বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন
প্রতিবন্ধীদের সাথে আচরণ কেমন হওয়া উচিত
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:২৬
বাংলাদেশের সমাজে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী নানা ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ, অপব্যবহার, অবহেলা ও বিব্রতকর অভিজ্ঞতার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন। এর পেছনে সচেতনতার বড় ধরনের ঘাটতি এবং এ বিষয়ে প্রচার প্রচারণার অভাবকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা।
সামাজিকভাবেও এরূপ একটি বিশ্বাস আছে যে, প্রতিবন্ধীত্ব একটি অভিশাপ এবং এটি পাপ কাজের শাস্তি। সম্প্রতি এমন ধারণার ওপর ভর করে একটি ওয়েব নাটক নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ২৪ লাখ ২৯ হাজার ৮৫৮ জন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে এই প্রতিবন্ধীতার হার মোট জনসংখ্যার ৯%।
এই জনগোষ্ঠীর অনেকেই বর্তমানে সম্মানজনক নানা পদে কাজ করছেন। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে হরহামেশাই চলাফেরার ক্ষেত্রে এই প্রতিবন্ধী মানুষদের বিব্রতকর নানাধরনের আচরণের শিকার হতে হয়।
কাজী রোকসানা একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। সম্প্রতি তিনি তার অভিজ্ঞতার কথা আমাকে জানান।
‘একদিন রিকশা থেকে নামার জন্য আমি মামাকে (রিকশাচালক) বললাম, মামা আপনি নিচে দাঁড়ান আমি সিটে ধরে নামবো। উনি সাহায্য করতে গিয়ে আমার হাত ধরে বসলো। আমি তো ব্যালেন্স হারিয়ে পড়েই যাচ্ছিলাম। পরে কোনোভাবে সামলে নেই। আসলে একজন অন্ধ মানুষকে কীভাবে হেল্প করতে হয় মামা বোঝেননি।’
ধরন অনুযায়ী মানুষের মধ্যে প্রায় ১২ ধরনের প্রতিবন্ধীতা শনাক্ত হয়েছে। এগুলো হল, অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারস, শারীরিক, মানসিক অসুস্থতাজনিত, দৃষ্টি, বাকপ্রতিবন্ধিতা, বুদ্ধি, এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধীতা, সেরিব্রাল পলসি, ডাউন সিনড্রোম, বহুমাত্রিক এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা।
‘আগে অনুমতি নিন’
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে নানা প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস। পরিবারে এমন দুজন সদস্য থাকায় বেশ কাছ থেকে তাদের সমস্যাগুলোও উপলব্ধি করেছেন তিনি। বাংলাদেশে থাকাকালে প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে মানুষের নানা দৃষ্টিভঙ্গি তাকে অবাক করেছে। এক্ষেত্রে হাতে গোনা কয়েকটি বিষয়ে মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ‘প্রথমত, প্রতিবন্ধী মানুষটির অক্ষমতার প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে তাকে একজন মানুষ হিসেবে দেখার চেষ্টা করুন। হুইল চেয়ারে বসা মানুষটিকে দেখে তার অবস্থা জানতে পাশের জনকে জিজ্ঞাসা করা, কানে কম শোনা এরকম কারও সাথে অনাবশ্যক জোরে কথা বলার মতো আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।’ আবার সাহায্য করতে গিয়েও কাজী রোকসানার মতো কাউকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলছেন কিনা সেদিকেও নজর দেয়া প্রয়োজন। ফ্রান্সিস বলছেন, প্রতিবন্ধী কাউকে দেখে যদি মনে হয় যে উনার সাহায্য দরকার তাহলে আগে জানতে চান তিনি সাহায্য চান কিনা। ‘কারণ এমনও হতে পারে তিনি নিজেই চেষ্টা করতে চান, কারও সাহায্যের প্রয়োজন নেই। আবার এমনও হতে পারে যে তিনি সাহায্য চাইতে লজ্জা পাচ্ছেন।’ তিনি বলছেন, শুধু অনুমতি পেলে হুইল চেয়ারে বসা, ক্রাচ বা সাদা ছড়ি ধরা মানুষটিকে তাদের দেখানো দিকে নিয়ে চলুন। ‘তাকে জানতে দিন আপনার পরবর্তী দিক কোনটি হবে। জিজ্ঞেস করুন, যে গতিতে আপনি হুইল চেয়ার টেনে নিয়ে যাচ্ছেন বা হাঁটছেন সেটা তার জন্য স্বাচ্ছন্দ্যজনক কি না। সাধারণত, হুইল চেয়ার চালানো কিংবা কারও সাথে গতি মিলিয়ে চলা একটা দক্ষতার ব্যাপার। আপনি এতে পারদর্শী না-ও হতে পারেন।’ এ ক্ষেত্রে সিঁড়ি ওঠানামানোর ব্যাপারটি আপনার কাছে নতুন হলে চেয়ারে বসা মানুষটিকে জিজ্ঞেস করুন- তিনি আপনাকে সব থেকে ভালো সমাধান দিতে পারবেন।- বলেন ফ্রান্সিস। তার মতে, বেশি গতি বা কম গতি কোনোটিই তাদের জন্য সুবিধাজনক নয়। হুইল চেয়ারে বসা কারও সাথে কী আচরণ করবেন?
