আজকের শিরোনাম :

বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও রাষ্ট্রগঠনকালে প্রতিবেশী ভারতের ভূমিকা

  সুভাষ সিংহ রায়

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৮:১০ | অনলাইন সংস্করণ

অতি সম্প্রতি ভারত সরকার কোভিড-১৯ এর ২০ লাখ টিকা বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠিয়েছে বন্ধুত্বের শুভেচ্ছা হিসেবে। আবারও প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু প্রতিবেশী ভারত। বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক রক্তের আখরে লেখা। এ কথা আমরা সবাই জানি, ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছিল। ১ কোটিরও বেশি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় দেয়া সেই সময়ের ভারতের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান। প্রায় ১৪ হাজারের অধিক ভারতীয় জওয়ান বাংলাদেশের মুক্তি-সংগ্রামে জীবন দিয়েছে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন এবং শেষ দিকে বাংলাদেশ-ভারত মিত্রবাহিনীর সম্মিলিত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছিল। ইতিহাসে যার যতটুকু ভূমিকা স্বীকার করা ও স্মরণে রাখা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানে কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কোর্ট মার্শাল বিচারের আয়োজন করেছিল। সেক্ষেত্রে তৎকালীন ভারত যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল তা ইতিহাসে বিরল।

ভারত সরকার কোর্ট মার্শাল নিয়ে ১০ আগস্ট ১৯৭১ জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্টকে যে বার্তা প্রেরণ করে তা ভাষান্তরিত হলো : “আগামীকাল থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের শুরু হতে যাচ্ছে রাওয়ালপিন্ডি থেকে এই ঘোষণা আমরা বিপন্ন ও বিস্মিতবোধ করছি। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক বিবৃতির প্রাক্কালে ‘শেখ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং রাষ্ট্রদ্রোহী কাজে লিপ্ত হয়েছেন’ এই অজুহাতে বিচার করতে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের অবিসংবাদিত নেতা, তাদের অত্যন্ত প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয়। ১৯৭০-এর ডিসেম্বরে নির্বাচনে এমন অভূতপূর্ণ বিজয় সম্প্রতি পৃথিবীর আর কোথায় ঘটেনি। পূর্ববাংলায় পাকিস্তান সরকারের অভিযানে আমাদের জন্য যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও ব্যক্তির ওপর চূড়ান্ত কিছু ঘটলে এই সংকটের তীব্রতা ১০ গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আমাদের জনগণ, গণমাধ্যম, পার্লামেন্ট এবং সরকার মনে করে। আপনার মহানুভবতার কাছে আমাদের আবেদন, অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করে পাকিস্তান সরকারকে বলুন তারা যেন এ ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ না করেন, যা তাদের ও আমাদের সংকটকে আরও তীব্র করে তুলবে। যদি তারা মুজিবের কিছু করে তার পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর ও দুর্বিষহ।”

আরেকটি বিষয় এখানে ইতিহাসের পাদটীকা হিসেবে উল্লেখ করা যায়, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুক্তি ও বাংলাদেশের জনযুদ্ধের বিজয়ে যে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিলেন তা একটু বিস্তারিত জানানো দরকার। ভারতীয় পার্লামেন্টে ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, পাকিস্তানের মিত্রদের প্রস্তাবিত কিছু প্রান্তিক উদ্যোগ যে সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হতে বাধ্য তা সাধারণভাবে পশ্চিমা বিশ্বের সিভিল সোসাইটি এবং জনমত বুঝতে পেরেছে। ইন্দিরা গান্ধী বলেন, “ঐসব দেশের নেতৃবৃন্দের অনেকেই অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছেন যে, বাংলাদেশের নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের কাছে গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক উদ্যোগ কেবল ঐ সংকট সমাধানের একমাত্র পথ এবং এ জন্যে The Release of Sheikh Mujib is essential.” তিনি আরও বলেন, পশ্চিমা বিশে^র কাছে এটা এখন স্পষ্ট যে, বিষয়টি আর পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয় কিংবা ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক ইস্যুও নয়। কারণ : ÒPakistan efforts to side-track and could the basic issue by seeking to involve the United Nation and to transform the struggle of the people of Bangladesh into an Indo-Pakistan confrontation and conflict have been exposed.”

