আজকের শিরোনাম :

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ছাড় নয়’

  এম এ খালেক

২৪ মে ২০২৩, ১১:৪৪ | আপডেট : ২৪ মে ২০২৩, ১১:৪৬ | অনলাইন সংস্করণ

অধ্যাপক ড. হাসিনা শেখ
অধ্যাপক ড. হাসিনা শেখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৯৭ সালে। এরপর তিনি অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া থেকে ২০১৭ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি ও ২০০৪ সালে নেদারল্যান্ডস থেকে করপোরেট স্ট্যাটেজির ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের প্রধান। সম্প্রতি দেশের অর্থনীতিতে খেলাপি ঋণের প্রভাব বিষয়ে তিনি একটি জাতীয় দৈনিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।  তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক এম এ খালেক। সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হল-

প্রশ্ন : আইএমএফের কাছ থেকে বাংলাদেশ ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের অনুমোদন পেয়েছে। এই ঋণের জন্য বাংলাদেশকে বেশ কিছু শর্ত মেনে নিতে হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং সেক্টরে ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার বিষয়টিও রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তথা সরকার ব্যাংকিং সেক্টরের সংস্কারের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা এবং এই সেক্টরে অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে কতটা সক্ষম হবে বলে মনে করেন?

হাসিনা শেখ: বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল মানিটরি ফান্ডের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে। আইএমএফ শর্তযুক্ত ঋণ দিয়ে থাকে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা ধরনের টানাপোড়েন চলছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎসগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে অর্থায়নের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বাড়ছিল। এই অবস্থায় সরকার আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সঠিক এবং সময়োপযোগী ছিল। যেহেতু আমরা আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাই এ ক্ষেত্রে আমাদের তেমন কোনো চয়েস ছিল না। অর্থাৎ সংস্থাটির দেয়া শর্তাদি আমাদের মেনে নিতেই হতো। সরকার আইএমএফের দেয়া শর্তাদি নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছে। আইএমএফ ব্যাংকিং সেক্টরের সংস্কারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের যে শর্ত দিয়েছে, তা আমাদের অর্থনীতির স্বার্থেই বাস্তবায়ন করা দরকার ছিল। আইএমএফ যে ঋণ দিচ্ছে তা একবারে ছাড়করণ করবে না। তারা পর্যায়ক্রমে ছয় কিস্তিতে ৪২ মাসে এই ঋণের অর্থ ছাড়করণ করবে। ইতিমধ্যেই অনুমোদিত ঋণের প্রথম কিস্তি বাংলাদেশের অনুকূলে ছাড়করণ করা হয়েছে। ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড়করণের ক্ষেত্রে আইএমএফ কোনো শর্ত দেয়নি। দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়করণের সময় এসব শর্তের পরিপালনের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে। আগামী জুনে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়করণ করা হবে। তবে আমি মনে করি, আইএমএফ ঋণদানের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত পরিপালনের শর্ত দিয়েছে, তা বেশ ভালো এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিশীলতার জন্য শর্তগুলো পরিপালন করা একান্ত প্রয়োজন।

আপনি ব্যাংকিং সেক্টরের খেলাপি ঋণের কথা বললেন। খেলাপি ঋণ আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি ব্যাপার। ব্যাংকিং সেক্টরের অনেক সমস্যার মূলে রয়েছে এই খেলাপি ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংক নানাভাবে চেষ্টা করলেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ কোনোভাবেই যৌক্তির মাত্রায় কমিয়ে আনা যাচ্ছে না। আমরা সবাই চাই ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো হোক। কিন্তু কোনোভাবেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো যাচ্ছিল না। এখন আইএমএফের চাপের কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু আইএমএফ আমাদের ওপর চাপ দিয়েছে, তাই এ ক্ষেত্রে আমাদের বিকল্প কোনো চয়েস নেই। আমাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানোর জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতেই হবে। আমরা যদি কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারি, তাহলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ নিশ্চিতভাবেই কমে আসবে। ব্যাংকিং সেক্টর আর পর্বতপ্রমাণ খেলাপি ঋণের ভার বইতে পারছে না। খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য ‘দুষ্টক্ষত’ হিসেবে বিরাজ করছে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে হিসাবায়ন করে তা নিয়ে অনেকেরই আপত্তি আছে। যেমন- বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ হিসাবায়নের সময় মামলাধীন প্রকল্পের কাছে পাওনা ঋণাঙ্ক, অবলোপনকৃত প্রকল্পের কাছে পাওনা ঋণ এবং পুনঃতফসিলীকরণকৃত ঋণের পরিমাণ বাদ দেয়। এতে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?