এ ব্যাপারে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির হুইল চেয়ারে তার অনুমতি ব্যতীত হাত দেবেন না। তিনি অনুমতি দিলে সেটি চালিয়ে নিয়ে যান। হুইল চেয়ার আচমকা সরাবেন না বা হাতল ধরে হঠাৎ টান দেবেন না। তা হঠাৎ করে খুলে আসতে পারে। এর ওপর হেলান দেয়া বা আসবাব হিসেবে বিবেচনা করা বন্ধ করতে হবে।’ তার মতে, চেয়ারে বসে থাকা কারও সাথে দাঁড়িয়ে থেকে কথা বলার চাইতে ভালো হয় তার পাশে কোন চেয়ারে বসে তার চোখ বরাবর কথা বলা, যেন কথোপকথন সহজ হয়। ‘যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে দাঁড়িয়েই কথা বলতে পারেন। খুব বেশি ঝুঁকে পড়বেন না কিংবা মাটিতে বসে যাবেন না, যদি না সেই মানুষটি আপনার খুব আপন হয়।’ তবে ফ্রান্সিস একথাও বলেছেন যে, ওই ব্যক্তি যদি একবার সাহায্য প্রত্যাখ্যান করেন তার মানে এই নয় যে পরের বার আপনি আর জানতেই চাইবেন না- এমন যেন না হয়। ফ্রান্সিসের ছেলের অটিজম রয়েছে। ঢাকায় তাকে নিয়ে বাইরে বের হতে গিয়ে রাস্তায় প্রায় কয়েকজন অকপটে তাকে জিজ্ঞেস করেছেন- ‘এর কী হয়েছে, এর কী সমস্যা’? এক্ষেত্রে ফ্রান্সিসের পরামর্শ হলো, কোনো মানুষের দিকে এভাবে হাত উঁচিয়ে তার সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাওয়াটা শিষ্টাচারবহির্ভূত। ‘কথা বলতে চাইলে, হুইল চেয়ারে থাকা সেই মানুষটির সাথে সরাসরি কথা বলুন। তার দিন কেমন কেটেছে জানতে চান।’ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সাথে যোগাযোগ
ফ্রান্সিস বলছেন, এ ছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সাথে দেখা হলে কিংবা তারা যে কক্ষে আছেন সেখানে প্রবেশ করলে ‘আপনার উপস্থিতি সম্পর্কে তাদের ধারণা দিন। নিজের নাম পরিচয় বলুন। আপনার সাথে কেউ থাকলে তাকেও পরিচিত করিয়ে দিন। কাজ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময়েও জানতে দিন।ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বা প্রবেশের সময় দরজা কখনো অর্ধেক খুলে রাখবেন না, হয় পুরো বন্ধ করুন বা পুরো খোলা রাখুন।’ ফ্রান্সিস বলছেন ওই ব্যক্তি আপনার আগে থেকে পরিচিত হলে, তাকে নাম ধরে ডাকা এবং নিজের পরিচয় দেয়াটা সাহায্য করে। ‘কবে, কোথায় কিভাবে আপনাদের দেখা হয়েছিল মনে করিয়ে দিন। শুধু হ্যালো বা সালাম দিলে তাদের পক্ষে আপনাকে চিনে সাথে সাথে জবাব দেয়াটা একটু কঠিন।’ কখনও ভাববেন না যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কাউকে ‘পরে দেখা হবে’, ‘দেখি কি হয়’, ‘আপনার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো’- এ ধরনের কথা বললে সে অস্বস্তিবোধ করবে। তারা খুব স্বাভাবিকভাবেই কথাগুলো গ্রহণ করেন, ফ্রান্সিসের পরামর্শ। তবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে একটা বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। সেটা হলো- হঠাৎ করে তাদের স্পর্শ করবেন না। ‘তাদের কাছেও জানতে চান কোন সাহায্য লাগবে কিনা। এরপর অপেক্ষা করুন, দরকার হলে তিনিই আপনার হাত ধরবেন। আপনার 'হঠাৎ স্পর্শ' তাকে ঘাবড়ে দিতে পারে। আপনি তাকে ধরে থাকার চেয়ে তিনি আপনাকে ধরলে সেটা তার জন্য বেশি সুবিধাজনক হয়।’ তাকে আপনার বাহু ধরতে দিন, বলছেন তিনি। ‘সাহায্য করতে গিয়ে কাউকে আঁকড়ে ধরতে যাবেন না। এতে তারা বিব্রত হতে পারেন, চলাচলের ভারসাম্য হারাতে পারেন। সামনে গর্ত থাকলে, সিঁড়ি থাকলে বা উঁচু নিচু থাকলে তাদের আগে থেকেই সতর্ক করুন। বলুন যে একধাপ নিচে নামতে হবে বা উপরে উঠতে হবে। সামনে ছোট একটা গর্ত আছে। এতে তাদের বুঝতে সুবিধা হবে।’ শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের সাথে যোগাযোগ
শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাথে কথা বলতে গেলে তাদের আগেই স্পর্শ না করে তাদের মুখোমুখি আসার চেষ্টা করুন, বলছেন মি. ফ্রান্সিস। ‘কানে শুনতে পান না বলে তাদের সাথে অতিরিক্ত বা উচ্চস্বরে কথা বলতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। আপনার কথা আস্তে আস্তে বুঝিয়ে বললেই তিনি বুঝতে পারবেন।’ তিনি বলছেন, তাদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যদি তার সঙ্গী, সাহায্যকারী বা ব্যাখ্যাকারীর মাধ্যমে কথা বলতে হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে দুজনের সাথেই আই কন্টাক্ট করতে হবে। ‘তার কোনো কথা না বুঝলে সেটা পরিষ্কারভাবে জানান। শুনতে পারেন না বলে যে তিনি বলতেও পারেন না তা নয়। যদি বুঝতে না পারেন, পুনরায় বলতে বলুন। কথা না বুঝতে পারলে তা বোঝার ভান করার দরকার নেই,’ বলেন ফ্রান্সিস। তিনি জানান, শ্রবণ প্রতিবন্ধীরা স্বভাবতই অন্ধকারে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। খেয়াল রাখতে হবে যেন আপনার মুখে আলো থাকে, তিনি যাতে আপনার ঠোঁটের নাড়াচাড়া খেয়াল করতে পারেন। আপনি যদি কথা বলার সময় অযথা মুখ চোখ বেশি নড়াচড়া করেন, মুখের সামনে হাত বা অন্য কোন বাধা থাকে বা আলোর বিপরীতে থাকেন তাহলে আপনার ঠোঁট নড়া দেখে কথা বুঝতে মানুষটির কষ্ট হবে। শ্রবণ প্রতিবন্ধী একজন মানুষের কথা যদি আপনি না বোঝেন বা তার হেয়ারিং এইড অর্থাৎ শ্রবণযন্ত্রে কোনও আওয়াজ হতে থাকে তাহলে তাকে জানান। যন্ত্র কাজ না করে আওয়াজ করলে তা নিজে থেকে বোঝার কোনও উপায় তার নেই। শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের গান শুনতে দিন। তারা শব্দের চলন থেকে শব্দের উচ্চারণ বুঝতে পারেন এবং এই শব্দের চলনটি তারা উপভোগ করেন, বলছেন মি. ফ্রান্সিস। মানসিক প্রতিবন্ধীদের সাথে যোগাযোগ
