আজকের শিরোনাম :

আফগান দোভাষী হিসেবে কাজ করে আমেরিকা গিয়ে হলেন বাস্তুহার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২১, ১১:৫১

কাবুলে তাদের বাসস্থান ছেড়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও তাদের ছোট তিন সন্তানকে নিয়ে জিয়া ঘাফুরি আমেরিকার মাটিতে পা রাখেন ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।

আফগানিস্তানে আমেরিকান বিশেষ বাহিনীতে দীর্ঘ ১৪ বছর দোভাষী হিসেবে কাজ করার পুরস্কার হিসেবে তাদের পাঁচজনের হাতে আমেরিকান ভিসা তুলে দেয়া হয়।

কিন্তু পুরস্কারের সেখানেই ইতি। আমেরিকায় পৌঁছানোর পর জিয়া সহায়সম্বলহীন বাস্তুহারা এক মানুষে পরিণত হন।

সহৃদয় এক স্বেচ্ছাসেবী তাকে একটা আশ্রয় শিবিরে পাঠিয়ে দেন। বলেন সেখানে তাকে ও তার পরিবারকে নতুন জীবন গড়ে তুলতে হবে।

সাত বছর পর সেই স্মৃতি এখনো তার ক্ষোভ উস্কে দেয়।

তিনি এখন থাকেন নর্থ ক্যারোলাইনায়। সেখান থেকে বিবিসিকে তিনি বলেন, তার মনে আছে সে সময় ছেলেমেয়েদের চোখের দিকে তাকাতে তার বুক ভেঙে যেত। তাদের আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্ষমা চাইতেন।

“আমি কান্না চাপতে পারতাম না,” তিনি বলেন। “দুই দেশের জন্য আমি জীবনে যা করেছিলাম, নিজেকে সবসময় প্রশ্ন করতাম ‘এই কি তার প্রতিদান’?”

তবে ৩৭ বছর বয়সী জিয়া ঘাফুরি বলেন, তার সহকর্মী যারা দোভাষী ছিলেন, তাদের মধ্যে তিনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন, কারণ শেষ পর্যন্ত তিনি আমেরিকায় পালাতে পেরেছিলেন।

পশ্চিমা বাহিনী যখন দেশ থেকে তালেবানকে উৎখাত করতে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করল, তখন থেকে আমেরিকান এবং মিত্র জোটের সৈন্যদের জন্য হাজার হাজার আফগান দোভাষী, ফিক্সার এবং তাদের গাইড হিসেবে কাজ করেছে।

যা শেষ পর্যন্ত আমেরিকার দীর্ঘতম লড়াইয়ে রূপ নেয় তা শুরু হওয়ার দুই দশক পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ বছর ১১ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সৈন্য প্রতাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন- এমনকি তার অর্থ যদি তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসা হয় তার পরেও।

দোভাষীদের বের করে আনার দীর্ঘ প্রক্রিয়া
বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দোভাষীদের গণহারে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে আনার কাজ শুরু হবে অগাস্ট মাসে। প্রথম দলটিতে রয়েছেন আড়াই হাজার দোভাষী। তাদের মধ্যে ২০০ আফগান শুক্রবার আমেরিকায় পৌঁছেছেন, যেখানে তাদের ভিসার আবেদন সম্পূর্ণ করে নতুন জীবন শুরু করতে হবে।

আমেরিকান সেনাবাহিনীতে দোভাষী হিসেবে কাজ করেছিলেন ৫০ হাজার আফগান।

তাদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৮ সাল থেকে ৭০ হাজার আফগান দোভাষী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আমেরিকায় বসবাসের জন্য বিশেষ অভিবাসন ভিসা দেয়া হয়েছে। এখনো দেশ থেকে বের হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে ২০ হাজার দোভাষী ও তাদের পরিবার।

এই ভিসা প্রক্রিয়া জটিল এবং দীর্ঘসূত্রতার বেড়াজালে আবদ্ধ। পাশাপাশি রয়েছে আমেরিকান সৈন্যরা ২০ বছরের যুদ্ধ শেষে আফগানিস্তান ত্যাগ করার পর দেশের ভেতর তালেবানের দ্রুত অগ্রযাত্রা।

