আজকের শিরোনাম :

হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি

  সুভাষ সিংহ রায়

০৬ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:৪৬ | অনলাইন সংস্করণ

২০১৮ সালের ১ নভেম্বর গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপ হয়। তা-ও চূড়ান্ত পর্যায়ে কোনো ফল আনতে পারেনি। এখন আবার চলতি নভেম্বরের ৪ তারিখে নির্বাচন কমিশন ৪৪টি দলের সঙ্গে আলোচনার আয়োজন করেছে। বিএনপি যদি নির্বাচনে আসতে চায়, তাহলে নির্বাচনী পরিবেশ উন্নয়নে তাদের পরামর্শ তারা নির্বাচন কমিশনে দিতে পারে-

২০১৪ সালের নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের মেয়েকে সংসদ সদস্য নির্বাচন করা হয়। তখন এক বিজ্ঞজন আমাকে বলেছিলেন, ১৯৭৫ সালের নভেম্বর ষড়যন্ত্রে খালেদ মোশাররফের ভূমিকা স্পষ্ট নয়। তখন আমি তাকে ১৯৭৫ সালের ৫ নভেম্বর খুনি মোশতাক স্বাক্ষরিত জেলহত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের গেজেট নোটিফিকেশনটি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। বিচারপতি আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে (এফিলেট ডিভিশন) সেই তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান এবং বিচারপতি কে এম সোবহান ও বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেনকে (হাইকোর্ট ডিভিশন) সদস্য করা হয়। এই গেজেট নোটিফিকেশন দেখলেই বোঝা যায়, খুনি মোশতাককে চাপে ফেলে খালেদ মোশাররফ এই তদন্ত কমিশন করতে বাধ্য করেছিল এবং ৭ নভেম্বরের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সেই তদন্ত কমিশন বাতিল করেছিলেন। নভেম্বর মাস যেন হত্যা ও ষড়যন্ত্রের মাস। এ কথা পরিষ্কার করে বলা যায়, গত ৫২ বছরের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ ছাড়া যারাই ক্ষমতায় এসেছে, হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ধারাবাহিকতায় এসেছে। যদি কেউ নির্মোহভাবে ইতিহাস পর্যালোচনা করেন, তাহলে এ সত্যটি বেরিয়ে আসবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী সময়ে আমরা খুব ছোট ছিলাম, স্কুলে পড়তাম। তখন কত আজগুবি তথ্যই না আমাদের দেওয়া হয়েছে। আমার এক স্কুল-বন্ধুর বাবা আমাদের একবার জানিয়েছিলেন, শেখ মুজিব দেশের জিনিস সব ভারতে পাচার করে দিচ্ছিল। জিনিসপত্রের দাম এ কারণে বেড়ে গেছে। শেখ মুজিব মারা যাওয়ার তিন মাস পর নভেম্বরে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী, কামারুজ্জামানকে সৈনিকরা মেরে ফেলে, কারণ তারা ভারতের হয়ে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল। দেখ না, জিনিসপত্রের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। একটু বড় হয়ে জেনেছি, ওই ভদ্রলোক ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। যখন একটু একটু বুঝতে শিখেছি তখন বুঝেছিলাম, ওই বয়ান সবই ছিল বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ২০২০ সালের মার্চ মাসে ‘প্রথমা প্রকাশন’ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলামের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কাছে থেকে দেখা’ পাঠককে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। প্রকাশিত বই থেকে বেশ কয়টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উৎকলন করছি। ১৯৭৫ সালের জুন মাস নাগাদ দেশের অর্থনীতিতে মোটামুটি একটা স্থিতিশীলতার প্রভাব পরিলক্ষিত হতে থাকে... মুদ্রা সরবরাহ ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ৯৩৭.৭৬ কোটি টাকা থেকে হ্রাস পেয়ে ১৯৭৫ সালের জুন মাসে ৮১৪.৩৩ কোটি টাকায় নেমে আসে এবং একই সময়ের ব্যবধানে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ১১১.৪৯ কোটি টাকা থেকে ৩৫০.৮০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। খাদ্যশস্যের মজুত পরিস্থিতি অনুকূলে চলে আসায় চালের মূল্যে নিম্নমুখী প্রবণতা পরিলক্ষিত হতে থাকে। আরও কতিপয় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মূল্যও নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে থাকে। জুন মাস নাগাদ চালের দাম জানুয়ারি মাসে সেরপ্রতি ৮ টাকা থেকে কমে ৫.৫০ টাকায়, লংক্লথ গজপ্রতি ১৩ টাকা থেকে ১১.৫০ টাকায়, সরিষার তেল সেরপ্রতি ৪১.৬৮ টাকা থেকে ৩০.৩৭ টাকায়, আলু সেরপ্রতি ২.০৫ টাকা থেকে ১.৫০ টাকায়, রুই মাছ ১৪.১৪ টাকা থেকে ১০ টাকায় এবং কেরোসিন ১.৪০ টাকা থেকে ১.২০ টাকায় নেমে আসে। এতে জীবনযাত্রার ব্যয়ভারেও উন্নতির প্রভাব পরিলক্ষিত হতে থাকে। ঢাকা শহরে মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনযাত্রার ব্যয় সূচক জানুয়ারি মাসের ৪৫৮.৫ থেকে এপ্রিল মাসে ৪১৬.৯-এ এবং খাদ্য মূল্যসূচক একই সময়ে ৫৪৬.৩ থেকে ৪৫৯.০-এ হ্রাস পায়। পরিস্থিতির উন্নতি চক্রান্তকারীদের ভীতসন্ত্রস্ত করে। তারা আর কালবিলম্ব না করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। ১৯৭৪ সালের নভেম্বর মাসেই পরিস্থিতি অনুকূলে চলে আসে। এমন সময় ১৯৭৪ সালের ২৭ মে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মারফত এক অপ্রত্যাশিত দুঃসংবাদ এলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানতে পেরেছে, বাংলাদেশ কিউবার কাছে চটের ব্যাগ বিক্রি করছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য সাহায্য আইন (পিএল ৪৮০) অনুযায়ী যে দেশ কিউবার সঙ্গে বাণিজ্য করছে সে দেশ ওই খাদ্য সাহায্য পেতে পারে না। এর প্রতিক্রিয়ায় আমি (অধ্যাপক নুরুল ইসলাম) যে ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম, তা এ রকম—বাংলাদেশ জুট করপোরেশন আদতে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ৪ মিলিয়ন ব্যাগ বিক্রি করেছে, এটা শুধু একবারের মতো বিক্রি। চটের ব্যাগ বিক্রির জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কিউবার কোনো দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্যিক চুক্তি নেই এবং কিউবায় চটের ব্যাগ বিক্রি বাংলাদেশের জন্য কোনো নিয়মিত ব্যবসা নয়। [অধ্যাপক নুরুল ইসলামের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কাছে থেকে দেখা’]

বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অর্থনীতিবিদ মুশাররফ হোসেন পঁচাত্তরের জানুয়ারিতে করাচি গিয়েছিলেন থার্ড ওয়ার্ল্ড ফোরামের বৈঠকে যোগ দিতে। তার মামা ছিলেন পাকিস্তান স্টেট ব্যাংকের গভর্নর। তার বাসায় যে কজন বিশিষ্ট পাকিস্তানি নাগরিকের সঙ্গে আলাপ হয়, তাদের একজন জানতে চাইলেন, বাংলাদেশ আবার পাকিস্তানের প্রদেশ হবে কি না? জবাবে মুশাররফ হোসেন বলেছিলেন, বাংলাদেশ তো এখন একটি স্বাধীন দেশ। তখন সেই ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘ওকে তো মেরে ফেলবে কয়েক দিনের মধ্যে।’ [আগস্ট স্মৃতি]

দুই. জেনারেল জিয়াউর রহমান যে বঙ্গবন্ধু হত্যা চক্রান্তের বিষয়ে জ্ঞাত ছিলেন, তা সম্ভবত প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত বা প্রচারিত হয় ১৯৭৬ সালে বিলেতের আইটিভি চ্যানেলের World in Action প্রোগ্রামে সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাসকে দেওয়া লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। এই সাক্ষাৎকারে ফারুক-রশীদ দাবি করে, বঙ্গবন্ধু হত্যা চক্রান্তের বিষয়ে ১৫ আগস্টের অনেক আগেই জিয়াকে তারা অবহিত করে। ফারুক জানায়, ‘১৯৭৫ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটের দিকে সে জিয়ার বাসায় জিয়ার সঙ্গে দেখা করে এবং তাকে বলে, The country required a change.’

