আজকের শিরোনাম :

করোনা ও টিকা

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের মতবিনিময়

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২১, ১৭:৫৪ | আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২১, ১৯:৪৪

গতকাল ২৪ জুলাই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞদের সাথে বাংলাদেশ সরকারের নিযুক্ত করোনা  বিশেষজ্ঞ এবং পরামর্শক কমিটির প্রতিনিধিদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে অনলাইন জুমে। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কয়েকটি সংগঠক মিলে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন যাদের  মধ্যে অন্যতম ছিলেন অধ্যাপক ড. মিল্টন হাসনাত, নোমান শামীম, সেলিমা বেগম, মোঃ শফিকুল আলম। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন নোমান শামীম, সার্বিক সহায়তায় আবু তারিক । 

অস্ট্রেলিয়া সরকার করোনা ভাইরাস রোধকল্পে আগাম ভ্যাকসিন নিশ্চিত  করতে Commonwealth Serum Laboratories(CSL ) মেলবোর্নের সাথে গত ১৬ ফেব্রুয়ারী এক চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তিবলে অস্ট্রেলিয়া অক্সফোর্ড  এস্ট্রোজেনিকা ৫৩.৮ মিলিয়ন ডোজেজ নিশ্চিত করে। এর মধ্যে মধ্যে ৩.৮ মিলিয়ন আসে অস্ট্রেলিয়ার বাইরের থেকে; আর বাকি ৫০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ায় তৈরী হবে। অস্ট্রেলিয়া সরকার  মোট কত ডলারের চুক্তি করেছিল তা’ নিশ্চিত না করলেও এক বিলিয়ন ডলার CSL অস্ট্রেলিয়াকে দেয়া হয়েছে। 

অ্যাস্ট্রাজেনেকা ডোজ দেয়ার পরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়  (ব্লাড ক্লট) চার জনের মৃত্যুর পরে অস্ট্রেলিয়া সরকার পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে  সবার জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন দেয়ার সিদ্ধান্তে চিন্তিত হয়ে পড়ে । অন্যদিকে  The Australian Technical Advisory Group on Immunisation(ATAGI ) বয়স নির্ধারণ করে দেয় এস্ট্রোজেনিকা ভ্যাকসিন (৬০ বছর এবং ততোর্ধ) দেয়ার ক্ষেত্রে এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের পরিবর্তে  ফাইজারকে (৬০ বছরের নীচে) নিরাপদ ভ্যাকসিন হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়। এর  সাথে যুক্ত হয় অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের  পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের  প্রচার।  এর পরই অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে ভীতি  চলে আসে এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন দেয়ার পরিমান কমতে থাকে।  অস্ট্রেলিয়া সরকার সবার  জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে ফাইজার ভ্যাকসিন আমদানির উপর জোর  দেয়।  অন্যদিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার মিলিয়নস ডোজেজ ভ্যাকসিন  অকেজো হবার আশঙ্কা দেখা দেয়। 

প্রবাসী ডাক্তার ড. মিল্টন হাসনাৎ বলেন , "বাংলাদেশ সরকারকে অস্ট্রেলিয়ার অব্যবহৃত অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য অস্ট্রেলিয়াতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস লবি শুরু করে অস্ট্রেলিয়া সরকারের সাথে এবং বিভিন্ন সংগঠনের সাহায্য চেয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস একটি পিটিশন স্বাক্ষর করার উদ্যোগ নেয়। এই পিটিশন করতে মোট ১০,০০০ স্বাক্ষরের প্রয়োজন কিন্তু এখন পর্যন্ত ২৬০০ স্বাক্ষর সংগৃহীত হয়েছে।" “১০ হাজার লোকের স্বাক্ষরিত পিটিশন সংসদে স্পীকার আলোচনার জন্য উপস্থাপন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত উৎপাদিত এবং অব্যবহৃত এস্ট্রেজেনিকা ভ্যাকসিনের একটা অংশ বাংলাদেশ পেতে পারে হয় ক্রয়সূত্রে বা উপহার হিসেবে।”

বাংলাদেশ সরকারের করোনা বিশেষজ্ঞ এবং পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের সভাপতি ডাঃ এম ইকবাল আর্সালান এই আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের টিকা নিয়ে অবস্থান পরিস্কার করেন প্রবাসী অস্ট্রেলিয়ার আয়োজকদের। তিনি বলেন, "বাংলাদেশ সরকার বিদেশী উপহারের জন্য বসে নেই, বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীর সবকটি টিকা প্রস্তুতকারক দেশের সাথে কথা বলেছেন এবং টিকা কিনছেন।  দেশের ১৭ কোটি লোকজনের জন্য টিকা সরবরাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং প্রতি  সপ্তাহে টিকা আসছে। 

এই পর্যন্ত এক কোটি লোককে ভ্যাকসিনের আওতায় আনায়ন করা  হয়েছে যার মধ্যে ডাবল ডোস দেয়া হয়েছে ৪২ লক্ষ মানুষকে। এছাড়াও সরকার ৩ কোটি সিনোভ্যাক চীন থেকে , ৭ কোটি মডার্না আমেরিকা থেকে , রাশিয়া  থেকে ১ কোটি স্পুটনিক ভ্যাকসিন ,৩ কোটি অ্যাস্ট্রাজেনেকা সিএসএল থেকে,  এবং ৭ কোটি ভ্যাকসিন জনসন অ্যান্ড জনসন থেকে নিশ্চিত করেছেন। আমার অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীদের কাছে বাংলাদেশ সরকারের হয়ে বিশেষ অনুরোধ, আপনারা আপনাদের সরকারের সাথে লবি করেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা যেন বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করে কারণ বাংলাদেশের আবহাওয়া ও টিকা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করাটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেটা এস্ট্রোজেনিকার ক্ষেত্রে সহজ। কে কি করলেন সেদিকে প্রচার না করে যদি টার্গেট ফুলফিল করতে পারেন লবি করে সেটাই হবে দেশের জন্য সবচেয়ে বড় উপকার। "