আমেরিকানদের সাথে কাজ করার কারণে এই দোভাষীরা চিহ্ণিত হয়ে গেছেন এবং তাদের জীবন গুরুতর ঝুঁকির মুখে। ২০০৯ সাল থেকে আমেরিকান ভিসার অপেক্ষায় থাকা আনুমানিক ৩০০ দোভাষী মারা গেছেন।

ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া এত জটিল ও দীর্ঘ হওয়ায় ক্ষুব্ধ জিয়া।

“এই দোভাষীরা আমেরিকা আর আফগানিস্তান- এই দুই দেশকে সাহায্য করতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। এখন তারা তাদের ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে রেখেছে- ওরা ওখানে মরলে মরুক,” তিনি বলেন।

ভাইদের সাথে হাত মিলিয়ে কাজ
জিয়া ঘাফুরি আমেরিকান সেনাবাহিনীতে দোভাষী হিসেবে যোগ দেন ২০০২ সালে। তখন তার বয়স ছিল ১৮। সেটিই ছিল তার প্রথম পূর্ণকালীন চাকরি।

জিয়া বলেছেন, দোভাষী হিসেবে যোগ দেবার ছয় বছর আগে তালেবান যখন দেশটিতে ক্ষমতায় আসে তখন তিনি মায়ের কাছে যে অঙ্গীকার করেছিলেন এটি ছিল সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের সুযোগ।

জিয়া ঘাফুরি তখন ছিলেন স্কুলের ছাত্র। তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর তার লাগাম ছাড়া শৈশবের ইতি ঘটেছিল। তারা সাত ভাইবোন মিলে যে নিয়ন্ত্রণহীন জীবন কাটাতেন, তালেবান ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তা শেষ হয়ে যায়। তাদের জীবন বাধা পড়ে কঠোর ইসলামি শাসনের ঘেরাটোপে। কোনোরকম বিচ্যুতি ঘটলে পথেঘাটে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মারধর ও নিগ্রহের শিকার হওয়া, তাদের পারিবারিক জীবনেও আশ্চর্যরকম একটা স্তব্ধতা নেমে আসা, তার বোনেদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।

তার বড় ভাইয়ের বয়স তখন বিশের কোঠায়। জিয়া বলেছেন তখন তালেবানবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল যে পাঞ্জশির উপত্যকা, সেই এলাকার ভাষায় কথা বলার জন্য তার ভাইকে প্রহার করে জেলে ভরা হয়।

মারের চোটে তার পা এতটা ফুলে গিয়েছিল যে তিনি পায়ে জুতো পরতে পারতেন না, হাঁটতে পারতেন না, বলছিলেন জিয়া।

কয়েকদিনের মধ্যে তার বাবা-মা সিদ্ধান্ত নেন তারা আফগানিস্তানে আর থাকবেন না। কাবুল ছেড়ে তারা পালিয়ে যান পাকিস্তানের পেশাওয়ারে।

“আমি মাকে বলেছিলাম, আমি যখন বড় হব, আমি এদের বিরুদ্ধে লড়ব,” তালেবানকে ইঙ্গিত করে তিনি এ কথা বলেছিলেন।

পেশাওয়ারের স্কুলে জিয়া ইংরেজি শেখেন। তার পরিবার পাকিস্তানে ছিলেন ২০০১ সাল পর্যন্ত। তখন আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হামলা শুরু করেছে।

“আমি যখন ফিরে আসি, তখন আফগানিস্তানে একটা স্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠা পেতে শুরু করেছে,” জিয়া ঘাফুরি বলেন। “আমি আশাবাদী হয়ে উঠলাম।”

তিনি আফগানিস্তানে আবার জীবন শুরু করলেন, বিয়ে করলেন এবং স্থানীয় স্কুলে ইংরেজি পড়াতে শুরু করলেন। কয়েক মাসের মধ্যে এক বন্ধু তাকে জানাল, আমেরিকানরা দোভাষী খুঁজছে।