একইভাবে মানসিক প্রতিবন্ধী বা অটিজম, ডাউন সিনড্রোম আছে এমন শিশুদের সাথে অন্য দশটা শিশুর মতই আচরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস। অনেক সময় এমন শিশুরা জেদ দেখায়, খারাপ আচরণ করে। সে সকল ক্ষেত্রে অন্য দশটা শিশুকে আপনি যেভাবে শেখাতেন তাকেও সেভাবে শেখান। অনেকেই আছেন যারা শারীরিক বা মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কাছ থেকে বাচ্চাদের দূরে সরিয়ে রাখেন। অনেকে প্রতিবন্ধী শিশুদের সাথে তাদের বাচ্চাদের খেলাধুলা করতে দেন না। এ ব্যাপারে ফ্রান্সিস বলেন, তাদের ভয় পাবার কিছু নেই। এমন আচরণে এই মানুষগুলো এবং তাদের পরিবার মনে ভয়ানক কষ্ট পান। ‘প্রতিবন্ধী মানুষদের অবহেলা করবেন না, তাদের পরিবারকে আলাদা করে কোনও করুণাও দেখাবেন না। মনে রাখবেন অন্য সকল পিতা-মাতার মতো তাদের শিশুও তাদের কাছে অমূল্য। তাদেরকে দেখে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এগুলো কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়,’ বলেন ফ্রান্সিস। এক্ষেত্রে মানবিক আচরণের তাগিদ দিয়েছেন তিনি। তাছাড়া আপনার পরিবারে যদি প্রতিবন্ধী কোন সদস্য থাকেন তাহলে তাকে বাসার ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত করা খুব জরুরি বলে জানিয়েছেন মি. ফ্রান্সিস। তিনি তার ছেলেকে নিয়ে প্রায়ই সুপারশপে গিয়ে বাজার করতেন। আপনি তাদের সব কাজ করে দিলে তারা নিজেকে অপ্রয়োজনীয় বা নগণ্য মনে করতে পারেন। যাদের লার্নিং ডিজ্যাবিলিটি বা শিক্ষণ প্রতিবন্ধকতা আছে, তার মানে এই নয় যে মানুষটি আপনার কথা ভুলে যাবেন। ফ্রান্সিস বলেন, আমাদের ছেলে নীলের শিক্ষণ প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও তার স্মৃতিশক্তি ও রসিকতা জ্ঞান চমৎকার। তাই তাদের কথা দেওয়ার সময় চিন্তা করে দিন। মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী একজন কী বলতে চাইছে তা মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করুন। এটা ভেবে নেয়ার কোনও কারণ নেই যে ওনার নিজস্ব কোন মতামত বা চিন্তাধারা নেই। তাদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ধৈর্য রাখা ফ্রান্সিস বলেন, ‘আপনি তাকে যেটা বোঝাতে চান সেটা অনেক লম্বা সময় নিয়ে বলতে হবে বা করতে হবে। তাদের উত্তর শুনতে অপেক্ষা করুন। সময় দিন। ধৈর্য হারালে চলবে না।’ এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিজের মুখে বা ইশারা করে কথা বলতে দিন, পরামর্শ ফ্রান্সিসের। ‘তাদের উপস্থিতিতে তাদের হয়ে কথার উত্তর দেয়া বা তাদের সম্পর্কে বলাটা ঠিক নয়, যদি না আপনি তার দোভাষী হন।’ কারও কৃত্রিম হাত বা বাহু থাকলে তার সাথে করমর্দনের পরিবর্তে সালাম দিন বা হ্যালো বলুন। যদি তারা হাত বাড়িয়ে দেন। এক্ষেত্রে লজ্জিত না হয়ে আপনিও হাত বাড়িয়ে দিন। এ ছাড়া ভাষার ব্যবহারেও সংযত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। হাঁটতে চলতে পারেন না এমন ব্যক্তি সম্পর্কে বিকলাঙ্গ, ল্যাংড়া সেইসঙ্গে অন্ধ, বোবা কালা, অক্ষম, বামন, বেঁটে, তোতলা, পাগল, উন্মাদ, মাথা খারাপ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার মর্যাদাহানিকর। ফ্রান্সিস আরেকটি বিষয়ে খুব গুরুত্ব দিয়েছেন, সেটি হল অযথা ও অযাচিতভাবে কাউকে উপদেশ দেয়া উচিত হবে না। ‘পেশাগত কারণে দরকার হল আপনার মতামত জানাতে পারেন কিন্তু মনে রাখবেন, অযাচিতভাবে উপদেশ কেউই পছন্দ করে না।’ বাংলাদেশে কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের নানা কটূক্তির মুখে পড়তে হয়। তাদের যথাযথভাবে জানতে সঠিক আচরণ কোনটি সেটি জানা খুব প্রয়োজন বলে মনে করেন ফ্রান্সিস। এবিএন/সাদিক/জসিম
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে নানা প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস। পরিবারে এমন দুজন সদস্য থাকায় বেশ কাছ থেকে তাদের সমস্যাগুলোও উপলব্ধি করেছেন তিনি। বাংলাদেশে থাকাকালে প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে মানুষের নানা দৃষ্টিভঙ্গি তাকে অবাক করেছে। এক্ষেত্রে হাতে গোনা কয়েকটি বিষয়ে মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ‘প্রথমত, প্রতিবন্ধী মানুষটির অক্ষমতার প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে তাকে একজন মানুষ হিসেবে দেখার চেষ্টা করুন। হুইল চেয়ারে বসা মানুষটিকে দেখে তার অবস্থা জানতে পাশের জনকে জিজ্ঞাসা করা, কানে কম শোনা এরকম কারও সাথে অনাবশ্যক জোরে কথা বলার মতো আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।’ আবার সাহায্য করতে গিয়েও কাজী রোকসানার মতো কাউকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলছেন কিনা সেদিকেও নজর দেয়া প্রয়োজন। ফ্রান্সিস বলছেন, প্রতিবন্ধী কাউকে দেখে যদি মনে হয় যে উনার সাহায্য দরকার তাহলে আগে জানতে চান তিনি সাহায্য চান কিনা। ‘কারণ এমনও হতে পারে তিনি নিজেই চেষ্টা করতে চান, কারও সাহায্যের প্রয়োজন নেই। আবার এমনও হতে পারে যে তিনি সাহায্য চাইতে লজ্জা পাচ্ছেন।’ তিনি বলছেন, শুধু অনুমতি পেলে হুইল চেয়ারে বসা, ক্রাচ বা সাদা ছড়ি ধরা মানুষটিকে তাদের দেখানো দিকে নিয়ে চলুন। ‘তাকে জানতে দিন আপনার পরবর্তী দিক কোনটি হবে। জিজ্ঞেস করুন, যে গতিতে আপনি হুইল চেয়ার টেনে নিয়ে যাচ্ছেন বা হাঁটছেন সেটা তার জন্য স্বাচ্ছন্দ্যজনক কি না। সাধারণত, হুইল চেয়ার চালানো কিংবা কারও সাথে গতি মিলিয়ে চলা একটা দক্ষতার ব্যাপার। আপনি এতে পারদর্শী না-ও হতে পারেন।’ এ ক্ষেত্রে সিঁড়ি ওঠানামানোর ব্যাপারটি আপনার কাছে নতুন হলে চেয়ারে বসা মানুষটিকে জিজ্ঞেস করুন- তিনি আপনাকে সব থেকে ভালো সমাধান দিতে পারবেন।- বলেন ফ্রান্সিস। তার মতে, বেশি গতি বা কম গতি কোনোটিই তাদের জন্য সুবিধাজনক নয়। হুইল চেয়ারে বসা কারও সাথে কী আচরণ করবেন?
