‘বাংলাদেশ দূরে সরে গেলে আমেরিকা বা ইউরোপের জন্য স্ট্রাটেজিক্যাল ক্ষতি’

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:১৬

মোহাম্মদ জমির।
মোহাম্মদ জমির, কর্মজীবনে কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, কৃষি উন্নয়নে আন্তর্জাতিক তহবিল, ইউরোপিয়ান সংস্থা, সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তথ্য কমিশনের প্রধান তথ্য কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর সক্রিয়তা ও দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।  সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হল-

প্রশ্ন : সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন অস্থির হয়ে উঠছে। এবারের নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে তা হলো বিদেশীদের সক্রিয়তা। এই বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখেন?

মোহাম্মদ জমির: প্রাক নির্বাচনী পরিবেশে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি অ্যাসেমেট্রিক ইফেক্ট বিদ্যমান। ইংরেজিতে দুটি শব্দ রয়েছে— ডিনোটেশন এবং কনোট্রেশন। অর্থাৎ অনেক কথা বলা হচ্ছে যা বিশ্লেষণ করলে দুই ধরনের অর্থ পাওয়া যায়। একটা গ্লাসে যদি অর্ধেক গ্লাস পানি থাকে তবে এটাকে দুই ভাবে বলা যায়। যেমন- কেউ বলতে পারে গ্লাসটি অর্ধেক খালি আবার কেউ বলতে পারে গ্লাসটি অর্ধেক ভর্তি। অর্থাৎ দু’জনই বলছে গ্লাসে পানি রয়েছে কিন্তু একজন খালি অংশটিকে ফোকাস করছে এবং আরেকজন ভরা অংশটিকে ফোকাস করছে।

আমাদের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে অনেক কিছু বলা হচ্ছে যে এটা আছে এটা নেই। বিদেশীরা বাংলাদেশে অতি তৎপরতা দেখাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি আসছে, আমেরিকার প্রতিনিধি আসছে, জাতিসংঘের প্রতিনিধি আসছে। আমি তাদেরকে একটি প্রশ্ন করেছিলাম, যখন আমাদের দেশে নির্বাচন হচ্ছে তোমরা সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিনিধি পাঠাচ্ছো। তোমরা কি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার জন্য আমেরিকায় গিয়েছিলে? তোমরা কি ২০১৬ বা ২০২০ সালে আমেরিকার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিলে? ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যখন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটাল হিলে হামলা চালানো হলো তখন কি তোমরা সেখানে ছিলে? তখন কি তোমরা কোনো ধরনের উক্তি করেছিলে? আমি তো সে সময় হিউম্যান রাইট ওয়াচ বা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর কোনো মন্তব্য দেখিনি। আমাদের দেশের সুশীল সমাজের কোনো উক্তি দেখিনি, যারা কিনা আমাদের দেশের ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আমরা সকলেই বলছি, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হওয়া ভালো। আমরা সবাই যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে পারি, তাহলে এটি সকলের জন্যই মঙ্গল। দেশটা আমাদের। অনেক কষ্টের মাধ্যমেই আমরা স্বাধীন হয়েছি। ১৯৭০ সালে নির্বাচনের কারণে আমাদের এখানে অনেক ঘটনা ঘটেছিল। আমরা মেজরিটি অর্জন করেছিলাম। কিন্তু পাকিস্তানিরা তাদের ক্ষমতা ছাড়েনি। কিন্তু আমরা তেমন আচারণ করছি না। আমরা বলছি- আপনারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হোক। আপনারা নির্বাচনে জিতলে আপনার ক্ষমতা গ্রহণ করবেন।

প্রশ্ন : সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন কী প্রস্তুত?