হাসিনা শেখ: বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রস ভিত্তিতে খেলাপি ঋণের হিসাব করে থাকে। আইএমএফ এটা মানতে চাচ্ছে না। তারা বলছে, নিট ভিত্তিতে খেলাপি ঋণের হিসাবায়ন করতে হবে। আমি মনে করি, আইএমএফের অবস্থান সঠিক। নিট ভিত্তিতে খেলাপি ঋণের হিসাবায়ন করা হলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন আইএমএফের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন তারা বলছিলেন আমরা এখন থেকে গ্রস এবং নিট ভিত্তিতে খেলাপি ঋণের হিসাব করব। তাহলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র সবাই জানতে পারবে।

প্রশ্ন : ব্যাংকিং সেক্টরে বিদ্যমান খেলাপি ঋণ কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমাদের যেকোনো মূল্যেই হোক খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতেই হবে। খেলাপি ঋণ কমানোর ব্যাপারে আপনার কোনো বিশেষ পরামর্শ আছে কি?

হাসিনা শেখ: আমাদের দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের খেলাপি ঋণ নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। গবেষণাও হয়েছে। আমরা সবাই মনে করি, খেলাপি ঋণের পরিমাণ যেকোনো মূল্যেই হোক কমিয়ে আনতে হবে, যদি ব্যাংকিং সেক্টরকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে চাই। কিন্তু তার পরও খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমছে না, বরং দিন দিন আরও বেড়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষীয় পর্যায়ে কৃত্রিমভাবে খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানো একটি প্রচেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে। আমি মনে করি, ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণ না কমার জন্য আমাদের সদিচ্ছার অভাবই দায়ী। আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, আমরা কি সত্যি খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে চাই? যদি সত্যি আমরা খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হই, তাহলে অবশ্যই খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব। খেলাপি ঋণ নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বিভিন্ন সময় বলা হয়েছে। এখন আর ব্যতিক্রমধর্মী কোনো কিছু বলার নেই। আমাদের আসলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি সত্যি খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে চাই, নাকি চাই না? আমাদের দেশের ব্যাংকারদের মধ্যে একটি সাধারণ প্রবণতা লক্ষ করা যায়, তাহলো তারা সব সময়ই বৃহদাঙ্কের ঋণ দিতে চান। একজন উদ্যোক্তার হয়তো হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়ে দিলেন। কিন্তু তিনি সেই ঋণের কিস্তি ফেরত দিলেন না। তাহলে ব্যাংক সমস্যায় পড়বে। আমাদের আসলে এসএমই খাতে বেশি বেশি করে ঋণ দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যাংকগুলো এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে খুবই উদাসীন। তারা বৃহৎ উদ্যোক্তাদের ঋণ দিয়ে ঋণদানের টার্গেট পূরণ করতে চায়। ব্যাংকের একশ্রেণির কর্মকর্তার মাঝে এসএমই খাত, বিশেষ করে এই খাতের নারী উদ্যোক্তাদের ঋণদানের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড অনাগ্রহ লক্ষ করা যায়। কিন্তু এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। কারণ এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের অনেকের মাঝেই প্রচণ্ড সম্ভাবনা রয়েছে। তারা প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সহায়তা পেলে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। এ ছাড়া এসএমই খাতের উদ্যোক্তা এবং সার্বিকভাবে নারী উদ্যোক্তারা গৃহীত ঋণের কিস্তি নির্ধারিত সময়ে ফেরতদানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সিরিয়াস। তারা সাধারণত ঋণখেলাপি হন না। তাই আমাদের ব্যাংক কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। এসএমই খাতের উদ্যোক্তা, বিশেষ করে এই খাতের নারী উদ্যোক্তাদের বেশি বেশি করে ঋণ দিতে হবে। ব্যাংকের ঋণদান কার্যক্রম গ্রামীণ এলাকায় ছড়িয়ে দিতে হবে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো মূলত শহর এলাকার উদ্যোক্তাদের বিশাল অঙ্কের ঋণ দিচ্ছে। আমাদের গ্রামীণ এলাকায় সম্ভাবনাময় অনেক উদ্যোক্তা আছেন, যারা একটু সহায়তা পেলেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন। এদের খুঁজে বের করে ঋণদানের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু ব্যাংকাররা তাদের পরিশ্রম বাঁচানোর জন্য ক্ষুদ্র পরিসরে ঋণ দিতে চান না। তারা চেষ্টা করেন কীভাবে বড় উদ্যোক্তাদের বেশি অঙ্কের ঋণ দেয়া যায়। ব্যাংকারদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি শুধু প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন নাকি উদ্ভাবনীমূলক ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করবেন? এখন সুযোগ এসেছে। আইএমএফের শর্তের ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি ঋণখেলাপিদের আর কোনো ছাড় দেয়া হবে না। এ জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

প্রশ্ন : ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সামাজিকভাবে তাদের বয়কট করার একটি কথা শোনা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?