তিনি বলেছিলেন, আমরা আন্তর্জাতিক বিশ্বে সহানুভূতি ও সমর্থন পেতে পারি তবে সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের তাদের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না; বরং বাংলাদেশকে নিজের শক্তিতে স্বাধীনতার অর্জন করতে হবে এবং ভারত পূর্ণ শক্তি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম নিয়ে ইন্দিরা গান্ধীর এই বিশ্লেষণ যথার্থ ছিল। কারণ ১৯৭১-এর বাংলাদেশের বাঙালিদের সামাজিক ঐক্য পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা সম্মিলিত স্রোতের চেয়ে বেগবান এবং এই জনযুদ্ধের বিজয় তাই অনিবার্য। ১৫ নভেম্বর ১৯৭১, Newsweek-এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের জনযুদ্ধ যে ন্যায়সংগত, গণতান্ত্রিক এবং একটি পরিপূর্ণ সংগ্রাম তারই একটি সংক্ষিপ্ত অথচ চিত্তাকর্ষক বিবরণ দিয়েছিলেন। এই পরিসরে সেটার কিছুটা উল্লেখ করা প্রয়োজন।

“As you know, the majority of the guerillas are the para-military force of East Bengal. ... And they are the ones who are training new people... the Pakistani Army will have to kill all the 75 million people in East Bengal Before they can have control over them. ... And I have absolutely no hesitation in saying that if I were placed in a situation like the Bengalis, I certainly would fight.”

ইন্দিরা গান্ধী সর্বশেষ পশ্চিম জার্মানির বনস্থ বিথোভেন হলে এই বক্তৃতায় বাংলাদেশের ওপর আমরা কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেই না কিংবা তাদের কোনো পরামর্শও দিতে পারি না। তিনি বলেন, ভারতের পক্ষে তিনি যদি ইয়াহিয়ার সাথে বাংলাদেশকে আপস করার পরামর্শও দেই, তারা তা কেন গ্রহণ করবে? সর্বোপরি ইতিহাসের পরিবর্তনের মুহূর্তে ইন্দিরা গান্ধী দলমত নির্বিশেষে তার দেশের সমগ্র জনতার সমর্থন পেয়েছিলেন। বামপন্থী, মধ্যপন্থী ও দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক নেতা ও সংসদ সদস্য একযোগে তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। যেমন- গোয়ালিয়র থেকে নির্বাচিত জনসংঘ (বর্তমানে বিজেপি)-এর সংসদ সদস্য অটল বিহারী বাজপেয়ী ৬ ডিসেম্বর লোকসভায় তার ভাষণে যা উল্লেখ করেছিলেন সেটির জন্য বাংলাদেশ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে দ্বিধান্বিত হয়নি। ২০১৫ সালের ৭ জুন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার স্বাধীনতার লড়াইয়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে অনন্য ভূমিকার কথা স্মরণ করে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিজেপি নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীকে ‘মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ দিয়েছিল। আমাদের স্মরণে রাখা দরকার, ভারতের লোকসভায় অটল বিহারী বাজপেয়ী বলেছিলেন, “স্পিকার মহাশয়, দেরিতেই হোক না কেন, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে একটি সঠিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নিয়তি এই সংসদ, এই দেশকে এমন গুরুত্বপূর্ণ কালপর্যায়ে এনে উপস্থিত করেছে যখন আমরা মুক্তিসংগ্রামে আত্মহুতি দানকারী লোকদের সমভিব্যাহারে যুদ্ধ করছি, আমরা কিন্তু ইতিহাসের গতির নতুন দিকনির্দেশের জন্যও সচেষ্ট রয়েছি।... আমি মনে করি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সত্যি ধন্যবাদের পাত্রী।”