বন্ধুর সাথে পরদিনই তিনি কাবুলে তাদের ঘাঁটিতে হাজির হলেন। কাজ চাইলেন।

“তারা ইংরেজি জানা লোকেদের কাজে নিচ্ছিল। শুধু ইংরেজি জানাটাই ছিল যোগ্যতা। আমি বলেছিলাম সামরিক শব্দগুলো আমি জানি না। ওরা বলেছিল কোনো সমস্যা নেই।”

কাজ তার খুব ভালো লাগত। যদিও সৈন্যদের সাথে লম্বা সময় ট্যুরে কাটাতে হতো ঘর-সংসার থেকে অনেক দূরে। রণাঙ্গনে কাজ করার ঝুঁকিও ছিল।

স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা বলেছিলেন এই কাজ ছেড়ে দিতে। তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন আমেরিকান সশস্ত্র বাহিনীর ‘ভাই’দের সাথে হাত মিলিয়ে তিনি কাজ করতে চান। আমেরিকানরা তার নাম দিয়েছিল ‘বুইয়া’।

‘আমরা ছিলাম সৈন্যদের চোখ আর জিহ্বা,’ জিয়া জানান।

তিনি ২০০৮ সালে শোক উপত্যকার লড়াইয়ে মার্কিন বাহিনীর সাথে ছিলেন। ছয় ঘণ্টার তুমুল লড়াই শুরু হবার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু আরেকজন দোভাষী মারা যায়।

শোক উপত্যকার ওই লড়াইয়ে জিয়া ঘাফুরি আহত হয়েছিলেন। তাকে সাহসিকতার জন্য পার্পল হার্ট নামে খেতাব দেয়া হয়, তিনি আমেরিকায় যাওয়ার পর। তার শরীরের ভেতর এখনো বোমার টুকরো রয়ে গেছে, তিনি জানান।

মার্কিন কংগ্রেসে ২০০৮ সালে প্রণীত নতুন অভিবাসন ভিসা ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে আমেরিকায় চলে যাবার জন্য ভিসার আবেদন করেন জিয়া ঘাফুরি। নিজেদের জীবন বিপন্ন করে আফগানিস্তান ও ইরাকে আমেরিকান সৈন্যদের সাথে যেসব দোভাষী কাজ করেছেন তাদের জন্য এই ভিসা চালু করে আমেরিকা।

ঘাফুরির ভিসা পেতে লেগেছিল ছয় বছর।

তিনি বলেন, এই গোটা প্রক্রিয়াটি ছিল তার ভাষায় ‘জঘন্য’। তিনি বলেন এই দীর্ঘ সময় লাগার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা নেই।

“আমাদের সম্পর্কে সব তথ্য আমেরিকানদের তথ্য ভাণ্ডারে ছিল। পররাষ্ট্র দপ্তর আমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিল। কাজেই কেন এর জন্য এত সময় লাগবে তা ব্যাখ্যার অতীত।”

আশ্রয় শিবিরে মাথা গোঁজা
ঘাফুরিকে ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে এক ইমেলের মাধ্যমে জানানো হয় তার ভিসা অনুমোদনের খবর। তিনি তখন নানগারহার প্রদেশের জালালাবাদে দায়িত্বরত ছিলেন।

তিনি বলছেন, তার একটা ‘অদ্ভুত’ অনুভূতি হয়েছিল। আফগানিস্তানে সবকিছু ফেলে চলে যেতে তিনি ভয় পেয়েছিলেন। ‘সেখানে আমার গড়া জীবনের কিছুই তো সঙ্গে নিয়ে যেতে পারব না।’

তবে তালেবানের কাছ থেকে নিয়মিত হুমকি আসার পর তিনি দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত পাকাপাকি করেন। তাদের পরিবারের সদস্যরা ‘রাতে পাঠানো চিঠি’ পেতে শুরু করে। হাতে লেখা এসব চিঠিতে মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে তাকে সহযোগিতা বন্ধ করার জন্য হুমকি দেয়া হতো।

ভিসা অনুমোদন হবার তিন মাস পর জিয়া ঘাফুরি তার পরিবার নিয়ে বিমানে ওঠেন- গিয়ে পৌঁছন আমেরিকার টেনেসি অঙ্গরাজ্যের ন্যাশভিলে।

