আজকের শিরোনাম :

গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি কেন দেব, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৩৬ | আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:০৩

ছবি : ফোকাস বাংলা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় ১২ টাকা, আর সেখানে আমরা নিচ্ছি মাত্র ৬ টাকা। তাতেই আমরা অনেক চিৎকার শুনি। অথচ যুক্তরাজ্যে বিদ্যুতের দাম ১৫০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। আমরা কিন্তু এখনো সে পর্যায়ে যায়নি। তবে আমি আবারও বলবো গ্যাস, বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেয়া যাবে যদি ক্রয় মূল্য যা হয় সেটি দেয়। তাছাড়া আর কত ভর্তুকি দেয়া যায়। আর এই ক্ষেত্রে কেন ভর্তুকি দেব? ভর্তুকি দিচ্ছি আমরা কৃষিতে, খাদ্য উৎপাদনে।

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভর্তুকি দিচ্ছি আমরা কৃষিতে, খাদ্য উৎপাদনে ও করোনাভাইরাসের সময় আমরা বিশেষ প্রণোদনা দেই। যাতে ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্প কারখানা চালু থাকে। প্রণোদনা দেওয়ার ফলেই আমাদের অর্থনীতির গতিটা সচল ছিল। এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেই কিন্তু আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

সরকার প্রধান বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা। আজকে আমাদের সেই অবস্থাই চলতে হবে। তারপরও আমাদের গতি থেমে থাকেনি। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের ব্যবসায়ীদের অবদান রয়েছে। বাংলাদেশ এখন ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। স্বাধীনতার পরে অনেকে এটা ভাবতেই পারেনি বাংলাদেশ এখানে আসতে পারে। এটা মাথায় রাখতে হবে মাত্র ১৪ বছরেই আমরা এই অর্জন সম্ভব করেছি।

মূল্যস্ফীতি বেড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রয়ক্ষমতা বাড়লে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত সহজ হয়ে যায়। নিজেদের বাজার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেটা করেছি।

গত ১৪ বছরে দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খুব শান্তিপূর্ণভাবে আপনারা ব্যবসা করেন। এখন আর ওই হাওয়া ভবনে ‘পাওয়া’ দিতে হয় না। কোনো কিছুই করতে হয় না। নিজেরা যাতে শান্তিতে ব্যবসা করতে পারেন সেই পরিবেশ আমরা তৈরি করে দিচ্ছি।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ পারে, বাঙালি পারে। একটা চ্যালেঞ্জ ছিল পদ্মাসেতু নিয়ে। দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল আমাদের ওপর। আমি চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম। কিন্তু তারা (অভিযোগকারীরা) প্রমাণ করতে পারেনি, কানাডার ফেডারেল কোর্ট বলেছে সব অভিযোগ ভুয়া। আমি বলেছি নিজেদের অর্থে পদ্মাসেতু করবো। এটা ছিল কঠিন সিদ্ধান্ত। কারও কাছ থেকে সমর্থন পাওয়া যাচ্ছিলো না। কিন্তু আমার সমর্থন হলো আমার জনগণ। তারা পাশে দাঁড়িয়েছিল।

পদ্মাসেতু তৈরিতে দেশের জনগণের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা বিশ্বাস করবেনই না, তখন অনেকেই চেক পাঠিয়েছে, টাকা পাঠিয়েছে। আমাকে বলেছে, আপনি পদ্মাসেতু করেন, আমরা আছি আপনার পাশে। আমি সেই চেক ভাঙাইনি, রেখে দিয়েছি। বলেছিলাম করবো। আমরা পদ্মাসেতু করেছি। একটা সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ পৃথিবীর ৩৫তম বড় অর্থনীতির দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর অনেকেই এটা ভাবতেই পারেনি যে, বাংলাদেশ এখানে আসতে পারবে। মাত্র ১৪ বছরে আমরা এ অর্জন সম্ভব করেছি। প্রবৃদ্ধি আট ভাগ পর্যন্ত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। করোনার কারণে এটা অনেকটা বাধাগ্রস্ত হয়। এরপর আরেকটা উৎপাত হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞা। ফলে উন্নত দেশগুলো আজকে অর্থনীতি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। মূল্যস্ফীতিও অত্যধিক বেড়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমারা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত করতে চেয়েছিলাম। অত্যন্ত সফলভাবে সেটা আমরা করতে পেরেছি। 
 

তিনি বলেন, আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি। আমরা বিদেশি বিনিয়োগ চাই, তার সঙ্গে সঙ্গে চাই যে, আমাদের দেশের যুব সমাজ নিজেরাই বিনিয়োগকারী হবে। আমাদের যুব সমাজের জন্য স্টার্টআপ প্রোগ্রাম করে দিয়েছি। সেজন্য আলাদা বাজেটও আছে। কোম্পানি আইন পরিবর্তন করে এক ব্যক্তি কোম্পানি করতে পারে সেই ব্যবস্থাটাও আমরা নিয়েছি। যাতে করে আমাদের নিজেদের ছেলেমেয়েরা উঠে আসতে পারে। 

বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে ৪৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রেখে গিয়েছিলাম। ২০০৯ সালে এসে দেখলাম সেটা কমে ৩০০০ মেগাওয়াটের দিকে নেমে গেছে। আমি জানি না কোনো দেশ পেছনের দিকে যায় কি না। আজকে দেশে শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের প্রত্যক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেব, আমরা পৌঁছে দিয়েছি। 

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, জেনারেটরের ওপর যে ট্যাক্স ছিল, সেটা আমরা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলাম। প্রতিটি ছোট কোম্পানি যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে সে ব্যবস্থাও করেছিলাম, যাতে নিজেরা উৎপাদন করে নিজেরা ব্যবহার করে, আবার অন্যদের দিতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে ভালোভাবে চলে, বিনিয়োগ আসে সেই চেষ্টা আমরা করি।

সরকারপ্রধান বলেন, করোনা মহামারি বিশ্বজুড়ে খাদ্য উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তাকে নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে। খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করেছি, আসলে এটা আগে ছিল বিনিয়োগ বোর্ড। মৎস্য ভবনের একটা ফ্লোরে এর কার্যক্রম চলতো। আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে চাই। বিদেশিরা যখন আসবে, দেখবে বা বিনিয়োগ করবে... আসলে ভালোভাবে দেখলে ভালো বিনিয়োগ হবে, না দেখলে হবে না।

বিনিয়োগ ভবন নির্মাণের পেছনের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা আলাদা একটি সুন্দর ভবন করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেখানে যারা কাজ করবেন তারা যেন শান্তিতে কাজ করতে পারেন, কাজের একটা সুন্দর পরিবেশ হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যারা আসবেন, তারাও যেন এখানে কাজ করতে পারেন।

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করতে এক একর জমির ওপর ১৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ তলা বিশিষ্ট বিডা ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবনটিতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেজা এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা এনএসডিএ প্রধান কার্যালয়ও পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিডার চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অধিকতর বিনিয়োগ সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে বিনিয়োগ সংক্রান্ত তিন কর্তৃপক্ষের অফিস একই ভবনে স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) ভবনে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডি) অফিস রয়েছে।
 

 

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