ভারতের রাজ্যসভা ও লোকসভা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রশ্নে যৌথভাবে অধিবেশনে বসেছে। এটা প্রমাণ করে যে, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা বাংলাদেশকে সমর্থন প্রদানে কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, যেমন- ৩১ মার্চ ১৯৭১, রাজ্যসভা ও লোকসভায় ‘Recent Development in East Bengal’ শিরোনামে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন ইন্দিরা গান্ধী এবং উভয় সভায় প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। একইভাবে ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, রাজ্যসভা ও লোকসভার আরেকটি যৌথসভা বসে, সেখানে “Statement by Prime Minister Re : Recognition of Bangladesh.” ৩ ডিসেম্বর লোকসভায় জরুরি অবস্থা ঘোষণাবিষয়ক প্রস্তাব পাস করে। এই প্রস্তাব উত্থাপনকালে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী তার বক্তৃতায় বলেন, “We have stood for peace, but peace itself has to be defended.” আগেই বলা হয়েছে যে, ভারতীয় রাজ্যসভা ও লোকসভায় ইন্দিরা গান্ধীর প্রদত্ত বক্তৃতার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ ঘোষণা ছিল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান। তিনি ৬ ডিসেম্বর তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে নিম্নোক্ত ঘোষণা প্রদান করেন :

“I am glad to inform the House that in light of the existing situation and in response to the repeated requests of the Government of Bangladesh the Government of India have after the most careful consideration, decided to grant recognition to the GANA PRAJATANTRI BANGLADESH.”

সেদিনকার বক্তৃতায় তিনি আরও বলেছিলেন, আমাদের চিন্তা এবং যাবতীয় কর্মকাণ্ড এ-মুহূর্তে বাংলাদেশ নামক নতুন রাষ্ট্রের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের (Father of New State) সাথে রয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় যে, ৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের জাতির পিতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ভারতে ঐ উপাধি তার পিতা জওহরলাল নেহরুরও ছিল না। কারণ ভারতের জাতির পিতা হচ্ছে মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধী। ৬ নভেম্বর ইন্দিরা গান্ধী যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় তার নিজের চেয়ে, বঙ্গবন্ধুকে জনগণের কাছে বিশাল জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত করেন। তার মতে, “I am congratulated on my great majority. But it was nothing compared to the majority which Sheikh Mujibur Rahman gained in the election in Pakistan. It was a tremendous victory for him. And he is not an extremist. He was a moderate person.”

দুই
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর এটা সবারই প্রত্যাশা ছিল যে দুদেশের পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে দুটো দেশই এগিয়ে যাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শান্তির পথে। সত্যি সত্যি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দুই দেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছিল। একটা পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টা বেশ পরিষ্কার হয়ে যাবে, ১৯৭২-৭৩ সালে শুধু খাদ্য বা ভোগ্যপণ্য নয়, পরিবহন যোগাযোগ-ব্যবস্থার মেরামত ও পুনর্গঠনের জন্য এবং শিল্প-কারখানায় কাঁচামাল সরবরাহেও ভারত ব্যাপক সহায়তা প্রদান করে। ভারত নিজে তেলের আমদানিকারক হয়েও বাংলাদেশের জ্বালানি তেল শোধনাগারের (রিফাইনারি) জন্য অপরিশোধিত তেল সরবরাহ করে জরুরি সহায়তা করেছিল। ভারত বেসামরিক বিমান ও জাহাজ সরবরাহ করে। নতুন দেশটির জন্য সবচেয়ে জরুরি ছিল খাদ্য। ১৯৭২-এর শুরুতে বাংলাদেশ একদিকে যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষতি এবং আরেক দিকে পরপর দুবার শস্যহানির কবলে পড়ে। ভারতে সহায়তা হিসেবে শুধু ৪ লাখ টন খাদ্যশস্যই দেয়নি, খাদ্যশস্য পরিবহনেও সহায়তা করে। প্রথম ছয় মাসে মোট প্রাপ্ত খাদ্য সহায়তার ৭৪ শতাংশই ভারত দিয়েছিল। ১৯৭১-এর ডিসেম্বর থেকে ১৯৭২-এর জুনের মধ্যে ২০ কোটি মার্কিন ডলার দান হিসেবে এবং পণ্য আমদানি ও প্রকল্পের জন্য অত্যন্ত সহজ শর্তে ৪.২ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ প্রদান করে। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৪-৭৫ সময়ে ভারত ৩০.৮ কোটি মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫৭.৭ কোটি মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার পর দাতাদের মধ্যে এটাই ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সহায়তা।

