আজকের শিরোনাম :

জিয়াউর রহমানের সংবিধান বিরোধী কার্যক্রম

  সুভাষ সিংহ রায়

০৮ মে ২০২২, ০৯:৩৩ | অনলাইন সংস্করণ

সুভাষ সিংহ রায়
জিয়াউর রহমান ছিলেন ২১ এপ্রিল ১৯৭৭-৩০ মে ১৯৮০ মেয়াদকালের দখলদার রাষ্ট্রপতি। মুক্তিযুদ্ধের আগে পর্যন্ত তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ অপরিচিত ব্যক্তি। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক কীভাবে হয় তার কোনো যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা বিএনপির নেতারা দিতে পারেননি ; কখনই দিতে পারবেনও না।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন- “ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছ, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।” (অনূদিত)” এভাবেই ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পরে পাকিস্তান দখলদার হানাদার বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে প্রদত্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ওই ঘোষণা মুহূর্তেই বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে দেশময়। সাড়ে সাত কোটি বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ওই ঘোষণায় উদ্দীপ্ত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। শুরু হয় সশস্ত্র লড়াই-সংগ্রাম। অবশেষে অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে কাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জিত হয় ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠক হয়ে গেলেন স্বাধীনতার ঘোষক। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র’ ১৫ খণ্ডের সিরিজ গ্রন্থের ২০০৪ সালের পুনর্মুদ্রণকৃত তৃতীয় খণ্ডের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘মেজর জিয়াউর রহমান ২৭ মার্চ ১৯৭১ তারিখে প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন’ মর্মে বর্ণনা করা হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র গ্রন্থ সিরিজের ২০০৪ সালের ওই পুনর্মুদ্রণটির তৃতীয় খণ্ড বাজেয়াপ্ত এবং বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস বিকৃতকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চিকিৎসক এমএ সালাম।

বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক এবং বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দ্বৈত বেঞ্চ উক্ত রিট মোকদ্দমাটি শুনানি অন্তে ২১ জুন ২০০৯ তারিখের এক রায়ে ২০০৪ সালে পুনর্মুদ্রিত ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র’র তৃতীয় খণ্ডের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘মেজর জিয়ার প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা’ শিরোনামে মুদ্রিত বর্ণনা ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল তারিখের স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রের সাথে সাংঘর্ষিক বিধায় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫০-এর সাথেও সাংঘর্ষিক এবং সংবিধান পরিপন্থি মর্মে ঘোষণা করেন এবং উপরোক্ত খণ্ডটি বাজেয়াপ্ত করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের উক্ত রায় সকল কর্তৃপক্ষ ও ব্যক্তির জন্য অবশ্যই পালনীয় এবং বাধ্যকর।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পরে ২৭ মার্চ ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করে তিনি প্রথম পরিচিতি পান। স্বাধীন বাংলা বেতারের বেতারকর্মী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অনুরোধে তিনি এই ঘোষণা পাঠ করেন। তখন তিনি ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠ হঠাৎ করেই মানুষ শুনতে পায় কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের মাধ্যমে।

১৯৭৬ সালের ১৯ নভেম্বর বিচারপতি সায়েমকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করে জিয়াউর রহমান প্রথমে ওই পদে আসেন। পরে ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির পদ থেকে বিচারপতি আবু সা’দাত মোহাম্মদ সায়েম পদত্যাগ করলে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। পরদিন ২২ এপ্রিল এক বেতার ভাষণে তিনি ৩০ মে সারাদেশে গণভোট ও ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে আইয়ুব খানের গণভোটের আদলে জিয়াউর রহমান ‘হ্যাঁ’-‘না’ ভোটের আয়োজন করেন।

জিয়া যখন গণভোটের (হ্যাঁ/না ভোট) ঘোষণা দেন তখন দেশে চলছিল সামরিক শাসন। রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড ছিল বন্ধ। সামরিক শাসনের অধীনে অনুষ্ঠিত এই ‘হ্যাঁ’-‘না’ ভোটে জিয়াউর রহমান ৯৮.৯ শতাংশ ভোট পান। এ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিচারপতি সায়েম বলেন, “বস্তুত জিয়া তার অবস্থান সংহত করার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে একটা গণভোট করে ফেলেন। তার প্রতি এবং তার ঘোষিত নীতি ও কর্মসূচির প্রতি ভোটারদের আস্থা আছে কি না- তাই ছিল গণভোটের বিষয়। কিন্তু সেই গণভোটে হ্যাঁ বাক্সে এত বেশি ভোট পড়ে যে, জনগণ সেই ফলাফলকে হাস্যকরভাবে অবিশ্বাস্য মনে করে।”

আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে অবশ্য জিয়াউর রহমান নিজেই তার ক্ষমতার ‘বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতার’ ঘাটতি বুঝতে পারেন। পরবর্তীকালে, তিনি পূর্ণাঙ্গভাবে নির্বাচন দেন এবং ১৯৭৮ সালের ৩ জুন অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান অযোগ্য ছিলেন, কারণ তখনও তিনি ‘চিফ অব আর্মি স্টাফ’ হিসেবে বেতন ভাতা পাচ্ছিলেন। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমদ বেতার ভাষণের মাধ্যমে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দেয়। এভাবেই শুরু হয় বাংলাদেশে বে-আইনিভাবে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়া এবং ফরমান জারি করে স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ পরিচালনা, সাংবিধানিক সীমা লঙ্ঘন ও অসদাচরণ।

সবচেয়ে জঘন্য অসদাচরণ হলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দায়মুক্তি। তারপর ফরমানবলে বিচারপতি আবু মোহাম্মদ সায়েম ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত করেন। (LAW AND PARLIMENTARY AFFAIRS DIVISION NOTIFICATION DATED 8TH NOV. 1975).
অনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি এএম সায়েম ৮ নভেম্বর ১৯৭৫ এক নোটিফিকেশন জারি করেন। তিনি কলমের খোঁচায় সংবিধান থেকে জাতির পিতার নাম বাদ দিয়ে শুধু অসদাচরণই করেননি, জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায়ের নজির স্থাপন করেছেন।

জিয়াউর রহমান ২৯ নভেম্বর ১৯৭৬ সালে এএম সায়েমের কাছ থেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদটি দখল করেন। কয়েক মাস পর ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল বন্দুকের নলের মুখে বিচারপতি সায়েমকে সরিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। এই জিয়াউর রহমানই সবচেয়ে বেশি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তিনি ১৯৭৭ সালের ৩০ মে এক প্রহসনের গণভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালের ৩ জুন জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সে-সময় তিনি সেনাপ্রধান ছিলেন। সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় তিনি রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের অযোগ্য ছিলেন। ১৯৭৮ সালের জুন পর্যন্ত তিনি সেনাবাহিনীর পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন এ-রকম কোনো নোটিফিকেশন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হয়নি। তাই জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অবৈধ এবং আইনসংগতভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার সকল কার্যক্রম অবৈধ।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ সালের নোটিফিকেশন নং- ৭/৮/উ-১/৭৫-১৬০-এ বলা হয়েছে, 7/8/D-1/75-160-G বলা হয়েছে, MAJOR GENERAL ZIAUR RAHMAN. BU. PSC IS PROMOTED TO THE RANK OF TEMPORARY LIEUTENANT GENERAL WITH IMMEDIATE EFFECT -এর অর্থ হচ্ছে, জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অস্থায়ী লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হয়েছেন। অথচ সে-সময় তিনি নিজেকে ‘নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি’ দাবি করছেন। এই তারিখে তার পদোন্নতি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সাথে অসংগতিপূর্ণ বিধায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল নিম্নোক্ত নোটিফিকেশন দুটি জারি করে :

(ক) NO.7/8-D-1/75/270. BA-69 MAJOR GENERAL ZIAUR RAHMAN. BU. PSC IS PROMOTED TO THE RANK OF TEMPORARY LIEUTENANT GENERAL WITH EFFECT FROM 28TH APRIL 1978.
THIS CANCELS THIS MINISTRYÕS NOTIFICATION NO. 7/8/D-1-75/160 DATED 28TH FEBRUARY 1979.

(খ) NO.7/8-D-1/75/270. BA-69 TEMPORARY LIEUTENANT GENERAL ZIAUR RAHMAN, BU.PSC IS RETIRED FROM THE SERVICE OF THE BANGLADESH ARMY WITH EFFECT FROM 29TH APRIL 1978.

এ দুটো NOTIFICATION থেকে সহজেই বোঝা যায়, জিয়াউর রহমানের পদোন্নতি ও অবসর গ্রহণ দুটোই BACK DATED । রাষ্ট্রপতি কর্তৃক এত বড় মিথ্যাচারের নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এটা রাষ্ট্রপতির অসদাচরণ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বিভিন্ন NOTIFICATION পর্যালোচনা করলে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে-

১ ডিসেম্বর ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানকে মেজর জেনারেল দেখানো হয়েছে। অথচ ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিলের নোটিফিকেশনে তাকে ২৮ এপ্রিল ১৯৭৮ সালে অস্থায়ী লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে।