মোহাম্মদ জমির: নির্বাচন কমিশন সকল দলকে আলোচনার জন্য ডেকেছিল। সেখানে অনেকেই ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা ইভিএম নিয়ে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশন বলেছে আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। যে সকল ক্ষেত্রে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে আমরা সেই বিষয়গুলোকে খুঁজে বের করতে পারি। সরকারের আইন মন্ত্রণালয় বলেছে, যদি দেখা যায় কোনো পোলিং স্টেশনে বা পোলিং স্টেশনের একটি নির্বাচন কেন্দ্রে ঠিকমতো নির্বাচন হচ্ছে না বা কেউ সেখানে ঢুকেছে, নির্বাচনের আইন কোন ভঙ্গ করেছে সে ধরনের কোন ঘটনা সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়লে আমরা ওই কেন্দ্রের ভোট বাতিল করতে পারি। এর জন্য পুরো নির্বাচন বাতিল হবে না। দরকার হলে শুধুমাত্র ওই কেন্দ্র বা ওই ওয়ার্ডে আবার নির্বাচন হতে পারে। অনেকে বলছেন সরকার নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু আমরা তো দেখেছি গাজীপুরে মেয়র নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী হেরেছেন। আমার পরিপূর্ণ বিশ্বাস, সকলেই যদি একত্র হয়ে আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেই, যদি আমরা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি না করি তাহলে একটি ভালো নির্বাচন হতে পারে।

প্রশ্ন : বিদেশী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সরকারের পক্ষ হয়ে আপনি বিভিন্ন মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। কি আলোচনা হয়েছে তাদের সঙ্গে?

মোহাম্মদ জমির: বিদেশীরা সম্পূর্ণ আলাদা একটি জিও স্ট্র্যাটেজিক্যাল কারণে বাংলাদেশের নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। আমাদের ভুললে চলবে না বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ভারতের থেকেও বেশি। আমাদের জনসংখ্যা আমেরিকার মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। জিডিপির দিক থেকে আমরা পুরো পৃথিবীতে ৩০তম রাষ্ট্র। বাংলাদেশ এমন একটি জিও স্ট্রাটেজিক্যাল পয়েন্ট অবস্থিত যেখান দিয়ে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া, চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য হয়ে থাকে। পশ্চিমারা চিন্তায় আছে, বাংলাদেশ যদি আমেরিকা বা ইউরোপের থেকে দূরে সরে যায় তাহলে সেটা তাদের জন্য একটা বড় স্ট্রাটেজিক্যাল ক্ষতি। ৫০ বছর ধরে তাদের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়। আমরা এটাও বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ কমিউনিজম এবং ফান্ডামেন্টালিজমের বিরুদ্ধে। সেকুলারিজম আমাদের সংবিধানেই রয়েছে।

হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হামলার প্রচেষ্টা আমরা দেখেছি। শিয়া এবং সুন্নি মুসলিমদের মধ্যেও গন্ডগোলের প্রচেষ্টা দেখেছি। আমরা বাংলাদেশে কোনো ধরনের টেরোরিজম চাই না। আমি আমার জীবনে ৬০টিরও বেশি দেশে ভ্রমণ করেছি বিভিন্ন কাজে, বিভিন্ন সময়ে। এসব দেশে যাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে তারা সকলেই বলেছেন বাংলাদেশ পৃথিবীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বড় ভূমিকা পালন করে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে, মানবাধিকার রক্ষার ব্যাপারে, নারীদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভৃতি ইস্যুতে বাংলাদেশ স্বোচ্চার ভূমিকা রাখছে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি না করার ব্যাপারে আমরা একমত। আমাদের একমাত্র পরিচয় বাঙালি।

প্রশ্ন : বিদেশীরা বাংলাদেশের বাকস্বাধীনতায় সরকারের হস্তক্ষেপ বিষয়েও কথা বলছেন...

মোহাম্মদ জমির: বাংলাদেশে আর্থসামাজিক উন্নয়ন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে, গৃহায়ন ক্ষেত্রে এবং যোগাযোগ ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ডব্লিউএইচও এর একজন প্রতিনিধির সাথে আমার কথা হয়। কোভিড-এ আমাদের ২৯ হাজারের কিছু বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। ডব্লিউএইচও এর প্রতিনিধি বিশ্বাস করতে চাননি যে আমাদের ২৯ হাজার মানুষ মারা গেছেন। তিনি বলেছিলেন, এর চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি মানুষ মারা গেছে। বাংলাদেশে যেটা বাংলাদেশ প্রকাশ করছে না। আমি তখন তাকে বলেছিলাম- আপনাদের মতে বাংলাদেশ দুই তিন লক্ষ মানুষ মারা গেছেন। তাহলে আমেরিকায় ১০ লক্ষ মানুষ মারা গেল কেন?