তিন
মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসের সময়ে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, ক্ষেতের ফসল, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সমস্ত ব্যাংকের গচ্ছিত অর্থ লুট- সবই নীলনকশা অনুযায়ী করেছিল। যুদ্ধের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি ২১-২৩ বিলিয়ন ডলার বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে অবকাঠামোগত পুঁজি দাঁড়ায় ২০ বিলিয়ন ডলার এবং মানবপুঁজি ৩ বিলিয়ন ডলার। এসএ চৌধুরী ও এসএ বাশার, ‘দি এনডিওরিং সিগনিফিক্যান্স অব বাংলাদেশ’স ওয়ার অব ইনডিপেনডেন্টস; অ্যান অ্যানালাইসিস অব ইকনমিক কস্টস অ্যান্ড কপিকোয়েন্সেস’, ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটি, কানাডা (অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি), ২০০১। (তথ্য সূত্র : কামাল হোসেন, ‘দি মেকিং অব বাংলাদেশ, চ্যাপ্টার টেন-বাংলাদেশ অ্যান্ড রিলেসন্স উইথ পাকিস্তান’, অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি, ঢাকা)। বঙ্গবন্ধু সরকার পাকিস্তান সরকারের কাছে পাওনা ন্যায্য অর্থের বারবার দাবি জানিয়েছে। ১৯৭৪ সালের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় পাকিস্তান সরকার অর্থ ফেরতের কথা স্বীকার করেছিল। এমনকি কীভাবে কিস্তিতে পরিশোধ করবে তারও চূড়ান্ত আলোচনা করা হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-বিরোধী শক্তি ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশে পাকিস্তানতন্ত্র কায়েম করেছিল। অতএব সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের কাছ থেকে পাওনা আদায় দূরে থাক, পারলে পুরো দেশটাই পাকিস্তানের কাছে বন্ধক দেয়ার বন্দোবস্ত করে ফেলেছিল।

আমরা ভালোভাবে জানি, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে ক্ষমতাদখলকারী মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি কর্তৃক ভারতকে বাংলাদেশের রাজনীতির গুটি হিসেবে ব্যবহার করেছিল। পারস্পরিক শ্রদ্ধা আর আস্থার বদলে পরিকল্পিতভাবে ছড়ানো হয় অবিশ্বাস আর বিশ্বাসভঙ্গের কূটকৌশল। ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতবিরোধী স্লোগানের আড়ালে রয়েছে কুৎসিত রাজনীতি। ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ভারতের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করা হলেও বাংলাদেশের দাবি-দাওয়া ভারতের কাছে উত্থাপন এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে তা আদায়ের প্রশ্নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। অথচ এটাই বাংলাদেশের জন্য ছিল সবচেয়ে মঙ্গলজনক। উপমহাদেশের জন্য ছিল সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ। ভারত নিয়ে এই রাজনীতির গূঢ় রহস্য বুঝতে হলে আমাদের পেছনে ফিরে দেখতে হবে। তথ্যগুলো তুলে ধরতে হবে মানুষের সামনে; বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা দরকার।

