আওয়ামী লীগ সব সময় শান্তির কথা বলেছে
সুভাষ সিংহ রায়
১৩ নভেম্বর ২০২৩, ১৩:৫১ | অনলাইন সংস্করণ
আওয়ামী লীগ জন্মসূত্রে পাওয়া সংগ্রামী চেতনা থেকে কখনই বিচ্যুত হয়নি। বিগত ৭৪ বছর এ দলটি জনপদের মানুষের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছে। মানুষকে সম্পৃক্ত করেই পথ চলেছে। আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা-কর্মী-সমর্থক দেশের ও দলের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছে। সুযোগ পেলেই আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির এবং শেখ হাসিনার সাথের খালেদা জিয়ার তুলনা করা হয়। জাতির দুভার্গ্য আওয়ামী লীগকে এখন একটি অরাজনৈতিক জোট ও দলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে। সিপিবি, ন্যাপ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ হাতেগোনা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস আছে। কিন্তু সেই বাম গণতান্ত্রিক দলগুলো আকারে অনেক ছোট হয়ে এসেছে। মোদ্দাকথা এদেশে বাম গণতান্ত্রিক রাজনীতির দলের ব্যর্থতার কারণে রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবস্থান অনেকখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিখ্যাত ‘টাইম’ সাময়িকী ২ নভেম্বর ২০২৩, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে কভার স্টোরি প্রকাশ করেছে। চার্লি ক্যাম্পবেলের নামে প্রকাশিত লেখার শিরোনাম ‘শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ (Sheikh Hasina and the Future of Democracy in Bangladesh)। মূল লেখার ভেতরেই রয়েছে আরেকটি শিরোনাম- ‘Hard Power : Prime Minister Sheikh Hasina and the Fate of Democracy in Bangladesh’. দীর্ঘ নিবন্ধ শেষ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার উক্তি দিয়ে এভাবে : “আমাকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরানো সহজ নয়। একমাত্র বিকল্প হচ্ছে আমাকে নিশ্চিহ্ন করা। এবং আমি আমার জনগণের জন্য মরতে প্রস্তুত।” কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মীমাংসা না হলে অর্থাৎ কিছু বিষয়ে দুই পক্ষের ঐকমত্য তৈরি না হলে সংকট কীভাবে দূর হবে? বিএনপি ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধুর মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে কি না (তারেক রহমান যেভাবে বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলেন, তাতে এ বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে)। বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন ১৫ আগস্ট পালিত হতে থাকবে কি না? বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে কি না? কেননা শেখ হাসিনার কমিউিনিটি ক্লিনিক বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে বাতিল করে দিয়েছিল। ২০০০ সালে শিক্ষকদের কম্পিউটার শিক্ষার জন্য নেদারল্যান্ডস সরকারের সাথে যে আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়েছিল, তা বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে বাতিল করা হয়েছিল। একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো প্রতিশোধ-পরায়ণতার রাজনীতি আবারও হবে কি না ইত্যাদি বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য তো স্পষ্ট করা উচিত। এসব বিষয়ের নিষ্পত্তি না হলে স্থায়ী শান্তি কখনোই আসতে পারে না।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে যে অপশক্তি বাংলাদেশের ক্ষমতা গ্রহণ করে, তারা গণতন্ত্রকে বিদায় দেয়। সংবাদপত্র, বেতার-টেলিভিশনের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে। বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি ‘জয় বাংলা’ উচ্চারণ করা যাবে না। শেখ মুজিবের আদর্শ প্রচারের তো প্রশ্নই আসে না, নাম নেওয়াও যাবে না। খন্দকার মোশতাক আহমদ, জিয়াউর রহমান, এইচএম এরশাদ- সবার দুঃশাসনের আমলের একই চিত্র। খন্দকার মোশতাক আহমদ বঙ্গবন্ধু-হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধ রাখার জন্য কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। জিয়াউর রহমান এবং তার দল বিএনপি এ অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করেছিল। এমন অপরাধ যারা করতে পারে, তাদের পক্ষে