এ ব্যাপারে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির হুইল চেয়ারে তার অনুমতি ব্যতীত হাত দেবেন না। তিনি অনুমতি দিলে সেটি চালিয়ে নিয়ে যান। হুইল চেয়ার আচমকা সরাবেন না বা হাতল ধরে হঠাৎ টান দেবেন না। তা হঠাৎ করে খুলে আসতে পারে। এর ওপর হেলান দেয়া বা আসবাব হিসেবে বিবেচনা করা বন্ধ করতে হবে।’ তার মতে, চেয়ারে বসে থাকা কারও সাথে দাঁড়িয়ে থেকে কথা বলার চাইতে ভালো হয় তার পাশে কোন চেয়ারে বসে তার চোখ বরাবর কথা বলা, যেন কথোপকথন সহজ হয়। ‘যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে দাঁড়িয়েই কথা বলতে পারেন। খুব বেশি ঝুঁকে পড়বেন না কিংবা মাটিতে বসে যাবেন না, যদি না সেই মানুষটি আপনার খুব আপন হয়।’ তবে ফ্রান্সিস একথাও বলেছেন যে, ওই ব্যক্তি যদি একবার সাহায্য প্রত্যাখ্যান করেন তার মানে এই নয় যে পরের বার আপনি আর জানতেই চাইবেন না- এমন যেন না হয়। ফ্রান্সিসের ছেলের অটিজম রয়েছে। ঢাকায় তাকে নিয়ে বাইরে বের হতে গিয়ে রাস্তায় প্রায় কয়েকজন অকপটে তাকে জিজ্ঞেস করেছেন- ‘এর কী হয়েছে, এর কী সমস্যা’? এক্ষেত্রে ফ্রান্সিসের পরামর্শ হলো, কোনো মানুষের দিকে এভাবে হাত উঁচিয়ে তার সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাওয়াটা শিষ্টাচারবহির্ভূত। ‘কথা বলতে চাইলে, হুইল চেয়ারে থাকা সেই মানুষটির সাথে সরাসরি কথা বলুন। তার দিন কেমন কেটেছে জানতে চান।’ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সাথে যোগাযোগ
ফ্রান্সিস বলছেন, এ ছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সাথে দেখা হলে কিংবা তারা যে কক্ষে আছেন সেখানে প্রবেশ করলে ‘আপনার উপস্থিতি সম্পর্কে তাদের ধারণা দিন। নিজের নাম পরিচয় বলুন। আপনার সাথে কেউ থাকলে তাকেও পরিচিত করিয়ে দিন। কাজ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময়েও জানতে দিন।ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বা প্রবেশের সময় দরজা কখনো অর্ধেক খুলে রাখবেন না, হয় পুরো বন্ধ করুন বা পুরো খোলা রাখুন।’ ফ্রান্সিস বলছেন ওই ব্যক্তি আপনার আগে থেকে পরিচিত হলে, তাকে নাম ধরে ডাকা এবং নিজের পরিচয় দেয়াটা সাহায্য করে। ‘কবে, কোথায় কিভাবে আপনাদের দেখা হয়েছিল মনে করিয়ে দিন। শুধু হ্যালো বা সালাম দিলে তাদের পক্ষে আপনাকে চিনে সাথে সাথে জবাব দেয়াটা একটু কঠিন।’ কখনও ভাববেন না যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কাউকে ‘পরে দেখা হবে’, ‘দেখি কি হয়’, ‘আপনার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো’- এ ধরনের কথা বললে সে অস্বস্তিবোধ করবে। তারা খুব স্বাভাবিকভাবেই কথাগুলো গ্রহণ করেন, ফ্রান্সিসের পরামর্শ। তবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে একটা বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। সেটা হলো- হঠাৎ করে তাদের স্পর্শ করবেন না। ‘তাদের কাছেও জানতে চান কোন সাহায্য লাগবে কিনা। এরপর অপেক্ষা করুন, দরকার হলে তিনিই আপনার হাত ধরবেন। আপনার 'হঠাৎ স্পর্শ' তাকে ঘাবড়ে দিতে পারে। আপনি তাকে ধরে থাকার চেয়ে তিনি আপনাকে ধরলে সেটা তার জন্য বেশি সুবিধাজনক হয়।’ তাকে আপনার বাহু ধরতে দিন, বলছেন তিনি। ‘সাহায্য করতে গিয়ে কাউকে আঁকড়ে ধরতে যাবেন না। এতে তারা বিব্রত হতে পারেন, চলাচলের ভারসাম্য হারাতে পারেন। সামনে গর্ত থাকলে, সিঁড়ি থাকলে বা উঁচু নিচু থাকলে তাদের আগে থেকেই সতর্ক করুন। বলুন যে একধাপ নিচে নামতে হবে বা উপরে উঠতে হবে। সামনে ছোট একটা গর্ত আছে। এতে তাদের বুঝতে সুবিধা হবে।’ শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের সাথে যোগাযোগ
শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাথে কথা বলতে গেলে তাদের আগেই স্পর্শ না করে তাদের মুখোমুখি আসার চেষ্টা করুন, বলছেন মি. ফ্রান্সিস। ‘কানে শুনতে পান না বলে তাদের সাথে অতিরিক্ত বা উচ্চস্বরে কথা বলতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। আপনার কথা আস্তে আস্তে বুঝিয়ে বললেই তিনি বুঝতে পারবেন।’ তিনি বলছেন, তাদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যদি তার সঙ্গী, সাহায্যকারী বা ব্যাখ্যাকারীর মাধ্যমে কথা বলতে হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে দুজনের সাথেই আই কন্টাক্ট করতে হবে। ‘তার কোনো কথা না বুঝলে সেটা পরিষ্কারভাবে জানান। শুনতে পারেন না বলে যে তিনি বলতেও পারেন না তা নয়। যদি বুঝতে না পারেন, পুনরায় বলতে বলুন। কথা না বুঝতে পারলে তা বোঝার ভান করার দরকার নেই,’ বলেন ফ্রান্সিস। তিনি জানান, শ্রবণ প্রতিবন্ধীরা স্বভাবতই অন্ধকারে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। খেয়াল রাখতে হবে যেন আপনার মুখে আলো থাকে, তিনি যাতে আপনার ঠোঁটের নাড়াচাড়া খেয়াল করতে পারেন। আপনি যদি কথা বলার সময় অযথা মুখ চোখ বেশি নড়াচড়া করেন, মুখের সামনে হাত বা অন্য কোন বাধা থাকে বা আলোর বিপরীতে থাকেন তাহলে আপনার ঠোঁট নড়া দেখে কথা বুঝতে মানুষটির কষ্ট হবে। শ্রবণ প্রতিবন্ধী একজন মানুষের কথা যদি আপনি না বোঝেন বা তার হেয়ারিং এইড অর্থাৎ শ্রবণযন্ত্রে কোনও আওয়াজ হতে থাকে তাহলে তাকে জানান। যন্ত্র কাজ না করে আওয়াজ করলে তা নিজে থেকে বোঝার কোনও উপায় তার নেই। শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের গান শুনতে দিন। তারা শব্দের চলন থেকে শব্দের উচ্চারণ বুঝতে পারেন এবং এই শব্দের চলনটি তারা উপভোগ করেন, বলছেন মি. ফ্রান্সিস। মানসিক প্রতিবন্ধীদের সাথে যোগাযোগ
একইভাবে মানসিক প্রতিবন্ধী বা অটিজম, ডাউন সিনড্রোম আছে এমন শিশুদের সাথে অন্য দশটা শিশুর মতই আচরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস। অনেক সময় এমন শিশুরা জেদ দেখায়, খারাপ আচরণ করে। সে সকল ক্ষেত্রে অন্য দশটা শিশুকে আপনি যেভাবে শেখাতেন তাকেও সেভাবে শেখান। অনেকেই আছেন যারা শারীরিক বা মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কাছ থেকে বাচ্চাদের দূরে সরিয়ে রাখেন। অনেকে প্রতিবন্ধী শিশুদের সাথে তাদের বাচ্চাদের খেলাধুলা করতে দেন না। এ ব্যাপারে ফ্রান্সিস বলেন, তাদের ভয় পাবার কিছু নেই। এমন আচরণে এই