আজকের শিরোনাম :

মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন : ১৯ জুন, ১৯৭১

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২১, ১৩:০২

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা নিয়ে ‌'মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন' নামের এই আয়োজন।

এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম পাঠকদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের আজকের দিনে (১৯ জুন) ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হল-

  • বুদ্ধিজীবী-শিক্ষাবিদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ আর মল্লিক ১৯ জুন ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে একটিমাত্র রাজনৈতিক সমাধান হতে পারে। আর তা হলো স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বড় বড় শহর পাকিস্তানি সেনাদের অধীনে থাকলেও গ্রামে প্রশাসনের চিহ্নমাত্র নেই। সরকারি অফিস অচল। যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন।
  • মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল এই দিন মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখায় পাকিস্তানি বাহিনীর সীমান্ত ঘাঁটি লাঠিটিলায় আক্রমণ করে। তুমুল যুদ্ধের পর লাঠি
  • টিলা মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে। যুদ্ধে চারজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। পাকিস্তানি বাহিনীর একজন হাবিলদার এবং একজন সেপাই মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি দল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্দভাগের কাছে পাকিস্তানের এক প্লাটুন সেনাকে অ্যামবুশ করে।
  • জম্মু ও কাশ্মীর সফরে গিয়ে এই দিন এক জনসভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, বাংলাদেশে যা ঘটছে, তা জাতীয় বিপ্লব।
  • ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এ দিন জানান, পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষ ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের নাগরিকদের জমির দলিলপত্র নষ্ট করে অন্যদের মধ্যে জমি বণ্টন করছে। দিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সাজ্জাদ হায়দারের কাছে ১৮ জুন দেওয়া একটি 
  • নোটে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত জানায়, এটি শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার পথ বন্ধ করবে।
  • ভারতের ট্রেড ইউনিয়ন সংস্থাগুলো ১৯ জুন দেশজুড়ে বাংলাদেশ সংহতি দিবস উদ্‌যাপন করে। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় এ উপলক্ষে এক যৌথ সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি এবং স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে ভারত সরকারের স্বীকৃতি দাবি করা হয়।
  • বাংলাদেশের ঘটনাবলি জানতে বিভিন্ন দেশ সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং ১৯ জুন লন্ডনে পৌঁছান। বাংলাদেশের ঘটনাবলি এবং শরণার্থী সংকট নিয়ে ব্রিটেনের উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করাই তাঁর এই সফরের উদ্দেশ্য।
  • ভারতের কমিউনিস্ট নেতা ভূপেন গুপ্ত এই দিন পূর্ব বার্লিনে সোশ্যালিস্ট ইউনিটি পার্টির অষ্টম কংগ্রেসে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। অধিবেশনে উপস্থিত ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার কমিউনিস্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গেও একই বিষয়ে তিনি আলাপ করেন। সবাই বাংলাদেশের মানুষের প্রতি সহানুভূতি জানান।
  • নিউইয়র্ক টাইমস এই দিন জানায়, আইএমএফের সমীক্ষাদল পশ্চিমের রাষ্ট্রগুলোকে ইয়াহিয়া খানের সরকারকে সাহায্য দেওয়া বন্ধ করতে বলেছে। নিক্সন প্রশাসন এবং কংগ্রেস নেতাদের কাছে একই আবেদন জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং নিউইয়র্ক থেকে লন্ডন রওনা হওয়ার পরই সমীক্ষাদল এ পরামর্শ দেয়।
  • তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনৈতিক সাপ্তাহিক পত্রিকা নিউ টাইমস-এ এদিন সংবাদ ভাষ্যকার এ উলানস্কির এক নিবন্ধে বলা হয়, পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান গায়ের জোরে নির্বাচনের সুস্পষ্ট রায় অস্বীকার করেছেন। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়ী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ। অসামরিক কর্তৃপক্ষের হাতে ক্ষমতা দেওয়ার নামে ইয়াহিয়া ভুট্টোকে ক্ষমতা দিলে তা হবে খুব খারাপ।
  • এ উলানস্কি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের এই মনোভাব প্রকাশ করেন, যাতে মনে না হয় যে পাকিস্তানের ব্যাপারে তারা হস্তক্ষেপ করছে।
  • পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক গভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এই দিন করাচিতে জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের চারটি প্রধান সেতুর ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, ভারতীয় প্রচারণার মুখোশ খুলে দিতে পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলকে বিদেশে পাঠানো হবে। প্রতিনিধিদলে থাকবেন পিডিপির সহসভাপতি মাহমুদ আলী, বিচারপতি নুরুল ইসলাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাজ্জাদ হোসায়েন।
  • পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক গোলাম আযম রাওয়ালপিন্ডিতে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে সেনা হস্তক্ষেপ ছাড়া দেশকে বিচ্ছিন্নতা থেকে রক্ষা করা যেত না।
  • পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল এই দিন মুক্তিবাহিনীর চৌদ্দগ্রাম ঘাঁটিতে প্রবল হামলা চালায়। সারা দিন যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা ঘাঁটিটি ছেড়ে দেন। যুদ্ধে দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং চারজন আহত হন।
  • পাকিস্তানি সেনাদের আরেকটি দল চট্টগ্রামের চাঁদগাজীতে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটিতে প্রচণ্ড হামলা চালিয়ে চাঁদগাজী দখল করে নেয়।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর এক, দুই ও চার; ইত্তেফাক ও আজাদ, ২০ ও ২১ জুন ১৯৭১; আনন্দবাজার পত্রিকা ও যুগান্তর, ভারত, ২০ ও ২১ জুন ১৯৭১।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