কি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব? খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামের সমর্থনে যে সরকার গঠিত হয়, তারাও জিয়া-এরশাদের দেখানো কু-পথেই চলেছে। এ সরকার কুখ্যাত ইনডেমনিটি আইন বাতিল করতে অস্বীকার করে। ১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বর তিন জোটের রূপরেখায় জামাত বাদে সব ক’টি রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করেছিল। জামাতের সমর্থন নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে রূপরেখার বাস্তবায়ন করেনি। ১৯৯১ সালে জামাতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করাটাই ছিল তিন জোটের রূপরেখার স্পষ্ট লঙ্ঘন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচারের অন্তরায় ইনডেমনিটি আইন বাতিল করেনি। সে-কথাটা আজ সুধীজনের অনেকের মনে নেই। ১৯৯২ সালে ১৪ আগস্ট রাত ১০টার পর বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে বঙ্গবন্ধুর চার খুনির পদোন্নতির ফাইলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে স্বাক্ষর করা হয়। সেখানে পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং কেক কেটে বেগম জিয়ার ভুয়া জন্মদিন পালন করা হয়।
বিগত ৪২ বছর ধরে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করে আসছেন। আশির দশকে তার নেতৃত্বে ১৫-দলীয় জোট গঠিত হয়। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল সাত-দলীয় জোট। দুই জোট এইচএম এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে একযোগে বা যুগপৎ আন্দোলন করে। কিন্তু দেখা গেছে, রাজপথে শেখ হাসিনার জোটের সমাবেশ বিএনপি জোটের তুলনায় অনেক বড় হতো। সরকারের নির্যাতনও শেখ হাসিনার জোটের নেতা-কর্মীদের বেশি সহ্য করতে হয়েছে। জনগণ এটা বুঝতে পেরেছে- গণতন্ত্রের মূল শক্তি কে?
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া প্রহসনের পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠান করেন। শেখ হাসিনা এ নির্বাচন চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তার ডাকে হরতাল-অবরোধে অচল হয়ে পড়ে দেশ। বাংলাদেশ সচিবালয়ের সচিব থেকে পিওন-দারোয়ান, সকলে একযোগে খালেদা জিয়ার সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে রাজপথে নেমে আসে। তারা মিছিল নিয়ে তোপখানা রোডে স্থাপিত ‘জনতার মঞ্চে’ গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ করেন, খালেদা জিয়ার পছন্দের ব্যক্তি সাবেক বিএনপি নেতা ও সদ্য-সাবেক প্রধান বিচারপতি কেএম হাসানকে সাধারণ নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে, তার প্রধান করা যাবে না। এ-সময়ে শেখ হাসিনার আন্দোলন দমন করার জন্য পুলিশ-র্যাব-বিডিআর এমনকি সেনাবাহিনী নামানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়ী হন শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে, খালেদা জিয়া ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকারকে রাজপথের আন্দোলনে চ্যালেঞ্জ করেন। এ-সময়ে বাংলাদেশে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি আহ্বান করা হয়। তাদের আন্দোলনে অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়, শিক্ষাব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু আন্দোলন লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়নি। তাহলে সরকার পতনের উপায়? সহিংসতা? পেট্রলবোমার নির্বিচার ব্যবহার? এসব তো ভোঁতা অস্ত্র। হরতাল-অবরোধেও সাড়া নেই। বিএনপির একাধিক নেতা প্রকাশ্য সমাবেশে বলেছেন, ‘১৫ আগস্টের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার।’ এমন ভ্রান্ত পথেই বিএনপি ও তাদের মিত্ররা চলতে চাইছে। বিএনপি মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু কিছু প্রশ্নে বর্তমান সরকারের প্রতি কিছুটা বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করছে কিংবা বিএনপি জোটের প্রতি কিছুটা সহমর্মিতা দেখিয়েছে, তারাই স্যাংশন আরোপসহ নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করবে। এভাবে নির্বাচন ছাড়াই তারা ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু গণতন্ত্র তো ওয়াকওভার কিংবা আঁতাতের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া নয়। গণতান্ত্রিক সংগ্রামে মাঠ ও ভোটে উভয় স্থানেই সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হয়।