জে এন দীক্ষিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের প্রথম কূটনৈতিক প্রতিনিধি এবং ডেপুটি হাইকমিশনার। পরবর্তীকালে নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তিনি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব নিযুক্ত হন। আমি তখন ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম ৩টি বছর ঢাকা থাকাকালীন তিনি বঙ্গবন্ধুকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপর ‘Liberation and Beyond’ শীর্ষক একটি বই রচনা করেছেন, যাতে তিনি বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপর আগ্রহ-উদ্দীপক কিছু মন্তব্য করেছেন, যাতে দুদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্বন্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। দীক্ষিত তার বইয়ে লিখেছেন, “ঢাকায় বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠার পরপরই ভারত বাংলাদেশকে দুটি সমুদ্রগামী জাহাজ এবং দুটি ফকার ফ্রেন্ডশিপ উড়োজাহাজ অনুদান হিসেবে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশকে নিয়ে শেখ মুজিবের আত্মসম্মান এতই প্রবল ছিল যে তিনি এই বাহনগুলো অনুদান হিসেবে গ্রহণ না করে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিয়ে ক্রয় করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।” দীক্ষিত লিখেছেন, “বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সূচনাতেই শেখ মুজিব গঙ্গার পানি বণ্টন এবং ছিটমহল হস্তান্তরের প্রশ্নগুলো উত্থাপন করেন এবং ভারতের দখলিকৃত পাকিস্তানি সমরাস্ত্র এবং গোলাবারুদ বাংলাদেশকে ফেরত দেয়ার কথাটি তোলেন এই যুক্তিতে যে সেগুলো বাংলাদেশের প্রাপ্য। তাছাড়া মুজিব এই যুক্তিও তুলে ধরেন যে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী পাকিস্তানি অস্ত্র ব্যবহারে অভ্যস্ত এবং তাই সেগুলো বাংলাদেশের সেই সময়কার অনিশ্চিত অভ্যন্তরীণ অবস্থা মোকাবিলায় সহায়ক হবে।” দীক্ষিতের কথায়, যদিও শেখ মুজিব জানতেন যে বাংলাদেশের অস্তিত্বের সূচনার সেই দিনগুলোতে বাংলাদেশের ভারতীয় সাহায্য-সহায়তার প্রয়োজন, তবু তিনি চাইতেন না যে বাংলাদেশ ভারতের ওপর অতিরিক্ত মাত্রায় নির্ভরশীল হোক। ইতিহাসের পাঠকরা ভালো করেই জানেন বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি লন্ডনে আসার আগে জুলফিকার আলী ভুট্টো নানারকম আপস ফর্মুলা নিয়ে বৈঠকে করার চেষ্টা করেছিলেন। কোনোরকম একটা সম্পর্ক রাখা যায় কি না সেই চেষ্টাও করেছিল।

বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ইয়াহিয়া খানের কাছে তিনি ধরা দিলেন কেন? অনেকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন... অজ্ঞাতবাসে যাওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বলেন, “আমি তাও অস্বীকার করেছি।” তিনি বলেছিলেন, “যখন তাঁর দেশবাসীরা বুলেটের আঘাতে প্রাণ দিচ্ছে তখন ভারতে পালিয়ে যাওয়াও তাঁর পক্ষে কাপুরুষতা বলে মনে হয়েছে।” এ প্রসঙ্গে একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রখ্যাত লোকগবেষক বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের বই ‘বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ এবং প্রাসঙ্গিক কথকতা’ থেকে জানতে পারি। ১৯৭৪ সালের দিকে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক ড. মযহারুল ইসলাম, লেখক সাংবাদিক রাহাত খান, শামসুজ্জামান খান এবং বাংলা একাডেমির তৎকালীন সংস্কৃতি বিভাগের ম. জিল্লুর রহমান বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে কথা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু যা বলেছিলেন তা খুবই প্রণিধানযোগ্য। “২৫শে মার্চ (১৯৭১) রাতে আমি গ্রেফতার হবার আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দেই। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মাধ্যমে ওয়্যারলেসে সে ঘোষণা সব জেলা সদরে পাঠানো হয়। আমি বিভিন্ন চ্যানেলে ভারতের সঙ্গেও যোগাযোগ করে যাই। তা না হলে তোমরা অত সহজে অস্ত্র ও সাহায্য সহযোগিতা পেতে না।”