আমরা সফলভাবে টিকা ব্যবস্থাপনা করেছি। আমরা বুস্টার ডোজসহ দেশের মানুষকে বিনামূল্যে কোভিড টিকা সরবরাহ করেছি। তারপরেও আপনারা আমাদের পিছে লেগে আছেন কেন? আমার এ প্রশ্নে ডব্লিউএইচও এর প্রতিনিধি চুপ হয়ে গেলেন। আমাদের ফ্রিডম অফ ইনফরমেশন অ্যাক্ট নিয়ে তারা কথা বলেন। আমি তাদেরকে বললাম- বাংলাদেশের ৬০-৭০টা, বা তারও বেশি সংবাদপত্র রয়েছে। বাংলাদেশের চল্লিশটির বেশি টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। বাংলাদেশের লেখালেখি করতে কাউকে বাধা দেওয়া হয় না। সরকারের বিরুদ্ধে অনেক আলোচনা হচ্ছে, অনেক লেখালেখি হচ্ছে, অনেক সংবাদও প্রকাশ করা হচ্ছে। সবকিছুর একটি নিয়ম থাকা উচিত। যদি কেউ মানসম্মত এবং আইনসম্মতভাবে কোনো কিছু না লেখে, কেউ যদি প্রমাণ ছাড়া কারো বিরুদ্ধে কিছু লিখে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছেড়ে দেয় তা আইনসম্মত হতে পারে না। এগুলো করার কোনো সুযোগ নেই। সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা প্রয়োজন। স্বচ্ছতা না থাকলে দায়বদ্ধতা হয় না। দুর্নীতি করা, কারো বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়ানো এগুলো সঠিক নয়। মানুষকে তার প্রত্যেকটা কাজের দায় নিতে হবে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন ভিসা নীতি প্রণয়ন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

মোহাম্মদ জমির: আমেরিকা শুধু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে না, তারা আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও ভিসা নীতি গ্রহণ করেছে। ভেনিজুয়েলা, কম্বোডিয়াসহ আরো অনেক দেশের উপরেও তারা একই কাজ করেছিল। আমেরিকা বলছে, যারা বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, যারা নির্বাচন ঠিকভাবে হতে দিচ্ছে না তারা আমেরিকায় যেতে পারবে না। আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর অনেক ছেলে-মেয়ে পড়াশোনার জন্য আমেরিকাতে যাচ্ছে। আমেরিকা একটি ইমিগ্রান্টদের দেশ। এখন আমেরিকা যদি কাউকে প্রবেশ অধিকার না দেয়, তারা না দিতেই পারে। এখানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে আমি মনে করি, সকলকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এমনটি করা উচিত নয়।

প্রশ্ন : কয়েকদিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে আজরা জিয়া এসেছিলেন। তার সঙ্গে কি আলোচনা হল?

মোহাম্মদ জমির: আজরা জিয়া মূলত ভারতীয় বংশদ্ভুত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা তাকে দেখিয়েছি যে ভারতে কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই। ইউরোপ বা আমেরিকার কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই। আমরা তাকে বলেছি, বাংলাদেশ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় কে আসবে সেটি নির্ধারণ হবে।

প্রশ্ন : ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, বিদেশীরাও প্রশ্ন তুলেছে। এ বিষয়ে আপনার মত কী?

মোহাম্মদ জমির: আমরা তাদেরকে বলেছি, তারা যদি মনে করে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে তাহলে তারা আগে আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখুক। যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল তারা একজন কানাডায় এবং একজন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে। তাদেরকে তারা ফেরত পাঠাচ্ছে না কেন? আমরা জাতিসংঘ শান্তি মিশনের মাধ্যমে চেষ্টা করছি সারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার। তারা আমাদেরকে সহযোগিতার পাশাপাশি কোনো বিষয় নিয়ে তাদের দ্বিমত থাকলে সরাসরি আমাদেরকে সেটা বলতে পারে। আমরা তখন সেটা নিয়ে আলোচনা করতে পারি। আমরা সেটা বিবেচনা করতে পারি। কিন্তু আলোচনা ছাড়া তারা কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে পারে না। অংশগ্রহণমূলকভাবে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন হলে সেটা অবশ্যই পজিটিভ। কিন্তু তার মানে এই নয়, মারপিট হবে, রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া হবে, বাসে আগুন দেওয়া হবে, মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হবে।

প্রশ্ন : এসব কোনো ঘটনার বিচার আমরা দেখছি না কেন?