হাসিনা শেখ: ব্যাংকিং সেক্টরে আজকে যে সমস্যা, বিশেষ করে ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে সে জন্য মূলত ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরাই দায়ী। যেকোনো দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে দুই ধরনের ঋণখেলাপি থাকেন। এদের মধ্যে একটি শ্রেণি আছেন যারা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নানা প্রতিকূলতার কারণে গৃহীত ঋণের কিস্তি সঠিক সময়ে পরিশোধ করতে পারেন না। এরা প্রকৃত ঋণখেলাপি। প্রয়োজনে এদের নতুন করে সহায়তা দিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধে সামর্থ্যবান করে তোলা যেতে পারে। আর একশ্রেণির ঋণখেলাপি আছেন যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছা করেই ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেন না। এরা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ঋণের অর্থ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা বা আত্মসাতের জন্যই ঋণ গ্রহণ করেন। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া উচিত হবে না। এদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি, তাদের চিহ্নিত করা খুবই জরুরি। কারণ এদের জন্যই ব্যাংকিং সেক্টরের আজকের এই দুরবস্থা। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ব্যাংকগুলো চেনে। কিন্তু তার পরও তাদের নানা অজুহাতে ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। এই প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন সময় আইনি সংস্কারের মাধ্যমে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের নানা সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। যারা নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছেন, তারা কোনো সুবিধা পাবেন না। আর যারা ইচ্ছা করে ঋণের কিস্তি আটকে রাখছেন, তাদের সুবিধা দেয়া হবে এটা অনৈতিক।

প্রশ্ন : অনেকে বলেন, ঋণদানের সময় জামানতকৃত সম্পদের সঠিক মূল্যায়ন করা হলে ঋণখেলাপির প্রবণতা অনেকটাই কমে যাবে। আপনি কী বলেন?

হাসিনা শেখ: আসলে আপনি লক্ষ করলে দেখবেন শর্ষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে আছে। একজন ব্যাংক ম্যানেজার যদি সততার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেন। ঋণদানের আগে বন্ধকীযোগ্য সম্পদের সঠিক মূল্যায়ন করেন, তাহলে খেলাপি ঋণের প্রবণতা অনেকটাই কমে যেতে পারে। সাধারণত ঋণ গ্রহণের জন্য ১০০:১২৫ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০০:১৫০ শতাংশ মূল্যের সম্পদ জামানত দিতে হয়। কোনো ব্যক্তি নিশ্চয়ই ১০০ টাকা ঋণ গ্রহণের জন্য ১২৫ বা ১৫০ টাকার সম্পদ হারাতে চাইবেন না। কিন্তু অধিকাংশ সময় সম্পদের অতিমূল্যায়ন করে দেখানো হয়। ফলে ব্যাংক মামলায় জয়ী হয়ে বন্ধকীকৃত সম্পদ বিক্রি করতে গেলে সঠিক মূল্য পায় না। একজন ব্যাংক ম্যানেজার বন্ধকীযোগ্য সম্পদের সঠিক মূল্যায়ন করলে পরবর্তী সময়ে সেই ঋণ খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা ভুল করলে ব্যাংককেই তার খেসারত দিতে হবে। ব্যাংক যে ঋণ দেয়, সেই ঋণের টাকা আসে আমানতকারীদের অর্থ থেকে। কাজেই ঋণদানের সময় কোনোভাবেই এমন কিছু করা উচিত নয় যাতে ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আমানতকারীর অর্থ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।

প্রশ্ন : ব্যাংকঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারিত আছে। এটা কতটা যৌক্তিক বলে মনে করেন?

হাসিনা শেখ: অনেক দিন ধরেই স্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা ব্যাংকঋণের আপার ক্যাপ (৯ শতাংশ) তুলে দেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলে আসছেন। কিন্তু তা করা হয়নি। এবার আইএমএফ শর্ত দিয়েছে ব্যাংকঋণের আপার ক্যাপ তুলে দিতে হবে। এখন হয়তো আপার ক্যাপ তুলে দেয়া হতে পারে। ব্যাংকঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার নির্ধারণ করে না রেখে তাকে বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। ব্যাংকঋণের সুদের হার যদি বাজারভিত্তিক এবং বেশি হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ বেশি পরিমাণে আমানত ব্যাংকে সংরক্ষণ করে। ব্যাংকগুলোর তারল্যসংকট দূর হয়।


সৌজন্যে : দৈনিক বাংলা।

এবিএন/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