মার্কিন সাময়িকী ‘টাইম’-এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অনেক সরকার এসেছে। কেউ নির্বাচিত হয়েছে জনগণের ভোটে। কেউবা বন্দুকের নলের ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা নিয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা যে বিপুল অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের রায় চাইছে, এমনটি অতীতে দেখা যায়নি। অতীতে বাংলাদেশ কোনো সময় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল না। বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে এবং কল-কারখানায় ও ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। প্রায় ১৫ বছর ধরে স্কুলের কোটি কোটি ছাত্রছাত্রী সরকারের ব্যয়ে পাঠ্যবই পাচ্ছে। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল- এসব দৃশ্যমান। ‘টাইম’ সাময়িকীর নিবন্ধেও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক অর্জন আকর্ষণীয়। একসময় বাংলাদেশ ছিল খাদ্য ঘাটতির দেশ, এখন তারা বিদেশে খাদ্য রপ্তানি করছে। ২০০৬ সালে জিডিপির পরিমাণ ছিল ৭১ বিলিয়ন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬০ বিলিয়ন ডলার। এখন বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরেই দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তির দেশ। সামাজিক সূচকও উন্নত হচ্ছে। ৯৮ শতাংশ মেয়ে প্রাইমারি স্কুলে যায়। শিল্প খাতে হাই-টেক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। ফলে স্যামসাংয়ের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান চীন থেকে বাংলাদেশে কারখানা নিয়ে আসছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে অবাঞ্চিত সামরিকতন্ত্রকে বিদায় করে দিয়েছেন। ‘টাইম’ সাময়িকীর নিবন্ধে এ বিষয়টি উল্লেখ করে লিখেছে, “একইভাবে তিনি জঙ্গিবাদ দমন করেছেন। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানী ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজানে ভয়ঙ্কর হামলা চালায়। এ হামলার লাইভ সম্প্রচার হয় বিশ্বব্যাপী। কিন্তু শেখ হাসিনা দ্রুত সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে জঙ্গিদের পরাস্ত করতে পারেন। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের নানা স্থানে জঙ্গিবিরোধী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তিনি সফল হন। বাংলাদেশের সমাজে ফিরে আসে স্থিতিশীলতা।”
‘টাইম’সাময়িকী লিখেছে, “বাংলাদেশ ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্র্রনীতি অনুসরণ করছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সবচেয়ে বেশি সৈন্য যায় বাংলাদেশ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের যৌথ মহড়ায় বাংলাদেশ নিয়মিত অংশ নেয়। এদেশটি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের নিন্দা করে। জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ভোট দিয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ রাশিয়ার সহায়তায় পাবনার ঈশ^রদীর রূপপুরে নির্মাণ করেছে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে এটা বলতেও শেখ হাসিনা দ্বিধা করেন না। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে দাঁড়িয়েই তিনি বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক পদক্ষেপ যেমন চাই না, তেমনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনও কাম্য নয়। তিনি বাংলাদেশে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরবকে স্বাগত জানিয়েছেন। একইসঙ্গে বলছেন- যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের যে উসকানি দিয়ে চলেছে, সেটাও বন্ধ করতে হবে। ভারত, চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গেও বাংলাদেশ সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। সৌদি আরব, ইরান, তুরস্ক- সব দেশের সঙ্গে শেখ হাসিনার সরকার বন্ধুত্ব। নিজের নীতিনিষ্ঠ অবস্থান বজায় রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। বিশ্ব আজ অন্য বাংলাদেশকে দেখছে।
খালেদা জিয়ার বিএনপি এবং তাদের সহযোগী জামায়াতে ইসলামীর মদদে বাংলাদেশে জঙ্গি অপশক্তি নতুনভাবে শক্তি সঞ্চয় করে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ‘জেএমবি’ নামে একটি সংগঠন সারাদেশে একযোগে বোমা হামলা চালায়। তারা ঘোষণা কওে, গণতান্ত্রিক শাসন চলবে না। ইসলামি হুকুমত কায়েম করতে হবে। সংবিধান বলে কিছু থাকবে না। এই জেএমবি ও তাদের সহযোগীরা তারেক রহমানের সঙ্গে মিলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সকল কেন্দ্রীয় নেতাকে হত্যার জন্য বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। তাদের দমন করার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ আসে। দেশেও জনমত তৈরি হয়। ‘টাইম’-এর লেখায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানের জন্য শেখ হাসিনার পদক্ষেপের প্রশংসা করা হয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট। শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘এটা বড় ধরনের বোঝা আমাদের ওপর।’
(২)
আমাদের জানা আছে, এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০০৮ সালে সে-সময়ের সরকারের আনুকূল্যে সেফ এক্সিট নিয়ে লন্ডনে বসবাস করছেন। শেখ হাসিনা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ সুবিধা সৃষ্টি করে দিয়েছেন, সেটি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছেন। খালেদা জিয়াও দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পরও টানা তিন বছরের বেশি বাসায় থাকতে পারছেন সরকারের আনুকূল্যে। সরকারের আনুকূল্যে নিরাপদ জীবন পেলেও দেশ ও সরকারের জন্য অনিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য তারা ক্রমাগতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারা সরকার উৎখাত করতে চাইছে বলপ্রয়োগে। কিন্তু জনগণের সাড়া মিলছে না। সহিংসতাই তাদের কাক্সিক্ষত পন্থা। একইসঙ্গে চাইছে, তাদের কাজে সরকার যেন কোনো বাধা সৃষ্টি না করে। এটা কি সম্ভব? এমন নজির কি পৃথিবীর কোথাও রয়েছে? দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সরকার সংবেদনশীল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা সর্বংসহা জননেত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার প্রতি সর্বোচ্চ উদারতা ও মানবিকতা দেখিয়েছেন। দেশের প্রচলিত আইন, সংবিধান, ফৌজদারি কার্যবিধির যতটুকু ক্ষমতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছে তার সর্বোচ্চ সুযোগ নিয়ে তিনি খালেদা জিয়াকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সাজা স্থগিত করে নিজ বাসায় থেকে দেশের সর্বাধুনিক হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার সেবাগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছেন। মানবিকতকার এমন নজির পৃথিবীতে দ্বিতীয় একটি কেউ দেখাতে পারবে না যেখানে একজন রাষ্ট্রনায়ক বা সরকারপ্রধান তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি এমন সদয় আচরণ করেছেন। এখন খালেদা জিয়ার পরিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠাতে চায়। কিন্তু এ অবস্থায় খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে সংবিধান ও প্রচলিত আইন, সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ কিংবা নির্বাহী বিভাগের হাতে কোনো ক্ষমতা প্রদান করেনি। এ অবস্থায় বিদেশে যেতে হলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাকে আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে। আদালতের সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের কোনো নজির দেশে-বিদেশে কোথাও নেই। আপনাদের মনে থাকবে, পাকিস্তানের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফ সেদেশের তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দুর্নীতির দায়ে তার সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। তিনিও লাহোর হাইকোর্টের আদেশে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। অনেকে আ স ম আবদুর রব-এর কথা বলেছেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে আ স ম আবদুর রবের বিচার হয়েছিল একটি সামরিক আদালতে, দেশে তখন কোনো সাংবিধানিক সরকার-ব্যবস্থা বলবৎ ছিল না। আ স ম আবদুর রব, কর্নেল তাহেরের সাথে একই মামলায় অভিযুক্ত ছিল। পরবর্তীতে দেশের উচ্চ আদালত কর্নেল তাহেরের সেই প্রহসনের বিচার, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী ও সপ্তম