মিয়ানমারে আমেরিকান সাংবাদিকের ১১ বছরের কারাদণ্ড
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২১, ১৯:৩৬
মিয়ানমারের সামরিক আদালত একজন আমেরিকান সাংবাদিককে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। সাংবাদিক ড্যানি ফেনস্টারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে অভিবাসন আইন ভঙ্গ করা, অবৈধ যোগাযোগ এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ভিন্নমত পোষণে উৎসাহ যোগানোর দায়ে।
এ সপ্তাহের গোড়ায় তার বিরুদ্ধে আরও দুটি অতিরিক্ত অভিযোগ আনা হয়েছে- একটি রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং অন্যটি সন্ত্রাসবাদের। এই দুটি অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হলে তার সাজা হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। নতুন দুটি অভিযোগে তার বিচার শুরু হবে ১৬ই নভেম্বর।
ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার নামে একটি অনলাইন সাইটের ব্যবস্থপনা সম্পাদক ছিলেন ৩৭-বছর বয়সী ড্যানি ফেনস্টার।
মে মাসে তাকে ইয়াঙ্গন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক করা হয়। মিয়ানমারে ফেব্রুয়ারি মাসের সামরিক অভ্যুত্থানের পর আটক কয়েক ডজন স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে তিনি একজন।
ফ্রন্টিয়ার ওয়েবসাইটের খবর অনুযায়ী, মি. ফেনস্টার এর আগে নিরপেক্ষ একটি সংবাদ ওয়েবসাইট মিয়ানমার নাও -এ কাজ করেছেন, যে সংবাদ সাইট অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনীর সমালোচনা করে খবর করেছে।
"তার বিরুদ্ধে আনা সবগুলো অভিযোগের ভিত্তি হল, তিনি নিষিদ্ধ সংবাদ সংস্থা 'মিয়ানমার নাও'তে কাজ করতেন। মি. ফেনস্টার মিয়ানমার নাও থেকে ইস্তফা দেন ২০২০ সালের জুলাই মাসে এবং তার পরের মাসে যোগ দেন ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমারে। অর্থাৎ তাকে যখন ২০২১এর মে মাসে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন তিনি নয় মাসের ওপর ফ্রন্টিয়ারে সাংবাদিকতা করছেন," জানাচ্ছে ফ্রন্টিয়ার সংবাদ সাইট।
"ড্যানির বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করার আদৌ কোন ভিত্তি নেই।"
আজ শুক্রবার তার সাজা ঘোষণা করা হয়েছে।
জাপানি সাংবাদিক গ্রেপ্তার
এর কয়েক মাস আগে জাপানের একজন খণ্ডকালীন সাংবাদিককে ভুয়া খবর ছড়ানোর দায়ে মিয়ানমারে গ্রেপ্তার করা হয়।
জাপানি এই সাংবাদিক ইউকি কিটাযুমি জাপানের অনেকগুলো প্রধান সংবাদ সংস্থার জন্য সাংবাদিকতা করেন এবং মিয়ানমারে হাতে গোনা যে কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিক এখন কাজ করছেন তিনি তাদের একজন।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের যুক্তি এই সাংবাদিক আইন ভঙ্গ করেছেন। কিন্তু যেহেতু জাপান অনুরোধ করেছে, তাই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
পহেলা ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার পর মিয়ানমারে গণ বিক্ষোভ শুরু হয় মিয়ানমারে (ফাইল চিত্র)
বিবিসির দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া সংবাদদাতা জনাথান হেড বলছেন, ড্যানি ফেনস্টারের বিচার হয়েছে কারাগারের ভেতর রুদ্ধদ্বার কক্ষে। মি. ফেনস্টারহ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর আটক বহু সাংবাদিককে এই কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে।
বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে যেটুকু জানা গেছে তা শুধু তার আইনজীবীদের দেয়া তথ্যর ভিত্তিতে।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর সেনা বাহিনী মিয়ানমার নাও ছাড়া আরও চারটি সংবাদ প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে তাদের সম্প্রচার লাইসেন্স বাতিল করে দিয়েছে।
'প্রহসনের বিচার'
আমেরিকা মি. ফেনস্টারের মুক্তির জন্য মিয়ানমারের সামরিক সরকারের ওপর চাপ দিয়েছে, কিন্তু সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেছেন মি. ফেনস্টারকে হেফাজতে রাখা প্রয়োজন।
তার সাজা ঘোষণার আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়: "ড্যানিকে আটক করা হয়েছে খুবই অন্যায়ভাবে যেটা গোটা দুনিয়ার চোখে পরিষ্কার। সামরিক প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে এখন তাকে মুক্তি দেয়া উচিত।"
তার সাজা সম্পর্কে আমেরিকা এখনও মন্তব্য করেনি।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক ডেপুটি ডিরেক্টার ফিল রবার্টসন বিবিসিকে বলেছেন, এই রায় "প্রহসনের বিচার" এবং মিয়ানমারের ভেতর যেসব সাংবাদিক এখনও কাজ করছেন তাদের ভীতি প্রদর্শনই এর লক্ষ্য।
ক্রাইসিস গ্রুপ মিয়ানমার সংস্থার ঊর্ধ্বতন একজন উপদেষ্টা রিচার্ড হরসি এই সাজাকে "আপত্তিকর" বলে বর্ণনা করেছেন।
"এই কারাদণ্ড শুধু বিদেশি সাংবাদিকই নয়...এমনকি মিয়ানমারের সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে একটা বার্তা যে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করলে বহু বহু বছর জেলে পচতে হবে," এএফপি বার্তা সংস্থাকে তিনি বলেন।
মিয়ানমারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ন্যাশানাল লিগ ফর ডেমোক্রাসি দলের কাছে শোচনীয় পরাজয়ের পর ফেব্রুয়ারি মাসে সামরিক নেতারা অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতা দখল করেন।
তারা দাবি করেন নির্বাচনে যেভাবে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে তাতে অভ্যুত্থানের কোন বিকল্প ছিল না। যদিও নির্বাচন কমিশন বলে কারচুপির দাবির সমর্থনে কোন তথ্যপ্রমাণ তারা দেখেনি।
অভ্যুত্থানের পর সারা দেশে বিশাল গণবিক্ষোভ শুরু হয়। সেনাবাহিনী নির্মমভাবে এই বিক্ষোভ দমন করে।
এর পর থেকে ১১৭৮জন প্রাণ হারিয়েছে এবং ভিন্নমত পোষণের দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছে, অভিযুক্ত হয়েছে অথবা কারদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছে ৭,৩৫৫জন - জানাচ্ছে অ্যাসিটেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিকাল প্রিজনারস (এএপিপি)।
এ পর্যন্ত তাদের সাংবাদিকতার কারণে আটক হয়েছেন প্রায় ৮০জন সাংবাদিক। এএপিপি-র খবর অনুযায়ী এদের মধ্যে ৫০ জন এখনও আটক আছেন এবং এদের মধ্যে অর্ধেকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এবিএন/মমিন/জসিম