আমরা প্রশ্ন করলাম কিন্তু আপনি কেন ওদের হাতে ধরা দিলেন। তিনি বললেন, “এ ব্যাপারে আমার বেশ ক’টি চিন্তা কাজ করেছে। এক. আমাকে ধরতে না পারলে ওরা আরও বেশি লোককে খুন করত; দুই. আন্তর্জাতিকভাবে আমরা বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ভারতের ক্রীড়নক বলে প্রমাণিত হতাম এবং এতে আন্তর্জাতিক সহমর্মিতা কমতো এবং আরও বেশি দেশ আমাদের আন্দোলন সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করতো। আর একটা কথা বলি, তোমরা কীভাবে নেবে জানি না, প্রফেসর সাহেব আমার সঙ্গে একমত হবেন কি না তাও বলতে পারি না- তবে আমার সুদৃঢ় বিশ্বাস আমি পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি থাকায় আমার দুঃখী বাঙালিদের মধ্যে দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ যেমন বেড়েছে তেমনি মানুষ আমার অনুপস্থিতিতে আমার একটা বিশাল প্রতীক মনে মনে তৈরি করে নিয়েছে। এটা ছিল মুক্তিযুদ্ধের খুব বড় একটা শক্তি। আমি প্রবাসী সরকারে থাকলে শুধু প্রমাণ সাইজের মুজিবই থাকতাম। ওদের হাতে বন্দি থাকায় আমি এক মহাশক্তিধর ও বাংলাদেশের সকল মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতার ভূমিকায় স্থান পাই। মানুষ আমার নাম নিয়ে হেলায় হেসে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। কী অমোঘ অস্ত্র ছিল, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। ওরা যদি আমাকে মেরে ফেলতো, তাহলে আমি আরও বড় প্রতীকে পরিণত হতাম। বাংলার মানুষ আরও লড়াকু হয়ে যুদ্ধ করত।”

চার
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন বাঙালির ওপর হামলে পড়ে, তখন ভাসানী ভারতে পাড়ি জমান। তার দলের একজন শীর্ষ নেতা তাকে পূর্ব বাংলায় ফিরিয়ে আনতে গেলেও, ভাসানীর এতটুকু রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল যে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন পূর্ব বাংলা দখলদার বাহিনীর অধীনে থাকা অবস্থায় সেখানে ফিরে যাওয়াটা নিরাপদ হবে না। ভারতে থাকা অবস্থায় ভাসানীকে একজন প্রবীণ রাজনীতিকের জন্য প্রাপ্য উপযুক্ত সম্মান দিয়ে রাখা হয়েছিল। সেখানে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের জন্য ভারত সরকার যা করছিল তার জন্য ভারত সরকারকে তিনি একাধিকবার ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। দেশে ফেরার অল্প পরেই তিনি ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছিলেন। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তির ভূয়সী প্রশংসা করে ২৪ মার্চ ১৯৭২ এ তিনি বলেছিলেন, “স্বাধীনতার সংগ্রামের সময় প্রমাণিত হয়েছে ভারত বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু। আমি এটি কোনোদিন ভুলব না।” ভাসানী দেশের সংকটগুলো সমাধান করা জন্য মুজিব সরকারকে দুই থেকে তিন বছর সময় দেয়ার জন্য জনগণকে অনুরোধ করেছিলেন। অথচ, অল্প সময়ের মধ্যেই ভাসানী বলতে শুরু করেন যে, ভারতে থাকা অবস্থায় তিনি কার্যত বন্দী ছিলেন। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধির জন্য তিনি প্রতিদিন ভারত থেকে যে হাজার হাজার হিন্দু তাদের পূর্বপুরুষের ঘরবাড়ি দেখবার জন্য বাংলাদেশে আসছিলেন তাদের দায়ী করেছিলেন।

তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, “এদেশ যদি তাদের এত ভালোই লাগে তবে কেন তারা এদেশের অংশ হয়নি?” মূলত ভারত ও বাংলাদেশকে বিব্রত করার জন্যই তিনি বাংলাদেশ, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরাকে নিয়ে বৃহত্তর বাংলার পুরোনো ধারণাটি আবার সামনে নিয়ে আসেন। এর আগে আসামকে পাকিস্তানের অংশ করে নেয়ার দাবিতে কেউ কান দেয়নি। কিন্তু বৃহত্তর বাংলা গঠনের চিন্তাটি ভয়ঙ্কর। ভুট্টো ১৯৭৫ সালের ১৮ এপ্রিল কাবুলে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে তার ভাষণে বলেন, “১৯৭২ সালে আমি সিমলায় গিয়েছিলাম কারণ তখন আমাদের শান্তি দরকার ছিল। কিন্তু এখন পাকিস্তানের চেয়ে ভারতেরই বেশি শান্তি দরকার। পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখা এখন ভারত ও বাংলাদেশের নিজেদের স্বার্থের জন্যই দরকার।” তিনি আরও বলেন, “শিগগিরই এ অঞ্চলে কিছু বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে।” ভুট্টো ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থানের ইঙ্গিত এখানে দিয়েছিলেন ভাবলে সেটা হয়তো একটু বেশিই দূরদর্শিতা হয়ে যাবে, তবুও অনেকেই এমন দাবি করেছেন। যা হোক তিনি শুধু মোশতাক সরকারকে খুব দ্রুত স্বীকৃতি দিয়েই ক্ষান্ত হননি; বরং এ সরকারকে শক্তিশালী করতে তার পক্ষে যা করা সম্ভব তার সবই করেছেন।

