আজকের শিরোনাম :

বিমানবন্দরে ৩ শতাধিক প্রবাসীর সর্বস্ব লুট করেছে তারা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২২, ১৫:৩০

১৫ বছর ধরে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা তিন শতাধিক প্রবাসীকে কৌশলে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুট করে নেওয়া চক্রের মূল হোতা ও ১৫টির অধিক মামলার আসামি মো. আমির হোসেন ও তার তিন সহযোগীকে রাজধানীর বিমানবন্দর ও কদমতলী থানা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

শনিবার (১ অক্টোবর) র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর বিমানবন্দর থানা ও কদমতলী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে।

আজ রোববার (২ অক্টোবর) র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলো মূল হোতা মো. আমির হোসেন (৫২), মো. লিটন মিয়া ওরফে মিল্টন (৪৮), আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে পারভেজ (৩৫) ও জাকির হোসেন (৪০)।

র‌্যাব জানায়, এ সময় মোবাইল ফোন, অজ্ঞান করার কাজে ব্যবহৃত ট্যাবলেট, যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণে ব্যবহৃত লাগেজ ও চোরাইকৃত স্বর্ণ (যার রুপ পরিবর্তন করতে গলানো হয়েছে) উদ্ধার করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানান, তারা সংঘবদ্ধ অজ্ঞান পার্টি চক্রের সদস্য। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ৮-১০ জন। তারা বিভিন্ন পেশার আড়ালে বিগত ১৫ বছর ধরে পারস্পারিক যোগসাজসে রাজধানীর বিমানবন্দর টার্মিনালে ওঁত পেতে থাকে এবং বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের টার্গেট করার লক্ষ্যে বিমানবন্দরের টার্মিনালে থেকে পাসপোর্ট ও লাগেজ নিয়ে প্রবাস ফেরত যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণ করেন। এটি মূলত তাদের একটি কৌশল। পরবর্তীতে এই চক্রটি প্রবাসী যাত্রীদের টার্গেট করতেন, যার জন্য অপেক্ষমান কোনো আত্মীয় স্বজন বা গাড়ি নেই। তারা কৌশলে বিদেশ ফেরত ব্যক্তির সঙ্গে কুশল বিনিময় করে চক্রের অন্য সদস্যদের আত্মীয় হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিত।

র‌্যাব জানায়, এরপর ভিকটিমের সঙ্গে একই এলাকার ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়ে তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতেন। পরবর্তীতে এই চক্রের সদস্যরা সবাই একসঙ্গে বাসের টিকেট কেটে যাত্রা শুরু করতেন। গাড়ি বা বাসে ভ্রমণের সময় চক্রের সদস্যরা টার্গেট ব্যক্তিকে কৌশলে চেতনানাশক ওষুধ মিশ্রিত বিস্কুট খাইয়ে অচেতন করেন। পরে টার্গেট ভিকটিম অজ্ঞান হয়ে গেলে তার যাবতীয় মালামাল নিয়ে চক্রটি পরবর্তী স্টেশনে নেমে যেতে।

র‌্যাব আরও জানায়, গত ২ সেপ্টেম্বর কুয়েতের এক প্রবাসী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। পরে চক্রটির একজন সদস্য বিমানবন্দর থেকে ওই প্রবাসীকে অনুসরণ করতে থাকেন। ভিকটিম উত্তরবঙ্গে যাওয়ার উদ্দেশে আজমপুর বাস স্ট্যান্ডে এসে পৌঁছান এবং উত্তরবঙ্গগামী বাস কাউন্টারে টিকেট কাটতে গেলে কাউন্টারে পূর্ব থেকে প্রবাসী যাত্রীর ছদ্মবেশ নিয়ে থাকা গ্রেপ্তারকৃত আমির হোসেন ভিকটিমকে জানান তার কাছে একটি অতিরিক্ত বাসের টিকেট রয়েছে। পূর্ব থেকে সাজিয়ে রাখা একটি লাগেজ ও কিছু কুয়েতি দিনার দেখিয়ে তিনি ভিকটিমকে আশ্বস্ত করেন যে, তিনি নিজেও একজন প্রবাসী। ভিকটিম আমির হোসেনকে বিশ্বাস করে সেই টিকেট ক্রয় করে পাশের সিটে বসে বগুড়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। কিছুক্ষণ পরে চক্রের মূল হোতা আমির হোসেন ভিকটিমকে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খেতে দেন। ভিকটিম বিস্কুট খাওয়ার কিছুক্ষণ পরে অজ্ঞান হয়ে যান এবং চক্রটি ভিকটিমের সব মালামাল ও সম্পদ লুট করে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যান। পরবর্তীতে বাসের সুপারভাইজার ভিকটিমকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আমির হোসেন জানান যে, তিনি বিমানবন্দরকেন্দ্রীক একটি অজ্ঞান পার্টি চক্রের মূল হোতা। তিনি বিমানবন্দর এলাকায় একটি ফাস্টফুডের দোকানে চাকরির আড়ালে বিগত ১৫ বছর ধরে এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘ এই সময়ে তিনি প্রায় ৩০০ জন ভুক্তভোগীকে অজ্ঞান করে তাদের মূল্যবান মালামাল ও সম্পদ লুট করে নিয়েছেন।

গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এবিএন/এসএ/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