মানুষগুলো এবং তাদের পরিবার মনে ভয়ানক কষ্ট পান। ‘প্রতিবন্ধী মানুষদের অবহেলা করবেন না, তাদের পরিবারকে আলাদা করে কোনও করুণাও দেখাবেন না। মনে রাখবেন অন্য সকল পিতা-মাতার মতো তাদের শিশুও তাদের কাছে অমূল্য। তাদেরকে দেখে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এগুলো কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়,’ বলেন ফ্রান্সিস। এক্ষেত্রে মানবিক আচরণের তাগিদ দিয়েছেন তিনি। তাছাড়া আপনার পরিবারে যদি প্রতিবন্ধী কোন সদস্য থাকেন তাহলে তাকে বাসার ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত করা খুব জরুরি বলে জানিয়েছেন মি. ফ্রান্সিস। তিনি তার ছেলেকে নিয়ে প্রায়ই সুপারশপে গিয়ে বাজার করতেন। আপনি তাদের সব কাজ করে দিলে তারা নিজেকে অপ্রয়োজনীয় বা নগণ্য মনে করতে পারেন। যাদের লার্নিং ডিজ্যাবিলিটি বা শিক্ষণ প্রতিবন্ধকতা আছে, তার মানে এই নয় যে মানুষটি আপনার কথা ভুলে যাবেন। ফ্রান্সিস বলেন, আমাদের ছেলে নীলের শিক্ষণ প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও তার স্মৃতিশক্তি ও রসিকতা জ্ঞান চমৎকার। তাই তাদের কথা দেওয়ার সময় চিন্তা করে দিন। মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী একজন কী বলতে চাইছে তা মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করুন। এটা ভেবে নেয়ার কোনও কারণ নেই যে ওনার নিজস্ব কোন মতামত বা চিন্তাধারা নেই। তাদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ধৈর্য রাখা ফ্রান্সিস বলেন, ‘আপনি তাকে যেটা বোঝাতে চান সেটা অনেক লম্বা সময় নিয়ে বলতে হবে বা করতে হবে। তাদের উত্তর শুনতে অপেক্ষা করুন। সময় দিন। ধৈর্য হারালে চলবে না।’ এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিজের মুখে বা ইশারা করে কথা বলতে দিন, পরামর্শ ফ্রান্সিসের। ‘তাদের উপস্থিতিতে তাদের হয়ে কথার উত্তর দেয়া বা তাদের সম্পর্কে বলাটা ঠিক নয়, যদি না আপনি তার দোভাষী হন।’ কারও কৃত্রিম হাত বা বাহু থাকলে তার সাথে করমর্দনের পরিবর্তে সালাম দিন বা হ্যালো বলুন। যদি তারা হাত বাড়িয়ে দেন। এক্ষেত্রে লজ্জিত না হয়ে আপনিও হাত বাড়িয়ে দিন। এ ছাড়া ভাষার ব্যবহারেও সংযত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। হাঁটতে চলতে পারেন না এমন ব্যক্তি সম্পর্কে বিকলাঙ্গ, ল্যাংড়া সেইসঙ্গে অন্ধ, বোবা কালা, অক্ষম, বামন, বেঁটে, তোতলা, পাগল, উন্মাদ, মাথা খারাপ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার মর্যাদাহানিকর। ফ্রান্সিস আরেকটি বিষয়ে খুব গুরুত্ব দিয়েছেন, সেটি হল অযথা ও অযাচিতভাবে কাউকে উপদেশ দেয়া উচিত হবে না। ‘পেশাগত কারণে দরকার হল আপনার মতামত জানাতে পারেন কিন্তু মনে রাখবেন, অযাচিতভাবে উপদেশ কেউই পছন্দ করে না।’ বাংলাদেশে কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের নানা কটূক্তির মুখে পড়তে হয়। তাদের যথাযথভাবে জানতে সঠিক আচরণ কোনটি সেটি জানা খুব প্রয়োজন বলে মনে করেন ফ্রান্সিস। এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