আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

নতুন বছরে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কোন পথে যেতে পারে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৩:৩৩ | আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ১৩:০১

ইউরোপ ও আমেরিকায় এই মুহূর্তে আবারও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বাড়ছে। আর এর পেছনে রয়েছে ভাইরাসটির নতুন ধরন অমিক্রন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত অমিক্রন শনাক্ত হয়েছে সাতজনের শরীরে।

অমিক্রনের কারণে ২০২২ সালে কি বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আবার বাড়তে পারে? আগামী দিনগুলোতে কী ধরনের পরিস্থিতির পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে?

তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যেই অমিক্রনের সংক্রমণ বাড়বে?

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বিবিসিকে বলেছেন আগামী তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশেও অমিক্রনের সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

কেন তারা এমন ধারণা করছেন- তা ব্যাখ্যা করে ডা. আলমগীর বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলে এখনো ডেল্টা বেশি; কিন্তু অমিক্রন সেটা সারপাস করে যাবে। গত দুই বছর আমরা যেটা খেয়াল করেছি ইউরোপ আমেরিকায় ছড়ানোর তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সেটি আমাদের এদিকে আসে।’

‘ওসব দেশে অনেক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও যে অসুখের ইনকিউবেশন পিরিয়ড থাকে- সেগুলো ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ঠেকানো যায় না। আসাটা দেরি করানো যায় মাত্র। যখন ওদিকে কমতে শুরু করবে, তখন আমাদের এদিকে হয়ত বাড়বে।’

তিনি আরও বলছেন, শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস দ্বারা যেসব বৈশ্বিক মহামারি হয়েছে, ঐতিহাসিকভাবে তার সবগুলো সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছে।

অমিক্রনে অন্য ধরনগুলোর মতো ফুসফুসে প্রদাহ খুব কম। সেকারণে হয়ত এর সংক্রমণ অনেক বেশি হলেও গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুর সংখ্যা কম হতে পারে।

তবে ডা. আলমগীর মনে করিয়ে দেন যে এ অঞ্চলে অমিক্রনের সংক্রমণ বেড়ে আবারও করোনাভাইরাস তার ধরন পরিবর্তন করবে কি না- সেই আশঙ্কার কথা ভুলে গেলে চলবে না।

মার্চেই বেশি সংক্রমণ শুরু হতে পারে
করোনাভাইরাস সম্পর্কিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেয়া প্রতিদিনকার সংখ্যা যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, ডিসেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে পাঁচশ বা এর উপরে।

২০২২ সালে বাংলাদেশের সামনে যে সাতটি চ্যালেঞ্জ

তার আগের সপ্তাহে টানা কয়েকদিন সংক্রমণ ছিল তিনশ'র কোঠায়। আজও জানুয়ারির ২ তারিখ সেই সংখ্যা সাড়ে পাঁচশ'র উপরে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে পরপর দুই বছর একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে।

আর তা হলো শীতের মৌসুমে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে গিয়ে মার্চ থেকে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে।

এই বছরও তেমন হওয়ার সম্ভাবনাই দেখছেন করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সরকারের কারিগরি কমিটির একজন সদস্য ভাইরোলজিস্ট ডা. নজরুল ইসলাম।

তিনি বলছেন, ‘শীতে স্থানীয় যে ভাইরাসগুলোর সংক্রমণ হয় সেগুলো সব শ্বাসতন্ত্রের অসুখ, করোনাভাইরাসও তাই। আমাদের প্রবণতা দুই বছরে যা দেখলাম শীতে এই ভাইরাসগুলো সংক্রমণ করে। ভাইরাসেরও সমাজের মতো আছে। একটা থাকলে তখন অন্যটা সুযোগ পায় না। তাই করোনাভাইরাস এখন সংক্রমণ করতে পারছে না। তবে মার্চের দিক থেকে যখন দেশীয় ভাইরাসগুলো কমে আসবে- তখন করোনাভাইরাস আবার সুযোগ নেবে। সেটাই গত দুই বছর হয়েছে।’

তিনি বলছেন, ‘আমরা দুই বছরে দেখেছি যে ইউরোপ-আমেরিকায় যখন অনেক সংক্রমণ থাকে আমাদের এখানে তখন কম থাকে। শীতকালে সেটাই দেখছি। কেন সেটি জানতে আমাদের গবেষণা করতে হবে।’

টিকায় কতদূর এগিয়ে বাংলাদেশ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত মোট সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২৮ হাজার মানুষ। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই মৃত্যু হয়েছে ৪৩ শতাংশ।

মাত্র গতকালই বছর শুরুর বার্তায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান আশা প্রকাশ করেছেন, সারা বিশ্ব একসাথে কাজ করলে করোনাভাইরাসকে বিদায় করা যাবে।

বিশ্ব এখন জানে কিভাবে সেটি করা যাবে এবং সেজন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে টিকার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।

তবে বিশ্বে কোভিড টিকার ক্ষেত্রে অসমতা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন তিনি।

সবাই টিকা না পেলে বিশ্বের কোন না কোন স্থানে কোভিড রয়েই যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রম কতটা এগিয়েছে তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে এবছরের প্রবণতা কেমন হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্রদের একজন ডা. রোবেদ আমিন আজ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘এ বছরের জুন মাসের মধ্যে বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশকে টিকা দেয়া শেষ করতে চায় বাংলাদেশ। আমরা আশা করছি এই মাসে যে কর্মসূচী চলে তাতে এক মাসেই চার কোটির মতো টিকা দেয়া হবে। দুই দিন আগেও আমারা প্রায় দুই কোটি টিকা হাতে পেয়েছি। তাই টিকার স্বল্পতাও নেই।’

তিনি জানান, বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশ ইতিমধ্যেই প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে। দুটি ডোজই পেয়েছেন ৪০ শতাংশের মতো।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক করোনাভাইরাস ভ্যাক্সিন আপডেট বলছে দুই ডোজ টিকা দেবার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