বাংলাদেশ থেকে এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম ও সাপ্তাহিক বাংলাবিচিত্রা'র সম্পাদক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায় বলেন,"গত ফেব্রুয়ারি থেকেই বাংলাদেশ সরকার টিকা দেয়ার কর্মসূচি খুবই কম মূল্যে নিশ্চিত করেছিল ভারত থেকে , যদি ভারতের পরিস্থিতি খারাপ না হতো, তাহলে আমাদের ভ্যাকসিনেশন রেট অনেক এগিয়ে যেতো। সরকার একই সাথে ভ্যাকসিন যোগান দেবার চেষ্টা করছে এবং মানুষের খাবার দাবারও নিশ্চিত করছে।  দেশের কোন মানুষ না খেয়ে মারা যায়নি। তাই আমরা যেনো সরকারের বিপক্ষে নানাভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করি। "

ক্যাম্পবেলটাউন মাল্টিকালটারাল সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারী শফিকুল আলম বলেন," আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে করোনা মোকাবেলায় সাহায্য করতে অস্ট্রেলিয়ার অনুদানের চেয়ে আমরা চেষ্টা করছি অস্ট্রেলিয়ার সরকার থেকে বেঁচে যাওয়া টিকা লবিং করে বেশী মাত্রায় দেশকে কিনে দেওয়া যায় কিনা তার জন্য!"

কলামিস্ট ও লেখক অজয় দাশগুপ্ত বলেন," উন্নত দেশ অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে লকডাউনবিরোধী মিছিলে আমরা লজ্জিত বোধ করছি , অন্তত বাংলাদেশে সেটা হয়নি, যার অর্থ দাঁড়ায় বাংলাদেশের মানুষ অন্তত সীমার মধ্যেই বেঁচে আছে। "

মেলবোর্নের আরএমআইটি র অধ্যাপক ড. শামস রহমান বলেন ," বিভিন্ন সংগঠক নানাভাবে দেশকে সাহায্য করছে এটা সত্যি কিন্তু আমরা যদি কোনো বিভক্ত হয়ে যাই , দেশ সাহায্য থেকে বঞ্চিত হবে। আমাদেরকে সুসংগঠিত থেকেই কাজ করতে হবে। "

সিডনি বাঙালি কমিউনিটির সাধারণ সম্পাদক সেলিমা বেগম বলেন," অনলাইন পিটিশন ছাড়াও এস্ট্রোজেনিকা ভ্যাকসিন পাওয়ার ব্যাপারে আমরা লেবার পার্টির সিনেটরদের সাথে লবি করছি এবং একই সাথে যারা লিবারেল পার্টির (ক্ষমতাসীন) সাথে আছেন তাদের সম্পৃক্ত রেখে কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি । এছাড়াও  আমরা লাইভ প্রোগ্রামের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করে একটি সংস্থার মাধ্যমে  দেশে দুস্থ করোনা রোগীদের মাঝে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা  করেছি । "

এছাড়াও জুম্ মিটিং এ আলোচনায় অংশ নেন অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ডঃ মীর জাহান মাজু, আবুল সরকার, আবু আরেফিন, নেহাল নেয়ামুল বারী,ডঃ শাখাওয়াৎ নয়ন,  ডঃ মাকসেদুল বারী,  একেএম শফিকুল আলম, মাকসুদুর রহমান চৌধুরী সুমন, আতিক হেলাল, মোঃ রহমতুল্লাহ,সাকিনা আক্তার, কাউন্সিলর নাজমুল হুদা, সুরজিৎ রায়, ডাঃ লাভলী রহমান, সাবেক কাউন্সিলর প্রবীর মৈত্র, ডঃ খায়রুল চৌধুরী, আব্দুল জলিল, শাহ আলম, ইকবাল ইউসুফ, ব্যারিস্টার নির্মল্য তালুকদার, ইকবাল ইউসুফ , ডঃ ওয়ালী রহমান ,  ফয়সাল মতিন ,  অপু সারোয়ার, মহীউদ্দিন কাদির, শাহীন শাহনেওয়াজ, মুনীর হোসেইন, এলিজা আজাদ, এবং আরও অনেকে। 

সার্বিক আলোচনায় সবারই একটি কথা ছিল , প্রাণের মাতৃভূমির বিপদে পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমাদেরকে অস্ট্রেলিয়ার সরকারের সাথে পিটিশনের মাধ্যমে স্বাক্ষর সংগ্রহের জন্য সহায়তা করে এবং লবিং করে এস্ট্রোজেনিকা ভ্যাকসিন ক্রয় করার জন্য কাজ করতে হবে যাতে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পরিমানে ভ্যাকসিন পায়। এছাড়াও বাংলাদেশের করোনা ভিক্টিমদের অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করে যথাযথ কতৃপক্ষের মাধ্যমে সাহায্যের জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে কিছু উদ্যোগ দ্রুত গ্রহণ করা যেতে পারে বলে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে করোনা রোধে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং করোনা সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে কি ধরণের সতর্কতা অস্ট্রেলিয়াতে নেয়া হয়েছে এবং এখানকার মানুষ সেটা কিভাবে অনুসরন করে লাভবান হচ্ছে সে ব্যাপারে প্রত্যেকে তাদের আত্মীয় পরিজন, বন্ধুবান্ধবকে বলে সচেতন করতে পারেন।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