সেখানে নামার পর তাদের সাহায্য করার জন্য কোন ব্যবস্থাই ছিল না। কেউ ছিল না তাদের স্বাগত জানাতে।

তিনি বলেন, সব কিছু এত অপরিচিত যে আমি দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম।

ভাড়ার ট্যাক্সি নিয়ে তিনি চললেন ভার্জিনিয়ার মানাসাসে। তিনি শুনেছিলেন সেখানে অনেক আফগান থাকেন। সেখানে গিয়ে একটা হোটেলে উঠলেন পরিবার নিয়ে। যারা বিশেষ ভিসায় সেখানে গেছেন তাদের জন্য কী ব্যবস্থা রয়েছে সে বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বিভিন্ন সংস্থার সাথে যোগাযোগ শুরু করলেন।

কয়েক সপ্তাহ পর একজন স্বেচ্ছাসেবী তার সাথে যোগাযোগ করলেন, বললেন তার থাকার জায়গার সন্ধান তিনি পেয়েছেন।

“ওই স্বেচ্ছাসেবী নারী আমাকে গৃহহীনদের একটি আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যান,” জিয়া বলেন। “আমি চারপাশে এক নজর দেখে বলি আমার সন্তানরা এখানে কীভাবে বড় হবে!”

তাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিল না। দেশটির কর্তৃপক্ষ আমেরিকার মাটিতে তাদের নতুন করে জীবন গড়ে তোলার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা নিয়ে জিয়ার স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে যায়। তার সন্তানরা তখন খুবই ছোট -কিছু বোঝার বয়স তাদের হয়নি। তারা ভয় পেয়েছিল, বিভ্রান্ত ছিল।

প্রত্যেকদিন তারা জিয়া ঘাফুরিকে জিজ্ঞেস করত আফগানিস্তানে ফেলে আসা পরিবার পরিজন আর বন্ধুদের কথা। প্রশ্ন করত কবে তারা আবার বাড়ি ফিরে যাবে।

‘এটা তোমার বাসা’
হতাশ জিয়া নিরুপায় হয়ে তার সাবেক ক্যাপ্টেনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলেন এবং বললেন তাকে কোথায়, কীভাবে রাখা হয়েছে।

“শুনে তিনি ভীষণ বিরক্ত হলেন,” জিয়া ঘাফুরি বলেন। কয়েক দিন পর সাবেক ওই ক্যাপ্টেন ভার্জিনিয়াতে এলেন, জিয়া এবং তার পরিবারকে নিজের গাড়ি করে নর্থ ক্যারোলাইনাতে তার নিজের বাসায় নিয়ে গেলেন।

“তিনি আমাকে বললেন, ‘এটা তোমার বাসা;,” জিয়া বললেন। “তুমি এখানে যতদিন চাও থাকতে পার।”

“আমি তার এই সহৃদয়তার কথা কখনও ভুলব না।”

জিয়া শেষ পর্যন্ত তার পরিবার নিয়ে শার্লটে নিজের একটা অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে উঠতে পেরেছেন। সেখানে নির্মাণ শিল্পের শ্রমিক হিসেবে তাকে কাজ করতে হয়েছে। পরে একটি মুদির দোকানে কাজ নিয়েছেন।

আফগানিস্তানে তার সহকর্মীদের মুখে নর্থ ক্যারোলাইনার নাম তিনি কখনও শোনেননি। শুনেছেন নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি আর লাস ভেগাসের গল্প।

তবে তার নিজের জীবনের নিরাপত্তা, তার সন্তানদের নিরাপদে স্কুলে যাতায়াত করতে পারা এবং তার স্ত্রীর বাইরে বের হওয়া ও কাজ করার স্বাধীনতা তার কাছে বড় প্রাপ্তি।

তার চার সন্তানই এখন ভালো ইংরেজি বলতে পারে। গত বছর জিয়া ঘাফুরি, তার স্ত্রী ও তার বড় তিন সন্তান আমেরিকান নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তার সর্বকনিষ্ঠ ছেলের বয়স ছয়, তার জন্ম হয়েছে আমেরিকায়।