মোহাম্মদ জমির: বিচারের জন্য একটি ইন্টারেক্টিভ এংগেজমেন্ট দরকার। সেটা আমাদের হয়নি। সরকারের উচিত ছিল এগুলোকে বিচার ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে এসে সমাধান করা। জরুরি ভাবে তদন্ত শেষ করা উচিত।

প্রশ্ন : যারা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে, তারা বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাচ্ছে। বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কেউই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না। এর মধ্যে কি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করা সম্ভব?

মোহাম্মদ জমির: আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিয়ে কিছু বলিনি। আমরা বলেছি সংবিধান অনুসারে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই বিষয়ে একটি প্রস্তাব সামনে আসছে, নির্বাচনকালে হয়তো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনকালীন সরকার হবে। তবে এই সরকারের দীর্ঘমেয়াদি কোনো আর্থিক পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ থাকতে পারবে না। তারা শুধুমাত্র ওই কয়দিনের সরকার চালাতে সাহায্য করবেন। তারপর নির্বাচন হয়ে গেলে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। তারা যদি বঙ্গবন্ধুকে খুন করার জন্য একবার ভুল স্বীকার করত, তারা যদি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ করার জন্য ভুল স্বীকার করত, যদি তারা রাজাকার ও খুনিদের জাতীয় সংসদে নির্বাচিত করার ব্যাপারে ভুল স্বীকার করত, তাদেরকে রাষ্ট্রদূত বানানোর জন্য তারা যদি ভুল স্বীকার করত, তারা যদি জাতীয় চার নেতাকে জেলের মধ্যে হত্যা করার জন্য ভুল স্বীকার করত তাহলে আজ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এরকম হতো না।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচনের কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন কী?

মোহাম্মদ জমির: যে মানুষগুলো দায়িত্বে রয়েছেন তারা সবাই মিলে একত্রে যদি চেষ্টা করেন তাহলে সম্ভব। আমাদেরকে নিজেদের উপর ভরসা রাখতে হবে।

প্রশ্ন : কোনো দলই আলোচনায় আগ্রহী নয়। তাহলে সমাধানটা কিভাবে হবে?

মোহাম্মদ জমির: বিএনপি বলছে তারা নির্বাচনে যাবে না। তারা যতটা সম্ভব নির্বাচনকে বন্ধ করার জন্য সচেষ্ট। বিএনপি চাইছে, নির্বাচনী প্রক্রিয়া বন্ধ করে এমন একটি সিচুয়েশন তৈরি করতে যাতে সরকার পদত্যাগ করে। কিন্তু সেটা হবে না।

প্রশ্ন : আমেরিকা বা পশ্চিমা বিশ্ব যদি আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয় তখন বাংলাদেশে কি করবে?

মোহাম্মদ জমির: বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রয়োজন। তাদের সঙ্গে আমাদের দ্বিমুখী সম্পর্ক রয়েছে। তবে সেখানে বাণিজ্যিক সম্পর্কটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো কারণে অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যটা কমে যায় তাহলে দেশের অনেক মানুষ বেকার হয়ে যাবে। সেটা কেউ চায় না। আমেরিকা সবার আগে নিজেদের স্বার্থ দেখবে। তারা মুখে যাই বলুক যখন বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সুবিধা পাবে তখন বাণিজ্য স্বাভাবিক রাখবে।


সাক্ষাৎকার গ্রহণে এম এম মুসা; শ্রুতলিখনে মুজাহিদুল ইসলাম।

সৌজন্যে : দৈনিক কালবেলা।

এবিএন/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