আজকের শিরোনাম :

সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য প্রত্যাহার ছাড়া উপায় নেই : হাইকোর্ট

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২২, ১২:৪৩

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তিদের অর্থ রাখা নিয়ে তথ্য জানানোর বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ডের বক্তব্য ‘প্রত্যাহার করা ছাড়া কোনো উপায় নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রতিবেদনের ওপর শুনানিকালে আজ রোববার (১৪ আগস্ট) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান।

আদালত বলেন, রাষ্ট্রদূত কীভাবে বললেন বাংলাদেশিদের অর্থ জমার বিষয়ে কোনো তথ্য চাওয়া হয়নি, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

আদালত রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, আপনারা যে তথ্য উপস্থাপন করেছেন তাতে প্রমাণিত রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য সাংঘর্ষিক।

আদালতে বিএফআইউর প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। তিনি বলেন, সুইস রাষ্ট্রদূত যে বলেছেন, তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা রাখার বিষয়ে কোনো তথ্য চাওয়া হয়নি। তার এ বক্তব্য সঠিক নয়। তিনি মিথ্যা বক্তব্য দিয়েছেন। তার আরও ভেবে চিন্তে কথা বলা উচিত ছিল।

এ সময় দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য সঠিক নয়। তিনি কেন এ ধরনের বক্তব্য দিলেন তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত।

তখন আদালত বলেন, আপনারা যে তথ্য উপস্থাপন করেছেন তা দেখে সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যর সত্যাতা পাইনি। আপনাদের (দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ) বক্তব্য জাতিকে বিব্রতকর অবস্থা থেকে মুক্ত করবে। পরে আদালত রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে হলফনামা আকারে তাদের বক্তব্য দাখিল করতে বলেন এবং আদেশের জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করেন।

এর আগে রোববার সকালে বিএফআইউর প্রতিবেদন হাইকোর্টে আসে। সেখানে জানানো হয়, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা সংক্রান্ত তথ্য বিভিন্ন সময়ে দেশটির আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা এফআইইউয়ের কাছে চাওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ গত ১৭ জুন এফআইউয়ের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছিল বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ।

অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসীকাজে অর্থায়ন প্রতিরোধ, অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য বিএফআইইউ বিদেশি এফআইইউদের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। তবে বিশ্বব্যাপী এসব তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হলো এগমন্ড সিকিউর ওয়েব (ইএসডব্লিউ)। ২০১৩ সালের জুলাইতে ইএসডব্লিউ’র সদস্য হওয়ার পর চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৬৭ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য চায় বাংলাদেশ।

ইএসডব্লিউর মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে এ তথ্য দিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু একজন ছাড়া অন্যদের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানায় সুইজারল্যান্ড। আর এ একজনের তথ্য দুদককে দিয়েছে বিএফআইইউ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইস ব্যাংক চলতি বছরের ১৬ জুন বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরদিন এগমন্ড সিকিউর ওয়েবের (ইএসডব্লিউ) মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যাংক ও ব্যক্তির জমানো অর্থের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের জন্য সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে (ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) অনুরোধ করা হয়। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য পায়নি বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তিদের অর্থ রাখার বিষয়ে তথ্য জানাতে সর্বশেষ গত ১৭ জুনও চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

এর আগে গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড বলেছিলেন, ‘সুইস ব্যাংকে জমা রাখা অর্থের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির জন্য তথ্য চায়নি। সুইস ব্যাংকের ত্রুটি সংশোধনে সুইজারল্যান্ড কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে আমি আপনাদের জানাতে চাই, সুইজারল্যান্ডে কালো টাকা রাখার কোনো নিরাপদ ক্ষেত্র নয়।’

এবিএন/এসএ/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