বছর দুয়েক আগে জিয়া তার পরিবার নিয়ে এক কানা গলিতে ছোটখাট একটা বাসাবাড়িতে উঠে গেছেন।

‘কিছুই তো বদলায়নি’
জিয়া ঘাফুরি বলছেন তার মতো হাজার হাজার যেসব দোভাষী এখনো আফগানিস্তানে পড়ে আছে, তাদের জন্য পরিস্থিতি বদলায়নি।

তিনি ২০১৯ সালে ইন্টারপ্রেটিং ফ্রিডম ফাউন্ডেশান নামে একটি সহায়তা সংস্থা গড়ে তুলেছেন। তার মত যেসব দোভাষীর জীবন আফগানিস্তানে বিপন্ন, যারা আমেরিকায় ভিসাপ্রত্যাশী তাদের তিনি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সাহায্য করছেন।

তাদের বেশিরভাগই জটিল আমলাতান্ত্রিক বেড়াজালে আটকে পড়েছেন। বছরের পর বছর অপেক্ষায় তাদের মনোবল ভেঙে পড়ছে।

আরেক ধাপ জটিলতা হলো, শুধু কাবুলের দোভাষীদের সরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরর অর্থ হলো, রাজধানীর বাইরে যারা রয়ে গেছেন সেসব এলাকা দ্রুত তালেবানের দখলে চলে যাওয়ায় তাদের জীবনের ঝুঁকি ক্রমশই বাড়ছে।

এপ্রিল মাসে আমেরিকা সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেবার পর থেকে তালেবান নিয়ন্ত্রিত জেলাগুলোর সংখ্যা ৭২ থেকে বেড়ে ২২১-এ দাঁড়িয়েছে বলে জানাচ্ছে ওয়াশিংটন ভিত্তিক সংস্থা ফাউন্ডেশান ফর দ্য ডিফেন্স অব ডেমোক্রাসি।

যেসব প্রদেশের তালেবানের দখলে চলে যাবার বড়রকম সম্ভাবনা রয়েছে, যেমন কান্দাহার এবং হেলমান্দ, সেখানে থাকত হাজার হাজার মার্কিন সৈন্য এবং তাদের দোভাষীরা। এই দোভাষীদের এখন ধরা পড়ার এবং মৃত্যুর প্রবল ঝুঁকি রয়েছে।

দোভাষীদের “প্রাণের বিরাট ঝুঁকি” রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মাইক জ্যাকসন। “কয়েক দশক ধরে আমাদের দোভাষীদের হত্যা করা হয়েছে।”

“যারা পড়ে আছে তাদের জন্য দেশ থেকে বেরন কতটা সহজ হবে সেটাও একটা বড় প্রশ্ন,” তিনি বলছেন।

আমেরিকার পররাষ্ট্র দপ্তর গোটা প্রক্রিয়া তরান্বিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতিও অনেক সাবেক সৈন্য ও দোভাষীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করেছে।

“আমরা যে একদিন চলে যাব এটা তো কোন বিস্ময়কর ব্যাপার নয়। এটা হঠাৎ করে ঘটেনি। আমাদের সময় থাকতে ঠিকমত পরিকল্পনা নেয়া উচিত ছিল। এখন এমন আচরণ দেখানো হচ্ছে যেন একটা আপদকালীন পরিস্থিতির মধ্যে আমরা পড়ে গেছি,” বলছেন আফগানিস্তানে দীর্ঘদিন মোতায়েন আমেরিকান সেনা জো কাসাবিয়ান।

জিয়া ঘাফুরির মতে এটা নিছক এক সময়ের স্থানীয় সহকর্মীদের ফেলে দেয়া।

“কিছুই তো বদলায়নি,” বলছেন তিনি। তালেবান তো তাদের মতাদর্শ বদলায়নি, তাদের প্রশাসনিক ধরন পাল্টায়নি।

আমেরিকানরা এখন সবকিছু গুটিয়ে নিয়ে তাদের সৈন্যদের ঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছে, তিনি বলছেন।

“আমাদের ব্যাপারে তার হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছেন,” বলছেন জিয়া ঘাফুরি।
খবর বিবিসি বাংলা

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