আজকের শিরোনাম :

মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন : ২ ডিসেম্বর, ১৯৭১

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:৫০

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা নিয়ে ‌‘মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন’ নামের এই আয়োজন।

এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম পাঠকদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের আজকের দিনে (২ ডিসেম্বর) ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হল-

  • ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ২ ডিসেম্বর দিল্লিতে বলেন, মুক্তিবাহিনীর অগ্রযাত্রা রুখতেই পূর্ববঙ্গে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক মোতায়েনের কথা বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, অভিযোগ উঠেছে, ভারত থেকে মুক্তিবাহিনীকে কাজ চালাতে দেওয়া হচ্ছে। পূর্ববঙ্গের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত এতই দীর্ঘ যে তাদের আটকানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সেনা ফিরিয়ে নিলেই কেবল সমস্যার সমাধান হতে পারে। ইন্দিরা তাঁর বাসভবনে সমবেত কংগ্রেস কর্মীদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।
  • এই দিন তিনটি পাকিস্তানি স্যাবর জেট দুপুরে আগরতলা বিমান ঘাঁটিতে বোমা ফেলে যায়। খবরটি রাজধানীতে পৌঁছামাত্র প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম এক জরুরি বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মানেকশ ও প্রতিরক্ষাসচিব কে বি লালসহ ঊর্ধ্বতন সেনা, বিমান ও নৌ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর নির্দেশ দেওয়া হয়, আগরতলার বিমানঘাঁটি ও শহরে পাকিস্তানি হামলার জবাব দিতে তারা যেন পাকিস্তানি এলাকায় ঢুকে পড়ে।
  • যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র চার্লস ব্রে ওয়াশিংটনে বলেন, উত্তেজনা যাতে প্রশমিত হয়, যুক্তরাষ্ট্র তেমন ব্যবস্থা নিতে চায়। ভারতকে আক্রমণকারী বললে উত্তেজনা প্রশমনে সহায়ক হবে না।
  • রেডিও পাকিস্তান এদিন জানায়, ইয়াহিয়া খান সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতাদের কাছে পাঠানো এক নোটে ২২ নভেম্বর থেকে পূর্ব পাকিস্তানে ভারতের অঘোষিত যুদ্ধের বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। নোটটি কবে পাঠানো হয়েছে তা বলা হয়নি।
  • মুজিবনগরে একটি সূত্র জানায়, দিল্লির পাকিস্তান হাইকমিশনের অবশিষ্ট বাঙালি কূটনীতিক রিয়াজ রহমান সম্প্রতি বদলি হয়ে ইসলামাবাদ চলে গেছেন। তিনি পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরীর জামাতা। দিল্লির পাকিস্তানি হাইকমিশনের রিয়াজ রহমানই একমাত্র কূটনীতিক, যিনি বাংলাদেশের পক্ষে যোগ না দিয়ে পাকিস্তানে চলে গেলেন।
  • মুক্তিবাহিনী এদিন যশোর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলের আরও কয়েকটি থানা দখল করে। ৮ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে সরে গিয়ে যশোর ও মাগুরা শহরের দিকে সমবেত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা নাভারন-সাতক্ষীরা সড়ক থেকে পাকিস্তানি সেনাদের হটিয়ে দেন। সাতক্ষীরা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ভোমরা-সাতক্ষীরা সড়কে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর এদিন তুমুল যুদ্ধ হয়। সাতক্ষীরা শহর মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিক থেকে ঘিরে রাখেন। কুষ্টিয়ার জীবননগরের উত্তর-পূর্বে আবদুলবাড়িয়া মুক্তিবাহিনীর দখলে। চুয়াডাঙ্গার দখল নিয়ে যুদ্ধ অব্যাহত। দামুড়হুদার কাছে এবং দর্শনাতেও যুদ্ধ চলমান।
  • ৬ নম্বর সেক্টরে রংপুর অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধারা কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী দখল করে এগিয়ে এসে লালমনিরহাট বিমানবন্দরটিকে ঘিরে একে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন।
  • ভারতীয় সেনা-সহায়তায় মুক্তিবাহিনী দিনাজপুরের বালুরঘাট-হিলি সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীকে আক্রমণ করে। বেলা একটা থেকে পাকিস্তানি সেনারা ভারতের ভেতরে গোলাবর্ষণ শুরু করে। তার পাল্টা জবাবও আসতে থাকে। পাকিস্তানি গোলা থামিয়ে দেওয়ার জন্য যৌথ বাহিনী হিলি সীমান্তের দিকে এগিয়ে যায়। হিলিতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের তারা উত্তর দিকে ঘিরে ফেলে। বাসুদেবপুর থেকে পাকিস্তানি বাহিনী বিতাড়িত হয়। হিলির দক্ষিণে যৌথ বাহিনী ও পাকিস্তানি বাহিনী মুখোমুখি থাকে।
  • ১ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা চট্টগ্রাম বন্দরে অভিযান চালান। তাঁদের অভিযানে বন্দরের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে কয়েকটি বোমা বিস্ফোরিত হলে সেখানকার পাঁচটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ধ্বংস বা ক্ষতির শিকার হয়। একটি পেট্রলপাম্পও যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • সিলেট অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধারা মৌলভীবাজারে শমসেরনগর বিমানবন্দরের কাছাকাছি পৌঁছে যান। এ অঞ্চলে ক্যাপ্টেন আবদুর রবের নেতৃত্বে ৪ নম্বর সেক্টরের গণবাহিনীর সদস্যরা আগের দিন কানাইঘাট দখলের অভিযান শুরু করেছিলেন। ভোর সাড়ে তিনটার দিকে তাঁরা লক্ষ্যস্থলের দিকে যাত্রা শুরু করেন। সড়কের ওপর পাকিস্তানিদের একটি টহল দলের প্রতি-আক্রমণ সামলে নিয়ে তাঁরা পাকিস্তানিদের অবস্থানের ৫০০ গজের ভেতরে পৌঁছে যান। অল্প সময়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সব দল তাদের ফর্মিং-আপ প্লেসে পৌঁছে যায়। জায়গাটি ছিল বেশ নিচু। সেখানে পৌঁছেই ক্যাপ্টেন রব উপলব্ধি করেন, দিনের আলোতে পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষায় আঘাত করলে তাঁদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করতে হবে। তিনি সেক্টর অধিনায়ক মেজর সি আর দত্তের (স্বাধীনতার পর বীর উত্তম ও মেজর জেনারেল) কাছে পরামর্শ চাইলে তিনি ক্যাপ্টেন রবকে পিছু হটে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি সহযোদ্ধাদের নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে এসে তাঁদের এক দিনের পূর্ণ বিশ্রাম দেন। বিশ্রামের পর চাঙা হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পরদিন কানাইঘাট দখলের জন্য দৃঢ়তার সঙ্গে অগ্রসর হন।
  • বগুড়া অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী সারিয়াকান্দি থানায় ২২ জনকে খতম করে। ২ জন পাকিস্তানি সেনা পালাতে না পেরে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
সূত্র: স্বাধীনতাসংগ্রামে প্রবাসী বাঙালি, আবদুল মতিন, র‌্যাডিক্যাল পাবলিকেশনস, লন্ডন, যুক্তরাজ্য; আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ভারত, ৩ ও ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১; দ্য গার্ডিয়ান, লন্ডন, যুক্তরাজ্য, ২ ডিসেম্বর ১৯৭১

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