জিয়াউর রহমান যদি ২৯ এপ্রিল ১৯৭৮ সালে সামরিক বাহিনীর সেনাপ্রধানের চাকরি থেকে অবসর নিয়ে থাকেন আর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১ ডিসেম্বর ১৯৭৮ সালে সেনাপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন, তাহলে এই মধ্যবর্তী সময়ে সেনাপ্রধান কে ছিলেন? এ-সম্পর্কে আজ পর্যন্ত কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। এভাবেই জিয়াউর রহমান রাজনীতিকে কলুষিত করে গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে পাকিস্তানি স্বৈরাচারী ধারা পুনঃপ্রবর্তন করে নির্মম-নিষ্ঠুর ও অসাংবিধানিকভাবে দেশ শাসন করেন। অবশেষে ১৯৮১ সালের ৩০ মে যে-পথে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন, ঠিক একই পথে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।

সামরিক বাহিনীর ছত্রছায়ায় ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জিয়াউর রহমান উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে প্রদান করে প্রথমে ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল’ (জাগদল) এবং কয়েক মাস পরে, ১ সেপ্টেম্বর ‘বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি’ বা ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ (বিএনপি) নামে আরেকটি নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নিজেই দলটির চেয়ারম্যান হন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সামরিক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে। ১৯৭৯ সালের ১ এপ্রিল জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

রাষ্ট্রপ্রধানের পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর জিয়াউর রহমান সরকারি ঘোষণার মাধ্যমে সংবিধানে সংশোধনী আনেন। এই সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক আইনের আওতায় সংঘটিত সকল কার্যক্রমকে বৈধতা দেওয়া হয়। ৫ এপ্রিল সংবিধানের ‘পঞ্চম সংশোধনী’ গৃহীত হয় এবং সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হয়। জবাবে নুর জানায়, জেনারেল জিয়ার অনুমতি নিয়ে তারা এখানে খেলতে আসে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খোন্দকার মোশতাক আহমদ সেনাসমর্থিত রাষ্ট্রপতি হওয়ার কিছুদিন পর (২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫) যে ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’ বা ‘দায়মুক্তি অধ্যাদেশ’ জারি করেন, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জিয়াউর রহমান সেই কলঙ্কিত দায়মুক্তি অধ্যাদেশকে আইনি বৈধতা দেন। এর মাধ্যমে তিনি সাংবিধানিভাবে দায়মুক্তির ব্যবস্থা করেন এই হত্যাকাণ্ড এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকল ব্যক্তিকে।

নিষিদ্ধ ঘোষিত স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগসহ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি করারও সুযোগ দেন তিনি। তিনি তার মন্ত্রিসভায় একই সাথে রাজাকার, মুসলিম লীগ ও চীনপন্থি কমিউনিস্ট নেতাদের স্থান দেন। তার সহযোগিতায় জামায়াতে ইসলামী স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পায়। সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করলেও জিয়াউর রহমানের সময়ে বেশ কয়েকটি সেনাবিদ্রোহ ও সামরিক অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়। এসব বিদ্রোহ দমনে তিনি কঠোর অবস্থান নেন। সেনাবাহিনীর প্রায় ১ হাজার ১৩০ জন সিপাহি ও নন-কমিশনড অফিসারকে তার শাসনামলে ফাঁসি দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর ‘দালাল আইন’ বাতিল করা হয়- Ordinance No. 63 of 1975.

জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশের ভয়ঙ্কর সব পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল। ১৯৯২ সালে ১৬ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছিলেন। মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী নরঘাতক গোলাম আজম ও গণ-আদালত প্রসঙ্গে ভাষণদানকালে অনেক সুনির্দিষ্ট তথ্য উপস্থাপন করেছিলেন। “১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর Second Proclamation Order No. 3 of 1975 প্রথম তফসিল থেকে বাংলাদেশ দালাল আইনের যে সেফগার্ড ছিল, তা তুলে দেওয়া হয়।
* এরপর ১৯৭৬ সালে Second Proclamation Order No. 3 of 1976 জারি করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার লক্ষ্যে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদের শর্তাদি তুলে দেওয়া হয়।
* Second Proclamation (ঘোষণা) জারি করে সংবিধানের ১২২ অনুচ্ছেদ তুলে দিয়ে দালালদের ভোটার হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়।
* Proclamation Order No. 1 of 1977 জারি করে সংসদে নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের কিছু অংশ তুলে দেওয়া হয়।
* ১৯৭৬ সালের ১৮ জানুয়ারি নাগরিকত্ব ফেরত পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে আবেদন করতে বলা হয়।
* এবং Proclamation Order No. 1 of 1977 ১৯৭৭ দ্বারা সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ তুলে দেওয়া হয়।”

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক; সাবেক সহ-সভাপতি- বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল, প্রধান সম্পাদক- সাপ্তাহিক বাংলা বিচিত্রা ও এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম।

এই বিভাগের আরো সংবাদ