উত্তরে জিয়া বলেন, ‘Yes, yes, let’s go outside and talk.’ তখন জিয়া ফারুককে নিয়ে বাইরে বাড়ির লনে যান। সেখানে ফারুক ফের বলে, ‘We have to have a change. We, the junior officers, have already worked it out. We want your support and leadership.’ জিয়ার প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট। জিয়া বলেন, ‘If you want to do something, you junior officers should do it yourself...’ [‘Anthony Mascarenhas, Bangladesh A Legacy of Blood’, page 54, Hodder and Stroughton, London, 1986]

আমরা অবশ্যই ভাবতে পারি বা প্রশ্ন করতে পারি, ফারুক-রশীদ বলল বলেই কি তা সত্য? এমনও তো হতে পারে, তারা তাদের দোষ কিছুটা লাঘব করার জন্য অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চেয়েছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে কেন জিয়া? অন্য কোনো সিনিয়র অফিসার নয় কেন? জিয়ার নামটা কি তারা হঠাৎ করে বা র্যান্ডমলি বলেছে? বিশ্লেষণে বোঝা যায় যে, ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। তার প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৭৬ সালে দেওয়া জিয়ার মাসকারেনহাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার থেকে। মাসকারেনহাসের ভাষায়: ‘In July 1976, While doing a TV programme in London on the killing of Sheikh Mujib I confronted Zia with what Farook had said.’ জিয়া এ ব্যাপারে উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। ফারুকের সঙ্গে তার এমন কথোপকথনের বিষয়টি এসেছে এভাবে: ‘Zia did not deny it-nor did he confirm it’ [‘Anthony Mascarenhas, BangladeshÑA Legacy of Blood’, page 54, Hodder and Stroughton, London, 1986]

সত্যতার আরও প্রমাণ মেলে আরও অনেক বছর পরে ১৯৯৭ সালে, যখন ফারুক জেলে আর রশীদ ইউরোপে। ১৯৯৭ সালে রশীদের সঙ্গে মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজের সাক্ষাৎ হয় ইউরোপে। লিফশুলজের ভাষায়: ‘In 1997 I met Rashid for several hours in an European city... I went over with him exactly what he had told Mascarenhas about Zia’s involvement. Rashid confirmed to me the accuracy of his interview with Mascarenhas.’ শুধু তাই নয়, রশীদ লিফশুলজকে এ ব্যাপারে আরও বহু কিছু বিস্তারিত জানায়। রশীদ জোরালোভাবে বলে, ‘He (Rashid) had met General Zia numerous times prior to the coup and that Zia was fully in the picture’ [In conversation with Lawrence Lifschultz The Daily Star, December 4, 2014] জিয়ার সঙ্গে ফারুক-রশীদের সাক্ষাৎ এবং আলোচনা যে আরও অনেকবার হয়েছে, তার প্রমাণ মেলে রশীদের স্ত্রী জোবায়দা রশীদের বক্তব্য থেকে। তিনি বলেন, ‘একদিন রাতে ফারুক জিয়ার বাসা থেকে ফিরে আমার স্বামীকে (রশীদ) জানায়, সরকার পরিবর্তন হলে জিয়া রাষ্ট্রপতি হতে চান। শুধু তাই নয়। জিয়া আরও বলেন: If it is a success then come to me. If it is a failure then do not involve me.’ [আসাদুজ্জামান, বস সবকিছুর ব্যবস্থা নিচ্ছেন, প্রথম আলো, ১৫ আগস্ট, ২০১৮]

