আজকের শিরোনাম :

বাঘ শুমারির ফল কবে, জানাল বনবিভাগ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৫৬

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতিতে বাঘ শুমারির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন জরিপ চলছে খুলনা রেঞ্জে। চলতি মাসে খুলনা রেঞ্জে বাঘ শুমারির কাজ সম্পন্ন হবে। ৬ মাস বিরতি দিয়ে শুরু হবে শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে। এরপর পর্যালোচনা করে ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসে বাঘ শুমারির ফলাফল ঘোষণা করবে বনবিভাগ।

সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মো. মোহসিন হোসেন জানান, গত ১ জানুয়ারি থেকে সুন্দরবনে বাঘ শুমারির কাজ শুরু হয়েছিল। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জে ২০০টি ক্যামেরা দিয়ে বাঘ শুমারি সম্পন্ন হয়েছে। কিছুদিন আগে খুলনা রেঞ্জে ১৮০টি ক্যামেরা দিয়ে শুমারির কাজ শুরু হয়েছে। যা আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সম্পন্ন হবে।

তিনি জানান, খুলনা রেঞ্জে শুমারি সম্পন্ন হলে ৬ মাস বিরতি দেয়া হবে। মূলত ঝড়-বৃষ্টির মৌসুম শুরু হওয়ায় এবং নদী উত্তাল থাকায় এই ৬ মাস কাজ বন্ধ রাখা হবে। এরপর ১ নভেম্বর থেকে প্রথমে চাঁদপাই রেঞ্জে এবং শেষ পর্যায়ে শরণখোলা রেঞ্জে শুমারি করা হবে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে শুমারির কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। মোট ৬৬৫টি গ্রিড বা পয়েন্টে দুটি করে ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে শুমারি করা হচ্ছে।  

প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, মাঠ পর্যায়ে শুমারির কাজ সম্পন্ন হলে ক্যামেরায় সংগ্রহ করা ছবি ও অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত ঢাকায় ল্যাবে পর্যালোচনা করা হবে। ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসে শুমারির ফলাফল প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি পয়েন্টে ক্যামেরা রাখা হয় ৪০ দিন করে। সুন্দরবনে গাছের সঙ্গে মাটি থেকে ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে এই ক্যামেরা স্থাপনা করা হয়। ১৫ দিন পরপর ক্যামেরার ব্যাটারি ও মেমোরি কার্ড পরিবর্তন করে দেয়া হয়ে থাকে। এই ক্যামেরার সামনে দিয়ে কোনো বাঘ বা অন্য কোনো বন্যপ্রাণী গেলে সেই ছবি ও ১০ সেকেন্ডের ভিডিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধারণ হয়ে যায় ক্যামেরায়।

গত ১ জানুয়ারি সুন্দরবনের কালাবগি এলাকায় পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার বাঘ শুমারি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। উপমন্ত্রী জানান, সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় বাঘ সংরক্ষণ জরুরি। এছাড়া বাঘের সংখ্যা এবং বর্তমান অবস্থা জানার জন্য বাঘ শুমারি করা হচ্ছে।

বন বিভাগ জানায়, বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ ও সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের ২৩ মার্চ ‘সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের’ অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধুমাত্র বাঘ শুমারি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা।

প্রকল্প পরিচালক জানান, সুন্দরবনের অভয়ারণ্য ও অভয়ারণ্য এলাকার বাইরে এই বাঘ শুমারি করা হচ্ছে। বনের কম লবণাক্ত, মধ্যম লবণাক্ত ও বেশি লবণাক্ত সব এলাকাই জরিপের আওতায় আসবে।

বাঘ শুমারি দলে থাকা বাঘ গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ আজিজ বলেন, ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের জন্য বাঘের সংখ্যা জানা খুবই জরুরি। জরিপে যদি দেখা যায় বাঘের সংখ্যা বেড়েছে তাহলে বোঝা যাবে যে ব্যবস্থাপনা ভালো আছে। আর যদি দেখা যায় বাঘের সংখ্যা কমেছে তাহলে বুঝতে হবে ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি আছে। তখন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

প্রসঙ্গত, ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতিতে সুন্দরবনে বাঘ শুমারি এটি তৃতীয়বার। এর আগে ২০১৫ ও ২০১৮ সালে একই পদ্ধতিতে বাঘ শুমারি করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের আগে পায়ের ছাপ দেখে বাঘ শুমারি করা হতো। ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ১১৪ টি, যা ২০১৫ সালে ছিল ১০৬ টি।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