা পড়ছে গত কিছুদিন ধরে।

ওই এলাকার জেলে শাহ আলম বলছেন, উপকূলের কাছে টানা জালে একবারে এ ধরনের বেশি পরিমাণে মাছ ধরার পড়ার ঘটনা গত কিছুদিনে বেশ কয়েকবার ঘটছে।

আরেকজন জেলে কাসেম মাঝি বলছেন, বেশ কয়েকজন জেলের জালে এভাবে বিপুল পরিমাণ মাছ ধরা পড়েছে যাকে তারা নিতান্তই ভাগ্য বলে মনে করছেন।

‘সাগরের মাছ একসাথে এক পথে চলে। ভাগ্যক্রমে এসব জেলেদের জাল সে পথেই হয়তো পড়েছে। এটি তাদের ভাগ্য,’ বলছিলেন তিনি।

কোন কোন মাছ বেশি ধরা পড়ছে
জেলেরা বলছেন চিংড়ি, রূপচাঁদা, কালো পোয়া, সাদা পোয়া, ছোট পোয়া, ছোট পারশে, বড় পারশে, মলা, ছুরি, বাটার মতো মাছই বেশি ধরা পড়ছে।

কাসেম মাঝি বলছেন, মাছ তীরে আনার পরপর সেখানেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে পাইকারি ক্রেতাদের কাছে। আবার তারা কিছু মাছ কাঁচাবাজারে নেন আর কিছু মাছ শুঁটকির জন্য পাঠিয়ে দেন শুঁটকি মহালে।

তিনি অবশ্য বলছেন, সব জেলের জালেই মাছ ধরা পড়ছে এমনটি নয়। কোন কোন জেলের জালে এমন অবিশ্বাস্য পরিমাণ মাছ ধরা পড়ছে বলেই এটি নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে।

শাহ আলম বলছেন, এমনিতেও এবার উপকূলে এ ধরণের মাছে পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে কিছুটা বেশিই পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে তার কাছে।

আর তার প্রভাব পড়েছে বাজারেও। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম হয়ে রাজধানী ঢাকার বাজারেও এ ধরনের মাছের সরবরাহ বেড়েছে।

চট্টগ্রামের অধিবাসী পারভীন হাসান বলছেন, সেখানকার বাজারে এসব মাছের দামও কিছু কম বলে মনে হচ্ছে তার কাছে।

তবে ঢাকায় দামের ক্ষেত্রে খুব একটা হেরফের দেখা যায় না। সোমবারই শান্তিনগর বাজার থেকে রূপচাঁদা মাছ কিনেছেন সিদ্ধেশ্বরীর লাবনী বেগম।

‘এক হাজার টাকা কেজি নিলো। মাছ যদি বেশি ধরাই পড়ে তার সুফল আমরা পাই না কেন জানি না। তবে বাজারে সামুদ্রিক মাছ কিন্তু দেখছি প্রচুর,’ বলছিলেন তিনি।

এত মাছ উপকূলে কেন?
টেকনাফের মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলছেন, মাছের প্রজনন ও ডিম ছাড়ার সময়ে ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ ছিল গত বছর। তিনি মনে করেন তারই সুফল পাওয়া যাচ্ছে এখন।

‘উপকূলের কাছে এবারে অনেক মাছ পাচ্ছেন জেলেরা। কারণ এবার ডিম পাড়ার মৌসুমে দু মাস মাছ ধরা বন্ধ করেছিলো সরকার। আর কোন কোন জেলে বেশি সুবিধা পাচ্ছেন কারণ সাগরের মাছ ঝাঁক বেধে এক পথে চলে। সেটাই হয়তো কোন জেলের জালে পড়ছে,’ বলছিলেন তিনি।

সাধারণত বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে যারা মাছ ধরতে যান তারা মূলত চট্টগ্রাম থেকে সাগরে ১০-২০ দিনের সময়ের জন্য।

তারা মূলত গভীর সমুদ্রে যন্ত্র ব্যবহার করে মনিটরে ইকো সাউন্ড (প্রতিধ্বনি) দেখে মাছের অবস্থান বুঝে জাল ফেলার চেষ্টা করে।

আর উপকূলের কাছে যারা মাছ ধরে তারা হাতে হাতে জাল ফেলে চারদিক থেকে ঘিরে মাছ তোলার চেষ্টা করে যাকে জেলেরা টানা জাল দিয়ে মাছ ধরা বলে থাকেন।

মূলত এবার যাদের জালে এক সাথে বিপুল পরিমাণ মাছ ধরার ঘটনা ঘটেছে তারা এই টানা জাল ব্যবহার করে মাছ ধরছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এর অধ্যাপক ড. শেখ আফতাব উদ্দিন বলছেন, সাধারণত এ ধরনের মাছগুলো পরিমাণে ১-২ থেকে ৫ টন পর্যন্ত এক সাথেই চলাচল করে।

তিনি বলেন, মাছগুলো সাগরের হলেও এগুলো নানা কারণে এমন দল বেঁধে উপকূলের কাছে আসে যার মধ্যে রয়েছে গভীর সমুদ্রে অক্সিজেন ডিপ্রেশন জোন এড়ানো, খাবার সংগ্রহ বা প্রজননের মতো বিষয়গুলো।

বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে গবেষকদের হিসেবে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ আছে এর মধ্যে কিছু মাছ প্রজনন ও ডিম ছাড়ার সময়ে উপকূলের কাছে আসে আবার কিছু মাছ গভীর সমুদ্রে চলে যায়।

‘এখন যেগুলো উপকূলে ধরা পড়ছে আমাদের ধারণা এগুলো অক্সিজেন ডিপ্রেশন জোন এড়ানো বা খাবারের জন্য মুভ করছে। যদিও গভীর সমুদ্রের কোথায় কোথায় এ ধরণের জোন আছে তা সম্পর্কে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। তবে এ নিয়ে গবেষণা চলছে,’ বলছিলেন তিনি।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