আজকের শিরোনাম :

২১ আগস্ট ১৫ আগস্টেরই ধারাবাহিকতা

  সুভাষ সিংহ রায়

২১ আগস্ট ২০২৩, ০৯:০২ | অনলাইন সংস্করণ

সুভাষ সিংহ রায়
পাকিস্তানীরা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালী জাতিকে দাবায়ে রাখবার জন্য গণহত্যা চালিয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। আর একথা বলার অবকাশ রাখে না, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের হত্যাকা- ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতার অংশ। ১৫ আগস্টের বিচার করা যাবে না- এভাবে আইন করা হয়েছিল। এরকম নিকৃষ্ট ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে আর একটিও ঘটেনি। ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সংবাদ শুনে সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর উইলি ব্রান্ডেট (Willy Brandt) মন্তব্য করেছিলেন, ‘শেখ মুজিবকে হত্যার পর বাঙালী জাতিকে আর বিশ্বাস করা যায় না। আবার ২১ আগস্টের আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে হত্যা করার পর খালেদা-নিজামী সরকার বলেছিল, শেখ হাসিনা ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিল। এমনকি থানায় মামলা পর্যন্ত নিতে নিষেধ করা হয়েছিল। প্রয়াত আব্দুল জলিলসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ রমনা থেকে মতিঝিল থানা পর্যন্ত সারাদিন লেফ্ট-রাইট করিয়েছিল। জামায়াত-বিএনপি সরকারের মদদপুষ্ট হায়নারা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। খালেদা-নিজামী সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু এই হত্যাকা-ের মূল হোতাদের একজন। কিন্তু এখনও আড়ালে রয়ে গেছে সব খলনায়ক। ২৫০ পুলিশ সদস্য সেদিন এ জনসভায় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে হত্যাকারীরা পালিয়ে গেল? একজন পুলিশ সদস্য আহত হলো না। রহস্যটা কি? এখনও সেই পুলিশ সদস্যদের কেউ কেউ চাকরিতে আছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। কোন্ নরপিশাচরা সেদিন আলামতগুলো নষ্ট করেছে তাদের খুঁজে বের করা খুব কঠিন কাজ হবে না। কোন্ পুলিশ সদস্যরা সেদিন হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে গুলি না ছুড়ে আহতদের ওপর গুলি কিংবা টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে- ইচ্ছে থাকলে এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত সকল পুলিশ সদস্যকে খুঁজে বের করা যায়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের দু’দিন পরে দৈনিক ‘প্রথম আলো’তে অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ একটা উপসম্পাদকীয় লিখেছিলেন, ‘কোথায় চলেছি আমরা’। সেখানে তিনি তিনটি প্রশ্ন করেছিলেন- ১. এদের প্রতিরোধে সরকার কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে? ২. কেন এই দুষ্টচক্রের নরপিশাচদের সরকার চিহ্নিত করতে পারছে না? ৩. যে দু-একটি ঘটনার তদন্ত হয়েছে তার রিপোর্ট কেন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি? ২০০৫ সালের ২১ আগস্টের আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তখনকার বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে বলেছিলেন, খালেদা জিয়া এখন হত্যাকারী পিন্টুকে সমর্থন করেন। তার প্রমাণ তার ভাইকে তিনি ছাত্রদলের সভাপতি বানিয়েছেন। পাঠকদের স্মরণে আছে নিশ্চয় সেই সময় খালেদা জিয়া, মান্নান ভুঁইয়া, খন্দকার মোশাররফরা জজ মিয়া নাটকের কত ফিরিস্তি না দিয়েছেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশের ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলা নিয়ে আলোচনা হয় এবং নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়। অথচ বাংলাদেশে জাতীয় সংসদে এ নিয়ে কোন আলোচনা করতে দেয়া হয়নি। গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ২১ আগস্টের হত্যাকা- নিয়ে ফাজলামো করেছে। হামলা ও হত্যার আলামত নষ্ট করার পর শেখ হাসিনার বাসভবনে গিয়েছে তদন্তের নামে এক ধরনের ‘বেয়াদবি’ করতে। শেখ হাসিনার বুলেট প্রুফ গাড়িতে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার লেগেছে, না গুলির চিহ্ন রয়েছে তা দেখার জন্য। এটা থেকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল হত্যাকারীরা সরকারের নিয়োজিত এজেন্ট ছিল। গোটা দেশের বিবেকবান মানুষ এ হত্যার নিন্দা জানিয়েছিল। অধ্যাপক এমাজউদ্দিন বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত। তিনিও ধিক্কার জানিয়ে নিবন্ধ লিখেছিলেন। ২০০৪ সালের ২৪ আগস্ট (মাত্র তিনদিন পর) দৈনিক প্রথম আলোর সেই উপসম্পাদকীতে তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘এই দুষ্টচক্রের ইতররা কারা, সে সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে চাই না। তবে এটুকু বলব, তারা দেশের শত্রু। তারা রাষ্ট্রের শত্রু। তারা জাতীয় স্বার্থের শত্রু। তাদের সমূলে বিনাশ করা জাতীয় স্বার্থে অবশ্যই প্রয়োজনীয়।’ এত কিছুর পর বিএনপি-জামায়াত জোটের মন্ত্রীরা এটা নিয়ে মশকরা করেছিল। পৃথিবীর ইতিহাস বলে খুনী যত শক্তিশালীই হোক আর যত আলামত নষ্ট করুক না কেন হত্যাকারীরা রেহাই পায় না। গোয়েন্দা সংস্থার কারা কারা হত্যার আলামত নষ্ট করেছে সেটা বের করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়, এটা বুঝতে সমর অস্ত্রের জ্ঞান থাকার খুব একটা দরকার হয় না। ফায়ার ব্রিগেডের কোন্ কোন্ সদস্য নিহতদের রক্ত ধুয়ে ফেলেছে সেটা বের করাও খুব একটা কঠিন কাজ নয়। সেদিন ফায়ার ব্রিগেডের সেই সময়কার কর্মরত সদস্যদের তালিকা দেখে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনলে খুব সহজে এদের পাওয়া যাবে। অবিস্ফোরিত গ্রেনেড কারা ধ্বংস করেছে তাদের খুঁজে বের করা এমন কোন কঠিন কাজ হবে না।

