আজকের শিরোনাম :

মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন : ১৭ জুন, ১৯৭১

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২১, ১২:০৩

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা নিয়ে ‌'মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন' নামের এই আয়োজন।

এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম পাঠকদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের আজকের দিনে (১৭ জুন) ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হল-

  • বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে ১৭ জুন যুক্তরাজ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁর কূটনৈতিক পরিচয়পত্রে এই দিন স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। বিচারপতি চৌধুরীর পরিচয়পত্র ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সরকারি বাসভবন বাকিংহাম প্যালেসে পেশ করা হয়। বাকিংহাম প্যালেস এই পরিচয়পত্রের প্রাপ্তিস্বীকার করে। এই প্রাপ্তিস্বীকার চিঠির মাধ্যমে প্রকারান্তরে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাজ্যের সমর্থন প্রকাশ পায়।
  • ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দিল্লিতে কয়েকটি সংবাদপত্রের অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদকদের সঙ্গে ১৭ জুন আলোচনা করেন। এই আলোচনায় তিনি বলেন, পূর্ব বাংলার সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান বলতে ভারত নির্বাচনে বিজয়ী শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতাকেই বোঝে। তাঁরাই তাঁদের দাবিদাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। ইন্দিরা বলেন, ভারত প্রথম থেকেই সংকটের রাজনৈতিক সমাধান দাবি করে আসছে। বিশ্বের শক্তিগুলো আগে থেকেই চাপ দিলে সমস্যার সুরাহা হয়ে যেত। সে সম্ভাবনা এখন কম। তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেই শরণার্থীদের স্বদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
  • জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে শরণার্থীদের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের প্রকৃত পরিস্থিতি এবং ভারতের অবস্থান তাঁকে বুঝিয়ে বলেন। ইন্দিরা তাঁকে বলেন, এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ এবং শরণার্থীদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা এখন প্রধান কর্তব্য।
  • এ বৈঠকের পর প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান সাংবাদিকদের বলেন, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে
  •  কোনো ব্যাপারে গ্যারান্টি দেওয়া জাতিসংঘের পক্ষে কঠিন।
  • ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ভোজসভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হতে চায় না। যে সার্বভৌমত্বের জন্য তারা এত মূল্য দিচ্ছে, সেটাই তাদের কাছে বড়। পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা, স্বায়ত্তশাসন বা এ-জাতীয় প্রশ্নের সুরাহা কেবল ইসলামাবাদ ও ঢাকাই করতে পারে, আর কেউ নয়।
  • জাতিসংঘের একজন মুখপাত্র এদিন জানান, ঢাকা থেকে ভারতীয় এবং কলকাতা থেকে পাকিস্তানি কূটনীতিকদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে উদ্ভূত অচলাবস্থা নিরসনে জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্টের প্রস্তাব পাকিস্তান মেনে নিয়েছে। ঢাকায় ভারতীয় কূটনীতিকদের পাকিস্তান আটক রেখেছে অভিযোগ করে তাঁদের ফিরিয়ে আনতে তাঁর প্রভাব কাজে লাগানোর জন্য গত সপ্তাহে ভারত উ থান্টের কাছে দাবি জানিয়েছিল। উ থান্টকে জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আগা শাহি জানান, তাঁর প্রস্তাব পাকিস্তান মেনে নিতে প্রস্তুত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রও জানায়, অচলাবস্থা দূর হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে।
  • তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ার পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেন, শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব পাকিস্তান সরকারের।
  • নিউইয়র্ক টাইমস-এর সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের ব্যাপারে পাকিস্তান প্রকৃত ও আন্তরিক রাজনৈতিক মীমাংসায় না আসা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সাহায্য দেওয়া বন্ধ রাখুক। নীতিগতভাবে সাহায্যের মধ্যে শর্ত আনা অনুচিত। যে সরকার তার দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত, তারা সাহায্য ঠিকভাবে লাগাবে কি না, তাতে সন্দেহ আছে।
  • পত্রিকাটি আরও বলে, প্রচণ্ড চাপের মধ্যেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী গভীর সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু সংসদে তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যে মনে হয়, সে সংযমেরও একটা সীমা আছে। অবস্থা তাঁরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্যারিসে সহায়ক দেশগুলোর যে বৈঠক বসেছে, তাতে পাকিস্তানকে সাহায্য দেওয়া বন্ধ রাখাই উচিত।
  • টাঙ্গাইলের বাশাইল থানার পশ্চিমে কামুটিয়া নর্থখোলা খেয়াপারে কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে পাকিস্তানি বাহিনীর বেশ ক্ষতি হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি বড় দল ট্যাংক, আর্টিলারি ও মর্টারের সাহায্যে চট্টগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের চাঁদগাজী ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল সে আক্রমণ মোকাবিলা করেন। যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর কিছু ক্ষতি হয়, পাকিস্তানি বাহিনীও পিছু হটতে বাধ্য হয়।
  • ফেনীর বিলোনিয়ায় মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটির ওপর পাকিস্তানি বাহিনী বিমানবাহিনীর সহায়তায় অতর্কিত আক্রমণ চালায়। তীব্র আক্রমণের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে চিতলিয়ায় চলে আসেন।
  • পাকিস্তান সফররত তিন সদস্যের ব্রিটিশ সংসদীয় দলের সদস্য জেমস টিন ঢাকায় বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলি সম্পর্কে ব্রিটিশ পত্রিকায় একপেশে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এ খবর প্রকৃত অবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। ভারতের একতরফা প্রচারের কারণে বিদেশি পত্রিকায় সঠিক খবর আসছে না। দলের আরেক সদস্য মিসেস জিল নাইট বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী দুষ্কৃতকারী দমনে অত্যন্ত দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। এর দরকার ছিল।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর দুই; মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি: যুক্তরাজ্য, আবদুল মতিন, সাহিত্য প্রকাশ; ইত্তেফাক ও আজাদ, ১৮ জুন ১৯৭১; আনন্দবাজার পত্রিকা ও যুগান্তর, ভারত, ১৮ ও ১৯ জুন ১৯৭১।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