আজকের শিরোনাম :

মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন : ১৬ নভেম্বর, ১৯৭১

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২১, ১৫:২৯

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা নিয়ে ‌‘মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন’ নামের এই আয়োজন।

এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম পাঠকদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের আজকের দিনে (১৬ নভেম্বর) ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হল-

  • ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দিল্লিতে ১৬ নভেম্বর কংগ্রেসের সংসদীয় দলের কর্মসমিতির সভায় বলেন, মাস দুয়েকের মধ্যেই বাংলাদেশ সমস্যার সমাধান হতে পারে। তিনি নিশ্চিত, বাংলাদেশের শরণার্থীরা তাদের দেশে ফিরে যাবে। ভারতে সফররত যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক উন্নয়নমন্ত্রী রিচার্ড উড বোম্বাইয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমান উত্তেজনা নিরসনে তাঁরা উদ্গ্রীব। যুক্তরাজ্য নিজে অথবা কমনওয়েলথ বা জাতিসংঘের মাধ্যমে উদ্যোগ নিতে ইচ্ছুক।
  • দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, পশ্চিমা দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে সাম্প্রতিক আলোচনাকালে ইন্দিরা গান্ধী দুই সপ্তাহের মধ্যে পূর্ববঙ্গ সংকট অবসানের দাবি জানান। এর মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে ভারত সমগ্র দেশে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে মুক্তিবাহিনীকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেবে।
  • যুক্তরাজ্যের দ্য টাইমস পত্রিকায় এ খবর উদ্ধৃত করে বলা হয়, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জরুরি আলোচনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ দিল্লি পৌঁছেছেন।
  • ঢাকার মতিঝিলে নটর ডেম কলেজের দক্ষিণে সার্কুলার রোডের সেতুর নিচ থেকে এদিন হাত-পা বাঁধা ও বিকৃত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুণ চিকিৎসক শহীদ বুদ্ধিজীবী আজহারুল হক ও হুমায়ুন কবীরের লাশ পাওয়া যায়। ১৫ নভেম্বর একদল আলবদর ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের হাকিম হাউসের সামনে থেকে তাঁদের দুজনকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।
  • পাকিস্তান টাইমস পত্রিকা এক সংবাদে জানায়, ২৭ ডিসেম্বর ইসলামাবাদে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকা হবে। অধিবেশন ঢাকায় বসবে বলে স্থির হয়ে ছিল।
  • পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব সুলতান মহম্মদ খান ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর দেশ ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধাবস্থার মোকাবিলা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্সের সঙ্গে ওয়াশিংটনে দেখা করার পর তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানে ভারতের সেনাসমর্থিত গেরিলাদের অভিযানই উত্তেজনার কারণ। পাকিস্তান সংযত বলেই পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে যাচ্ছে না।
  • অবরুদ্ধ ঢাকার গভর্নর আবদুল মোত্তালিব মালিক এক বৈঠকে শান্তি সেনা গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।
  • বীর বিক্রম জগৎজ্যোতি দাস ১৬ নভেম্বর হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের বদলপুরে শহীদ হন। এলাকাটি মুক্তিবাহিনীর ৩ নম্বর সেক্টরের আওতাভুক্ত হলেও এখানে কিছু যুদ্ধ ৫ নম্বর সেক্টরের বড়ছড়া সাব-সেক্টর থেকে পরিচালিত হতো। ১৫ নভেম্বর জগৎজ্যোতি দাসের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সুনামগঞ্জের টেকেরঘাট থেকে নৌকায় রওনা দিয়ে ১৬ নভেম্বর সকালে বদলপুরে পৌঁছান। তাঁরা জানতে পারেন, রাজাকাররা ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে বসে চাঁদা আদায় করছে। মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। জগৎজ্যোতি দাস কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন।
  • অদূরে জলসুখা গ্রামে ছিল জগৎজ্যোতির বাড়ি। তিনি কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে সেদিকে রওনা হন; একটি দলকে পাঠান পিটুয়াকান্দি, আরেকটিকে আজমিরীগঞ্জে। ইতিমধ্যে পাকিস্তানি সেনাদের দুটি দল শাল্লা ও আজমিরীগঞ্জ থেকে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জগৎজ্যোতি জলসুখার বদলে পিটুয়াকান্দি চলে আসেন। সেখানে কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধ হয়।
  • জগৎজ্যোতি তিনজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে পাকিস্তানিরা তাঁদের গুলি করে। তিন সহযোদ্ধা শহীদ হন। জগৎজ্যোতির বাঁ পাঁজরে গুলি লাগে। আহত জগৎজ্যোতিকে পাকিস্তানিরা নির্মম অত্যাচারের পর হত্যা করে। পরে আজমিরীগঞ্জ বাজারে তাঁর লাশ খুঁটিতে বেঁধে বিক্ষত করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
  • মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য জগৎজ্যোতিকে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রীয় পদক দেওয়ার ঘোষণা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়। আকাশবাণীতেও প্রচারিত হয় তাঁর বীরত্বগাথা। স্বাধীনতার পর তাঁকে মরণোত্তর বীর বিক্রম উপাধি দেওয়া হয়।
  • এদিন পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, যশোর ও রংপুর অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াই হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়, মুক্তিবাহিনী গত কয়েক দিনে পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, রংপুর ও যশোরের বিপুল এলাকা মুক্ত করে সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন চালু করেছে।
  • মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারা সিলেটের গোয়াইনঘাটসংলগ্ন রাধানগর কমপ্লেক্সকে সামনে রেখে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন গণবাহিনীর কিছু মুক্তিযোদ্ধা। ৭ নভেম্বর লুনি গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর ১৮-২০ জনের একটি টহল দল আক্রমণের মধ্য দিয়ে সেখানে গেলে যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ৮-৯ নভেম্বর লুনি গ্রাম, ১১ নভেম্বর ঘোরা গ্রাম, ছাত্তারগাঁ, দুয়ারীখেল, ১৫ নভেম্বর ছাত্তারগাঁ ও ঘোরা গ্রাম, ১৬ নভেম্বর ছাত্তারগাঁ ও দুয়ারীখেল, ১৮ নভেম্বর ছাত্তারগাঁ ও ঘোরা গ্রামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়াবহ যুদ্ধ হয়।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, সম্পাদক: মতিউর রহমান, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা; স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রবাসী বাঙালি, আবদুল মতিন, র‌্যাডিক্যাল পাবলিকেশন্স, লন্ডন, যুক্তরাজ্য; ইত্তেফাক, ঢাকা, ১৯ নভেম্বর ১৯৭১; আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ভারত, ১৭ ও ১৮ নভেম্বর ১৯৭১ এবং দ্য টাইমস, লন্ডন, ১৭ নভেম্বর ১৯৭১।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