॥ দুই ॥
শেখ হাসিনা বহুবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুভয়ে তিনি পিছিয়ে যাননি। যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনায় রয়েছে তাই এখনই সময় এই হত্যাকা-ের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা। আওয়ামী লীগের একটা নিজস্ব ইনটেলিজেন্স সংস্থা থাকা দরকার। আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মীর মনে রাখতে হবে শেখ হাসিনার জীবন সবার আগে। শেখ হাসিনার জীবন কর্মবহুল ও বৈচিত্র্যে ভরপুর। এখন এটা শুধু একটি নামই নয়, এটা একটি প্রতিষ্ঠান।  "Work is worship" যার জীবনের মূলমন্ত্র, কর্মজ্ঞান ও ভক্তির অপূর্ব সমন্বয়ে গঠিত এক অসাধারণ জীবন তাঁর। প্রয়াত রাজনীতি বিজ্ঞানী অধ্যাপক শামসুল হুদা হারুন শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে খুবই যর্থাথ বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা বাঙালী জাতির Ralling point, cementing bond.’ জননেত্রী শেখ হাসিনা এদেশের জনগণের কাছে মুক্তিযুদ্ধের একটি রূপক। সুখে থাকার, স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগ করার আকর্ষণ মানুষের জন্য খুবই স্বাভাবিক। সাধারণের জন্য এটাই কাক্সিক্ষত জীবনযাপন। ত্যাগের কথা শাস্ত্রে আছে, মনীষীদের জীবন গ্রন্থে আছে, চলমান জীবনাচরণে থাকাটা অস্বাভাবিক। শেখ হাসিনার চরম শত্রুও বলবেন শেখ হাসিনা এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। শেখ হাসিনা জেনে-শুনে এমন একটা জীবন বেছে নিয়েছেন। সমগ্র দুনিয়ায় গোটাকতক মানুষকে এরকম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সব সময় চলতে হয়। বিশেষ করে যেসব দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী নেতা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য রাজনীতি করছেন; তাদের পদে পদে বিপদ। ঘাতকের বুলেট তাঁদের সব সময় অনুসরণ করতেই থাকে। বঙ্গবন্ধু জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে স্পষ্ট করে বলেছিলেন, ‘আমার অবস্থা যদি চিলির আলেন্দের মতো হয়, তবুও আমি সাম্রাজ্যবাদের কাছে মাথানত করব না।’ তখন সেই সভাতেই কিউবার ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছিলেন, এতদিন সাম্রাজ্যবাদের বুলেট আমাকে অনুসরণ করত; কিন্তু আজ বুঝলাম সেই বুলেট এখন থেকে শেখ মুজিবকে অনুসরণ করবে। আজ যত দিন যাচ্ছে প্রমাণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা ছিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের ক্রীড়নক।