আমরা একসময় স্লোগান দিতাম ‘ শান্তির দূত শেখ মুজিব, জুলিও কুরি শেখ মুজিব, লও লও লও সালাম’। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন সারাবিশ্বের শান্তির জন্য লড়াই করেছেন। যদি আমরা ৪৮-৪৯ বছর আগে ফ্লাশ ব্যাকে যাই তাহলে স্পষ্ট করে অনেক কিছুই জানতে পারব। ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে কলকাতায় তাঁর সম্মানে প্রদত্ত নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি পাকিস্তানের প্রতি দৃষ্টি রেখে বলেছিলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না প্রতিশোধ গ্রহণে কোনো মহৎ কর্তব্য পালন করা যায়।’ ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালের সন্ধ্যায় কলকাতার রাজভবনে তাঁর সম্মানে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী প্রদত্ত ভোজসভায় তিনি একটি ঐতিহাসিক উক্তি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার একান্ত কামনা, উপমহাদেশে অবশেষে শান্তি ও সুস্থিরতা আসবে। প্রতিবেশীদের মধ্যে পারস্পরিক বিরোধিতার বন্ধ্যানীতির অবসান হোক। আমাদের জাতীয় সম্পদের অপচয় না করে আমরা যেন তা আমাদের দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ব্যবহার করি। দক্ষিণ এশিয়াকে একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত করায় আমরা সচেষ্ট রইব, যেখানে আমরা সুপ্রতিবেশী হিসেবে পাশাপাশি বাস করতে পারি এবং যেখানে আমাদের মানুষের মঙ্গলার্থে আমরা গঠনমূলক নীতিমালা অনুসরণ করতে পারি। যদি আমরা সেই দায়িত্বে ব্যর্থ হই, ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।’

উপমহাদেশের উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতে, যখন রণাঙ্গণ থেকে রক্তের দাগও মুছে যায়নি, আঞ্চলিক সহযোগিতা বিকাশের এই উদাত্ত আহ্বান, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের একজন রাষ্ট্রনায়কের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর পরিপক্কতার পরিচায়ক। দেশে বঙ্গবন্ধু করেছিলেন এঁকই কথার পুনরাবৃত্তি। ১৯৭৪ সালের মার্চের ৪ তারিখে তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে এক জনসভায় বলেছিলেন, ‘এই উপমহাদেশে আমরা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল আর শ্রীলঙ্কা মিলে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। আমরা কারও সঙ্গে বিবাদ চাই না। আমরা স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে, আত্মমর্যাদার সঙ্গে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে বাস করতে চাই। আমি চাই না যে আমাদের বিষয়াদিতে কেউ হস্তক্ষেপ করুক। আমরাও অন্যের বিষয়াদিতে হস্তক্ষেপ করতে আগ্রহী নই।’ বাংলাদেশ ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আরও ব্যাপ্তি দিয়ে আমরা সমৃদ্ধ হতে পারতাম। (অথচ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের পর অআওয়ামী লীগ সরকারগুলো বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালিত করতে গিয়ে বাংলাদেশের বিশাল ক্ষতি করেছে।

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক, প্রধান সম্পাদক- সাপ্তাহিক বাংলা বিচিত্রা ও এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম

এই বিভাগের আরো সংবাদ