একইভাবে জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যা চক্রান্তের বিষয়ে অবহিত ছিলেন কি ছিলেন না, তা বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টা পর কর্নেল শাফায়েত জামিল এবং জিয়ার কথোপকথন থেকে। তবে বিষয়টি বুঝতে হবে মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে। সেই সকালে শাফায়েত জামিল জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকে শেভ করতে দেখেন। জামিল জিয়াকে বলেন, ‘The President has been killed, Sir. What are your orders?’ উত্তরে জিয়া বলেন, ‘If the President is no longer there, then the Vice President is there. Go to your headquarters and wait there.’ তখন জামিলের দৃষ্টিতে জিয়াকে অনেক শান্ত দেখায়, ‘Evidently aware of what had happened’ [‘Anthony Mascarenhas, Bangladesh A Legacy of Blood’, page 76, 1986]

উপরের বিশ্লেষণ থেকে কয়েকটি বিষয় এখানে পরিষ্কার—বঙ্গবন্ধু হত্যা চক্রান্তের বিষয়ে জিয়া আগেই অবহিত ছিলেন; চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেননি; বরং চক্রান্তকারীদের উৎসাহিত করেছেন এবং সেইসঙ্গে আসন্ন পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। এসব তথ্য এবং বিশ্লেষণ থেকে সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড এবং একটি নির্বাচিত সরকারকে অবৈধভাবে উৎখাতে জিয়ার পূর্ণ সমর্থন ছিল। এ ব্যাপারে লিফশুলজের অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণের ফলাফল পরিষ্কার: ‘Had he (Zia) been against the coup, as Deputy Chief of the Army, Zia could have stopped it.’

২০১৯ সালের ১৫ আগস্টে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান নিজ নামে একটি বিশেষ প্রতিবেদন লিখেছিলেন। শিরোনাম ছিল—‘খুনি চক্রকে রক্ষা করেছে জিয়া, এরশাদ ও খালেদা সরকার।’ তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছিলেন, ‘বিএনপি সরকার আবারও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করার পথ রুদ্ধ করে রাখে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে আবার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং সাজাপ্রাপ্ত এক আসামিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। তারপর আবার ২০০৯ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হলে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পথ খুলে যায়। এভাবে দেখা যায়, রাষ্ট্রপতি জিয়া, স্বৈরাচারী এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে তিন দশকের অধিক সময় ধরে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে দেওয়া হয়নি। শুধু তা-ই নয়, খুনি চক্রকে তারা রক্ষা করেছে, সহযোগিতা করেছে।’ এখন রাজনীতির মাঠে সংলাপ সংলাপ বলে এক ধরনের আর্তনাদ দেখছি। সেখানে দলনিরপেক্ষতার একটা প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যত সংলাপ হয়েছে, এর কোনোটি কোনো ফল আনতে পারেনি। ১৯৭৯ সালে নির্বাচনের আগে বিচারপতি সাত্তারকে দিয়ে সংলাপের উদ্যোগ নেন জিয়া। আওয়ামী লীগসহ প্রগতিশীল দলগুলো এ সংলাপ প্রত্যাখ্যান করে। ১৯৮৬ এবং ১৯৮৮ সালের নির্বাচনের আগে এরশাদ সংলাপ করেন। সেগুলোতেও কোনো ফল আসেনি। ১৯৯৪ সালে সংলাপ হয় কমনওয়েলথ মহাসচিব এমেকার দূতিয়ালিতে, সে সংলাপ ব্যর্থ হয়। ২০০১ সালে জিমি কার্টারের উদ্যোগে সংলাপ হয়, সেটাও ব্যর্থ হয়। ২০০৬ সালে জলিল-মান্নান সংলাপও সফল হয়নি। ২০১৩ সালে অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর উদ্যোগে সংলাপ হয়। সেটাও ব্যর্থ হয়। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপ হয়। তা-ও চূড়ান্ত পর্যায়ে কোনো ফল আনতে পারেনি। এখন আবার চলতি নভেম্বরের ৪ তারিখে নির্বাচন কমিশন ৪৪টি দলের সঙ্গে আলোচনার আয়োজন করেছে। বিএনপি যদি নির্বাচনে আসতে চায়, তাহলে নির্বাচনী পরিবেশ উন্নয়নে তাদের পরামর্শ তারা নির্বাচন কমিশনে দিতে পারে।

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক; সাবেক সহ-সভাপতি- বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল, প্রধান সম্পাদক- সাপ্তাহিক বাংলা বিচিত্রা ও এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম।

এই বিভাগের আরো সংবাদ