শেখ হাসিনা দেশে ফেরার মাত্র পাঁচদিন আগে ১১ মে তারিখে (১৯৮১ সাল) বিশ্বখ্যাত ‘নিউজউইক’ পত্রিকা বক্স আইটেম হিসেবে শেখ হাসিনার সাক্ষাতকার প্রকাশ করে। শেখ হাসিনা যখন দেশে ফেরেন তখন সময়টা খুব খারাপ ছিল। বলতে গেলে যে কোন সময় একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, খুনীরা যেন সব জায়গায় ওঁৎ পেতে আছে। শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে বলেছিলেন, ‘তিনি নিহত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত নন; এমনকি যে সরকারের মোকাবেলা করবেন তার শক্তিকে তিনি বাধা বলে গণ্য করবেন না। জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়। মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’ নিজের মনোবল কত দৃঢ় হলে এভাবে একজন মানুষ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে পাঠকমাত্রই জানেন। অসংখ্যবার শেখ হাসিনার ওপর ঘাতকরা হামলা চালিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা চক্রান্তের সঙ্গে পাকিস্তানপন্থী নরপিশাচরা যেমন জড়িত ছিল, তেমনি শেখ হাসিনাকে তারাই টার্গেট করেছে। এমনকি ১৯৭৫-এর ১৪ আগস্ট লন্ডনে বিখ্যাত ‘টাইমস’ পত্রিকায় ঘাতকরা একটা বিজ্ঞাপন ছাপায়। সেখানে বাঙালী জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তানকে ফ্যাসিস্ট ডিকটেটরশিপ আখ্যা দিয়ে তাঁকে উচ্ছেদের কাজে বিশ্বজনমতের সাহায্য চাওয়া হয়। আবার এবারের সেই আগস্ট মাসেই হঠাৎ করে গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ণ্ডে শেখ হাসিনাকে গুলি করা হয়েছে। ২০০৮ সালের ১৭ আগস্ট আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী তাঁর লেখায় বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে এরকম অনেক ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছিল।’

শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাত্র ৫ দিন আগে অর্থাৎ ১৯৮১ সালের ১১ মে তারিখে ‘নিউজ উইক’-এ সেই সাক্ষাতকারে স্পষ্ট করে বলতে পেরেছিলেন, ‘আমার একটা জেদ রয়েছে, সেটা হলো দেশকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে আসা।  হৃদয়ের গভীরতম অনুভূতি দিয়ে আমি বুঝি যে, জনগণের ভাগ্যকে পরিবর্তন করে দিতে পারে যে অর্থনৈতিক উন্নতি তা আসতে পারে কেবল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মধ্য থেকেই।’ রাজনীতির আসল সত্যটি তিনি একেবারে শুরুতেই ধরতে পেরেছিলেন। তাই তো তিনি বলতে পারেন, ‘আমার রাজনীতি হচ্ছে জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করা। আমরা তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করতে চাই, যেখানে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র জনগণ এক মানবেতর জীবনযাপন করে।’
১৯৯৭ সালের ৪ জুলাই জাপানের বিখ্যাত ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রী প্রদান করে। ডিগ্রী প্রদান অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমি এমন একটি দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, যে দেশের জন্য আমার পিতা, আমাদের মহান নেতা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অশ্রুপাত করেছেন, ঘাম ঝরিয়েছেন ও বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। ব্যক্তিগত সকল কিছু জলাঞ্জলি দিয়ে আমি এখন আমার দেশের কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে একই কণ্ঠে উচ্চারণ করি- আমাদের কাছে গণতন্ত্রের চেয়ে বড় কোন আদর্শ নেই। গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীনতার চেয়ে বড় কোন ভিত্তি নেই এবং আইনের শাসন ছাড়া স্বাধীনতার জন্য বড় কোন গ্যারান্টি নেই।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক স্মরণসভায় স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে অনেক চেষ্টা হয়েছে তাঁর নাম মুছে ফেলার। খুনীরা নীতিহীন, আদর্শহীন, দিকনির্দেশনাহীন একটি বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিল। খুনীরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, তারা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধান ও আদর্শকে হত্যা করতে চেয়েছিল।’ আমরা সবাই ভাল করেই বুঝতে পারি, যে হত্যা ও ক্যু-এর রাজনীতি বঙ্গবন্ধুর ঘাতকরা ও তাদের মদদদাতারা শুরু করেছিল তা এখনও অব্যাহত আছে। তাদের এখন একমাত্র টার্গেট শেখ হাসিনা। হত্যাকারীদের অনুসারীরা এখনও আমাদের আশপাশে আছে। প্রশাসনযন্ত্রের মধ্যে ঘাপটিমেরে আছে। আওয়ামী লীগকে বুদ্ধিমত্তা ও কৌশল দিয়ে তা প্রতিহত করতে হবে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে অনেক খারাপ মানুষ সম্পৃক্ত ছিল। সেই সময়কার জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের প্রশাসনযন্ত্র থেকে শুরু করে তাদের রাজনৈতিক সদস্যরা সরাসরি জড়িত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটা অংশ এ ঘাতকদের হামলায় সহায়তা এবং প্রটেকশন দিয়েছে। সেদিনকার জনসভায় দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে খুব সহজেই এ ঘটনার মূল হোতাদের আবিষ্কার করা যাবে। সেদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে একেবারে নেতৃত্বহীন করতে চেয়েছিল। সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় সে যাত্রায় রক্ষা পাওয়া গেছে। তারপরও আইভি রহমানসহ বহু রাজনৈতিক কর্মীর জীবন প্রদীপ নিভে গেল। এখনও অসংখ্য মানুষ গ্রেনেডের স্প্লিন্টার শরীরে নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যার কান কোনদিন ঠিক হবার নয়। হয়ত সঙ্গে সঙ্গে বিদেশে যেখানে উন্নত প্রযুক্তি আছে সেখানে নিতে পারলে অপেক্ষাকৃত ভাল চিকিৎসা সম্ভব ছিল। কিছুটা হলেও ভাল অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যার জেদ ছিল তিনি সব আহতের চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে কিছুতেই বিদেশ যাবেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শরীরে অসংখ্য স্প্লিন্টার, প্রতি মুহূর্তের যন্ত্রণা তাঁকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তাই পুলিশ বাহিনীর যারা এ জঘন্য হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের তিনি খুঁজে বের করতে পারবেন। এখনও ঘাতকরা শেখ হাসিনার দিকে অস্ত্র তাক করে আছে। এদের সমূলে উৎপাটনের এখনই সময়। শেখ হাসিনার ওপর হামলার অর্থ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার শেষ আশ্রয়ের ওপর আক্রমণ। পক্ষ-বিপক্ষ সব মহলই স্বীকার করবে, শেখ হাসিনা বাঙালীর স্বাধীনতা ও জাতীয়তাবাদের এখন শব্দব্রহ্ম। লোকায়ত বাংলার ইহজাগতিকতার বীজমন্ত্র। কেউ এটা বুঝে তাঁর পক্ষে থাকে, আবার কেউবা এটা জেনেও বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তাই ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্লেষণ করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতা।

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক; সাবেক সহ-সভাপতি- বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল, প্রধান সম্পাদক- সাপ্তাহিক বাংলা বিচিত্রা ও এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম।

এই বিভাগের আরো সংবাদ