সংশোধনীকে বেআইনি, অসাংবিধানিক এবং অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। সে-কারণে আ স ম আবদুর রবের বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি কোনো প্রকার উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। দেশের উচ্চ আদালত সংসদ সদস্য হাজী সেলিমকে এক মাসের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ প্রদান করেছিলেন; হাজী সেলিম উক্ত ৩০ দিনের মধ্যেই বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন। আদালতের রায়ে তার পাসপোর্ট বাতিল কিংবা ৩০ দিনের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার নিষেধাজ্ঞা না থাকায় এক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। ৭০০ কোটির অধিক মানুষের এই বিশ্বকে ‘পাল্টে দিতে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ‘শান্তিকেন্দ্রিক উন্নয়নের’ যে মডেল তুলে ধরেছিলেন, তাতে সমর্থন জানিয়েছিল জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো। জাতিসংঘের ৬৭তম সাধারণ অধিবেশনের ২৯ নম্বর এজেন্ডা হিসেবে ওই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সংস্থাটির সব সদস্য দেশই বাংলাদেশের এ প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানায়। ‘বিষয়টি ঐতিহাসিক। কারণ এ রেজ্যুলেশন লিপিবদ্ধ হওয়ার সময় শেখ হাসিনার নামও উল্লেখ করা হয়েছে, যা সচরাচর ঘটে না।’ ২০১১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৬তম অধিবেশনে এই মডেল তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সারাজীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে এই ‘জনগণের ক্ষমতায়ন মডেল’ তৈরি করা হয়েছে। এটি একটি বহুমাত্রিক ধারণা, যার ভিত্তি হচ্ছে জনগণের ক্ষমতায়ন, যেখানে গণতন্ত্র এবং উন্নয়নকে সর্বাগ্রে স্থান দেওয়া হয়েছে। এতে আছে ৭টি পরস্পর ক্রিয়াশীল বিষয়, যা শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এগুলো হচ্ছে- ক্ষুধা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ, বৈষম্য দূরীকরণ, বঞ্চনার লাঘব, সবার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ঝরেপড়া মানুষদের সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন তরান্বিত করা এবং সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটন। সুভাষ সিংহ রায় : রাজনৈতিক বিশ্লেষক; সাবেক সহ-সভাপতি- বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল, প্রধান সম্পাদক- সাপ্তাহিক বাংলা বিচিত্রা ও এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম।
আমাদের জানা আছে, এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০০৮ সালে সে-সময়ের সরকারের আনুকূল্যে সেফ এক্সিট নিয়ে লন্ডনে বসবাস করছেন। শেখ হাসিনা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ সুবিধা সৃষ্টি করে দিয়েছেন, সেটি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছেন। খালেদা জিয়াও দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পরও টানা তিন বছরের বেশি বাসায় থাকতে পারছেন সরকারের আনুকূল্যে। সরকারের আনুকূল্যে নিরাপদ জীবন পেলেও দেশ ও সরকারের জন্য অনিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য তারা ক্রমাগতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারা সরকার উৎখাত করতে চাইছে বলপ্রয়োগে। কিন্তু জনগণের সাড়া মিলছে না। সহিংসতাই তাদের কাক্সিক্ষত পন্থা। একইসঙ্গে চাইছে, তাদের কাজে সরকার যেন কোনো বাধা সৃষ্টি না করে। এটা কি সম্ভব? এমন নজির কি পৃথিবীর কোথাও রয়েছে? দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সরকার সংবেদনশীল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা সর্বংসহা জননেত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার প্রতি সর্বোচ্চ উদারতা ও মানবিকতা দেখিয়েছেন। দেশের প্রচলিত আইন, সংবিধান, ফৌজদারি কার্যবিধির যতটুকু ক্ষমতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছে তার সর্বোচ্চ সুযোগ নিয়ে তিনি খালেদা জিয়াকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সাজা স্থগিত করে নিজ বাসায় থেকে দেশের সর্বাধুনিক হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার সেবাগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছেন। মানবিকতকার এমন নজির পৃথিবীতে দ্বিতীয় একটি কেউ দেখাতে পারবে না যেখানে একজন রাষ্ট্রনায়ক বা সরকারপ্রধান তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি এমন সদয় আচরণ করেছেন। এখন খালেদা জিয়ার পরিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠাতে চায়। কিন্তু এ অবস্থায় খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে সংবিধান ও প্রচলিত আইন, সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ কিংবা নির্বাহী বিভাগের হাতে কোনো ক্ষমতা প্রদান করেনি। এ অবস্থায় বিদেশে যেতে হলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাকে আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে। আদালতের সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের কোনো নজির দেশে-বিদেশে কোথাও নেই। আপনাদের মনে থাকবে, পাকিস্তানের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফ সেদেশের তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দুর্নীতির দায়ে তার সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। তিনিও লাহোর হাইকোর্টের আদেশে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। অনেকে আ স ম আবদুর রব-এর কথা বলেছেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে আ স ম আবদুর রবের বিচার হয়েছিল একটি সামরিক আদালতে, দেশে তখন কোনো সাংবিধানিক সরকার-ব্যবস্থা বলবৎ ছিল না। আ স ম আবদুর রব, কর্নেল তাহেরের সাথে একই মামলায় অভিযুক্ত ছিল। পরবর্তীতে দেশের উচ্চ আদালত কর্নেল তাহেরের সেই প্রহসনের বিচার, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী ও সপ্তম সংশোধনীকে বেআইনি, অসাংবিধানিক এবং অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। সে-কারণে আ স ম আবদুর রবের বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি কোনো প্রকার উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। দেশের উচ্চ আদালত সংসদ সদস্য হাজী সেলিমকে এক মাসের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ প্রদান করেছিলেন; হাজী সেলিম উক্ত ৩০ দিনের মধ্যেই বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন। আদালতের রায়ে তার পাসপোর্ট বাতিল কিংবা ৩০ দিনের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার নিষেধাজ্ঞা না থাকায় এক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। ৭০০ কোটির অধিক মানুষের এই বিশ্বকে ‘পাল্টে দিতে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ‘শান্তিকেন্দ্রিক উন্নয়নের’ যে মডেল তুলে ধরেছিলেন, তাতে সমর্থন জানিয়েছিল জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো। জাতিসংঘের ৬৭তম সাধারণ অধিবেশনের ২৯ নম্বর এজেন্ডা হিসেবে ওই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সংস্থাটির সব সদস্য দেশই বাংলাদেশের এ প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানায়। ‘বিষয়টি ঐতিহাসিক। কারণ এ রেজ্যুলেশন লিপিবদ্ধ হওয়ার সময় শেখ হাসিনার নামও উল্লেখ করা হয়েছে, যা সচরাচর ঘটে না।’ ২০১১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৬তম অধিবেশনে এই মডেল তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সারাজীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে এই ‘জনগণের ক্ষমতায়ন মডেল’ তৈরি করা হয়েছে। এটি একটি বহুমাত্রিক ধারণা, যার ভিত্তি হচ্ছে জনগণের ক্ষমতায়ন, যেখানে গণতন্ত্র এবং উন্নয়নকে সর্বাগ্রে স্থান দেওয়া হয়েছে। এতে আছে ৭টি পরস্পর ক্রিয়াশীল বিষয়, যা শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এগুলো হচ্ছে- ক্ষুধা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ, বৈষম্য দূরীকরণ, বঞ্চনার লাঘব, সবার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ঝরেপড়া মানুষদের সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন তরান্বিত করা এবং সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটন। সুভাষ সিংহ রায় : রাজনৈতিক বিশ্লেষক; সাবেক সহ-সভাপতি- বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল, প্রধান সম্পাদক- সাপ্তাহিক বাংলা বিচিত্রা ও এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম।
এই বিভাগের আরো সংবাদ